গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাঁদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়। এতে পুরো বাহিনীকে দায়ী করার সুযোগ নেই।’
আজ মঙ্গলবার ঢাকার গুলশানে তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। কমিশনপ্রধান আরও বলেন, ‘কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে গুমের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তির কারণে পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়ায় অপরাধের দায় ব্যক্তিগত, পুরো বাহিনীর ওপর তা বর্তায় না।’
গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ তদন্ত করছে। কমিশনের অনুসন্ধানে ঢাকা, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ডিজিএফআই, সিটিটিসি ও র্যাবের নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া গেছে।
কমিশনপ্রধান জানান, বগুড়া পুলিশ লাইনসেও গোপন বন্দিশালার সন্ধান মিলেছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। কমিশনের নির্দেশনায় এসব বন্দিশালা পরিদর্শন করে আলামত সংরক্ষণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কমিশন গঠনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ডিজিএফআইয়ের জেআইসি (আয়নাঘর) ও র্যাব হেডকোয়ার্টারের টিএফআই পরিদর্শন করা হয় এবং আলামত ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি কমিশনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা তিনটি গোপন বন্দিশালা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।
কমিশনে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার অভিযোগের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে এবং ৪৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তার বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে।
গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অনুসন্ধান চলছে। কমিশনপ্রধান জানান, বাংলাদেশ পুলিশের কাছে ভারত থেকে পুশইন হওয়া ১৪০ জনের তথ্য চাওয়া হলে কোনো গুমের শিকার ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়নি।
গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাইয়ের মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সীমান্ত দিয়ে পুশইন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কমিশনের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।
কমিশনপ্রধান জানান, ভারতের বিভিন্ন কারাগারে আটক ১ হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশি নাগরিকের তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। তালিকায় কোনো গুমের শিকার ব্যক্তির নাম আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬-এর আওতায় স্বাধীনভাবে কাজ করছে। বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের নিয়মিত কার্যক্রম এতে ব্যাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। গুমের অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে বাহিনীর ওপর থেকে কলঙ্ক মোচন হবে এবং আইনের শাসন নিশ্চিত হবে।’
কমিশনের পক্ষ থেকে ৭৪টি গুমসংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
কমিশনের সদস্যরা বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তারা এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করছেন। তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে গুমের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কমিশনপ্রধান জানান।
মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাঁদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়। এতে পুরো বাহিনীকে দায়ী করার সুযোগ নেই।’
আজ মঙ্গলবার ঢাকার গুলশানে তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। কমিশনপ্রধান আরও বলেন, ‘কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে গুমের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তির কারণে পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়ায় অপরাধের দায় ব্যক্তিগত, পুরো বাহিনীর ওপর তা বর্তায় না।’
গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ তদন্ত করছে। কমিশনের অনুসন্ধানে ঢাকা, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ডিজিএফআই, সিটিটিসি ও র্যাবের নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া গেছে।
কমিশনপ্রধান জানান, বগুড়া পুলিশ লাইনসেও গোপন বন্দিশালার সন্ধান মিলেছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। কমিশনের নির্দেশনায় এসব বন্দিশালা পরিদর্শন করে আলামত সংরক্ষণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কমিশন গঠনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ডিজিএফআইয়ের জেআইসি (আয়নাঘর) ও র্যাব হেডকোয়ার্টারের টিএফআই পরিদর্শন করা হয় এবং আলামত ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি কমিশনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা তিনটি গোপন বন্দিশালা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।
কমিশনে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার অভিযোগের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে এবং ৪৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তার বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে।
গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অনুসন্ধান চলছে। কমিশনপ্রধান জানান, বাংলাদেশ পুলিশের কাছে ভারত থেকে পুশইন হওয়া ১৪০ জনের তথ্য চাওয়া হলে কোনো গুমের শিকার ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়নি।
গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাইয়ের মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সীমান্ত দিয়ে পুশইন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কমিশনের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।
কমিশনপ্রধান জানান, ভারতের বিভিন্ন কারাগারে আটক ১ হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশি নাগরিকের তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। তালিকায় কোনো গুমের শিকার ব্যক্তির নাম আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬-এর আওতায় স্বাধীনভাবে কাজ করছে। বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের নিয়মিত কার্যক্রম এতে ব্যাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। গুমের অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে বাহিনীর ওপর থেকে কলঙ্ক মোচন হবে এবং আইনের শাসন নিশ্চিত হবে।’
কমিশনের পক্ষ থেকে ৭৪টি গুমসংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
কমিশনের সদস্যরা বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তারা এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করছেন। তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে গুমের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কমিশনপ্রধান জানান।