শুক্রবার পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বায়তুল মোকাররমে হিযবুত তাহরীরের মিছিল -সংবাদ
নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর আগে থেকেই ঘোষণা করেছিল কর্মসূচি। চালিয়েছিল প্রচার, প্রচারণাও। আর দুদিন আগে থেকেই হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল পুলিশ যে নিষিদ্ধ সংগঠনকে কোনো কর্মসূচী করতে দেয়া হবে না। তবে শুক্রবার মিছিলটি ঠেকাতে পারেনি পুলিশ। যেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হয় মিছিল সেখানে ছিলেন জনা দশেক পুলিশ সদস্য।
শুক্রবার দুপুরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হওয়া মিছিলের তোড়ে একরকম ভেসে যায় স্বল্প পুলিশের বাধা। মিছিলটি পল্টন হয়ে বিজয়নগরের দিকে যাওয়ার পর পুলিশ টিয়ারগ্যাস
ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়া শুরু করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়।
দীর্ঘদিন ধরে গোপনে সাংগঠনিক কর্মকা- চালিয়ে আসা বিশ্বের বহু দেশে নিষিদ্ধ সংগঠনটি এখন প্রায় প্রকাশ্যেই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। বায়তুল মোকারমের তাদের শুক্রবার কর্মসূচি ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় লিফলেটও বিলি করেছে। নিষিদ্ধ এই সংগঠন বায়তুল মোকাররমে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ার করেছিল ডিএমপি।
শুক্রবার হিযবুতের মিছিল বিজয়নগরে যাওয়ার পর পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মিছিলকারীরা অলিগলিতে ঢুকে পড়লে লাঠি হাতে পুলিশ তাদের তাড়া করে। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার শাহরিয়ার আলী বলেন, ‘হিযবুতের মিছিল ছত্রভঙ্গে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে, টিয়ারশেল ছুঁড়েছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।’
পেটের উপর সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদক সুশোভন অর্ক। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
# হিযবুতের কর্মসূচী, বাহিনীর প্রস্তুতি
নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুতের ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুদিন আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল পুলিশ। শুক্রবার দুপুরেও পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, ‘হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর উত্তরা ১১ ও ১২ নম্বর সেক্টর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুম্মার নামাজের দুই ঘণ্টা আগে থেকেই বায়তুল মোকাররমের ফটকগুলোতে অবস্থান নেয় র্যাব, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের মধ্যে যারা ব্যাগ হাতে আসেন, তাদের তল্লাশি করে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। কারো কারো কাছে পরিচয় ও আরও কিছু তথ্য জানতে চায় তারা। র্যাব-পুলিশের সদস্যদের হাতে গ্যাসগান, শটগানসহ দাঙা দমনের সরঞ্জাম দেখা যায়। আশপাশে পুলিশের সাঁজোয়া যান এবং জলকামানের গাড়িও মোতায়েন করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পল্টন মোড়ে বহু পুলিশ ও এপিবিএন সদস্য ছিলেন। পল্টন মোড় থেকে গুলিস্তানমুখী সড়কে একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি), একটি জলকামান ও একটি প্রিজন ভ্যানও দেখা গেছে। বায়তুল মোকাররম থেকে পল্টন মোড়মুখী সড়কে পুলিশের আরেকটি প্রিজন ভ্যান দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনায় নিয়ে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার হিযবুত তাহীরকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী, নিষিদ্ধ সংগঠনের যে কোনো ধরনের সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ বা প্রচারমূলক কার্যক্রম ফৌজদারি অপরাধ। ডিএমপি আরও জানায়, হিযবুত তাহীরসহ কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন যদি সভা-সমাবেশ বা প্রচারমূলক কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
# আটক ব্যক্তিকে ছাড়ালেন উপদেষ্টা
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর সমর্থককে পিটুনি দেয়া এক ব্যক্তি আটক হওয়ার পর তাকে ছাড়িয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে সেই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিজের গাড়িতে করে নিয়ে যান।
শুক্রবার পুলিশ যখন হিযবুতের মিছিল ছত্রভঙ্গে অ্যাকশনের যায় ওই সময় পুলিশের পাশাপাশি লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তিকেও হিযবুত তাহরীরের সদস্যকে পেটাতে দেখা যায়। পরে ওই ব্যক্তিকে আটক করে যৌথ বাহিনী। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ওই ঘটনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার ডিবি কার্যালয়ে যান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি পরে ডিবি কার্যালয়ের ফটক দিয়ে হেঁটে বের হয়ে রাস্তায় অপেক্ষমান গাড়িতে করে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে যান।
পরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেইসবুক পোস্টে লিখেন, ‘ছাড়া পাওয়া ওই ব্যক্তি বায়তুল মোকাররম এলাকায় পানি সরবরাহ করে থাকেন।’ এ বিষয়ে জানতে ডিএমপির ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
# আগের রাতের গ্রেপ্তার ও পুলিশের বার্তা
বায়তুল মোকাররমে পূর্বঘোষিত কর্মসূচী পালনের ‘পরিকল্পনার সময়’ নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গ্রেপ্তাররা হলেন মনিরুল ইসলাম (৪০), মোহতাসিন বিল্লাহ (৪০) ও মাহমুদুল হাসান (২১)। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে উত্তরা ১১ ও ১২ নম্বর সেক্টর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। একইসঙ্গে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিতে সিটিটিসির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আর শুক্রবার ডিএমপির এক বার্তায় বলা হয়, হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা ৭ মার্চ বায়তুল মোকাররাম মসজিদ এলাকায় ‘মার্চ ফর খিলাফা’ নামে একটি সমাবেশ পালন সংক্রান্ত ‘গোপন পরিকল্পনা করছে’, এমন তথ্যেরভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ’গ্রেপ্তাররা প্রত্যেকে হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে এবং তাদের কাছ থেকে জব্দ করা আলামত থেকে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।’
# তাদের কাজ, কী বলছে তারা
ক্ষমতার পালাবদলের পর নতুন করে তৎপর হয়ে উঠেছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হিযবুত তাহরীর। রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা এবং শরিয়া বাস্তবায়ন তাদের ঘোষিত মূল লক্ষ্য।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিনই ঢাকায় মিছিল করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এরপরও নানা দাবিতে মিছিলের পাশাপাশি ঢাকায় গোলটেবিল বৈঠকও করেছে সংগঠনটি। চট্টগ্রামেও পালন করেছে নানা কর্মসূচি। সংগঠনটির মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিম এর আগে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার পতন আন্দোলনে শুরু থেকেই তাদের কর্মীরা অংশ নেন, তবে তারা কোনো ব্যানার ব্যবহার করেননি।
ক্ষমতার পালাবদলের পর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ গুঁড়িয়ে হিযবুত তাহরীরের পোস্টারও লাগানো হয়েছিল।
২০০১ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করা হিযবুত তাহরীর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য গত সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে আবেদন করলেও সরকারের তরফ থেকে কোনো সাড়া আসেনি।
শুক্রবার পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বায়তুল মোকাররমে হিযবুত তাহরীরের মিছিল -সংবাদ
শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫
নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর আগে থেকেই ঘোষণা করেছিল কর্মসূচি। চালিয়েছিল প্রচার, প্রচারণাও। আর দুদিন আগে থেকেই হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল পুলিশ যে নিষিদ্ধ সংগঠনকে কোনো কর্মসূচী করতে দেয়া হবে না। তবে শুক্রবার মিছিলটি ঠেকাতে পারেনি পুলিশ। যেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হয় মিছিল সেখানে ছিলেন জনা দশেক পুলিশ সদস্য।
শুক্রবার দুপুরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হওয়া মিছিলের তোড়ে একরকম ভেসে যায় স্বল্প পুলিশের বাধা। মিছিলটি পল্টন হয়ে বিজয়নগরের দিকে যাওয়ার পর পুলিশ টিয়ারগ্যাস
ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়া শুরু করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়।
দীর্ঘদিন ধরে গোপনে সাংগঠনিক কর্মকা- চালিয়ে আসা বিশ্বের বহু দেশে নিষিদ্ধ সংগঠনটি এখন প্রায় প্রকাশ্যেই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। বায়তুল মোকারমের তাদের শুক্রবার কর্মসূচি ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় লিফলেটও বিলি করেছে। নিষিদ্ধ এই সংগঠন বায়তুল মোকাররমে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ার করেছিল ডিএমপি।
শুক্রবার হিযবুতের মিছিল বিজয়নগরে যাওয়ার পর পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মিছিলকারীরা অলিগলিতে ঢুকে পড়লে লাঠি হাতে পুলিশ তাদের তাড়া করে। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার শাহরিয়ার আলী বলেন, ‘হিযবুতের মিছিল ছত্রভঙ্গে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে, টিয়ারশেল ছুঁড়েছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।’
পেটের উপর সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদক সুশোভন অর্ক। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
# হিযবুতের কর্মসূচী, বাহিনীর প্রস্তুতি
নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুতের ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুদিন আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল পুলিশ। শুক্রবার দুপুরেও পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, ‘হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর উত্তরা ১১ ও ১২ নম্বর সেক্টর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুম্মার নামাজের দুই ঘণ্টা আগে থেকেই বায়তুল মোকাররমের ফটকগুলোতে অবস্থান নেয় র্যাব, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের মধ্যে যারা ব্যাগ হাতে আসেন, তাদের তল্লাশি করে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। কারো কারো কাছে পরিচয় ও আরও কিছু তথ্য জানতে চায় তারা। র্যাব-পুলিশের সদস্যদের হাতে গ্যাসগান, শটগানসহ দাঙা দমনের সরঞ্জাম দেখা যায়। আশপাশে পুলিশের সাঁজোয়া যান এবং জলকামানের গাড়িও মোতায়েন করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পল্টন মোড়ে বহু পুলিশ ও এপিবিএন সদস্য ছিলেন। পল্টন মোড় থেকে গুলিস্তানমুখী সড়কে একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি), একটি জলকামান ও একটি প্রিজন ভ্যানও দেখা গেছে। বায়তুল মোকাররম থেকে পল্টন মোড়মুখী সড়কে পুলিশের আরেকটি প্রিজন ভ্যান দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনায় নিয়ে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার হিযবুত তাহীরকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী, নিষিদ্ধ সংগঠনের যে কোনো ধরনের সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ বা প্রচারমূলক কার্যক্রম ফৌজদারি অপরাধ। ডিএমপি আরও জানায়, হিযবুত তাহীরসহ কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন যদি সভা-সমাবেশ বা প্রচারমূলক কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
# আটক ব্যক্তিকে ছাড়ালেন উপদেষ্টা
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর সমর্থককে পিটুনি দেয়া এক ব্যক্তি আটক হওয়ার পর তাকে ছাড়িয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে সেই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিজের গাড়িতে করে নিয়ে যান।
শুক্রবার পুলিশ যখন হিযবুতের মিছিল ছত্রভঙ্গে অ্যাকশনের যায় ওই সময় পুলিশের পাশাপাশি লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তিকেও হিযবুত তাহরীরের সদস্যকে পেটাতে দেখা যায়। পরে ওই ব্যক্তিকে আটক করে যৌথ বাহিনী। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ওই ঘটনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার ডিবি কার্যালয়ে যান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি পরে ডিবি কার্যালয়ের ফটক দিয়ে হেঁটে বের হয়ে রাস্তায় অপেক্ষমান গাড়িতে করে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে যান।
পরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেইসবুক পোস্টে লিখেন, ‘ছাড়া পাওয়া ওই ব্যক্তি বায়তুল মোকাররম এলাকায় পানি সরবরাহ করে থাকেন।’ এ বিষয়ে জানতে ডিএমপির ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
# আগের রাতের গ্রেপ্তার ও পুলিশের বার্তা
বায়তুল মোকাররমে পূর্বঘোষিত কর্মসূচী পালনের ‘পরিকল্পনার সময়’ নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গ্রেপ্তাররা হলেন মনিরুল ইসলাম (৪০), মোহতাসিন বিল্লাহ (৪০) ও মাহমুদুল হাসান (২১)। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে উত্তরা ১১ ও ১২ নম্বর সেক্টর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। একইসঙ্গে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিতে সিটিটিসির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আর শুক্রবার ডিএমপির এক বার্তায় বলা হয়, হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা ৭ মার্চ বায়তুল মোকাররাম মসজিদ এলাকায় ‘মার্চ ফর খিলাফা’ নামে একটি সমাবেশ পালন সংক্রান্ত ‘গোপন পরিকল্পনা করছে’, এমন তথ্যেরভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ’গ্রেপ্তাররা প্রত্যেকে হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে এবং তাদের কাছ থেকে জব্দ করা আলামত থেকে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।’
# তাদের কাজ, কী বলছে তারা
ক্ষমতার পালাবদলের পর নতুন করে তৎপর হয়ে উঠেছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হিযবুত তাহরীর। রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা এবং শরিয়া বাস্তবায়ন তাদের ঘোষিত মূল লক্ষ্য।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিনই ঢাকায় মিছিল করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এরপরও নানা দাবিতে মিছিলের পাশাপাশি ঢাকায় গোলটেবিল বৈঠকও করেছে সংগঠনটি। চট্টগ্রামেও পালন করেছে নানা কর্মসূচি। সংগঠনটির মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিম এর আগে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার পতন আন্দোলনে শুরু থেকেই তাদের কর্মীরা অংশ নেন, তবে তারা কোনো ব্যানার ব্যবহার করেননি।
ক্ষমতার পালাবদলের পর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ গুঁড়িয়ে হিযবুত তাহরীরের পোস্টারও লাগানো হয়েছিল।
২০০১ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করা হিযবুত তাহরীর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য গত সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে আবেদন করলেও সরকারের তরফ থেকে কোনো সাড়া আসেনি।