‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন-নারী ও কন্যার উন্নয়ন’Ñ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শনিআর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিনটি উপলক্ষে সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানান কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে; মানববন্ধন, র্যালি, আলোচনা সভা, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। সরকারি টেলিভিশন ও বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ থেকে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁচ কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। আন্দোলন করার অপরাধে গ্রেপ্তার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। ৩ বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারী বর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দু-বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। বানীতে তিনি বলেন, নারীদের সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতাকে উৎপাদনমুখী কাজে সম্পৃক্ত করে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার
নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের নারীরা এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নারী সমাজের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
নারী দিবসে আলোচনা
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নারী সংগঠনগুলোর জোট ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি’ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন এবং সমানাধিকারের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এ সময় নারী অধিকার কর্মীরা বেশ কয়েকটি দাবিও তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য তুলে ধরে কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে কাগজে-কলমে, বক্তৃতায় নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে নারীর প্রতি সহিংসতা ক্রমাগত বাড়ছে। জুলাই-পরবর্তী যে বৈষম্যহীন ও ন্যায়সঙ্গত বাংলাদেশ আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, তা আমাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই ২৫২৫ জন নারী ও কন্যাশিশু লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আর এ বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতেই মোট ৩৯৪টি সহিংসতার ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে যার মধ্যে ৯৭ জন নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৩১ জন। শুধু জানুয়ারিতেই যৌন নিপীড়ন, যৌতুকসহ বিভিন্ন কারণে ১১ কন্যাসহ ৪৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্যাতিত ১৮৯ জনের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১০ জন, এর মধ্যে ৬ জন কন্যাশিশু। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ১৫ জন। গৃহকর্মী নির্যাতনের ৩টি ঘটনা ঘটেছে, এবং ২ জন গৃহকর্মীকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এগুলো শুধুমাত্র প্রকাশিত খবর ও রিপোর্টেড কেস থেকে প্রাপ্ত তথ্য, এর বাইরেও ঘরে-বাইরে নানারকম সহিংসতার শিকার নারীরা হচ্ছেন যা অনেক সময় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছায় না। এ সময় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি বাল্য বিয়ের কারণে ১৩ বছরের এক কিশোরী মা সন্তান জন্ম দেয়ার জটিলতা মারা গেছে ঢাকার এক বস্তিতে। মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল ১২ বছরে। অন্যদিকে গাইবান্ধায় ১৩ বছরের এক কিশোর অপ্রাপ্তবয়স কিশোর দ্বারা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় যার বিচার বা চিকিৎসা কোনোটাই তাকে নিতে দেয়নি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আয়োজিত সালিশে। গাজীপুরে, নারী গার্মেন্টস কর্মী এক কারখানার ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন, চায়ের দোকানে নারীদের ধূমপান নিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে, বাড়ি ও রাস্তায় ছিনতাই, ডাকাতি, চুরির সময়েও নারীদের যৌন আক্রমণ বা ধর্ষণের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।
শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫
‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন-নারী ও কন্যার উন্নয়ন’Ñ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শনিআর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিনটি উপলক্ষে সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানান কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে; মানববন্ধন, র্যালি, আলোচনা সভা, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। সরকারি টেলিভিশন ও বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ থেকে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁচ কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। আন্দোলন করার অপরাধে গ্রেপ্তার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। ৩ বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারী বর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দু-বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। বানীতে তিনি বলেন, নারীদের সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতাকে উৎপাদনমুখী কাজে সম্পৃক্ত করে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার
নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের নারীরা এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নারী সমাজের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
নারী দিবসে আলোচনা
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নারী সংগঠনগুলোর জোট ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি’ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন এবং সমানাধিকারের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এ সময় নারী অধিকার কর্মীরা বেশ কয়েকটি দাবিও তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য তুলে ধরে কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে কাগজে-কলমে, বক্তৃতায় নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে নারীর প্রতি সহিংসতা ক্রমাগত বাড়ছে। জুলাই-পরবর্তী যে বৈষম্যহীন ও ন্যায়সঙ্গত বাংলাদেশ আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, তা আমাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই ২৫২৫ জন নারী ও কন্যাশিশু লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আর এ বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতেই মোট ৩৯৪টি সহিংসতার ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে যার মধ্যে ৯৭ জন নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৩১ জন। শুধু জানুয়ারিতেই যৌন নিপীড়ন, যৌতুকসহ বিভিন্ন কারণে ১১ কন্যাসহ ৪৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্যাতিত ১৮৯ জনের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১০ জন, এর মধ্যে ৬ জন কন্যাশিশু। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ১৫ জন। গৃহকর্মী নির্যাতনের ৩টি ঘটনা ঘটেছে, এবং ২ জন গৃহকর্মীকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এগুলো শুধুমাত্র প্রকাশিত খবর ও রিপোর্টেড কেস থেকে প্রাপ্ত তথ্য, এর বাইরেও ঘরে-বাইরে নানারকম সহিংসতার শিকার নারীরা হচ্ছেন যা অনেক সময় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছায় না। এ সময় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি বাল্য বিয়ের কারণে ১৩ বছরের এক কিশোরী মা সন্তান জন্ম দেয়ার জটিলতা মারা গেছে ঢাকার এক বস্তিতে। মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল ১২ বছরে। অন্যদিকে গাইবান্ধায় ১৩ বছরের এক কিশোর অপ্রাপ্তবয়স কিশোর দ্বারা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় যার বিচার বা চিকিৎসা কোনোটাই তাকে নিতে দেয়নি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আয়োজিত সালিশে। গাজীপুরে, নারী গার্মেন্টস কর্মী এক কারখানার ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন, চায়ের দোকানে নারীদের ধূমপান নিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে, বাড়ি ও রাস্তায় ছিনতাই, ডাকাতি, চুরির সময়েও নারীদের যৌন আক্রমণ বা ধর্ষণের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।