ওয়ান-ইলেভেনে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মার্কিন নীতি ও ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভূমিকা ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচ।
শনিবার সকালে ঢাকায় এক আলোচনায় তিনি বলেন, ২০০৭-০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে বড় ভুল করেছিল। সে সময় সেনাবাহিনীর মতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, জনগণের চাওয়া বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল।
‘নতুন ভোরের পথে ঢাকা: গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় জন এফ ড্যানিলোভিচের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলামও অংশ নেন।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার চেয়ারম্যান মুনিরা খান।
আলোচনায় জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, “আমি প্রথম স্বীকার করছি, ২০০৭-০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে বড় ভুল ছিল। তবে রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস কিংবা আমার সহকর্মীরা ওয়ান-ইলেভেন ঘটাননি। সেনাবাহিনীর মতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু জনগণের চাওয়া উপেক্ষিত হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “১৯৯০ সালে গণতন্ত্রের যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা থেকে বিচ্যুতি ঘটেছিল। বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তখন সেনাবাহিনীর কথা বেশি শোনা হয়েছিল। রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা হলেও, সেনা কর্মকর্তাদের মতামতই বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। ফলে প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটেনি।”
জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, “আমাদের দ্বিতীয় ভুল ছিল নির্বাচনের সময়সীমার ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া। নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার সঙ্গে মৌলিক সংস্কারও জরুরি ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন সংস্কারের এজেন্ডা সামনে নিয়ে আসে, তখন এটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু একটা সময় দেখা গেল, নির্বাচনের আয়োজন করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল।”
তিনি বলেন, “যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর প্রভাব হারিয়ে ফেলল, তখন আমাদের জানা সম্ভব হয়নি সাবেক প্রধানমন্ত্রী কী শর্তে আপসরফা করেছিলেন। আমরা এর কোনো পক্ষ ছিলাম না। তখন আমাদের মনে হয়েছিল, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। কিন্তু ইতিহাস ভুল প্রমাণ করল। আমাদের ধারণা ভুল ছিল। আমরা দেখলাম ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকল, যার চূড়ান্ত রূপ দেখা গেল ২০২৪ সালের নির্বাচনে।”
উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, “আমরা একটি সংগঠন গঠন করেছিলাম, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে সচেতন করতে কাজ করেছে। গত পাঁচ বছরে আমরা অর্থায়নের ব্যবস্থা করেছি এবং এই উদ্যোগকে সমর্থন করে গেছি।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। তবে গত ১০ বছরে ভিসা না পাওয়ায় আমি এখানে আসতে পারিনি।”
অন্যদিকে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে, সেটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন জন এফ ড্যানিলোভিচ। তিনি বলেন, “এই উদ্যোগ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রতিফলন। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে বেসামরিক সরকারের গুরুত্ব তুলে ধরার যে প্রচেষ্টা চলছে, তা প্রশংসনীয়।”
শনিবার, ০৮ মার্চ ২০২৫
ওয়ান-ইলেভেনে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মার্কিন নীতি ও ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভূমিকা ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচ।
শনিবার সকালে ঢাকায় এক আলোচনায় তিনি বলেন, ২০০৭-০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে বড় ভুল করেছিল। সে সময় সেনাবাহিনীর মতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, জনগণের চাওয়া বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল।
‘নতুন ভোরের পথে ঢাকা: গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় জন এফ ড্যানিলোভিচের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলামও অংশ নেন।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার চেয়ারম্যান মুনিরা খান।
আলোচনায় জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, “আমি প্রথম স্বীকার করছি, ২০০৭-০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে বড় ভুল ছিল। তবে রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস কিংবা আমার সহকর্মীরা ওয়ান-ইলেভেন ঘটাননি। সেনাবাহিনীর মতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু জনগণের চাওয়া উপেক্ষিত হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “১৯৯০ সালে গণতন্ত্রের যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা থেকে বিচ্যুতি ঘটেছিল। বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তখন সেনাবাহিনীর কথা বেশি শোনা হয়েছিল। রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা হলেও, সেনা কর্মকর্তাদের মতামতই বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। ফলে প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটেনি।”
জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, “আমাদের দ্বিতীয় ভুল ছিল নির্বাচনের সময়সীমার ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া। নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার সঙ্গে মৌলিক সংস্কারও জরুরি ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন সংস্কারের এজেন্ডা সামনে নিয়ে আসে, তখন এটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু একটা সময় দেখা গেল, নির্বাচনের আয়োজন করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল।”
তিনি বলেন, “যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর প্রভাব হারিয়ে ফেলল, তখন আমাদের জানা সম্ভব হয়নি সাবেক প্রধানমন্ত্রী কী শর্তে আপসরফা করেছিলেন। আমরা এর কোনো পক্ষ ছিলাম না। তখন আমাদের মনে হয়েছিল, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। কিন্তু ইতিহাস ভুল প্রমাণ করল। আমাদের ধারণা ভুল ছিল। আমরা দেখলাম ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকল, যার চূড়ান্ত রূপ দেখা গেল ২০২৪ সালের নির্বাচনে।”
উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, “আমরা একটি সংগঠন গঠন করেছিলাম, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে সচেতন করতে কাজ করেছে। গত পাঁচ বছরে আমরা অর্থায়নের ব্যবস্থা করেছি এবং এই উদ্যোগকে সমর্থন করে গেছি।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। তবে গত ১০ বছরে ভিসা না পাওয়ায় আমি এখানে আসতে পারিনি।”
অন্যদিকে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে, সেটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন জন এফ ড্যানিলোভিচ। তিনি বলেন, “এই উদ্যোগ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রতিফলন। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে বেসামরিক সরকারের গুরুত্ব তুলে ধরার যে প্রচেষ্টা চলছে, তা প্রশংসনীয়।”