ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের নির্বাচন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে না করার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে শুধু সদস্য (মেম্বার) বা কাউন্সিলররা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। এরপর নির্বাচিত মেম্বার ও কাউন্সিলররা তাদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচিত করবেন।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কোনো নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রতীক ব্যবহার না করার সুপারিশও করেছে এই সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে জেলা পরিষদের সদস্যদের জনগণের সরাসরি বা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই সদস্যদের ভোটে তাদেরই একজন নির্বাচিত হবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদ হবে ‘পরিকল্পনা ইউনিট’। আর উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ হবে ‘বাস্তবায়ন ইউনিট’।
চৌদ্দ ক্ষেত্রে ২১০টি সুপারিশ
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বুধবার সংস্কারের ‘প্রাথমিক সুপারিশমালা’ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়।শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং থেকে কমিশনের দেয়া ওই সুপারিশ গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া হয়। সেখানে ১৪টি ক্ষেত্রে মোট ২১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা পাঁচটি কমিশনের মধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রাথমিক সুপারিশ জমা দিয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে গঠিত কমিশনগুলোর প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ শুরু করেছে। তাই মূল সুপারিশগুলো সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে।’ কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পরে জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
পৃথক আইন বাতিল
সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকারের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান- ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য পৃথক আইন ও বিধিমালা বাতিলের সুপারিশ করেছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘এসব আইন ও বিধিসমূহ বাতিল করে সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ দুটি একীভূত এবং স্থানীয় সরকার আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে একটি আইনের অধীন আনা এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য আরেকটি আইন প্রণয়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
মৌলিক এ দুটি আইনের অধীন একই তফসিলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির অধীন আনার সুপারিশ করা হবে। এতে নির্বাচনি ব্যয় ও সময় কমবে।
বিধানিক, নির্বাহী
সুপারিশে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো দুটি প্রধান অংশে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে। একটি বিধানিক অংশ, দ্বিতীয়টি নির্বাহী অংশ। বিধানিক অংশে প্রধানকে বলা হবে সভাধ্যক্ষ। তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতো দায়িত্ব পালন করবেন। আর নির্বাহী অংশের প্রধান হবেন মেয়র বা চেয়ারম্যান।
নির্বাচিত কাউন্সিলর বা সদস্যরা পরিষদের প্রথম সভায় ভোট দিয়ে একজন সভাধ্যক্ষ নির্বাচিত করবেন। পরে সভাধ্যক্ষের সভাপতিত্বে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। কাউন্সিলররা বা সদস্যরা নিজেদের মধ্যে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। আর নির্বাচিত মেয়র বা চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়ে
আইন অনুযায়ী তিন বা পাঁচ সদস্যের ‘নির্বাহী কাউন্সিল’ গঠন করবেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা চেয়ারম্যান ও মেয়রের ক্ষেত্রে স্নাতক এবং নির্বাহী সদস্যদের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পাস অগ্রাধিকার পাবে।
*জুনের মধ্যে সব নির্বাচন*
সুপারিশে সংস্কার কমিশন বলেছে, আগামী এপ্রিলের মধ্যে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি একীভূত স্থানীয় সরকার আইন প্রণয়ন করতে হবে। এরপর জুনের মধ্যে সব সমতল ও পাহাড়ের ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন করা যেতে পারে। পাশাপাশি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ আইনকেও সংসদীয় কাঠামোতে সংস্থাপিত করে আইন সংশোধন করে জুনের মধ্যেই পাহাড়ের দুটি পরিষদের নির্বাচনও শেষ করা যেতে পারে।
*ওয়ার্ড পর্যায়ে সালিশি ব্যবস্থা*
সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ‘স্থানীয় বিচারব্যবস্থা’ অংশে ইউনিয়ন পরিষদের অধীন থাকা গ্রাম আদালত বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়, কমিশনের বিচারবিষয়ক প্রধান সুপারিশ হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া সারা দেশের সব উপজেলায় আগামী দুই বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন করা। পাশাপাশি একই পদমর্যাদায় প্রতিটি উপজেলায় ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর)’ জন্য একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ নিয়োগ এবং এর পূর্ণাঙ্গ কার্যালয় স্থাপন করা।
ইউনিয়ন পরিষদের অধীন ‘গ্রাম আদালত’ বিলুপ্ত করে ওয়ার্ড পর্যায়ে সালিশি ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দান এবং সালিশগুলোর তত্ত্বাবধান, সালিশকারীদের প্রশিক্ষণ ও সালিশের আপিল শুনানির জন্য এডিআর আদালতের বিচারকের এখতিয়ার ও প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
রোববার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের নির্বাচন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে না করার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে শুধু সদস্য (মেম্বার) বা কাউন্সিলররা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। এরপর নির্বাচিত মেম্বার ও কাউন্সিলররা তাদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচিত করবেন।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কোনো নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রতীক ব্যবহার না করার সুপারিশও করেছে এই সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে জেলা পরিষদের সদস্যদের জনগণের সরাসরি বা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই সদস্যদের ভোটে তাদেরই একজন নির্বাচিত হবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদ হবে ‘পরিকল্পনা ইউনিট’। আর উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ হবে ‘বাস্তবায়ন ইউনিট’।
চৌদ্দ ক্ষেত্রে ২১০টি সুপারিশ
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বুধবার সংস্কারের ‘প্রাথমিক সুপারিশমালা’ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়।শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং থেকে কমিশনের দেয়া ওই সুপারিশ গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া হয়। সেখানে ১৪টি ক্ষেত্রে মোট ২১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা পাঁচটি কমিশনের মধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রাথমিক সুপারিশ জমা দিয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে গঠিত কমিশনগুলোর প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ শুরু করেছে। তাই মূল সুপারিশগুলো সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে।’ কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পরে জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
পৃথক আইন বাতিল
সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকারের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান- ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য পৃথক আইন ও বিধিমালা বাতিলের সুপারিশ করেছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘এসব আইন ও বিধিসমূহ বাতিল করে সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ দুটি একীভূত এবং স্থানীয় সরকার আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে একটি আইনের অধীন আনা এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য আরেকটি আইন প্রণয়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
মৌলিক এ দুটি আইনের অধীন একই তফসিলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির অধীন আনার সুপারিশ করা হবে। এতে নির্বাচনি ব্যয় ও সময় কমবে।
বিধানিক, নির্বাহী
সুপারিশে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো দুটি প্রধান অংশে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে। একটি বিধানিক অংশ, দ্বিতীয়টি নির্বাহী অংশ। বিধানিক অংশে প্রধানকে বলা হবে সভাধ্যক্ষ। তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতো দায়িত্ব পালন করবেন। আর নির্বাহী অংশের প্রধান হবেন মেয়র বা চেয়ারম্যান।
নির্বাচিত কাউন্সিলর বা সদস্যরা পরিষদের প্রথম সভায় ভোট দিয়ে একজন সভাধ্যক্ষ নির্বাচিত করবেন। পরে সভাধ্যক্ষের সভাপতিত্বে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। কাউন্সিলররা বা সদস্যরা নিজেদের মধ্যে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। আর নির্বাচিত মেয়র বা চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়ে
আইন অনুযায়ী তিন বা পাঁচ সদস্যের ‘নির্বাহী কাউন্সিল’ গঠন করবেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা চেয়ারম্যান ও মেয়রের ক্ষেত্রে স্নাতক এবং নির্বাহী সদস্যদের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পাস অগ্রাধিকার পাবে।
*জুনের মধ্যে সব নির্বাচন*
সুপারিশে সংস্কার কমিশন বলেছে, আগামী এপ্রিলের মধ্যে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি একীভূত স্থানীয় সরকার আইন প্রণয়ন করতে হবে। এরপর জুনের মধ্যে সব সমতল ও পাহাড়ের ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন করা যেতে পারে। পাশাপাশি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ আইনকেও সংসদীয় কাঠামোতে সংস্থাপিত করে আইন সংশোধন করে জুনের মধ্যেই পাহাড়ের দুটি পরিষদের নির্বাচনও শেষ করা যেতে পারে।
*ওয়ার্ড পর্যায়ে সালিশি ব্যবস্থা*
সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ‘স্থানীয় বিচারব্যবস্থা’ অংশে ইউনিয়ন পরিষদের অধীন থাকা গ্রাম আদালত বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়, কমিশনের বিচারবিষয়ক প্রধান সুপারিশ হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া সারা দেশের সব উপজেলায় আগামী দুই বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন করা। পাশাপাশি একই পদমর্যাদায় প্রতিটি উপজেলায় ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর)’ জন্য একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ নিয়োগ এবং এর পূর্ণাঙ্গ কার্যালয় স্থাপন করা।
ইউনিয়ন পরিষদের অধীন ‘গ্রাম আদালত’ বিলুপ্ত করে ওয়ার্ড পর্যায়ে সালিশি ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দান এবং সালিশগুলোর তত্ত্বাবধান, সালিশকারীদের প্রশিক্ষণ ও সালিশের আপিল শুনানির জন্য এডিআর আদালতের বিচারকের এখতিয়ার ও প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।