‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন ‘অবৈধ’ উপায়ে অন্তত ১৩৩ কোটি টাকা অর্জন করেছেন, যার মধ্যে ৮৬ লাখ টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির ভাষ্য, দেশি গরু-ছাগলকে ‘বিদেশি ও বংশীয়’ হিসেবে প্রচার চালিয়ে কোরবানির বাজার থেকে সাদিক অ্যাগ্রোর ‘অবৈধ’ আয় ১২১ কোটি টাকার বেশি।
অর্থপাচারের মামলায় সোমবার বিকেলে ঢাকার মালিবাগ থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুলের আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে এ আদেশ দেয়। সরকারি কৌসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জানান, এদিন দুপুরে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়া হয়। প্রথমে তাকে রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়, পরে তোলা হয় কাঠগড়ায়। সেখানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির পরিদর্শক সায়েদুর রহমান তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
ইমরানের পক্ষে জামিন আবেদন করা আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও আল মামুন রাসেল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানির পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
এর আগে ইমরানের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় অর্থপাচারের মামলা করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসআই জোনাঈদ হোসেন। মামলায় সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম জেনিথ ও সাদিক অ্যাগ্রো লিমিটেডকে আসামি করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় পাঁচ থেকে ৭ জন।
ইমরানের বিষয়ে ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে’ পাওয়া তথ্য জানাতে মঙ্গলবার বিকেলে মালিবাগে নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকে সিআইডি। সেখানে সিআইডির ‘অর্গানাইজড ক্রাইম’ বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি একরামুল হাবীব বলেন, ‘ইমরান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার তৌহিদুল আলম জেনিথসহ এই চক্রের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে সোমবার মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়। ‘তারা ‘মানি লন্ডারিং’ করে ১৩৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬ হাজার ৩৪৪ টাকা অর্জন করেছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অনুমোদনহীন ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি ও সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে পাচার করেছে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘ইমরান ও তার সহযোগীরা থাইল্যান্ড ও মায়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু ও মহিষ এনে বিক্রি করত। ভুটান ও নেপাল থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু এনেও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।’
গত বছর ঈদুল আজহার আগে কোটি টাকার ‘বংশ মর্যাদাসম্পন্ন গরু’ ও ছাগলের দাম ১৫ লাখ টাকা চাওয়ার ঘটনায় শুরু হয় সমালোচনা। সেই ছাগল ১২ লাখ টাকায় কেনার চুক্তি করেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ। ১৯ বছরের তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১২ লাখ টাকায় ছাগল কেনার চুক্তির পর তার বাবা এনবিআর সদস্য মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য আসে গণমাধ্যমে।
এরপর সাদিক অ্যাগ্রোর নানা অনিয়মের বিষয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি কর্মকর্তা একরামুল হাবীব বলেন, ‘অবৈধভাবে অর্জিত ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা ইমরান ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ মেটাল লিমিটেডের নামে এফডিআর খুলে বিনিয়োগ করে লন্ডারকৃত সম্পদে রূপান্তর করেছেন।’ এছাড়া মোহাম্মদপুরের এলাকায় সরকারি খাল ভরাট ও দখল করে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।
২০২১ সালের জুলাইয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে আসা নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু। ‘শাহিওয়াল’ নাম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গরুগুলো আমদানি করেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। ওই সময় গরু আমদানির প্রতিটি নথি জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন শুল্ক কর্মকর্তারা। সে সময় গরু আমদানির বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন।
ইমরানের সঙ্গে কোনো সরকারি কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে কিনা জানতে চাইলে সিআইডি কর্মকর্তা একরামুল বলেন, ‘মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী কোনো
সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটি দুদক তদন্ত করবে। এ মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে সব বিষয় প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।’ তদন্ত শেষে আরও বিস্তারিত জানানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উনি যে লন্ডারিং করেছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে অবৈধ লেনদেনের তথ্য, তদন্তের স্বার্থে ওই বিষয়গুলো একটু গোপন রাখতে হচ্ছে।
‘তিনি প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন, মোহাম্মদপুরে সরকারি খাল ভরাট করে অবৈধভাবে ব্যবসা করেছেন। তাছাড়া প্রচুর অস্থাবর সম্পত্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। আরও বেশকিছু সম্পদ যেগুলো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।’ পাচার করা টাকা থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইমরানের সহযোগী জেনিথ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা অভিযান চালাচ্ছি। আরও পাঁচ থেকে ৭ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি।’ এর আগে ইমরান হোসেনের ২৭টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করে আদালত। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলাও আছে।
মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫
‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন ‘অবৈধ’ উপায়ে অন্তত ১৩৩ কোটি টাকা অর্জন করেছেন, যার মধ্যে ৮৬ লাখ টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির ভাষ্য, দেশি গরু-ছাগলকে ‘বিদেশি ও বংশীয়’ হিসেবে প্রচার চালিয়ে কোরবানির বাজার থেকে সাদিক অ্যাগ্রোর ‘অবৈধ’ আয় ১২১ কোটি টাকার বেশি।
অর্থপাচারের মামলায় সোমবার বিকেলে ঢাকার মালিবাগ থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুলের আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে এ আদেশ দেয়। সরকারি কৌসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জানান, এদিন দুপুরে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়া হয়। প্রথমে তাকে রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়, পরে তোলা হয় কাঠগড়ায়। সেখানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির পরিদর্শক সায়েদুর রহমান তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
ইমরানের পক্ষে জামিন আবেদন করা আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও আল মামুন রাসেল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানির পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
এর আগে ইমরানের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় অর্থপাচারের মামলা করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসআই জোনাঈদ হোসেন। মামলায় সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম জেনিথ ও সাদিক অ্যাগ্রো লিমিটেডকে আসামি করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় পাঁচ থেকে ৭ জন।
ইমরানের বিষয়ে ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে’ পাওয়া তথ্য জানাতে মঙ্গলবার বিকেলে মালিবাগে নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকে সিআইডি। সেখানে সিআইডির ‘অর্গানাইজড ক্রাইম’ বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি একরামুল হাবীব বলেন, ‘ইমরান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার তৌহিদুল আলম জেনিথসহ এই চক্রের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে সোমবার মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়। ‘তারা ‘মানি লন্ডারিং’ করে ১৩৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬ হাজার ৩৪৪ টাকা অর্জন করেছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অনুমোদনহীন ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি ও সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে পাচার করেছে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘ইমরান ও তার সহযোগীরা থাইল্যান্ড ও মায়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু ও মহিষ এনে বিক্রি করত। ভুটান ও নেপাল থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু এনেও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।’
গত বছর ঈদুল আজহার আগে কোটি টাকার ‘বংশ মর্যাদাসম্পন্ন গরু’ ও ছাগলের দাম ১৫ লাখ টাকা চাওয়ার ঘটনায় শুরু হয় সমালোচনা। সেই ছাগল ১২ লাখ টাকায় কেনার চুক্তি করেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ। ১৯ বছরের তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১২ লাখ টাকায় ছাগল কেনার চুক্তির পর তার বাবা এনবিআর সদস্য মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য আসে গণমাধ্যমে।
এরপর সাদিক অ্যাগ্রোর নানা অনিয়মের বিষয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি কর্মকর্তা একরামুল হাবীব বলেন, ‘অবৈধভাবে অর্জিত ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা ইমরান ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ মেটাল লিমিটেডের নামে এফডিআর খুলে বিনিয়োগ করে লন্ডারকৃত সম্পদে রূপান্তর করেছেন।’ এছাড়া মোহাম্মদপুরের এলাকায় সরকারি খাল ভরাট ও দখল করে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।
২০২১ সালের জুলাইয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে আসা নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু। ‘শাহিওয়াল’ নাম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গরুগুলো আমদানি করেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। ওই সময় গরু আমদানির প্রতিটি নথি জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন শুল্ক কর্মকর্তারা। সে সময় গরু আমদানির বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন।
ইমরানের সঙ্গে কোনো সরকারি কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে কিনা জানতে চাইলে সিআইডি কর্মকর্তা একরামুল বলেন, ‘মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী কোনো
সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটি দুদক তদন্ত করবে। এ মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে সব বিষয় প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।’ তদন্ত শেষে আরও বিস্তারিত জানানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উনি যে লন্ডারিং করেছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে অবৈধ লেনদেনের তথ্য, তদন্তের স্বার্থে ওই বিষয়গুলো একটু গোপন রাখতে হচ্ছে।
‘তিনি প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন, মোহাম্মদপুরে সরকারি খাল ভরাট করে অবৈধভাবে ব্যবসা করেছেন। তাছাড়া প্রচুর অস্থাবর সম্পত্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। আরও বেশকিছু সম্পদ যেগুলো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।’ পাচার করা টাকা থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইমরানের সহযোগী জেনিথ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা অভিযান চালাচ্ছি। আরও পাঁচ থেকে ৭ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি।’ এর আগে ইমরান হোসেনের ২৭টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করে আদালত। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলাও আছে।