নিহত নেজাম ও সালেক
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর ‘গণপিটুনিতে’ দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহত দুজনকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে জামায়াত ইসলামী। সংগঠনটির অভিযোগ, তাদের ‘পরিকল্পিতভাবে’ হত্যা করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন মো. নেজাম উদ্দিন ও আবু সালেক। তারা কাঞ্চনা ইউনিয়নের বাসিন্দা।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন স্থানীয় তিন বাসিন্দা ও এক দোকানি। আহত ব্যক্তিরা হলেন ওবায়দুল হক (২২), নাসির উদ্দিন (৩৮), আব্বাস উদ্দিন (৩৮) ও মো. মামুনুর রশিদ (৪৫)।
সোমবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ছনখোলা চূড়ামনি গ্রামে ‘ডাকাত সন্দেহে’ দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করার কথা জানিয়েছিল পুলিশ।
সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম বলেছিলেন, নিহতরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছনখোলা চূড়ামনি গ্রামে গেলে মাইকে ডাকাত ঘোষণা দেয়া হয়। এলাকাবাসী তাদের ঘিরে গণপিটুনি দিলে দুজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের একজনের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও ছয়টি ব্যবহৃত গুলির খোসা পাওয়া গেছে।
সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত রেজা বলেন, ‘সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কয়েকজন বন্দুকধারী ডাকাত একটি বাড়িতে আসার খবর স্থানীয় মসজিদে প্রচারিত হলে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। একটি অটোরিকশায় করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদল এলোপাতাড়ি গুলি চালালে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।’
তিনি বলেন, ‘এ সময় অটোরিকশা থেকে দুজনকে আটক করে গণপিটুনি দেয় উত্তেজিত গ্রামবাসী। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।’
নিহত নেজাম ও সালেককে নিজেদের কর্মী দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামী সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দুজনই কাঞ্চনা ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী। তাদের পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।’
নিহতরা ওই এলাকার পরিচিত দাবি করে জামায়াত নেতা জায়েদ বলেন, ‘তাদের সালিশী বিচারের নামে ‘ফন্দি’ করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে মারধর করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মাইকে ডাকাত হিসেবে ঘোষণা দেয়া
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করার কাজ চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্দেহভাজন ডাকাতদল এলাকার বাইরে থেকে এসেছে। এলাকাবাসী তাদের চেনে না।’
মিল্টন বিশ্বাস জানান, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আছে। ‘ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
স্থানীয়রা বলছেন, বিগত সরকারের সময়ে তারা এলাকা ছাড়া ছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে তারা এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
সম্প্রতি স্থানীয় এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলামের মাছের খামার ও ইটভাটায় লুটের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায়
নজরুলের স্ত্রী জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জামায়াতের কিছু স্থানীয় নেতাকর্মী দাবি করেছেন, এলাকায় বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি সালিশ বৈঠকের কথা বলে নেজাম ও তার সঙ্গীদের এওচিয়ায় ডেকে নিয়ে মাইকে ডাকাত পড়েছে ঘোষণা করা হয়। এরপর নেজাম ও তার সঙ্গীদের পিটুনি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সনতু বলেন, ‘রাতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। শুনেছি কিছু সশস্ত্র যুবক সেখানে গিয়েছিল। তারা সেখানে ফায়ার করছে। সেখান থেকে ৯৯৯ এ সংবাদ দেয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিহতদের মধ্যে সালেকের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যা ও বিভিন্ন ঘটনার পাঁচটি মামলা আছে। আরেকজনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে সেটি থানা থেকে লুট করা অস্ত্র বলে আমরা প্রাথমিকভাবে অনুমান করছি। সেটি খতিয়ে দেখার জন্য আমরা পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠিয়েছি। কোন ইউনিটের অস্ত্র তখন তা জানা যাবে।’
রাজনৈতিক বিরোধে এ হত্যাকা- ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্তনাধীন উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নিহত নেজাম ও সালেক
মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর ‘গণপিটুনিতে’ দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহত দুজনকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে জামায়াত ইসলামী। সংগঠনটির অভিযোগ, তাদের ‘পরিকল্পিতভাবে’ হত্যা করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন মো. নেজাম উদ্দিন ও আবু সালেক। তারা কাঞ্চনা ইউনিয়নের বাসিন্দা।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন স্থানীয় তিন বাসিন্দা ও এক দোকানি। আহত ব্যক্তিরা হলেন ওবায়দুল হক (২২), নাসির উদ্দিন (৩৮), আব্বাস উদ্দিন (৩৮) ও মো. মামুনুর রশিদ (৪৫)।
সোমবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ছনখোলা চূড়ামনি গ্রামে ‘ডাকাত সন্দেহে’ দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করার কথা জানিয়েছিল পুলিশ।
সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম বলেছিলেন, নিহতরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছনখোলা চূড়ামনি গ্রামে গেলে মাইকে ডাকাত ঘোষণা দেয়া হয়। এলাকাবাসী তাদের ঘিরে গণপিটুনি দিলে দুজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের একজনের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও ছয়টি ব্যবহৃত গুলির খোসা পাওয়া গেছে।
সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত রেজা বলেন, ‘সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কয়েকজন বন্দুকধারী ডাকাত একটি বাড়িতে আসার খবর স্থানীয় মসজিদে প্রচারিত হলে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। একটি অটোরিকশায় করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদল এলোপাতাড়ি গুলি চালালে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।’
তিনি বলেন, ‘এ সময় অটোরিকশা থেকে দুজনকে আটক করে গণপিটুনি দেয় উত্তেজিত গ্রামবাসী। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।’
নিহত নেজাম ও সালেককে নিজেদের কর্মী দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামী সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দুজনই কাঞ্চনা ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী। তাদের পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।’
নিহতরা ওই এলাকার পরিচিত দাবি করে জামায়াত নেতা জায়েদ বলেন, ‘তাদের সালিশী বিচারের নামে ‘ফন্দি’ করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে মারধর করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মাইকে ডাকাত হিসেবে ঘোষণা দেয়া
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করার কাজ চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্দেহভাজন ডাকাতদল এলাকার বাইরে থেকে এসেছে। এলাকাবাসী তাদের চেনে না।’
মিল্টন বিশ্বাস জানান, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আছে। ‘ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
স্থানীয়রা বলছেন, বিগত সরকারের সময়ে তারা এলাকা ছাড়া ছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে তারা এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
সম্প্রতি স্থানীয় এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলামের মাছের খামার ও ইটভাটায় লুটের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায়
নজরুলের স্ত্রী জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জামায়াতের কিছু স্থানীয় নেতাকর্মী দাবি করেছেন, এলাকায় বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি সালিশ বৈঠকের কথা বলে নেজাম ও তার সঙ্গীদের এওচিয়ায় ডেকে নিয়ে মাইকে ডাকাত পড়েছে ঘোষণা করা হয়। এরপর নেজাম ও তার সঙ্গীদের পিটুনি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সনতু বলেন, ‘রাতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। শুনেছি কিছু সশস্ত্র যুবক সেখানে গিয়েছিল। তারা সেখানে ফায়ার করছে। সেখান থেকে ৯৯৯ এ সংবাদ দেয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিহতদের মধ্যে সালেকের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যা ও বিভিন্ন ঘটনার পাঁচটি মামলা আছে। আরেকজনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে সেটি থানা থেকে লুট করা অস্ত্র বলে আমরা প্রাথমিকভাবে অনুমান করছি। সেটি খতিয়ে দেখার জন্য আমরা পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠিয়েছি। কোন ইউনিটের অস্ত্র তখন তা জানা যাবে।’
রাজনৈতিক বিরোধে এ হত্যাকা- ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্তনাধীন উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।