রাজধানী ঢাকার বাতাসে দূষণ বেড়েই চলেছে। গতকাল পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল। ৫ ফেব্রুয়ারি সংবাদ-এর ফটোসাংবাদিক সোহরাব আলমের ক্যামেরায় তোলা ঢাকা দূষণের এই চিত্র
বায়ুমান ৩০০-এর যদি বেশি হয়, তবে সেখানে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি আছে বলে ধরা হয়। যদি পরপর তিন দিন তিন ঘণ্টা করে এমন অবস্থা থাকে, তবে ওই এলাকায় স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা হয় সাধারণত।
আইকিউএয়ারের মানসূচকে গতকাল সকাল ১০টায় ঢাকার গড় বায়ুর মান ছিল ৫৪২। এমন অবস্থাকে ‘অস্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক’ বলছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। তাদের বক্তব্য, দূষণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কার্যত ব্যর্থ। এখন তাদের উচিত রাজধানীতে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা। এতে নাগরিকদের কিছুটা হলেও সুরক্ষা হবে বলে মনে করছেন তারা।
গতকাল বিশ্বের ১২৪ নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে। বায়ুদূষণে ঢাকার এ অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করে। ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার গতকাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এ সময়ে এত বায়ুদূষণ সত্যি অস্বাভাবিক। এখানে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই দূষণ পরিস্থিতি বাড়তে থাকে। রাতে ৫০০ পার হয়ে যায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে দূষণের মান ৫০০-এর ওপরে থাকে। পরিস্থিতি আজ (গতকাল) সত্যিই খুব নাজুক।’
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি সকালে ঢাকার বায়ুমান ছিল ৫১৮। তখন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, সেদিনের দূষণ অস্বাভাবিক। ওই দূষণ এই নতুন বছরে সর্বোচ্চ। গতকাল সেই ‘অস্বাভাবিক’ মানের চেয়ে দূষণের মান বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলছিলেন, আজকের দূষণ অস্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক। দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগগুলো আসলে কোনো কাজ দিচ্ছে না, তা স্পষ্ট। এখন অবশ্যই ঢাকায় স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা দরকার। তাহলে মানুষ অন্তত সচেতন হবে।
রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর মধ্যে যেসব এলাকায় বায়ুর মান মারাত্মক দূষিত, সেগুলোর মধ্যে আছে মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং (১১২৭), তেজগাঁওয়ের শান্তা ফোরাম (৭৬৯) ও সাভারের হেমায়েতপুর (৬৩৩)।
ঢাকাবাসীর উদ্দেশে আইকিউএয়ারের দেয়া সতর্কবার্তায়, বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরও একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২ দশমিক ৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ৬৯ গুণ বেশি।
রাজধানীতে অনেক আগেই স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি দরকার ছিল বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি গতকাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকার হয়তো মনে করে এতে জনভীতি তৈরি হবে। সে জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে না। কিন্তু বিষয়টি তো জনস্বাস্থ্যের স্বার্থেই করা উচিত।’
গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে একটি দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী। দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত জানুয়ারিতে দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জানুয়ারিতে ঢাকায় একাধিক দিন বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি হয়েছে। গতকাল অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর বায়ুর মানও নাজুক। এর মধ্যে বায়ুর মান চট্টগ্রামে ১৫৩, রাজশাহীতে ১৯৬ ও খুলনায় ১৮৭।
রাজধানী ঢাকার বাতাসে দূষণ বেড়েই চলেছে। গতকাল পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল। ৫ ফেব্রুয়ারি সংবাদ-এর ফটোসাংবাদিক সোহরাব আলমের ক্যামেরায় তোলা ঢাকা দূষণের এই চিত্র
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
বায়ুমান ৩০০-এর যদি বেশি হয়, তবে সেখানে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি আছে বলে ধরা হয়। যদি পরপর তিন দিন তিন ঘণ্টা করে এমন অবস্থা থাকে, তবে ওই এলাকায় স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা হয় সাধারণত।
আইকিউএয়ারের মানসূচকে গতকাল সকাল ১০টায় ঢাকার গড় বায়ুর মান ছিল ৫৪২। এমন অবস্থাকে ‘অস্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক’ বলছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। তাদের বক্তব্য, দূষণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কার্যত ব্যর্থ। এখন তাদের উচিত রাজধানীতে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা। এতে নাগরিকদের কিছুটা হলেও সুরক্ষা হবে বলে মনে করছেন তারা।
গতকাল বিশ্বের ১২৪ নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে। বায়ুদূষণে ঢাকার এ অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করে। ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার গতকাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এ সময়ে এত বায়ুদূষণ সত্যি অস্বাভাবিক। এখানে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই দূষণ পরিস্থিতি বাড়তে থাকে। রাতে ৫০০ পার হয়ে যায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে দূষণের মান ৫০০-এর ওপরে থাকে। পরিস্থিতি আজ (গতকাল) সত্যিই খুব নাজুক।’
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি সকালে ঢাকার বায়ুমান ছিল ৫১৮। তখন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, সেদিনের দূষণ অস্বাভাবিক। ওই দূষণ এই নতুন বছরে সর্বোচ্চ। গতকাল সেই ‘অস্বাভাবিক’ মানের চেয়ে দূষণের মান বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলছিলেন, আজকের দূষণ অস্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক। দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগগুলো আসলে কোনো কাজ দিচ্ছে না, তা স্পষ্ট। এখন অবশ্যই ঢাকায় স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা দরকার। তাহলে মানুষ অন্তত সচেতন হবে।
রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর মধ্যে যেসব এলাকায় বায়ুর মান মারাত্মক দূষিত, সেগুলোর মধ্যে আছে মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং (১১২৭), তেজগাঁওয়ের শান্তা ফোরাম (৭৬৯) ও সাভারের হেমায়েতপুর (৬৩৩)।
ঢাকাবাসীর উদ্দেশে আইকিউএয়ারের দেয়া সতর্কবার্তায়, বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরও একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২ দশমিক ৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ৬৯ গুণ বেশি।
রাজধানীতে অনেক আগেই স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি দরকার ছিল বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি গতকাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকার হয়তো মনে করে এতে জনভীতি তৈরি হবে। সে জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে না। কিন্তু বিষয়টি তো জনস্বাস্থ্যের স্বার্থেই করা উচিত।’
গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে একটি দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী। দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত জানুয়ারিতে দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জানুয়ারিতে ঢাকায় একাধিক দিন বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি হয়েছে। গতকাল অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর বায়ুর মানও নাজুক। এর মধ্যে বায়ুর মান চট্টগ্রামে ১৫৩, রাজশাহীতে ১৯৬ ও খুলনায় ১৮৭।