alt

বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা’ নিশ্চিতে ৩৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে নানা সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন -সংবাদ

বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা’ নিশ্চিতে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস, স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন, উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণ এবং আদালত অঙ্গনকে দলীয়করণমুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনায়’ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইইনূসের কাছে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন।

কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক জানিয়েছেন, ৩৫২ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ৩২টি অধ্যায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংস্কারে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে একটি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।

এই কমিশন মামলার পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনতে ‘স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস’ গঠনের সুপারিশ করেছে। কমিশনের মতে, বর্তমানে পুলিশের তদন্তে প্রভাব বা পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রভাব ফেলে। এ সমস্যা দূর করতে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যাতে মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দায়িত্ব পুলিশের একচ্ছত্র অধীনে না থাকে।

আদালত ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়নের জন্য সাংবিধানিক সংশোধনী প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি জেলা আদালতের কাঠামো সম্প্রসারণ করে উপজেলা পর্যায়ে নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজে বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে।

কমিশন বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আইনগত সহায়তা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেছে। কমিশনের মতে, দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনেক সময় আইনি সহায়তা পায় না, যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ সমস্যা সমাধানে চলমান আইনি সহায়তা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা কার্যকর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি আইনজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকা- কীভাবে আদালতের বাইরে রাখা যায়, সে বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে আদালত অঙ্গন দলীয়করণ মুক্ত থাকে।

আইনি শিক্ষার মানোন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেধাবী শিক্ষার্থীদের আইন পেশায় আকৃষ্ট করতে মেডিকেল শিক্ষার মতো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এতে আইনজীবীদের মান উন্নত হবে এবং বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়বে।

এসব সুপারিশ কার্যকর করতে বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিচারকদের স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার করা দরকার।

প্রতিবেদনে রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালত সম্প্রসারণ এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

এক্ষেত্রে সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্থায়ী বেঞ্চ কোন কোন এলাকা থেকে উদ্ভূত মামলা গ্রহণ করতে পারবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবে বিচারকাজ পরিচালনা এবং রায়, আদেশ, নির্দেশ ইত্যাদি দেয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বজায় রাখতে হবে।

এটি হলে স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে দেশব্যাপী কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা দিয়ে বিভাজিত হবে না এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণ হবে না।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বা কোনো স্থায়ী বেঞ্চে বিচারাধীন মামলার কোনো পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে যৌক্তিক কারণে বা ন্যায়বিচারের স্বার্থে ওই মামলা অন্য কোনো যথাযথ বেঞ্চে স্থানান্তর করতে পারবেন।

তবে সব স্থায়ী বেঞ্চ এক সঙ্গে কার্যকর করা কঠিন মনে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ কার্যকর করা যেতে পারে।

বিভাগীয় স্থায়ী বেঞ্চগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আদালত ও সহায়ক কার্যালয়, বিচারক ও সহায়ক জনবলের জন্য উপযুক্ত বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করারও সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের জুনে সংবিধান সংশোধন করে ছয়টি বিভাগে হাইকোর্টের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। এতে সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য পাল্টে যাবেÑ এমন যুক্তিসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তৎকালীন আইনজীবীরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।

হাইকোর্টে ওই গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটও করা হয়। পরে সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ অষ্টম সংশোধনীর বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের অংশটুকু অবৈধ ঘোষণা করে বিভক্ত রায় দেয়। চার বিচারপতির বেঞ্চে একজন ওই সংশোধনীর পক্ষে ছিলেন।

ছবি

ঢাকার চেয়ে রাজশাহী ও খুলনার বায়ুদূষণ বেশি

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ফিরলে সংসদের ক্ষমতাকে খর্ব করবে কিনা, প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির

ছবি

১২ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার মৃত্যু

ছবি

সেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌযান চলাচলে পরিবেশ মন্ত্রণালয়েরও অনুমোদন লাগবে

ছবি

হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ধোঁয়াশা, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ: আইএলওর তিনটি কনভেনশনে সই করল অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে বাধ্যতামূলক ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ

ছবি

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি, বললেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ছবি

এক দিনে ডেঙ্গুতে দুইজনের মৃত্যু, চলতি বছর প্রাণহানি ২৫৫

ছবি

কোনো চাপের কাছে ইসি নতি স্বীকার করবে না: সিইসি নাসির

ছবি

আত্মসমর্পণকারী সেনা কর্মকর্তারা নির্দোষ, অপরাধীরা ভারতে পালিয়েছেন: আইনজীবী

ছবি

১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

ছবি

নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার রোধে সহযোগিতা চাইলেন সিইসি

ছবি

১০ চুক্তি বাতিলের বিষয়ে জানেনা ভারতীয় হাইকমিশন

ছবি

ইউনূসকে চিঠি দিয়ে ‘উদ্বেগ’: একগুচ্ছ আহ্বান আন্তর্জাতিক ৬ মানবাধিকার সংস্থার

ছবি

‘টার্গেট’ করে হত্যার অভিযোগ সঠিক নয়: যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রনিযুক্ত হাসিনার আইনজীবী

ছবি

ভারতের সঙ্গে চুক্তি ‘বাতিলের তালিকা সঠিক নয়’: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

অভিযুক্ত ২৫ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে বুধবার হাজির না হলে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি: প্রসিকিউশন

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ মৃত্যু, হাসপাতালে ৮১৪ জন

ছবি

জোবায়েদ হত্যা: ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছবি

শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিত, প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতি

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ছে ১৫ শতাংশ, কার্যকর দুই ধাপে

ছবি

জবির জোবায়েদ হত্যা: ৪১ ঘন্টা পর মামলা, ৩জন গ্রেপ্তার

ছবি

২৫ সেপ্টেম্বর থেকে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী ও তার প্রেমিক: পুলিশ

ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান: ‘হত্যা’ মামলার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

ছবি

নতুন হ্যাকার গ্রুপ ‘মিস্টিরিয়াস এলিফ্যান্ট’: টার্গেটে বাংলাদেশও

ছবি

ডেঙ্গু: একদিনে মৃত্যু ৪, হাসপাতালে ভর্তি ৯৪২ জন

ছবি

ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচার মানে ‘হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে আসামিকে বলা সাঁতার কাটো’: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী

ছবি

নির্বাচনের ‘সহায়ক পরিবেশ আছে’, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ‘উদ্বেগ নেই’: ইসি সচিব

ছবি

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন: ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

জুলাই যোদ্ধারা আইডি কার্ড ও আইনি সুরক্ষা চায়, বৈঠকে গুরুত্বারোপ

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে যুক্তিতর্ক শুরু করলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী

ছবি

নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমাবেশ, একশজনের অনশন চলছে

tab

বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা’ নিশ্চিতে ৩৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে নানা সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন -সংবাদ

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা’ নিশ্চিতে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস, স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন, উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণ এবং আদালত অঙ্গনকে দলীয়করণমুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনায়’ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইইনূসের কাছে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন।

কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক জানিয়েছেন, ৩৫২ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ৩২টি অধ্যায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংস্কারে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে একটি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।

এই কমিশন মামলার পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনতে ‘স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস’ গঠনের সুপারিশ করেছে। কমিশনের মতে, বর্তমানে পুলিশের তদন্তে প্রভাব বা পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রভাব ফেলে। এ সমস্যা দূর করতে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যাতে মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দায়িত্ব পুলিশের একচ্ছত্র অধীনে না থাকে।

আদালত ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়নের জন্য সাংবিধানিক সংশোধনী প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি জেলা আদালতের কাঠামো সম্প্রসারণ করে উপজেলা পর্যায়ে নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজে বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে।

কমিশন বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আইনগত সহায়তা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেছে। কমিশনের মতে, দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনেক সময় আইনি সহায়তা পায় না, যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ সমস্যা সমাধানে চলমান আইনি সহায়তা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা কার্যকর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি আইনজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকা- কীভাবে আদালতের বাইরে রাখা যায়, সে বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে আদালত অঙ্গন দলীয়করণ মুক্ত থাকে।

আইনি শিক্ষার মানোন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেধাবী শিক্ষার্থীদের আইন পেশায় আকৃষ্ট করতে মেডিকেল শিক্ষার মতো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এতে আইনজীবীদের মান উন্নত হবে এবং বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়বে।

এসব সুপারিশ কার্যকর করতে বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিচারকদের স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার করা দরকার।

প্রতিবেদনে রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালত সম্প্রসারণ এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

এক্ষেত্রে সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্থায়ী বেঞ্চ কোন কোন এলাকা থেকে উদ্ভূত মামলা গ্রহণ করতে পারবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবে বিচারকাজ পরিচালনা এবং রায়, আদেশ, নির্দেশ ইত্যাদি দেয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বজায় রাখতে হবে।

এটি হলে স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে দেশব্যাপী কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা দিয়ে বিভাজিত হবে না এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণ হবে না।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বা কোনো স্থায়ী বেঞ্চে বিচারাধীন মামলার কোনো পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে যৌক্তিক কারণে বা ন্যায়বিচারের স্বার্থে ওই মামলা অন্য কোনো যথাযথ বেঞ্চে স্থানান্তর করতে পারবেন।

তবে সব স্থায়ী বেঞ্চ এক সঙ্গে কার্যকর করা কঠিন মনে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ কার্যকর করা যেতে পারে।

বিভাগীয় স্থায়ী বেঞ্চগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আদালত ও সহায়ক কার্যালয়, বিচারক ও সহায়ক জনবলের জন্য উপযুক্ত বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করারও সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের জুনে সংবিধান সংশোধন করে ছয়টি বিভাগে হাইকোর্টের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। এতে সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য পাল্টে যাবেÑ এমন যুক্তিসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তৎকালীন আইনজীবীরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।

হাইকোর্টে ওই গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটও করা হয়। পরে সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ অষ্টম সংশোধনীর বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের অংশটুকু অবৈধ ঘোষণা করে বিভক্ত রায় দেয়। চার বিচারপতির বেঞ্চে একজন ওই সংশোধনীর পক্ষে ছিলেন।

back to top