দেশে কার্যত কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নেই উল্লেখ করে এ মুহূর্তে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব বলে মনে করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। বর্তমানে নতুন একটি ‘স্বচ্ছ ক্যানভাসে’ নতুন ছবি আঁকা সম্ভব মন্তব্য করে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুবা নির্বাচনের পূর্বে অনেক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আইনি জটিলতার উদ্ভব হতে পারে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একটি সারসংক্ষেপ ১৯ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সংসদীয় পদ্ধতি চালু করার আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে জনপরিসরে থাকলেও কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি মন্তব্য করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী মার্চ অথবা এপ্রিলের মধ্যে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি একীভূত স্থানীয় সরকার আইন প্রণয়ন করে আগামী জুনের মধ্যে সব সমতল ও পাহাড়ের ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।’
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজ এপ্রিলের আগে সমাপ্ত করতে পারে। তবে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটি ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হলেই তা সম্ভবপর হবে।
বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া সারাদেশে স্থানীয় সরকারের পাঁচটি মৌলিক আইন রয়েছে, যথা ‘ইউনিয়ন পরিষদ আইন’, ‘উপজেলা পরিষদ আইন’, ‘জেলা পরিষদ আইন’, ‘পৌরসভা আইন’ ও ‘সিটি করপোরেশন আইন’। আইনগুলো ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ কাঠামো অসামঞ্জস্যপূর্ণ। গ্রামীণ স্থানীয় সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে তিনটি পৃথক আইনের বদলে একটি একক আইন ও নগর স্থানীয় সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান যথা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে আর একটি একক আইনের অধীনে এনে কাঠামোগত সামঞ্জস্যতা বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে সুপারিশে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন দুটি আইন করা হলে ওই আইনের ক্ষমতাবলে পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো হবে একই ধাঁচের সংসদীয় পদ্ধতির। এর ফলে দেশের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তথা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানে পাঁচ বছরে মাত্র একবার সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই মাস সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। এতে করে নির্বাচন ব্যবস্থাটিও ব্যয় সাশ্রয়ী ও সময় সাশ্রয়ী হবে বলে সুপারিশে বলা হয়েছে।
অভিন্ন বা সমন্বিত দুইটি স্থানীয় সরকার আইনের খসড়া এ কমিশন প্রস্তাব আকারে পেশ করেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, যা অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ আকারে প্রণয়ন করতে পারে; অথবা পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার আইন আকারে প্রণয়ন করতে পারে। সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্য ও সেবা প্রয়োজন অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন থাকবে। কার্য ও সেবা, মূল পরিষদের বিধানিক ও নির্বাহী কার্যক্রম, স্থায়ী কমিটির কার্যক্রম, জনবল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে বর্তমান বিধিসমূহ পর্যালোচনা করে নতুন আইনের সঙ্গে সমঞ্জস্য বিধান করে নতুন বিধি প্রণয়ন করা প্রয়োজন হবে। ‘বিশেষজ্ঞ সম্বলিত স্থানীয় সরকার কমিশন’ এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে এবং মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করতে পারে।
বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সদস্য, নারী সদস্য ও চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। আর উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ আসনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী আসনের ভিন্ন পদধারী তিন জন একই আকারের নির্বাচনি এলাকা থেকে নির্বাচিত হন।
আবার জাতীয় সংসদ সদস্যেরও নির্বাচনি এলাকা প্রায় ক্ষেত্রে অভিন্ন উল্লেখ করে সংস্কার কমিশন বলছে, এই চার প্রতিনিধির মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত তাই অনিবার্য হয়ে ওঠে। সুপারিশে বলা হয়েছে, এখানে নির্বাচন ব্যবস্থা ও এখতিয়ারের ক্ষেত্র পরিবর্তন প্রয়োজন।
আর জেলা পরিষদে জনগণের ভোট দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আকার ও ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন প্রায় অসম্ভব, সে ক্ষেত্রে ওয়ার্ড সদস্যদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বর্তমানে জেলা ও উপজেলায় কোনও ওয়ার্ড নেই। উপজেলায় নারী সদস্য নির্বাচনের বিধান থাকলেও তা কার্যকর হয় না। এজন্য ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় প্রত্যক্ষ ভোটে ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচনের বিধান প্রস্তাব করা হলো।
সংবিধানের ধারা উল্লেখ করে সুপারিশে বলা হয়েছে, নারীরা রাষ্ট্র ও জনজীবনের সব ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকার ভোগ করবে, ধারা ২৮(৪) অনুযায়ী রাষ্ট্র নারীদের, শিশুদের বা সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করবে। এই প্রস্তাবে বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসন পদ্ধতি পরিবর্তন করে পুরো পরিষদের এক তৃতীয়াংশ ওয়ার্ড (একক অসন) ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে পুনর্গঠন করা যেতে পারে।
প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় প্রতিটি পরিষদে ও কাউন্সিলে মোট ওয়ার্ডের এক তৃতীয়াংশ প্রতি নির্বাচনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা হবে উল্লেখ করে সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকারের নতুন কাঠামো অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা পদাধিকার বলে চেয়ার ও মেয়র কাউন্সিলের নির্বাহী পরিষদের এক তৃতীয়াংশ সদস্যপদ লাভ করবেন। ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, সাবেক সচিব এএমএম নাসির উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুর রহমান, বিআইএসএস-এর পরিচালক মাহফুজ কবির, নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মাসুদা খাতুন শেফালী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তারিকুল ইসলাম এবং একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
এই কমিশন গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু করে। কাজের ১৫টি ক্ষেত্র নির্ধারণ করে প্রতিবেদনের কাঠামো গঠন করা হয়। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করতে আরও সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন কমিশন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে অক্টোবরে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রের ছয়টি খাত সংস্কারে কমিশন গঠন করে।
এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া হয়। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এখন বাকি থাকল গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদন। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে।
এই কমিশন আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তির সঙ্গে আলোচনা করবে। ইতোমধ্যে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
দেশে কার্যত কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নেই উল্লেখ করে এ মুহূর্তে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব বলে মনে করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। বর্তমানে নতুন একটি ‘স্বচ্ছ ক্যানভাসে’ নতুন ছবি আঁকা সম্ভব মন্তব্য করে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুবা নির্বাচনের পূর্বে অনেক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আইনি জটিলতার উদ্ভব হতে পারে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একটি সারসংক্ষেপ ১৯ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সংসদীয় পদ্ধতি চালু করার আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে জনপরিসরে থাকলেও কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি মন্তব্য করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী মার্চ অথবা এপ্রিলের মধ্যে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি একীভূত স্থানীয় সরকার আইন প্রণয়ন করে আগামী জুনের মধ্যে সব সমতল ও পাহাড়ের ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।’
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজ এপ্রিলের আগে সমাপ্ত করতে পারে। তবে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটি ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হলেই তা সম্ভবপর হবে।
বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া সারাদেশে স্থানীয় সরকারের পাঁচটি মৌলিক আইন রয়েছে, যথা ‘ইউনিয়ন পরিষদ আইন’, ‘উপজেলা পরিষদ আইন’, ‘জেলা পরিষদ আইন’, ‘পৌরসভা আইন’ ও ‘সিটি করপোরেশন আইন’। আইনগুলো ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ কাঠামো অসামঞ্জস্যপূর্ণ। গ্রামীণ স্থানীয় সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে তিনটি পৃথক আইনের বদলে একটি একক আইন ও নগর স্থানীয় সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান যথা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে আর একটি একক আইনের অধীনে এনে কাঠামোগত সামঞ্জস্যতা বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে সুপারিশে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন দুটি আইন করা হলে ওই আইনের ক্ষমতাবলে পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো হবে একই ধাঁচের সংসদীয় পদ্ধতির। এর ফলে দেশের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তথা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানে পাঁচ বছরে মাত্র একবার সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই মাস সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। এতে করে নির্বাচন ব্যবস্থাটিও ব্যয় সাশ্রয়ী ও সময় সাশ্রয়ী হবে বলে সুপারিশে বলা হয়েছে।
অভিন্ন বা সমন্বিত দুইটি স্থানীয় সরকার আইনের খসড়া এ কমিশন প্রস্তাব আকারে পেশ করেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, যা অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ আকারে প্রণয়ন করতে পারে; অথবা পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার আইন আকারে প্রণয়ন করতে পারে। সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্য ও সেবা প্রয়োজন অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন থাকবে। কার্য ও সেবা, মূল পরিষদের বিধানিক ও নির্বাহী কার্যক্রম, স্থায়ী কমিটির কার্যক্রম, জনবল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে বর্তমান বিধিসমূহ পর্যালোচনা করে নতুন আইনের সঙ্গে সমঞ্জস্য বিধান করে নতুন বিধি প্রণয়ন করা প্রয়োজন হবে। ‘বিশেষজ্ঞ সম্বলিত স্থানীয় সরকার কমিশন’ এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে এবং মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করতে পারে।
বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সদস্য, নারী সদস্য ও চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। আর উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ আসনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী আসনের ভিন্ন পদধারী তিন জন একই আকারের নির্বাচনি এলাকা থেকে নির্বাচিত হন।
আবার জাতীয় সংসদ সদস্যেরও নির্বাচনি এলাকা প্রায় ক্ষেত্রে অভিন্ন উল্লেখ করে সংস্কার কমিশন বলছে, এই চার প্রতিনিধির মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত তাই অনিবার্য হয়ে ওঠে। সুপারিশে বলা হয়েছে, এখানে নির্বাচন ব্যবস্থা ও এখতিয়ারের ক্ষেত্র পরিবর্তন প্রয়োজন।
আর জেলা পরিষদে জনগণের ভোট দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আকার ও ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন প্রায় অসম্ভব, সে ক্ষেত্রে ওয়ার্ড সদস্যদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বর্তমানে জেলা ও উপজেলায় কোনও ওয়ার্ড নেই। উপজেলায় নারী সদস্য নির্বাচনের বিধান থাকলেও তা কার্যকর হয় না। এজন্য ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় প্রত্যক্ষ ভোটে ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচনের বিধান প্রস্তাব করা হলো।
সংবিধানের ধারা উল্লেখ করে সুপারিশে বলা হয়েছে, নারীরা রাষ্ট্র ও জনজীবনের সব ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকার ভোগ করবে, ধারা ২৮(৪) অনুযায়ী রাষ্ট্র নারীদের, শিশুদের বা সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করবে। এই প্রস্তাবে বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসন পদ্ধতি পরিবর্তন করে পুরো পরিষদের এক তৃতীয়াংশ ওয়ার্ড (একক অসন) ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে পুনর্গঠন করা যেতে পারে।
প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় প্রতিটি পরিষদে ও কাউন্সিলে মোট ওয়ার্ডের এক তৃতীয়াংশ প্রতি নির্বাচনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা হবে উল্লেখ করে সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকারের নতুন কাঠামো অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা পদাধিকার বলে চেয়ার ও মেয়র কাউন্সিলের নির্বাহী পরিষদের এক তৃতীয়াংশ সদস্যপদ লাভ করবেন। ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, সাবেক সচিব এএমএম নাসির উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুর রহমান, বিআইএসএস-এর পরিচালক মাহফুজ কবির, নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মাসুদা খাতুন শেফালী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তারিকুল ইসলাম এবং একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।
এই কমিশন গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু করে। কাজের ১৫টি ক্ষেত্র নির্ধারণ করে প্রতিবেদনের কাঠামো গঠন করা হয়। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করতে আরও সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন কমিশন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে অক্টোবরে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রের ছয়টি খাত সংস্কারে কমিশন গঠন করে।
এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া হয়। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এখন বাকি থাকল গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদন। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে।
এই কমিশন আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তির সঙ্গে আলোচনা করবে। ইতোমধ্যে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।