আধুনিক বিশ্বে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগত কৌশল বিবেচনায় নিয়ে পাঁচ ধাপে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক বলপ্রয়োগের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে অনুসরণ করা হয়েছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী কর্তৃক বলপ্রয়োগের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা। আর এই পদ্ধতি অনুসরণে আইনি বৈধতা দিতে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে বলা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, আটক ব্যক্তি বা রিমান্ডে নেয়া আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিটি থানায় স্বচ্ছ কাচের ঘোরাটোপ দেয়া একটি আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ রুম অবশ্যই থাকবে। পুলিশি তত্ত্বাবধানে থানা হাজত ও কোর্ট হাজতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতেও সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও বন্দিদের আনা-নেয়ার বাহনগুলোতে মানবিক সেবার মান উন্নয়নে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে কমিশন।
নারী আসামিকে যথেষ্ট শালীনতার সঙ্গে মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। তল্লাশির সময় পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে অথবা সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকলে জরুরি যোগাযোগের জন্য নাগরিক নিরাপত্তা বিধানে একটি জরুরি কল সার্ভিস চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে।
জব্দকৃত মালামালের যথাযথ তালিকা না হলে এবং তল্লাশি কার্যক্রম সন্দেহজনক মনে হলে তা তাৎক্ষণিক জানানোর জন্য মেট্রো এলাকায় ডেপুটি পুলিশ কমিশনার/জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর জরুরি কল সার্ভিস চালু করা যায়।
অভিযান পরিচালনা করার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের কাছে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ ভেস্ট/পোশাক পরিধান করতে হবে। রাতের বেলায় (সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়) গৃহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি/স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
থানায় মামলা রুজু তথা এফআইআর গ্রহণ ও তদন্ত কঠোরভাবে সার্কেল অফিসার বা পুলিশ কর্তৃক নিয়মিত তদারকি জারি রাখতে হবে।
কেইস ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশ ব্যতীত কোনোক্রমেই এফআইআরবহির্ভূত আসামি গ্রেফতার করা যাবে না।
ভুয়া/গায়েবি মামলায় অনিবাসী/মৃত/নিরপরাধ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য করতে হবে।
অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা দেয়ার অপচর্চা পরিহার করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাউকে এ ধরনের মামলায় হয়রানি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে কাউকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না।
প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী : পুলিশ সংস্কার কমিশন সামগ্রিক বিষয় ধর্তব্য নিয়ে একটি নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করে।
প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে নাকি সাংবিধানিক কাঠামোভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হবে তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
পুলিশ কমিশন গঠন, কার্যপরিধি, সাংবিধানিক বা আইনি বাধ্যবাধকতা, আইনে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয়াদি বিচার-বিশ্লেষণ ও যথাযথ পরীক্ষা ও নিরীক্ষা করা দরকার।
থানায় জিডি, মামলা তদন্ত প্রসঙ্গ: থানায় জিডি গ্রহণ বাধ্যতামূলক, কোনোক্রমেই জিডি গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। মামলা নেয়ায় কোনো অনীহা বা বিলম্ব করা যাবে না।
ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য একটি বিশেষায়িত দল গঠন করতে হবে। যাদের তদন্তসংক্রান্ত ইউনিট ও থানা ব্যতীত অন্যত্র বদলি করা যাবে না। ভবিষ্যতে মামলা পরিচালনা ও তদন্ত একটি ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের অধীনে পরিচালিত হতে হবে এবং তারা ফৌজদারি মামলা প্রসিকিউশনসংক্রান্ত একটি বিশেষ তদন্ত দল হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন : জাতীয় পরিচয়পত্র দানকারী চাকরি প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা অনুসন্ধানের বাধ্যবাধকতা রহিত করা যেতে পারে। চাকরি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা/শিক্ষা সনদপত্র/ ট্রান্সক্রিপ্ট/ মার্কশিট ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করার দায়-দায়িত্ব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে। এগুলো পুলিশ ভেরিফিকেশনের অংশ হবে না।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রহিত করাসহ এসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংস্কার করা যেতে পারে। তবে চাকরি প্রার্থী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখ-তাসংক্রান্ত কোনো কর্মকা-ে জড়িত থাকলে তা ভেরিফিকেশন রিপোর্টে প্রতিফলিত করতে হবে।
চাকরির জন্য সব পুলিশ ভেরিফিকেশন সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে সমাপ্ত করতে হবে। অতিরিক্ত সময়ের দরকার হলে সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
যুগোপযোগী আইন ও প্রবিধিমালা : ব্রিটিশ আমলের প্রণীত কিছু কিছু আইন ও প্রবিধান যুগের প্রয়োজনে সংস্কার ও হালনাগাদ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যেমন পুলিশ আইন, ১৮৬১: পুলিশকে জনবান্ধব ও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক বাহিনী /প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য এই আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিমার্জন অথবা নতুন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ : বলপ্রয়োগ মানবাধিকার সুরক্ষা এ আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে।
পিআরবি ১৯৪৩: জনবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী গঠনে এ প্রবিধানমালায় সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পরিবর্তন, পরিমার্জন অথবা নতুন প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
পুলিশের দুর্নীতি ও প্রতিকার : পুলিশের কাজকর্মে ইচ্ছাকৃত ব্যত্যয় বা পেশাদারি দুর্নীতি রোধে দুর্নীতি স্বল্পমেয়াদি একটি কার্যক্রম হিসেবে ওয়াচডগ বা ওভারসাইট কমিটি গঠন করা যায়।
প্রতিটি থানা ও উপজেলায় একটি সর্বদলীয় কমিটি গড়ে তোলা যায়। যারা স্থানীয় পর্যায়ে ওভারসাইট বডি হিসেবে কাজ করবে এবং দুর্নীতিরোধে কার্যক্রম ব্যবস্থা নিবে।
বিশেষ টাস্কফোর্স : পুলিশের দুর্নীতি রোধে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা যায়। সর্বদলীয় কমিটির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যাবতীয় বিষয়ে ধর্তব্য নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ প্রণয়নের জন্য টাস্কফোর্সকে দায়িত্ব প্রদান করা যায়।
পুলিশের দুর্নীতি প্রতিরোধে থানাকেন্দ্রিক জিডি গ্রহণে বিলম্ব করলে /ওজর আপত্তি করলে বা কোনো রকম দুর্নীতির প্রমাণ যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
মামলার তদন্ত ব্যয় বৃদ্ধি জিডি, ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমের জন্য প্রতি থানায় বিশেষ বরাদ্দ ও ভাতার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে। থানায় বাদী বা বিবাদীদের মধ্যে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা করা যাবে না।
মানবাধিকার : আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য সরাসরি সমস্ত পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার জন্য পুলিশ সংস্থার কমিশনের পক্ষ থেকে জোর সুপারিশ করা হয়েছে। এভাবে পুলিশ সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশন তাদের একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জমা দিয়েছেন।
এই সংস্কার সুপারিশ নিয়ে আরও একটি ঐকমত্যের কমিশন হবে। সেখানে তা চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
আধুনিক বিশ্বে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগত কৌশল বিবেচনায় নিয়ে পাঁচ ধাপে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক বলপ্রয়োগের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে অনুসরণ করা হয়েছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী কর্তৃক বলপ্রয়োগের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা। আর এই পদ্ধতি অনুসরণে আইনি বৈধতা দিতে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে বলা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, আটক ব্যক্তি বা রিমান্ডে নেয়া আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিটি থানায় স্বচ্ছ কাচের ঘোরাটোপ দেয়া একটি আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ রুম অবশ্যই থাকবে। পুলিশি তত্ত্বাবধানে থানা হাজত ও কোর্ট হাজতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতেও সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও বন্দিদের আনা-নেয়ার বাহনগুলোতে মানবিক সেবার মান উন্নয়নে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে কমিশন।
নারী আসামিকে যথেষ্ট শালীনতার সঙ্গে মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। তল্লাশির সময় পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে অথবা সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকলে জরুরি যোগাযোগের জন্য নাগরিক নিরাপত্তা বিধানে একটি জরুরি কল সার্ভিস চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে।
জব্দকৃত মালামালের যথাযথ তালিকা না হলে এবং তল্লাশি কার্যক্রম সন্দেহজনক মনে হলে তা তাৎক্ষণিক জানানোর জন্য মেট্রো এলাকায় ডেপুটি পুলিশ কমিশনার/জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর জরুরি কল সার্ভিস চালু করা যায়।
অভিযান পরিচালনা করার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের কাছে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ ভেস্ট/পোশাক পরিধান করতে হবে। রাতের বেলায় (সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়) গৃহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি/স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
থানায় মামলা রুজু তথা এফআইআর গ্রহণ ও তদন্ত কঠোরভাবে সার্কেল অফিসার বা পুলিশ কর্তৃক নিয়মিত তদারকি জারি রাখতে হবে।
কেইস ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশ ব্যতীত কোনোক্রমেই এফআইআরবহির্ভূত আসামি গ্রেফতার করা যাবে না।
ভুয়া/গায়েবি মামলায় অনিবাসী/মৃত/নিরপরাধ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য করতে হবে।
অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা দেয়ার অপচর্চা পরিহার করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাউকে এ ধরনের মামলায় হয়রানি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে কাউকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না।
প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী : পুলিশ সংস্কার কমিশন সামগ্রিক বিষয় ধর্তব্য নিয়ে একটি নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করে।
প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে নাকি সাংবিধানিক কাঠামোভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হবে তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
পুলিশ কমিশন গঠন, কার্যপরিধি, সাংবিধানিক বা আইনি বাধ্যবাধকতা, আইনে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয়াদি বিচার-বিশ্লেষণ ও যথাযথ পরীক্ষা ও নিরীক্ষা করা দরকার।
থানায় জিডি, মামলা তদন্ত প্রসঙ্গ: থানায় জিডি গ্রহণ বাধ্যতামূলক, কোনোক্রমেই জিডি গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। মামলা নেয়ায় কোনো অনীহা বা বিলম্ব করা যাবে না।
ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য একটি বিশেষায়িত দল গঠন করতে হবে। যাদের তদন্তসংক্রান্ত ইউনিট ও থানা ব্যতীত অন্যত্র বদলি করা যাবে না। ভবিষ্যতে মামলা পরিচালনা ও তদন্ত একটি ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের অধীনে পরিচালিত হতে হবে এবং তারা ফৌজদারি মামলা প্রসিকিউশনসংক্রান্ত একটি বিশেষ তদন্ত দল হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন : জাতীয় পরিচয়পত্র দানকারী চাকরি প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা অনুসন্ধানের বাধ্যবাধকতা রহিত করা যেতে পারে। চাকরি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা/শিক্ষা সনদপত্র/ ট্রান্সক্রিপ্ট/ মার্কশিট ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করার দায়-দায়িত্ব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে। এগুলো পুলিশ ভেরিফিকেশনের অংশ হবে না।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রহিত করাসহ এসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংস্কার করা যেতে পারে। তবে চাকরি প্রার্থী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখ-তাসংক্রান্ত কোনো কর্মকা-ে জড়িত থাকলে তা ভেরিফিকেশন রিপোর্টে প্রতিফলিত করতে হবে।
চাকরির জন্য সব পুলিশ ভেরিফিকেশন সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে সমাপ্ত করতে হবে। অতিরিক্ত সময়ের দরকার হলে সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
যুগোপযোগী আইন ও প্রবিধিমালা : ব্রিটিশ আমলের প্রণীত কিছু কিছু আইন ও প্রবিধান যুগের প্রয়োজনে সংস্কার ও হালনাগাদ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যেমন পুলিশ আইন, ১৮৬১: পুলিশকে জনবান্ধব ও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক বাহিনী /প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য এই আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিমার্জন অথবা নতুন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ : বলপ্রয়োগ মানবাধিকার সুরক্ষা এ আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে।
পিআরবি ১৯৪৩: জনবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক পুলিশ বাহিনী গঠনে এ প্রবিধানমালায় সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পরিবর্তন, পরিমার্জন অথবা নতুন প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
পুলিশের দুর্নীতি ও প্রতিকার : পুলিশের কাজকর্মে ইচ্ছাকৃত ব্যত্যয় বা পেশাদারি দুর্নীতি রোধে দুর্নীতি স্বল্পমেয়াদি একটি কার্যক্রম হিসেবে ওয়াচডগ বা ওভারসাইট কমিটি গঠন করা যায়।
প্রতিটি থানা ও উপজেলায় একটি সর্বদলীয় কমিটি গড়ে তোলা যায়। যারা স্থানীয় পর্যায়ে ওভারসাইট বডি হিসেবে কাজ করবে এবং দুর্নীতিরোধে কার্যক্রম ব্যবস্থা নিবে।
বিশেষ টাস্কফোর্স : পুলিশের দুর্নীতি রোধে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা যায়। সর্বদলীয় কমিটির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যাবতীয় বিষয়ে ধর্তব্য নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ প্রণয়নের জন্য টাস্কফোর্সকে দায়িত্ব প্রদান করা যায়।
পুলিশের দুর্নীতি প্রতিরোধে থানাকেন্দ্রিক জিডি গ্রহণে বিলম্ব করলে /ওজর আপত্তি করলে বা কোনো রকম দুর্নীতির প্রমাণ যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
মামলার তদন্ত ব্যয় বৃদ্ধি জিডি, ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমের জন্য প্রতি থানায় বিশেষ বরাদ্দ ও ভাতার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে। থানায় বাদী বা বিবাদীদের মধ্যে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা করা যাবে না।
মানবাধিকার : আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য সরাসরি সমস্ত পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার জন্য পুলিশ সংস্থার কমিশনের পক্ষ থেকে জোর সুপারিশ করা হয়েছে। এভাবে পুলিশ সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশন তাদের একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জমা দিয়েছেন।
এই সংস্কার সুপারিশ নিয়ে আরও একটি ঐকমত্যের কমিশন হবে। সেখানে তা চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।