দেশে চলমান গ্যাস সংকট মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ, সিস্টেমলস কমানো, প্রিপেইড মিটার স্থাপন, দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে গ্যাস কূপ খনন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশে দৈনিক প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। আমদানি করা এলএনজি মিলিয়ে সরবরাহ করা যাচ্ছে আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার আটশ’ এমএমসিএফের মতো। দৈনিক বারোশ’ থেকে দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে শিল্প উৎপাদন পর্যন্ত। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জ্বালানি খাতে চ্যালেঞ্জ অনেক। স্বল্প সময়ে সমস্যার সমাধান করা কঠিন। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি, দুই ধরনের পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছি।’ দেশে যত্রতত্র অবৈধ গ্যাস সংযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দুইশ’ ম্যাজিস্টেট নিয়েছি। আমাদের বিতরণ কোম্পানিগুলোর জিএমদের জোন ভাগ করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অবৈধ সংযোগ থাকলে তাকে দায় নিতে হবে। উচ্ছেদে যারা এগিয়ে থাকবে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।’
ভোলার গ্যাস
সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, দ্বীপ জেলা ভোলার দু’টি গ্যাস ফিল্ড থেকে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন গ্যাস এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আকারে আনার প্রক্রিয়া চলমান। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে সরবরাহ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। এলএনজি আকার আনার পাশাপাশি ভোলা-বরিশাল-খুলনা এবং বরিশাল থেকে ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ওই এলাকায় ৮ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুদ আশা করা হচ্ছে।’ কাগজপত্রে ১২ টিসিএফ মজুদের কথা বলা হলেও কিছুটা কম করেই বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভোলায় দু’টি গ্যাসফিল্ডে মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে। যা দিয়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। ৯টি কূপের মধ্যে ৫টি এখনই গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম রয়েছে যেগুলো থেকে দৈনিক ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া সম্ভব। গ্যাসের চাহিদা না থাকায় মাত্র ৮০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, আবার পাইপলাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে দেয়া যাচ্ছে। অপর ৪টি কূপের মধ্যে ১টির পাইপলাইন এবং ৩টি কূপের প্রসেস প্লান্ট রেডি হচ্ছে।ওই এলাকায় আরও ১০টি কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকে ধারণা করেন সেখানে ১২ টিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে। পাইপ লাইন করতে গেলে ৫ বছর সময় প্রয়োজন হবে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে এলএনজি আকারে আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। দু’টি ফিল্ডের মধ্যে ১টি থেকে ৬০ মিলিয়ন অন্যটি থেকে ২০ মিলিয়ন আনা হবে।’
সংস্কার
গ্যাস সংকট নিয়ে কী ভাবছে সরকার, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এরমধ্যে রয়েছে চুরি ও সিস্টেমলস কমিয়ে উন্নতি করা। গড়ে ১০ শতাংশের মতো সিস্টেমলস রয়েছে। কিছু কূপের সংস্কার (ওয়ার্কওভার) করে উৎপাদন বাড়ানো এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোরদার করা। আমরা ১০০টি কূপ খননের প্রক্রিয়া শুরু করেছি, বাপেক্সের জন্য আরও ৩টি রিগ কেনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি রিগের টেন্ডার করা হয়েছে। পাশাপাশি সিসমিক সার্ভের কাজও হাতে নেয়া হয়েছে।’
*এফএসআরইউ*
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘আমাদের যে দুটি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট বা ভাসমান টার্মিনাল) রয়েছে যার মাধ্যমে বছরে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করা সম্ভব। আরও দুটি এফএসআরইউ স্থাপন এবং ল্যান্ডবেজড টার্মিনাল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা চাই দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে। না হলে এলএনজি আমদানি যত বাড়বে, গ্যাসের দাম তত বেড়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরে ১০১ কার্গো আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ৫৬ কার্গো আসছে জিটুজি (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে কাতার ও ওমান থেকে। ব্রুনাই থেকে জিটুটি ভিত্তিতে বছরে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নাইজেরিয়া এবং উজবেকিস্তান থেকে আমদানির জন্য আলোচনা চলমান রয়েছে। আমরা স্পর্ট থেকে সরে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে পুরো এলএনজি আমদানির দিকে যাচ্ছি।’
*গ্যাসের দাম*
দাম প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘১০১ কার্গো আমদানি করে বিদ্যমান দরে বিক্রি করলে বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। যা বছরে দাঁড়াবে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে আসছে অর্ধেকের মতো। আর ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে জোগান দেয়া হচ্ছে। এতে ২৫ শতাংশ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আমদানির পর মিশ্রিত গ্যাসের দর পড়ছে ৩০ টাকার মতো। আর বিক্রি করা হচ্ছে ২২.৮৭ টাকা হারে। এতে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যে কারণে আমরা নতুন শিল্পে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দামের বিষয়টি এখন বিইআরসি দেখছে। তারা তাদের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে।’
পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, দেশে ৮টি গ্রাহক শ্রেণিতে অনুমোদিত লোডের পরিমাণ রয়েছে ৫ হাজার ৩৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট (দৈনিক)। এর বিপরীতে চাহিদা ধারণা করা হয় ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে, আর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিয়নের মতো।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১ টাকা দরে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি থেকে ১.২৫ টাকা দরে, বাপেক্স থেকে ৪ টাকা দরে প্রতি ঘনফুট গ্যাস কেনা হয়। এরপর বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও টাল্লোর কাছ থেকে কেনা গ্যাসের সংমিশ্রণে গড় দর দাঁড়ায় ৬.০৭ টাকা ঘনমিটার। আর প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানি মূল্য পড়ছে ৬৫.৭০ টাকা (আগস্ট ২০২৪)। ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৫.৭২ টাকা। ফলে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের প্রাইস গ্যাপ কমাতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করলে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১৬ হাজার ১৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকার মতো ঘাটতি হবে বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা। যে কারণে তারা নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভে ১৫২ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসছে। এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত। ২ ফেব্রুয়ারির তথ্যানুযায়ী উৎপাদন ১৯০৩ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। প্রতি দিনেই কমে আসছে দেশীয় ফিল্ডের উৎপাদন।
মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
দেশে চলমান গ্যাস সংকট মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ, সিস্টেমলস কমানো, প্রিপেইড মিটার স্থাপন, দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে গ্যাস কূপ খনন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশে দৈনিক প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। আমদানি করা এলএনজি মিলিয়ে সরবরাহ করা যাচ্ছে আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার আটশ’ এমএমসিএফের মতো। দৈনিক বারোশ’ থেকে দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে শিল্প উৎপাদন পর্যন্ত। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জ্বালানি খাতে চ্যালেঞ্জ অনেক। স্বল্প সময়ে সমস্যার সমাধান করা কঠিন। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি, দুই ধরনের পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছি।’ দেশে যত্রতত্র অবৈধ গ্যাস সংযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দুইশ’ ম্যাজিস্টেট নিয়েছি। আমাদের বিতরণ কোম্পানিগুলোর জিএমদের জোন ভাগ করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অবৈধ সংযোগ থাকলে তাকে দায় নিতে হবে। উচ্ছেদে যারা এগিয়ে থাকবে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।’
ভোলার গ্যাস
সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, দ্বীপ জেলা ভোলার দু’টি গ্যাস ফিল্ড থেকে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন গ্যাস এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আকারে আনার প্রক্রিয়া চলমান। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে সরবরাহ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। এলএনজি আকার আনার পাশাপাশি ভোলা-বরিশাল-খুলনা এবং বরিশাল থেকে ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ওই এলাকায় ৮ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুদ আশা করা হচ্ছে।’ কাগজপত্রে ১২ টিসিএফ মজুদের কথা বলা হলেও কিছুটা কম করেই বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভোলায় দু’টি গ্যাসফিল্ডে মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে। যা দিয়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। ৯টি কূপের মধ্যে ৫টি এখনই গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম রয়েছে যেগুলো থেকে দৈনিক ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া সম্ভব। গ্যাসের চাহিদা না থাকায় মাত্র ৮০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, আবার পাইপলাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে দেয়া যাচ্ছে। অপর ৪টি কূপের মধ্যে ১টির পাইপলাইন এবং ৩টি কূপের প্রসেস প্লান্ট রেডি হচ্ছে।ওই এলাকায় আরও ১০টি কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকে ধারণা করেন সেখানে ১২ টিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে। পাইপ লাইন করতে গেলে ৫ বছর সময় প্রয়োজন হবে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে এলএনজি আকারে আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। দু’টি ফিল্ডের মধ্যে ১টি থেকে ৬০ মিলিয়ন অন্যটি থেকে ২০ মিলিয়ন আনা হবে।’
সংস্কার
গ্যাস সংকট নিয়ে কী ভাবছে সরকার, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এরমধ্যে রয়েছে চুরি ও সিস্টেমলস কমিয়ে উন্নতি করা। গড়ে ১০ শতাংশের মতো সিস্টেমলস রয়েছে। কিছু কূপের সংস্কার (ওয়ার্কওভার) করে উৎপাদন বাড়ানো এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোরদার করা। আমরা ১০০টি কূপ খননের প্রক্রিয়া শুরু করেছি, বাপেক্সের জন্য আরও ৩টি রিগ কেনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি রিগের টেন্ডার করা হয়েছে। পাশাপাশি সিসমিক সার্ভের কাজও হাতে নেয়া হয়েছে।’
*এফএসআরইউ*
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘আমাদের যে দুটি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট বা ভাসমান টার্মিনাল) রয়েছে যার মাধ্যমে বছরে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করা সম্ভব। আরও দুটি এফএসআরইউ স্থাপন এবং ল্যান্ডবেজড টার্মিনাল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা চাই দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে। না হলে এলএনজি আমদানি যত বাড়বে, গ্যাসের দাম তত বেড়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরে ১০১ কার্গো আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ৫৬ কার্গো আসছে জিটুজি (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে কাতার ও ওমান থেকে। ব্রুনাই থেকে জিটুটি ভিত্তিতে বছরে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নাইজেরিয়া এবং উজবেকিস্তান থেকে আমদানির জন্য আলোচনা চলমান রয়েছে। আমরা স্পর্ট থেকে সরে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে পুরো এলএনজি আমদানির দিকে যাচ্ছি।’
*গ্যাসের দাম*
দাম প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘১০১ কার্গো আমদানি করে বিদ্যমান দরে বিক্রি করলে বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। যা বছরে দাঁড়াবে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে আসছে অর্ধেকের মতো। আর ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে জোগান দেয়া হচ্ছে। এতে ২৫ শতাংশ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আমদানির পর মিশ্রিত গ্যাসের দর পড়ছে ৩০ টাকার মতো। আর বিক্রি করা হচ্ছে ২২.৮৭ টাকা হারে। এতে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যে কারণে আমরা নতুন শিল্পে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দামের বিষয়টি এখন বিইআরসি দেখছে। তারা তাদের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে।’
পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, দেশে ৮টি গ্রাহক শ্রেণিতে অনুমোদিত লোডের পরিমাণ রয়েছে ৫ হাজার ৩৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট (দৈনিক)। এর বিপরীতে চাহিদা ধারণা করা হয় ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে, আর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিয়নের মতো।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১ টাকা দরে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি থেকে ১.২৫ টাকা দরে, বাপেক্স থেকে ৪ টাকা দরে প্রতি ঘনফুট গ্যাস কেনা হয়। এরপর বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও টাল্লোর কাছ থেকে কেনা গ্যাসের সংমিশ্রণে গড় দর দাঁড়ায় ৬.০৭ টাকা ঘনমিটার। আর প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানি মূল্য পড়ছে ৬৫.৭০ টাকা (আগস্ট ২০২৪)। ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৫.৭২ টাকা। ফলে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের প্রাইস গ্যাপ কমাতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করলে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১৬ হাজার ১৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকার মতো ঘাটতি হবে বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা। যে কারণে তারা নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভে ১৫২ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসছে। এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত। ২ ফেব্রুয়ারির তথ্যানুযায়ী উৎপাদন ১৯০৩ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। প্রতি দিনেই কমে আসছে দেশীয় ফিল্ডের উৎপাদন।