alt

জাতীয়

গুমের শিকার’ ৩৩০ জনের ফেরার আশা ক্ষীণ: কমিশন প্রধান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫

‘গুমের শিকার হয়ে’ ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তবে তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা ‘ক্ষীণ’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

কমিশন প্রধান বলেন, ভারতে বন্দি থাকা বাংলাদেশিদের যে তালিকা পাওয়া গেছে সেখানে গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা, তা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকার গুলশানে গুম কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গুম কমিশনের প্রধান এসব কথা বলেন।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কমিশনে ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১ হাজারটি অভিযোগ ও তার সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্রের যাচাই-বাছাই প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কমিশনে ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৪৫ জন কর্মকর্তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা বা ভাগ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলমান আছে। তবে সাধারণভাবে বলা যায় তাদের ফিরে আসার আশা ক্ষীণ।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার নির্দেশে গুমের ঘটনা ঘটেছে। এটা আমরা আগেও বলেছি।’

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে বলে জানান মইনুল ইসলাম চৌধুরী।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কারাগারে বন্দি বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারত এক হাজার ৬৭ জনের একটি তালিকা দিয়েছে, সেটি গুমসংক্রান্ত কমিশন মিলিয়ে দেখছে, সেই তালিকায় গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এই তালিকা ভারত আরও দিবে।’

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপার ও বিজিবির সেক্টর কমান্ডারদের কাছ থেকে আগস্টের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা ১৪০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের মধ্যে কোনো গুমের শিকার ব্যক্তির নাম এখনও পাওয়া যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘ধামরাই থেকে গুম হওয়া মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে গত ২২ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন অনুসন্ধান করছে।’

আওয়ামী লীগের ১৫ বছর

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৫ বছরের শাসনকালে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেয়ার পর লাশ উদ্ধার বা নিখোঁজের ঘটনাগুলো আলোচনায় ছিল। এ সময় হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন, গোপন বন্দিশালায় দীর্ঘদিন আটকে রাখার ঘটনাগুলোও উঠে আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে। ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে ‘আয়নাঘর’ নামে গোপন বন্দিশিবির তৈরি করে নির্যাতনের অভিযোগও আসে বিভিন্ন প্রতিবেদনে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে উচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি’ গঠন করে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। গত ২৭ আগস্ট এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এই কমিশন গত বছর ১৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন।

দায় ব্যক্তির, বাহিনীর নয়

গুমের অপরাধের দায় ব্যক্তির, এ দায় কোনো বাহিনীর নয় মন্তব্য করে কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যে সব সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুম করার অভিযোগ আছে, তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনুসন্ধান করছে কমিশন। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে গুমের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যে সব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়। কারণ অপরাধীরা অনেক সময় আইনের হাত থেকে বাঁচতে তার ধর্ম, কমিউনিটি, সামাজিক গ্রুপ, ইত্যাদির আড়ালে লুকাতে চেষ্টা করে। কিন্তু বিচার কখনও ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে হয় না, তা হয় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। কারণ ফৌজদারি অপরাধ একটি ব্যক্তিগত দায়, এতে কমিউনিটিকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই।’ গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায় পুরো বাহিনীর উপর বর্তায় না মন্তব্য করে মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘গুমের সঙ্গে জড়িত নির্দেশদাতাদের দায় আছে। তাদের সংখ্যাও অনেক। প্রত্যেক বাহিনীতে নির্দেশদাতা ও গোপন বন্দিশালা ছিল।’

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক গুমের নির্দেশ দেয়ার সঙ্গে জড়িত কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশন প্রধান বলেন, কমিশন এই অপরাধে তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে।

*দায় কার, তদন্তের বিষয়*

৫ আগস্টের পর গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা লুকাতে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলের (জেআইসি) প্রমাণাদি নষ্ট করার বিষয়ে কমিশন বলছে, এই দায় কে নেবে তা তদন্তের বিষয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়েও কমিশনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যা এখনও কার্যকর হয়নি।

এ ব্যাপারে কমিশন প্রধানের ভাষ্য, গ্রেপ্তার করা না গেলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে।

* পুলিশ লাইনসে গোপন বন্দিশালা*

পুলিশ লাইনসেও গোপন বন্দিশালা পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন।

বগুড়া পুলিশ লাইনে এ বন্দিশালা পাওয়া গেছে দাবি করে কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, ‘পুলিশ লাইনের ভেতরে কারাগারের মতো গোপন বন্দিশালা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। যেটি একেবারেই অ্যাবসার্ড একটা ব্যাপার। সেটি আমরা বগুড়ায় পেয়েছি। আমাদের ধারণা অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের আরও পাবো।’

এসব বন্দিশালা গত ১৫ বছরে করা হয়েছে কিনা, এক সাংবাদিদের এ প্রশ্নে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘এগুলো গত ১৫ বছরের মধ্যেই বানানো হয়েছে। সম্ভবত গত ১০-১২ বছরের মতো। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে বন্দিদের এনে রাখা হতো, জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো। এখান থেকেও অনেকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।’

*জেনারেলদের পালাতে সাহায্য*

সংবাদ সম্মেলনে কমিশন সদস্য নাবিলা ইদ্রিস বলেন, ‘কর্মকর্তারা আমাদের বলেছেন যে, তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশ মেনেই কাজ করতেন। কিন্তু গুমের তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ম্যান্ডেট আছে এই সরকারের।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস বলেন, ‘সুতরাং এখন যারা জেনারেলদের পালাতে সাহায্য করছেন তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ করছে না। এটি আপনাদের ব্যক্তিগত দায়।’

বর্তমানে বিভিন্ন পদে থাকা অনেকেই গুমের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের পক্ষে থাকার চেষ্টা করে নিজেরাও ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন, যা না করার আহ্বান জানিয়েছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।

সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

ছবি

হবিগঞ্জে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি নিয়ে বিভক্তি, বাড়ছে অস্থিরতা

বসুন্ধরায় ২ বিদেশিসহ ৩ জনকে মারধর, গাড়ি ভাঙচুর

প্রাথমিকের ৬,৫৩১ শিক্ষকের নিয়োগপত্র জারি

স্কুলে ভর্তিতে পাঁচ শতাংশ কোটা বাতিল, নতুন আদেশ জারি

পানি বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে: আবুল হোসেন

শিক্ষার নতুন উপদেষ্টা সিআর আবরার

মেট্রোরেলের ভেতরে নিরাপত্তা টহলে এমআরটি পুলিশ

ছবি

৮৬ লাখ টাকা পাচার করেছেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান: সিআইডি

এভাবে দেশ চলে না, দেশ চলতে হবে আইন ও সুশাসনের মাধ্যমে: জাহিদ হোসেন

সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন গঠনে আইনের খসড়া হচ্ছে

ছবি

হাতিরঝিলে চলন্ত গাড়িতে আগুন, যানজট

ছবি

ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনি: নিহত ২ জনকে কর্মী দাবি জামায়েতের

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্ষুদ্র ব্যবসা চালুর প্রস্তাব ইইউর

ছবি

সংবিধান ও শাসন কাঠামো বদলে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই: নাহিদ ইসলাম

ছবি

মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাই ঠেকাতে বাড়তি নিরাপত্তা

ছবি

মব জাস্টিস বা মোরাল পুলিশিংয়ের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে সরকার: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

ছবি

ভিসা চালুর বিষয়ে ভারতীয় সিদ্ধান্ত :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের

ছবি

পিলখানা বিদ্রোহে নিহত সেনাসদস্যদের ‘শহীদ’ স্বীকৃতি

ছবি

পণ্য আমদানিতে ‘মিথ্যা ঘোষণা’ কাস্টমস জটিলতার মূল কারণ: এনবিআর চেয়ারম্যান

ছবি

প্রাথমিক শিক্ষক: আন্দোলন থেকে যোগদানের পথে ৬৫৩১ জন

দেশে জিকা ভাইরাসের ‘ক্লাস্টার’ শনাক্ত

ছবি

গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে অতিরিক্ত ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত

ছবি

স্কুল ভর্তিতে নতুন আদেশ: ৫% কোটা বাতিল, সংরক্ষিত আসন নির্ধারণ

ছবি

শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব পাচ্ছেন অধ্যাপক সি আর আবরার

ছবি

সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন গঠনে আইনের খসড়া হচ্ছে

ছবি

গুমে জড়িত বাহিনীর সদস্যদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়: তদন্ত কমিশনপ্রধান

ছবি

ট্রাম্পের অভিযোগ ভিত্তিহীন: বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করল সরকার

ছবি

এডিপি অনুমোদন, ব্যয় কমলো ৪৯ হাজার কোটি টাকা

ছবি

হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে স্থগিত: চাকরি ফিরে পেলেন প্রাথমিকের ৬,৫৩১ শিক্ষক

ছবি

প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ-পদায়নের তারিখ ঘোষণা

ছবি

রাজধানীতে পুলিশের চেকপোস্ট ও অভিযানে ১৭৯ জন গ্রেপ্তার

ছবি

লালমাটিয়ায় তরুণীকে মারধর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে ক্ষোভ, ‘অপসারণ’ দাবি

ছবি

অপরাধ মোটেও বাড়েনি, বললেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

‘অপরিচিত’ প্রতিষ্ঠানে ২৯ মিলিয়ন ডলার যাওয়ার ‘অভিযোগ অসত্য’: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ছবি

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও নীতিমালা নিয়ে হাই কোর্টের প্রশ্ন

tab

জাতীয়

গুমের শিকার’ ৩৩০ জনের ফেরার আশা ক্ষীণ: কমিশন প্রধান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫

‘গুমের শিকার হয়ে’ ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তবে তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা ‘ক্ষীণ’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

কমিশন প্রধান বলেন, ভারতে বন্দি থাকা বাংলাদেশিদের যে তালিকা পাওয়া গেছে সেখানে গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা, তা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকার গুলশানে গুম কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গুম কমিশনের প্রধান এসব কথা বলেন।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কমিশনে ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১ হাজারটি অভিযোগ ও তার সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্রের যাচাই-বাছাই প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কমিশনে ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৪৫ জন কর্মকর্তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা বা ভাগ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলমান আছে। তবে সাধারণভাবে বলা যায় তাদের ফিরে আসার আশা ক্ষীণ।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার নির্দেশে গুমের ঘটনা ঘটেছে। এটা আমরা আগেও বলেছি।’

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে বলে জানান মইনুল ইসলাম চৌধুরী।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কারাগারে বন্দি বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারত এক হাজার ৬৭ জনের একটি তালিকা দিয়েছে, সেটি গুমসংক্রান্ত কমিশন মিলিয়ে দেখছে, সেই তালিকায় গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এই তালিকা ভারত আরও দিবে।’

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপার ও বিজিবির সেক্টর কমান্ডারদের কাছ থেকে আগস্টের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা ১৪০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের মধ্যে কোনো গুমের শিকার ব্যক্তির নাম এখনও পাওয়া যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘ধামরাই থেকে গুম হওয়া মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে গত ২২ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন অনুসন্ধান করছে।’

আওয়ামী লীগের ১৫ বছর

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৫ বছরের শাসনকালে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেয়ার পর লাশ উদ্ধার বা নিখোঁজের ঘটনাগুলো আলোচনায় ছিল। এ সময় হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন, গোপন বন্দিশালায় দীর্ঘদিন আটকে রাখার ঘটনাগুলোও উঠে আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে। ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে ‘আয়নাঘর’ নামে গোপন বন্দিশিবির তৈরি করে নির্যাতনের অভিযোগও আসে বিভিন্ন প্রতিবেদনে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে উচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি’ গঠন করে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। গত ২৭ আগস্ট এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এই কমিশন গত বছর ১৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন।

দায় ব্যক্তির, বাহিনীর নয়

গুমের অপরাধের দায় ব্যক্তির, এ দায় কোনো বাহিনীর নয় মন্তব্য করে কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যে সব সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুম করার অভিযোগ আছে, তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনুসন্ধান করছে কমিশন। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে গুমের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যে সব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়। কারণ অপরাধীরা অনেক সময় আইনের হাত থেকে বাঁচতে তার ধর্ম, কমিউনিটি, সামাজিক গ্রুপ, ইত্যাদির আড়ালে লুকাতে চেষ্টা করে। কিন্তু বিচার কখনও ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে হয় না, তা হয় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। কারণ ফৌজদারি অপরাধ একটি ব্যক্তিগত দায়, এতে কমিউনিটিকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই।’ গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায় পুরো বাহিনীর উপর বর্তায় না মন্তব্য করে মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘গুমের সঙ্গে জড়িত নির্দেশদাতাদের দায় আছে। তাদের সংখ্যাও অনেক। প্রত্যেক বাহিনীতে নির্দেশদাতা ও গোপন বন্দিশালা ছিল।’

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক গুমের নির্দেশ দেয়ার সঙ্গে জড়িত কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশন প্রধান বলেন, কমিশন এই অপরাধে তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে।

*দায় কার, তদন্তের বিষয়*

৫ আগস্টের পর গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা লুকাতে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলের (জেআইসি) প্রমাণাদি নষ্ট করার বিষয়ে কমিশন বলছে, এই দায় কে নেবে তা তদন্তের বিষয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়েও কমিশনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যা এখনও কার্যকর হয়নি।

এ ব্যাপারে কমিশন প্রধানের ভাষ্য, গ্রেপ্তার করা না গেলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে।

* পুলিশ লাইনসে গোপন বন্দিশালা*

পুলিশ লাইনসেও গোপন বন্দিশালা পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন।

বগুড়া পুলিশ লাইনে এ বন্দিশালা পাওয়া গেছে দাবি করে কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, ‘পুলিশ লাইনের ভেতরে কারাগারের মতো গোপন বন্দিশালা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। যেটি একেবারেই অ্যাবসার্ড একটা ব্যাপার। সেটি আমরা বগুড়ায় পেয়েছি। আমাদের ধারণা অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের আরও পাবো।’

এসব বন্দিশালা গত ১৫ বছরে করা হয়েছে কিনা, এক সাংবাদিদের এ প্রশ্নে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘এগুলো গত ১৫ বছরের মধ্যেই বানানো হয়েছে। সম্ভবত গত ১০-১২ বছরের মতো। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে বন্দিদের এনে রাখা হতো, জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো। এখান থেকেও অনেকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।’

*জেনারেলদের পালাতে সাহায্য*

সংবাদ সম্মেলনে কমিশন সদস্য নাবিলা ইদ্রিস বলেন, ‘কর্মকর্তারা আমাদের বলেছেন যে, তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশ মেনেই কাজ করতেন। কিন্তু গুমের তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ম্যান্ডেট আছে এই সরকারের।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস বলেন, ‘সুতরাং এখন যারা জেনারেলদের পালাতে সাহায্য করছেন তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ করছে না। এটি আপনাদের ব্যক্তিগত দায়।’

বর্তমানে বিভিন্ন পদে থাকা অনেকেই গুমের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের পক্ষে থাকার চেষ্টা করে নিজেরাও ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন, যা না করার আহ্বান জানিয়েছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।

সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

back to top