alt

মৃত্যুদণ্ড থাকলে ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা ‘করবে না’ জাতিসংঘ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল না করা হলে বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) চলমান বিচারপ্রক্রিয়ায় কোনো সহযোগিতা করতে পারবে না জাতিসংঘ। এছাড়া, আইসিটিতে বিচারপ্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ না করলে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশের কাছে দেয়া হবে না।

বুধবার দুপুরে জেনেভায় ‘বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রোরি মুনগোভেন। প্রতিবেদন প্রকাশের শুরুতে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক (আওয়ামী লীগ) সরকার জনতার প্রতিরোধের মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে ‘পরিকল্পিত’ ও ‘সমন্বিত কৌশলের’ মাধ্যমে নৃশংসতা চালিয়েছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্ব জানত এবং তাদের সমন্বয় ও নির্দেশেই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধীরা দেশের বাইরে থাকলে তাদের ফেরানোর বিষয়ে সর্বজনীন এখতিয়ার (ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন) প্রয়োগ করা যেতে পারে।’ সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে গুরুতর অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনতে পারে কোনো দেশের আদালত। এ ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনের স্থান কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না। ওই আইনের আওতায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার বা প্রত্যর্পণ চাওয়ার সুযোগ থাকে। মানবাধিকার লঙ্ঘনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে ফলকার টুর্ক বলেন, ‘প্রতিবেদনে এটা স্পষ্ট যে সাবেক সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল। প্রকৃতপক্ষে গুম, নির্বিচার গ্রেপ্তার, সহিংস পদ্ধতিতে বিক্ষোভ দমনের মতো নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল।’ মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন। এ ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ফলকার টুর্ক বলেন, ‘যদি অপরাধী দেশের বাইরে থাকে, তখন ‘ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন’ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যে দেশে অপরাধী অবস্থান করছে, তাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধের বিচার করতে সম্মত হতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) এ বিষয়ে তদন্তের জন্য বলতে পারে।’ তবে টুর্ক মনে করেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে। অভ্যন্তরীণ বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আইসিসিতে যাওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। তার মতে, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার কাজ শুরু হয়েছে এবং অনেকগুলো মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও মামলা করা হয়েছে। বাংলাদেশের আইনি কাঠামোতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

*বিচারপ্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড-*

এক প্রশ্নের উত্তরে রোরি মুনগোভেন বলেন, বিচারপ্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ না করলে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশের কাছে দেয়া হবে না। প্রতিবেদনে অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু আমরা প্রচুর তথ্য সংরক্ষণ করেছি। সর্বোচ্চ মান অনুযায়ী এসব সংরক্ষণ করা হচ্ছে যাতে পরে ব্যবহার করা যায়।

*মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল*

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে বাংলাদেশের বিচারিক প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করার বিষয়ে রোরি মুনগোভেন বলেন, ‘জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি আমাদের জন্য একটি সমস্যা। আমরা এমন বিচারে সহযোগিতা করতে পারি না যেটা মৃত্যুদণ্ডের দিকে নিয়ে যায়।’ বিচারপ্রক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলার বিষয়ে জোর দেন তিনি। রোরি মুনগোভেন বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। কারণ, এটি প্রতিশোধের একটি স্থায়ী চক্র তৈরি করে দেয়।’ মৃত্যুদণ্ড বিভিন্ন দেশে লুকিয়ে থাকা অপরাধীদের প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘অনেক সদস্য রাষ্ট্রের জন্য প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে সহযোগিতায় মৃত্যুদণ্ড একটি প্রতিবন্ধকতা।’

*জাতিসংঘের প্রতিবেদনে টুর্কের বক্তব্য*

বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্কের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। এতে টুর্ক বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতার মুখেও ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল সাবেক (আওয়ামী লীগ) সরকার। আর সে লক্ষ্য পূরণে বিক্ষোভ দমন করার কৌশল নিয়েছিল তারা। এর অংশ হিসেবে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গ্রেপ্তার-আটক ও নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।’ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ছিল। ক্ষমতায় থাকার জন্য সাবেক সরকার ক্রমাগত সহিংস পথ ব্যবহার করে পদ্ধতিগতভাবে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছিল। এ প্রসঙ্গে ফলকার টুর্ক বলেন, ‘জনবিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে একটি পরিকল্পিত এবং সুসমন্বিত কৌশল হিসেবে এমন নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল সাবেক সরকার। বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে, নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।’

টুর্ক আরও বলেন, ‘আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং নিশানা করে হত্যার এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। যা সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে পড়ে এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল বলেও বিবেচিত হতে পারে।’ জাতীয় ক্ষত সারাতে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাকে অপরিহার্য বলে মনে করেন ফলকার টুর্ক।

ছবি

ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাল বাংলাদেশ

ছবি

আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩৮ হাজার

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করতে অঙ্গীকার ইউনূসের

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি : মাইকেল মিলার

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার হাতে ১২ তরুণ পেলেন ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’

ছবি

ইসিতে নিবন্ধন: নতুন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ চলছে

ছবি

সেপ্টেম্বরের শেষে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি

ছবি

দ্বিমতের কোনো জায়গা নাই, এই সুযোগ আর আসবে না: ইউনূস

ছবি

নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারিত সময়ের আগেই

ছবি

মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোতে ১১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাত: ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা সিদ্ধান্ত

ছবি

টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি: দেড় মাসে নিবন্ধন প্রায় ৮৯ লাখ শিশু

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যোগদান

ছবি

মানুষের জন্ম উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

আসামের ভূমিকম্পে কাঁপলো বাংলাদেশ

ছবি

নারীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ২০ বছর করার ভাবনা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

সাগরে লঘুচাপ, ছয় বিভাগে ভারি বর্ষণের আভাস

ছবি

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই: উপদেষ্টা

ছবি

মরমী সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন মারা গেছেন

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ৩৭ হাজার ছাড়াল, চলতি বছর মৃতের সংখ্যা ১৪৭

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিআইজি ও মেহেরপুরের সাবেক পুলিশ সুপার এ কে এম নাহিদুল ইসলাম কারাগারে

ছবি

সরকারি হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশে নতুন নিয়ম

ছবি

লন্ডনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজের গাড়িতে ছুঁড়ে মারা হলে ডিম

ছবি

নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কিকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

ছবি

কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি সেবা চালু

ছবি

পল্লী বিদ্যুতের ‘গণছুটি’ কর্মসূচি স্থগিত, কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান

ছবি

ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যেই নির্বাচন, এটি আমাদের কমিটমেন্ট: প্রেস সচিব

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গুরুত্ব আরোপ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের

ছবি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ধর্ম উপদেষ্টার

ছবি

বিদিশার গাড়ি চুরি মামলার আসামিকে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ পরিদর্শক কারাগারে

ছবি

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়লো

ছবি

ঐকমত্য ছাড়াই ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শেষ

ছবি

৪৮তম বিশেষ বিসিএসের ফল: চিকিৎসক নিয়োগে সুপারিশ পেলেন ৩,১২০ জন

ছবি

নেপালে মারধর ও লুটের শিকার এক বাংলাদেশি পরিবার

ছবি

ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, ‘ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে’ কমেছে ভোটকক্ষের সংখ্যা

ছবি

নেপালে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

tab

news » national

মৃত্যুদণ্ড থাকলে ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা ‘করবে না’ জাতিসংঘ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল না করা হলে বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) চলমান বিচারপ্রক্রিয়ায় কোনো সহযোগিতা করতে পারবে না জাতিসংঘ। এছাড়া, আইসিটিতে বিচারপ্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ না করলে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশের কাছে দেয়া হবে না।

বুধবার দুপুরে জেনেভায় ‘বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রোরি মুনগোভেন। প্রতিবেদন প্রকাশের শুরুতে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক (আওয়ামী লীগ) সরকার জনতার প্রতিরোধের মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে ‘পরিকল্পিত’ ও ‘সমন্বিত কৌশলের’ মাধ্যমে নৃশংসতা চালিয়েছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্ব জানত এবং তাদের সমন্বয় ও নির্দেশেই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধীরা দেশের বাইরে থাকলে তাদের ফেরানোর বিষয়ে সর্বজনীন এখতিয়ার (ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন) প্রয়োগ করা যেতে পারে।’ সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে গুরুতর অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনতে পারে কোনো দেশের আদালত। এ ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনের স্থান কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না। ওই আইনের আওতায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার বা প্রত্যর্পণ চাওয়ার সুযোগ থাকে। মানবাধিকার লঙ্ঘনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে ফলকার টুর্ক বলেন, ‘প্রতিবেদনে এটা স্পষ্ট যে সাবেক সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল। প্রকৃতপক্ষে গুম, নির্বিচার গ্রেপ্তার, সহিংস পদ্ধতিতে বিক্ষোভ দমনের মতো নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল।’ মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন। এ ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ফলকার টুর্ক বলেন, ‘যদি অপরাধী দেশের বাইরে থাকে, তখন ‘ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন’ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যে দেশে অপরাধী অবস্থান করছে, তাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধের বিচার করতে সম্মত হতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) এ বিষয়ে তদন্তের জন্য বলতে পারে।’ তবে টুর্ক মনে করেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে। অভ্যন্তরীণ বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আইসিসিতে যাওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। তার মতে, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার কাজ শুরু হয়েছে এবং অনেকগুলো মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও মামলা করা হয়েছে। বাংলাদেশের আইনি কাঠামোতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

*বিচারপ্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড-*

এক প্রশ্নের উত্তরে রোরি মুনগোভেন বলেন, বিচারপ্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ না করলে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশের কাছে দেয়া হবে না। প্রতিবেদনে অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু আমরা প্রচুর তথ্য সংরক্ষণ করেছি। সর্বোচ্চ মান অনুযায়ী এসব সংরক্ষণ করা হচ্ছে যাতে পরে ব্যবহার করা যায়।

*মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল*

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে বাংলাদেশের বিচারিক প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করার বিষয়ে রোরি মুনগোভেন বলেন, ‘জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি আমাদের জন্য একটি সমস্যা। আমরা এমন বিচারে সহযোগিতা করতে পারি না যেটা মৃত্যুদণ্ডের দিকে নিয়ে যায়।’ বিচারপ্রক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলার বিষয়ে জোর দেন তিনি। রোরি মুনগোভেন বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। কারণ, এটি প্রতিশোধের একটি স্থায়ী চক্র তৈরি করে দেয়।’ মৃত্যুদণ্ড বিভিন্ন দেশে লুকিয়ে থাকা অপরাধীদের প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘অনেক সদস্য রাষ্ট্রের জন্য প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে সহযোগিতায় মৃত্যুদণ্ড একটি প্রতিবন্ধকতা।’

*জাতিসংঘের প্রতিবেদনে টুর্কের বক্তব্য*

বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্কের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। এতে টুর্ক বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতার মুখেও ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল সাবেক (আওয়ামী লীগ) সরকার। আর সে লক্ষ্য পূরণে বিক্ষোভ দমন করার কৌশল নিয়েছিল তারা। এর অংশ হিসেবে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গ্রেপ্তার-আটক ও নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।’ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ছিল। ক্ষমতায় থাকার জন্য সাবেক সরকার ক্রমাগত সহিংস পথ ব্যবহার করে পদ্ধতিগতভাবে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছিল। এ প্রসঙ্গে ফলকার টুর্ক বলেন, ‘জনবিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে একটি পরিকল্পিত এবং সুসমন্বিত কৌশল হিসেবে এমন নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল সাবেক সরকার। বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে, নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।’

টুর্ক আরও বলেন, ‘আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং নিশানা করে হত্যার এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। যা সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে পড়ে এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল বলেও বিবেচিত হতে পারে।’ জাতীয় ক্ষত সারাতে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাকে অপরিহার্য বলে মনে করেন ফলকার টুর্ক।

back to top