জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ অন্তর্র্বর্তী সরকার নিচ্ছে না, এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারগুলোর একদল সদস্য। অনেকের পরিবার মানবেতর জীবন পার করছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার তাদের পুনর্বাসনে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।
শনিবার ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া শহীদ পরিবারের সদস্যরা এ কথাগুলো বলেছেন।
তারা বলেন এমনকি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শহীদদের এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ে এসব দাবি পূরণ না হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও বলেন, দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে সরকার বৈঠক না করলে রাজপথে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি এই ঘোষণা আসবে।
সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম ছিল, ‘প্রতিটি হত্যার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন।’
গত ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় নিহত সাজ্জাদ হোসেনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়ার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা শাহীনা বেগম। তিনি বলেন, তার ছেলেকে কুকুরবিড়ালের মতো হত্যা করার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়। অথচ কোনো আসামিকে ধরা হচ্ছে না। তার প্রশ্ন, আসামিই যদি ধরা না হয়, তাহলে হত্যার বিচার হবে কীভাবে?
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে পটুয়াখালী থেকে এসেছেন যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদী হাসানের বাবা মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, কী ছিল মেহেদীর অপরাধ? জনগণের কাছে সঠিক সংবাদ পৌঁছে দেয়া কী অপরাধ? এটা কোনো সাংবাদিকের অপরাধ হতে পারে না। ফ্যাসিস্ট সরকার সংবাদ পৌঁছে দেয়ার কারণে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার তার ছেলে হত্যার বিচার এবং পরিবারের পুনর্বাসনে তাদের অনেক আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কোনো আশ্বাস আর বাস্তবায়ন করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে অন্তত ২০টি শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে শহীদ ব্যক্তিদের কারও মা, কারও বাবা, কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও স্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের একজন বীথি খাতুন। তার স্বামী হাফিজুর রহমান ৫ আগস্ট আগারগাঁও এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ১৬ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বীথি খাতুন সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘শহীদদের পরিবারের দাবি যদি মেনে না নেয়া হয়, তবে আমাদেরও মেরে ফেলুন। আমাদের এখন বাঁচার কোনো দরকার নাই।’
নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে বীথি খাতুন বলেন, ‘আমার বাচ্চা তো আমাকেই বলে, মা আমি ভাত খাব। মা আমাকে এটা দাও। বাড়িওয়ালা তো আমাদের বলে না এক মাসের ভাড়া দিয়ো না। সরকার যদি আমাদের দাবি না মেনে নেয়, তবে সকল শহীদ পরিবারকেই একেবারে শহীদ করে দিক। আমাদের মেরে ফেলা হোক, আমার বাচ্চাদেরও..তাহলে আমরা সবাই শহীদ হয়ে যাবো। কেউ তাদের কাছে দাবি জানাইতে পারবে না। রাস্তায় এসে বসে থাকবে না।’
পরে বীথি খাতুন বলেন, তার স্বামী হাফিজুর রহমান পেশায় একজন গাড়িচালক ছিলেন। তাদের দুই মেয়ের মধ্যে একজনের বয়স ৮ বছর, অন্যজনের ৩ বছর। বড় মেয়ে আগে একটি স্কুলে পড়তো। তবে স্বামী মারা যাওয়ার পর আর্থিক সংকটে পড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন। এখন তার পরিবারকে দেখার কেউ নেই।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত ইমাম হাসানের (তাইম) ভাই রবিউল আউয়াল। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভাই হত্যার বিচার চেয়ে ছয় মাস ধরে তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন। কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে না। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাস পরও শহীদদের রাষ্ট্র্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানান তিনি।
শহীদ পরিবারগুলো নানা বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে নিহত শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের নানা সাইদুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘এই সরকার তো আমাদের সরকার। অথচ আমাদের সরকার আমাদের কোনো খোঁজ নিচ্ছে না।’ সাইদুর রহমান বলেন, ‘সরকারের উচিত ছিল যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারগুলোর খোঁজ নেয়া। অথচ এখন আমাদেরই রাস্তায় নেমে দাবি জানাতে হচ্ছে। শহীদদের রক্তের ওপর এই সরকার গঠিত হয়েছে। সুতরাং সরকারের উচিত শহীদদের পরিবারগুলোর ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেয়া।’
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান। তিনি বলেন, সরকার শহীদ পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ নিচ্ছে না। অনেক পরিবার মানবেতর জীবন পার করছে। অনেক পরিবারে বাচ্চার দুধ কেনার মতো পরিস্থিতি নেই।
স্বামীর মৃত্যুর পর শিশুসন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বংশালে গুলিতে নিহত মো. সোহাগের স্ত্রী রীমা আক্তার। তিনি বলেন, শহীদ পরিবারগুলোর, বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব সরকারের নেয়া উচিত। তার প্রশ্ন, সরকার কেন এই দায়িত্ব নিচ্ছে না? কেন দাবি আদায়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে? তিনি বলেন, ‘আমরা আর পারছি না। আমাদের পাশে দাড়ান।’
শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ অন্তর্র্বর্তী সরকার নিচ্ছে না, এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারগুলোর একদল সদস্য। অনেকের পরিবার মানবেতর জীবন পার করছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার তাদের পুনর্বাসনে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।
শনিবার ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া শহীদ পরিবারের সদস্যরা এ কথাগুলো বলেছেন।
তারা বলেন এমনকি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শহীদদের এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ে এসব দাবি পূরণ না হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও বলেন, দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে সরকার বৈঠক না করলে রাজপথে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি এই ঘোষণা আসবে।
সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম ছিল, ‘প্রতিটি হত্যার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন।’
গত ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় নিহত সাজ্জাদ হোসেনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়ার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা শাহীনা বেগম। তিনি বলেন, তার ছেলেকে কুকুরবিড়ালের মতো হত্যা করার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়। অথচ কোনো আসামিকে ধরা হচ্ছে না। তার প্রশ্ন, আসামিই যদি ধরা না হয়, তাহলে হত্যার বিচার হবে কীভাবে?
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে পটুয়াখালী থেকে এসেছেন যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদী হাসানের বাবা মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, কী ছিল মেহেদীর অপরাধ? জনগণের কাছে সঠিক সংবাদ পৌঁছে দেয়া কী অপরাধ? এটা কোনো সাংবাদিকের অপরাধ হতে পারে না। ফ্যাসিস্ট সরকার সংবাদ পৌঁছে দেয়ার কারণে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার তার ছেলে হত্যার বিচার এবং পরিবারের পুনর্বাসনে তাদের অনেক আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কোনো আশ্বাস আর বাস্তবায়ন করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে অন্তত ২০টি শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে শহীদ ব্যক্তিদের কারও মা, কারও বাবা, কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও স্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের একজন বীথি খাতুন। তার স্বামী হাফিজুর রহমান ৫ আগস্ট আগারগাঁও এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ১৬ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বীথি খাতুন সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘শহীদদের পরিবারের দাবি যদি মেনে না নেয়া হয়, তবে আমাদেরও মেরে ফেলুন। আমাদের এখন বাঁচার কোনো দরকার নাই।’
নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে বীথি খাতুন বলেন, ‘আমার বাচ্চা তো আমাকেই বলে, মা আমি ভাত খাব। মা আমাকে এটা দাও। বাড়িওয়ালা তো আমাদের বলে না এক মাসের ভাড়া দিয়ো না। সরকার যদি আমাদের দাবি না মেনে নেয়, তবে সকল শহীদ পরিবারকেই একেবারে শহীদ করে দিক। আমাদের মেরে ফেলা হোক, আমার বাচ্চাদেরও..তাহলে আমরা সবাই শহীদ হয়ে যাবো। কেউ তাদের কাছে দাবি জানাইতে পারবে না। রাস্তায় এসে বসে থাকবে না।’
পরে বীথি খাতুন বলেন, তার স্বামী হাফিজুর রহমান পেশায় একজন গাড়িচালক ছিলেন। তাদের দুই মেয়ের মধ্যে একজনের বয়স ৮ বছর, অন্যজনের ৩ বছর। বড় মেয়ে আগে একটি স্কুলে পড়তো। তবে স্বামী মারা যাওয়ার পর আর্থিক সংকটে পড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন। এখন তার পরিবারকে দেখার কেউ নেই।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত ইমাম হাসানের (তাইম) ভাই রবিউল আউয়াল। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভাই হত্যার বিচার চেয়ে ছয় মাস ধরে তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন। কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে না। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাস পরও শহীদদের রাষ্ট্র্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানান তিনি।
শহীদ পরিবারগুলো নানা বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে নিহত শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের নানা সাইদুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘এই সরকার তো আমাদের সরকার। অথচ আমাদের সরকার আমাদের কোনো খোঁজ নিচ্ছে না।’ সাইদুর রহমান বলেন, ‘সরকারের উচিত ছিল যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারগুলোর খোঁজ নেয়া। অথচ এখন আমাদেরই রাস্তায় নেমে দাবি জানাতে হচ্ছে। শহীদদের রক্তের ওপর এই সরকার গঠিত হয়েছে। সুতরাং সরকারের উচিত শহীদদের পরিবারগুলোর ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেয়া।’
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান। তিনি বলেন, সরকার শহীদ পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ নিচ্ছে না। অনেক পরিবার মানবেতর জীবন পার করছে। অনেক পরিবারে বাচ্চার দুধ কেনার মতো পরিস্থিতি নেই।
স্বামীর মৃত্যুর পর শিশুসন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বংশালে গুলিতে নিহত মো. সোহাগের স্ত্রী রীমা আক্তার। তিনি বলেন, শহীদ পরিবারগুলোর, বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব সরকারের নেয়া উচিত। তার প্রশ্ন, সরকার কেন এই দায়িত্ব নিচ্ছে না? কেন দাবি আদায়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে? তিনি বলেন, ‘আমরা আর পারছি না। আমাদের পাশে দাড়ান।’