রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কুয়েট শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন -সোহরাব আলম
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একদল শিক্ষার্থী উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে তারা অবস্থান নেন। এদিন সকালে দুটি ভাড়া করা বাসে ৮০ থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থী ঢাকায় আসেন। বাসভাড়া নিজেরাই বহন করছেন বলে জানান তারা।
শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, এই ক্যাম্পাস তাদের জন্য নিরাপদ নয়। তারা এখানে নিরাপদ বোধ করছেন না। গেটগুলোয় কুয়েটের গার্ড ছাড়া কেউ নেই। বহিরাগত ব্যক্তিরা অবাধে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করছে। আমরা খুবই আতঙ্কিত। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়ে তারা বাড়িতে ফিরে যাবেন। ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না পর্যন্ত তারা আর ক্যাম্পাসে ফিরবেন না।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের সব দাবি পূরণ হওয়ার আগপর্যন্ত ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ চলবে না। আমাদের কার্যক্রম অনলাইনে চলবে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে নানা ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তাদের চোখ লাল কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল।
এর আগে শনিবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
তার আগে বিকেলে ‘রক্তাক্ত কুয়েট ১৮.০২.২৫’ শিরোনামে ছবি প্রদর্শনী করা হয়। ছাত্রকল্যাণ কেন্দ্রে এই প্রদর্শনীতে আহত শিক্ষার্থীদের ছবি ও শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির আন্দোলনের বিভিন্ন ছবি প্রদর্শন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ তার বাসভবন ছেড়ে ঢাকায় রওনা দেন বলে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ।
শাহেদুজ্জামান বলেন, চিকিৎসার জন্য উপাচার্য এক দিন ঢাকায় অবস্থান করবেন। উপাচার্যের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই ঢাকায় ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সহ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলমকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পদত্যাগের দাবির বিষয়ে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমরা যদি তাদের দাবিগুলো মেনে নিই, তাদের দাবির জন্য যদি সব ব্যবস্থা করি, তাহলে কেন আমাদের পদত্যাগ করতে হবে? আমরা তো তাদের দাবি অনুযায়ী সবকিছু করছি। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে ঠিকমতো পরিচালনা করছি, আমরা চাচ্ছি যে বিশ্ববিদ্যালয় একটা নিয়মের মধ্যে আসুক।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে; এতে অর্ধশতাধিক আহত হন।
একপর্যায়ে সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এসময়
রেলগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।
রাতে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তারা পাঁচ দফা- বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না এবং থাকলে আজীবন বহিষ্কারের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি; মঙ্গলবারের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা, বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা নেওয়া; ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাখা; আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় প্রশাসন থেকে বহন করা এবং ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগের দাবি উত্থাপন করেন।
বুধবার বেলা একটার মধ্যে দাবি পূরণের সময় বেঁধে দেন তারা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কুয়েটে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
বুধবার সকাল থেকে উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে চিকিৎসাকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে প্রশাসনিক, অ্যাকাডেমিকসহ সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। তখন চিকিৎসাকেন্দ্রের দোতলায় ছিলেন উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৩তম সভা হয় বলে জানান, সহ- উপাচার্য অধ্যাপক শেখ শরীফুল আলম।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট বৈঠকে চিকিৎসাকেন্দ্র থেকেই অনলাইনে যোগ দেন উপাচার্য। সভায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত হয়।
সহ-উপাচার্য বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আর জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। ক্যাম্পাস এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে হলগুলো খোলা রাখা হয়েছে। তবে কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীকে হল ছেড়ে চলে যেতে দেখা গেছে।
সহ-উপাচার্য বলেন, এছাড়া মঙ্গলবার ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় তদন্তে চার সদস্যের কমিটিকে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে বুধবার রাতে খান জাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সংঘর্ষের দিন পাঁচজনকে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করেছিলেন সেনাসদস্যরা। তাদের প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। শুক্রবার তাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান, খানজাহান আলী থানার ওসি কবীর হোসেন।
এদিকে খুলনা নগর বিএনপির গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গ্রেপ্তার চারজনকে তাদের ‘দলীয়’ দাবি করে নিন্দা জানিয়েছে।
তবে তাদের দাবি ‘পুরোপুরি মেনে না নেওয়ায়’ উপাচার্যকে বর্জনের ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সহ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালককেও বর্জনের ঘোষণা দেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, উপাচার্যকে বর্জন করায় এই মুহূর্তে তার কাছে আর কোনো দাবি-দাওয়া নেই। তাই তাকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান প্রশাসনের অধীনে তারা কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না, কারণ তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না। প্রশাসনের নীরবতা তাদের শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ অবস্থার মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য দুর্বার বাংলার পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
এসময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ক্যাম্পাসের ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রীসহ সব রাজনৈতিক সংগঠনকে লাল কার্ড প্রদর্শন করেন।
রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কুয়েট শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন -সোহরাব আলম
রোববার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একদল শিক্ষার্থী উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে তারা অবস্থান নেন। এদিন সকালে দুটি ভাড়া করা বাসে ৮০ থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থী ঢাকায় আসেন। বাসভাড়া নিজেরাই বহন করছেন বলে জানান তারা।
শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, এই ক্যাম্পাস তাদের জন্য নিরাপদ নয়। তারা এখানে নিরাপদ বোধ করছেন না। গেটগুলোয় কুয়েটের গার্ড ছাড়া কেউ নেই। বহিরাগত ব্যক্তিরা অবাধে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করছে। আমরা খুবই আতঙ্কিত। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়ে তারা বাড়িতে ফিরে যাবেন। ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না পর্যন্ত তারা আর ক্যাম্পাসে ফিরবেন না।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের সব দাবি পূরণ হওয়ার আগপর্যন্ত ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ চলবে না। আমাদের কার্যক্রম অনলাইনে চলবে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে নানা ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তাদের চোখ লাল কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল।
এর আগে শনিবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
তার আগে বিকেলে ‘রক্তাক্ত কুয়েট ১৮.০২.২৫’ শিরোনামে ছবি প্রদর্শনী করা হয়। ছাত্রকল্যাণ কেন্দ্রে এই প্রদর্শনীতে আহত শিক্ষার্থীদের ছবি ও শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির আন্দোলনের বিভিন্ন ছবি প্রদর্শন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ তার বাসভবন ছেড়ে ঢাকায় রওনা দেন বলে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ।
শাহেদুজ্জামান বলেন, চিকিৎসার জন্য উপাচার্য এক দিন ঢাকায় অবস্থান করবেন। উপাচার্যের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই ঢাকায় ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সহ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলমকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পদত্যাগের দাবির বিষয়ে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমরা যদি তাদের দাবিগুলো মেনে নিই, তাদের দাবির জন্য যদি সব ব্যবস্থা করি, তাহলে কেন আমাদের পদত্যাগ করতে হবে? আমরা তো তাদের দাবি অনুযায়ী সবকিছু করছি। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে ঠিকমতো পরিচালনা করছি, আমরা চাচ্ছি যে বিশ্ববিদ্যালয় একটা নিয়মের মধ্যে আসুক।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে; এতে অর্ধশতাধিক আহত হন।
একপর্যায়ে সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এসময়
রেলগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।
রাতে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তারা পাঁচ দফা- বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না এবং থাকলে আজীবন বহিষ্কারের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি; মঙ্গলবারের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা, বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা নেওয়া; ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাখা; আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় প্রশাসন থেকে বহন করা এবং ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগের দাবি উত্থাপন করেন।
বুধবার বেলা একটার মধ্যে দাবি পূরণের সময় বেঁধে দেন তারা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কুয়েটে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
বুধবার সকাল থেকে উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে চিকিৎসাকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে প্রশাসনিক, অ্যাকাডেমিকসহ সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। তখন চিকিৎসাকেন্দ্রের দোতলায় ছিলেন উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৩তম সভা হয় বলে জানান, সহ- উপাচার্য অধ্যাপক শেখ শরীফুল আলম।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট বৈঠকে চিকিৎসাকেন্দ্র থেকেই অনলাইনে যোগ দেন উপাচার্য। সভায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত হয়।
সহ-উপাচার্য বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আর জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। ক্যাম্পাস এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে হলগুলো খোলা রাখা হয়েছে। তবে কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীকে হল ছেড়ে চলে যেতে দেখা গেছে।
সহ-উপাচার্য বলেন, এছাড়া মঙ্গলবার ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় তদন্তে চার সদস্যের কমিটিকে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে বুধবার রাতে খান জাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সংঘর্ষের দিন পাঁচজনকে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করেছিলেন সেনাসদস্যরা। তাদের প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। শুক্রবার তাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান, খানজাহান আলী থানার ওসি কবীর হোসেন।
এদিকে খুলনা নগর বিএনপির গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গ্রেপ্তার চারজনকে তাদের ‘দলীয়’ দাবি করে নিন্দা জানিয়েছে।
তবে তাদের দাবি ‘পুরোপুরি মেনে না নেওয়ায়’ উপাচার্যকে বর্জনের ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সহ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালককেও বর্জনের ঘোষণা দেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, উপাচার্যকে বর্জন করায় এই মুহূর্তে তার কাছে আর কোনো দাবি-দাওয়া নেই। তাই তাকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান প্রশাসনের অধীনে তারা কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না, কারণ তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না। প্রশাসনের নীরবতা তাদের শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ অবস্থার মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য দুর্বার বাংলার পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
এসময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ক্যাম্পাসের ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রীসহ সব রাজনৈতিক সংগঠনকে লাল কার্ড প্রদর্শন করেন।