alt

জাতীয়

‘সব শহীদ পরিবারকে একেবারে শহীদ করে দিক, তাহলে কেউ দাবি নিয়ে আসবে না’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শনিবার ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া শহীদ পরিবারের সদস্যরা -সংবাদ

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ অন্তর্র্বর্তী সরকার নিচ্ছে না, এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারগুলোর একদল সদস্য। অনেকের পরিবার মানবেতর জীবন পার করছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার তাদের পুনর্বাসনে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।

শনিবার ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া শহীদ পরিবারের সদস্যরা এ কথাগুলো বলেছেন।

তারা বলেন এমনকি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শহীদদের এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ে এসব দাবি পূরণ না হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও বলেন, দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে সরকার বৈঠক না করলে রাজপথে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি এই ঘোষণা আসবে।

সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম ছিল, ‘প্রতিটি হত্যার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন।’

গত ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় নিহত সাজ্জাদ হোসেনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়ার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা শাহীনা বেগম। তিনি বলেন, তার ছেলেকে কুকুরবিড়ালের মতো হত্যা করার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়। অথচ কোনো আসামিকে ধরা হচ্ছে না। তার প্রশ্ন, আসামিই যদি ধরা না হয়, তাহলে হত্যার বিচার হবে কীভাবে?

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে পটুয়াখালী থেকে এসেছেন যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদী হাসানের বাবা মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, কী ছিল মেহেদীর অপরাধ? জনগণের কাছে সঠিক সংবাদ পৌঁছে দেয়া কী অপরাধ? এটা কোনো সাংবাদিকের অপরাধ হতে পারে না। ফ্যাসিস্ট সরকার সংবাদ পৌঁছে দেয়ার কারণে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার তার ছেলে হত্যার বিচার এবং পরিবারের পুনর্বাসনে তাদের অনেক আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কোনো আশ্বাস আর বাস্তবায়ন করা হয়নি।

অনুষ্ঠানে অন্তত ২০টি শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে শহীদ ব্যক্তিদের কারও মা, কারও বাবা, কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও স্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের একজন বীথি খাতুন। তার স্বামী হাফিজুর রহমান ৫ আগস্ট আগারগাঁও এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ১৬ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বীথি খাতুন সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘শহীদদের পরিবারের দাবি যদি মেনে না নেয়া হয়, তবে আমাদেরও মেরে ফেলুন। আমাদের এখন বাঁচার কোনো দরকার নাই।’

নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে বীথি খাতুন বলেন, ‘আমার বাচ্চা তো আমাকেই বলে, মা আমি ভাত খাব। মা আমাকে এটা দাও। বাড়িওয়ালা তো আমাদের বলে না এক মাসের ভাড়া দিয়ো না। সরকার যদি আমাদের দাবি না মেনে নেয়, তবে সকল শহীদ পরিবারকেই একেবারে শহীদ করে দিক। আমাদের মেরে ফেলা হোক, আমার বাচ্চাদেরও..তাহলে আমরা সবাই শহীদ হয়ে যাবো। কেউ তাদের কাছে দাবি জানাইতে পারবে না। রাস্তায় এসে বসে থাকবে না।’

পরে বীথি খাতুন বলেন, তার স্বামী হাফিজুর রহমান পেশায় একজন গাড়িচালক ছিলেন। তাদের দুই মেয়ের মধ্যে একজনের বয়স ৮ বছর, অন্যজনের ৩ বছর। বড় মেয়ে আগে একটি স্কুলে পড়তো। তবে স্বামী মারা যাওয়ার পর আর্থিক সংকটে পড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন। এখন তার পরিবারকে দেখার কেউ নেই।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত ইমাম হাসানের (তাইম) ভাই রবিউল আউয়াল। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভাই হত্যার বিচার চেয়ে ছয় মাস ধরে তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন। কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে না। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাস পরও শহীদদের রাষ্ট্র্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানান তিনি।

শহীদ পরিবারগুলো নানা বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে নিহত শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের নানা সাইদুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘এই সরকার তো আমাদের সরকার। অথচ আমাদের সরকার আমাদের কোনো খোঁজ নিচ্ছে না।’ সাইদুর রহমান বলেন, ‘সরকারের উচিত ছিল যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারগুলোর খোঁজ নেয়া। অথচ এখন আমাদেরই রাস্তায় নেমে দাবি জানাতে হচ্ছে। শহীদদের রক্তের ওপর এই সরকার গঠিত হয়েছে। সুতরাং সরকারের উচিত শহীদদের পরিবারগুলোর ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেয়া।’

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান। তিনি বলেন, সরকার শহীদ পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ নিচ্ছে না। অনেক পরিবার মানবেতর জীবন পার করছে। অনেক পরিবারে বাচ্চার দুধ কেনার মতো পরিস্থিতি নেই।

স্বামীর মৃত্যুর পর শিশুসন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বংশালে গুলিতে নিহত মো. সোহাগের স্ত্রী রীমা আক্তার। তিনি বলেন, শহীদ পরিবারগুলোর, বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব সরকারের নেয়া উচিত। তার প্রশ্ন, সরকার কেন এই দায়িত্ব নিচ্ছে না? কেন দাবি আদায়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে? তিনি বলেন, ‘আমরা আর পারছি না। আমাদের পাশে দাড়ান।’

ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্তা ‘প্রত্যাখ্যান’, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ছাড়া রাস্তা ছাড়বেন না তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

ছবি

প্রতি হাজারে ক্যান্সারে আক্রান্ত ১ জন: গবেষণা

ছবি

তিতুমীর কলেজ : বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে তৃতীয় দিন সড়ক অবরোধ

ছবি

তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার, বিএনপির ক্ষোভ, আইএসপিআরের তদন্ত কমিটি

ছবি

দেশে প্রতি লাখে ১০৬ জন ক্যান্সার আক্রান্ত

ছবি

অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠল

ছবি

সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরিকল্পনা, তিতুমীর বিশেষ বিবেচনায়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছবি

বই সেন্সরের কোনো পরিকল্পনা নেই, ভুল বোঝাবুঝি দূর করার আহ্বান ফারুকীর

ছবি

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সাত লেখক

ছবি

বিকেলে ইজতেমায় অনুষ্ঠিত হবে যৌতুকবিহীন বিয়ে

ছবি

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল

ছবি

সংস্কারটা কোথায় হচ্ছে, জনজীবনে তার কোনো প্রতিফলন নেই : আনু মুহাম্মদ

ছবি

আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ ১২ দাবি

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ: কোন দেশ ও খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

ছবি

বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান নগণ্য: প্রধান ‍উপদেষ্টার কার্যালয়

ছবি

আসন্ন রমজানের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ

ছবি

সেনাবাহিনী নিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন ‘বলিউডি রোমান্টিক কমেডি’

রাজনৈতিক দলের ভেতর সংস্কার জরুরি, নেতার বয়সসীমা ঠিক করারও প্রস্তাব

ছবি

রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি মাস শুরু

আজ শুরু হচ্ছে একুশের বইমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

কমছে না চালের বাজারে অস্থিরতা

ছবি

বিশ্ব ইজতেমায় মানুষের ঢল, প্রথম পর্ব শেষ হচ্ছে কাল

ছবি

বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য মেট্রোরেলে বিশেষ কোচের ব্যবস্থা

ছবি

তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের আবারও সড়ক অবরোধ

ছবি

সিলেটে রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হলো শেখ মুজিবের ম্যুরাল

মেলায় প্রকাশের আগে বইয়ের পাণ্ডুলিপি যাচাই চায় পুলিশ

ছবি

বইমেলায় কন্টেন্ট যাচাই নিয়ে পুলিশের নতুন উদ্যোগ: পাণ্ডুলিপি যাচাইয়ের প্রস্তাব

ছবি

ছাত্রলীগ কোনো প্রোগ্রাম করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ : ডিএমপি কমিশনার

ছবি

তুরাগ তীরে মুসল্লিদের ঢল, দেড়টায় বৃহত্তম জুমার নামাজ

ছবি

গাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৪২ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার

ছবি

৭২ দেশের ২১৫০ জন বিদেশি মেহমান এসেছেন বিশ্ব ইজতেমায়

ছবি

টেকসই উন্নয়ন ও বৈষম্যহীন অর্থনীতি গঠনে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার হাতে

ছবি

সুইজারল্যান্ড সরকার বাংলাদেশ, আলবেনিয়া ও জাম্বিয়ায় উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করবে

ইজতেমার প্রথম পর্ব : লাখো মুসল্লির পদভারে মুখর তুরাগ তীর

ছবি

জাপান বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে: মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাতে রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি

সীমানা নির্ধারণ আইনের ‘জটিলতা’ দূর করতে সংশোধন প্রস্তাব পাঠাবে ইসি

tab

জাতীয়

‘সব শহীদ পরিবারকে একেবারে শহীদ করে দিক, তাহলে কেউ দাবি নিয়ে আসবে না’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শনিবার ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া শহীদ পরিবারের সদস্যরা -সংবাদ

শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ অন্তর্র্বর্তী সরকার নিচ্ছে না, এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারগুলোর একদল সদস্য। অনেকের পরিবার মানবেতর জীবন পার করছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার তাদের পুনর্বাসনে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।

শনিবার ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া শহীদ পরিবারের সদস্যরা এ কথাগুলো বলেছেন।

তারা বলেন এমনকি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শহীদদের এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ে এসব দাবি পূরণ না হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও বলেন, দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে সরকার বৈঠক না করলে রাজপথে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি এই ঘোষণা আসবে।

সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম ছিল, ‘প্রতিটি হত্যার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন।’

গত ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় নিহত সাজ্জাদ হোসেনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়ার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা শাহীনা বেগম। তিনি বলেন, তার ছেলেকে কুকুরবিড়ালের মতো হত্যা করার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়। অথচ কোনো আসামিকে ধরা হচ্ছে না। তার প্রশ্ন, আসামিই যদি ধরা না হয়, তাহলে হত্যার বিচার হবে কীভাবে?

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে পটুয়াখালী থেকে এসেছেন যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদী হাসানের বাবা মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, কী ছিল মেহেদীর অপরাধ? জনগণের কাছে সঠিক সংবাদ পৌঁছে দেয়া কী অপরাধ? এটা কোনো সাংবাদিকের অপরাধ হতে পারে না। ফ্যাসিস্ট সরকার সংবাদ পৌঁছে দেয়ার কারণে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার তার ছেলে হত্যার বিচার এবং পরিবারের পুনর্বাসনে তাদের অনেক আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কোনো আশ্বাস আর বাস্তবায়ন করা হয়নি।

অনুষ্ঠানে অন্তত ২০টি শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে শহীদ ব্যক্তিদের কারও মা, কারও বাবা, কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও স্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের একজন বীথি খাতুন। তার স্বামী হাফিজুর রহমান ৫ আগস্ট আগারগাঁও এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ১৬ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বীথি খাতুন সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘শহীদদের পরিবারের দাবি যদি মেনে না নেয়া হয়, তবে আমাদেরও মেরে ফেলুন। আমাদের এখন বাঁচার কোনো দরকার নাই।’

নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে বীথি খাতুন বলেন, ‘আমার বাচ্চা তো আমাকেই বলে, মা আমি ভাত খাব। মা আমাকে এটা দাও। বাড়িওয়ালা তো আমাদের বলে না এক মাসের ভাড়া দিয়ো না। সরকার যদি আমাদের দাবি না মেনে নেয়, তবে সকল শহীদ পরিবারকেই একেবারে শহীদ করে দিক। আমাদের মেরে ফেলা হোক, আমার বাচ্চাদেরও..তাহলে আমরা সবাই শহীদ হয়ে যাবো। কেউ তাদের কাছে দাবি জানাইতে পারবে না। রাস্তায় এসে বসে থাকবে না।’

পরে বীথি খাতুন বলেন, তার স্বামী হাফিজুর রহমান পেশায় একজন গাড়িচালক ছিলেন। তাদের দুই মেয়ের মধ্যে একজনের বয়স ৮ বছর, অন্যজনের ৩ বছর। বড় মেয়ে আগে একটি স্কুলে পড়তো। তবে স্বামী মারা যাওয়ার পর আর্থিক সংকটে পড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন। এখন তার পরিবারকে দেখার কেউ নেই।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত ইমাম হাসানের (তাইম) ভাই রবিউল আউয়াল। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভাই হত্যার বিচার চেয়ে ছয় মাস ধরে তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন। কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে না। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাস পরও শহীদদের রাষ্ট্র্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানান তিনি।

শহীদ পরিবারগুলো নানা বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে নিহত শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের নানা সাইদুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘এই সরকার তো আমাদের সরকার। অথচ আমাদের সরকার আমাদের কোনো খোঁজ নিচ্ছে না।’ সাইদুর রহমান বলেন, ‘সরকারের উচিত ছিল যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারগুলোর খোঁজ নেয়া। অথচ এখন আমাদেরই রাস্তায় নেমে দাবি জানাতে হচ্ছে। শহীদদের রক্তের ওপর এই সরকার গঠিত হয়েছে। সুতরাং সরকারের উচিত শহীদদের পরিবারগুলোর ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেয়া।’

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান। তিনি বলেন, সরকার শহীদ পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ নিচ্ছে না। অনেক পরিবার মানবেতর জীবন পার করছে। অনেক পরিবারে বাচ্চার দুধ কেনার মতো পরিস্থিতি নেই।

স্বামীর মৃত্যুর পর শিশুসন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বংশালে গুলিতে নিহত মো. সোহাগের স্ত্রী রীমা আক্তার। তিনি বলেন, শহীদ পরিবারগুলোর, বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব সরকারের নেয়া উচিত। তার প্রশ্ন, সরকার কেন এই দায়িত্ব নিচ্ছে না? কেন দাবি আদায়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে? তিনি বলেন, ‘আমরা আর পারছি না। আমাদের পাশে দাড়ান।’

back to top