alt

জাতীয়

বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা’ নিশ্চিতে ৩৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে নানা সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন -সংবাদ

বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা’ নিশ্চিতে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস, স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন, উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণ এবং আদালত অঙ্গনকে দলীয়করণমুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনায়’ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইইনূসের কাছে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন।

কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক জানিয়েছেন, ৩৫২ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ৩২টি অধ্যায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংস্কারে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে একটি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।

এই কমিশন মামলার পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনতে ‘স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস’ গঠনের সুপারিশ করেছে। কমিশনের মতে, বর্তমানে পুলিশের তদন্তে প্রভাব বা পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রভাব ফেলে। এ সমস্যা দূর করতে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যাতে মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দায়িত্ব পুলিশের একচ্ছত্র অধীনে না থাকে।

আদালত ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়নের জন্য সাংবিধানিক সংশোধনী প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি জেলা আদালতের কাঠামো সম্প্রসারণ করে উপজেলা পর্যায়ে নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজে বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে।

কমিশন বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আইনগত সহায়তা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেছে। কমিশনের মতে, দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনেক সময় আইনি সহায়তা পায় না, যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ সমস্যা সমাধানে চলমান আইনি সহায়তা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা কার্যকর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি আইনজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকা- কীভাবে আদালতের বাইরে রাখা যায়, সে বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে আদালত অঙ্গন দলীয়করণ মুক্ত থাকে।

আইনি শিক্ষার মানোন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেধাবী শিক্ষার্থীদের আইন পেশায় আকৃষ্ট করতে মেডিকেল শিক্ষার মতো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এতে আইনজীবীদের মান উন্নত হবে এবং বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়বে।

এসব সুপারিশ কার্যকর করতে বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিচারকদের স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার করা দরকার।

প্রতিবেদনে রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালত সম্প্রসারণ এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

এক্ষেত্রে সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্থায়ী বেঞ্চ কোন কোন এলাকা থেকে উদ্ভূত মামলা গ্রহণ করতে পারবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবে বিচারকাজ পরিচালনা এবং রায়, আদেশ, নির্দেশ ইত্যাদি দেয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বজায় রাখতে হবে।

এটি হলে স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে দেশব্যাপী কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা দিয়ে বিভাজিত হবে না এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণ হবে না।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বা কোনো স্থায়ী বেঞ্চে বিচারাধীন মামলার কোনো পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে যৌক্তিক কারণে বা ন্যায়বিচারের স্বার্থে ওই মামলা অন্য কোনো যথাযথ বেঞ্চে স্থানান্তর করতে পারবেন।

তবে সব স্থায়ী বেঞ্চ এক সঙ্গে কার্যকর করা কঠিন মনে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ কার্যকর করা যেতে পারে।

বিভাগীয় স্থায়ী বেঞ্চগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আদালত ও সহায়ক কার্যালয়, বিচারক ও সহায়ক জনবলের জন্য উপযুক্ত বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করারও সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের জুনে সংবিধান সংশোধন করে ছয়টি বিভাগে হাইকোর্টের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। এতে সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য পাল্টে যাবেÑ এমন যুক্তিসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তৎকালীন আইনজীবীরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।

হাইকোর্টে ওই গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটও করা হয়। পরে সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ অষ্টম সংশোধনীর বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের অংশটুকু অবৈধ ঘোষণা করে বিভক্ত রায় দেয়। চার বিচারপতির বেঞ্চে একজন ওই সংশোধনীর পক্ষে ছিলেন।

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, ফাঁসির সব আসামি খালাস

শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল, ‘নাম ও প্রতীক’ নির্ধারণে হবে জনমত জরিপ

ছবি

নির্বাচন কবে তা নির্ভর করবে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের ওপর: প্রেস সচিব

জনপ্রশাসন সংস্কার: ৪ প্রদেশ ও সরকারের আকার কমানোর সুপারিশ

ছবি

ঢাকা ক্যাপিটাল সিটি সরকার গঠনের সুপারিশ

ছবি

বিচারবিভাগ সংস্কারে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস ও বিভাগীয় শহরে হাই কোর্ট বেঞ্চের সুপারিশ

জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পদবি পরিবর্তনের সুপারিশ

ছবি

প্রশাসন ও বিচারবিভাগের রূপরেখা বিশ্বের প্রতিটি নাগরিকের প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সাবেক এমপি ফজলে করিমকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

ছবি

কারণে-অকারণে অবরোধ, ধৈর্যের সীমা শেষ করে দিচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

দ্বিতীয় আখেরী মোনাজাতে মুসলিম উম্মার শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি কামনা

ছবি

বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর

ছবি

নতুন ও মৃত ভোটার কম কেন? অনুসন্ধান করবে ইসি

ছবি

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে জাবিতে পোষ্য কোটা বাতিল

ছবি

গাজা উপত্যকা দখল করবে যুক্তরাষ্ট্র, বলছেন ট্রাম্প

ছবি

ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ

ছবি

উত্তরবঙ্গের সব পেট্রোল পাম্প অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

ছবি

মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্যপণ্যের দাম এখনও চড়া

ছবি

বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে কানাডার সহযোগিতা কামনা প্রধান উপদেষ্টার

চিন্ময় কেন জামিন পাবেন না প্রশ্ন হাইকোর্টের

ভোটার তালিকা: অর্ধ কোটি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করেছে ইসি

জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে শতাধিক সুপারিশ, বাস্তবায়ন সম্ভব বললেন কমিশনপ্রধান

গ্যাস সংকট মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ের বহুমুখী পরিকল্পনা

ছবি

যুবদল নেতা তৌহিদুলের পরিবারের পাশে থাকবে সেনাবাহিনী

ছবি

সরকারের ‘আশ্বাসে’ এক সপ্তাহ পর শ্রেণীকক্ষে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

পুলিশের পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের পরিকল্পনার সুপারিশ

ছবি

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করবে বাংলাদেশ-কুয়েত

ছবি

মে থেকে শুক্রবারেও মেট্রোরেল চলবে সারা দিন

ছবি

সিআরআই-এর ব্যাংক হিসাবে ৩৫ কোটি টাকার এফডিআর: দুদকের অনুসন্ধান

ছবি

টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার অনুমতি পেল সা’দপন্থিরা

ছবি

পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে ১৫ মিনিট সময় চেয়েও পাইনি : বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী

ছবি

আবদুল্লাহপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে একক কোম্পানির অধীনে বাস পরিচালনা শুরু

ছবি

আদাবর থেকে নিখোঁজ শিশু সুবার সন্ধান মিলেছে নওগাঁয়

ছবি

নতুন ভোটার যুক্ত হচ্ছেন ৫০ লাখ

ছবি

জানুয়ারিতে সড়কে ঝড়েছে ৬০৮ প্রাণ, প্রায় অর্ধেক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়

ছবি

চিন্ময়কে কেন জামিন দেওয়া হবে না, উচ্চ আদালতের প্রশ্ন

tab

জাতীয়

বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা’ নিশ্চিতে ৩৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে নানা সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন -সংবাদ

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা’ নিশ্চিতে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস, স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন, উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণ এবং আদালত অঙ্গনকে দলীয়করণমুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনায়’ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইইনূসের কাছে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন।

কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক জানিয়েছেন, ৩৫২ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ৩২টি অধ্যায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংস্কারে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে একটি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।

এই কমিশন মামলার পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনতে ‘স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস’ গঠনের সুপারিশ করেছে। কমিশনের মতে, বর্তমানে পুলিশের তদন্তে প্রভাব বা পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রভাব ফেলে। এ সমস্যা দূর করতে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যাতে মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দায়িত্ব পুলিশের একচ্ছত্র অধীনে না থাকে।

আদালত ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়নের জন্য সাংবিধানিক সংশোধনী প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি জেলা আদালতের কাঠামো সম্প্রসারণ করে উপজেলা পর্যায়ে নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজে বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে।

কমিশন বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আইনগত সহায়তা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেছে। কমিশনের মতে, দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনেক সময় আইনি সহায়তা পায় না, যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ সমস্যা সমাধানে চলমান আইনি সহায়তা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা কার্যকর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি আইনজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকা- কীভাবে আদালতের বাইরে রাখা যায়, সে বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে আদালত অঙ্গন দলীয়করণ মুক্ত থাকে।

আইনি শিক্ষার মানোন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেধাবী শিক্ষার্থীদের আইন পেশায় আকৃষ্ট করতে মেডিকেল শিক্ষার মতো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এতে আইনজীবীদের মান উন্নত হবে এবং বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়বে।

এসব সুপারিশ কার্যকর করতে বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিচারকদের স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার করা দরকার।

প্রতিবেদনে রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালত সম্প্রসারণ এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

এক্ষেত্রে সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্থায়ী বেঞ্চ কোন কোন এলাকা থেকে উদ্ভূত মামলা গ্রহণ করতে পারবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবে বিচারকাজ পরিচালনা এবং রায়, আদেশ, নির্দেশ ইত্যাদি দেয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বজায় রাখতে হবে।

এটি হলে স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে দেশব্যাপী কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা দিয়ে বিভাজিত হবে না এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণ হবে না।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বা কোনো স্থায়ী বেঞ্চে বিচারাধীন মামলার কোনো পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে যৌক্তিক কারণে বা ন্যায়বিচারের স্বার্থে ওই মামলা অন্য কোনো যথাযথ বেঞ্চে স্থানান্তর করতে পারবেন।

তবে সব স্থায়ী বেঞ্চ এক সঙ্গে কার্যকর করা কঠিন মনে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ কার্যকর করা যেতে পারে।

বিভাগীয় স্থায়ী বেঞ্চগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আদালত ও সহায়ক কার্যালয়, বিচারক ও সহায়ক জনবলের জন্য উপযুক্ত বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করারও সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের জুনে সংবিধান সংশোধন করে ছয়টি বিভাগে হাইকোর্টের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। এতে সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য পাল্টে যাবেÑ এমন যুক্তিসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তৎকালীন আইনজীবীরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।

হাইকোর্টে ওই গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটও করা হয়। পরে সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ অষ্টম সংশোধনীর বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের অংশটুকু অবৈধ ঘোষণা করে বিভক্ত রায় দেয়। চার বিচারপতির বেঞ্চে একজন ওই সংশোধনীর পক্ষে ছিলেন।

back to top