বাড়ছে নারিকেল আমদানি, কমছে আবাদ ভারতে বছরে গড়ে প্রতি গাছে নারিকেলের উৎপাদন ২৫০টি, সেখানে বাংলাদেশে হয় ৫০টি
রংপুরের পীরগঞ্জের একটি রাস্তায় অযত্ন- অবহেলায় মরে যাওয়া গাছের মাঝে কয়েকটি নারিকেল গাছ -সংবাদ
রংপুর জেলার পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়ন। আশির দশকে ইউনিয়নটিতে ৮০ হাজার নারিকেলের চারা লাগিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন আব্দুল জলিল। তিনি ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল; ইউনিয়নের সব রাস্তার দু’ধারে পরিকল্পিতভাবে নারিকেল গাছ লাগিয়ে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। সেইসঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা। বৃক্ষপ্রেমিক চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর অযতœ অবহেলায় মৃত্যু হয় তার স্বপ্নের। প্রায় দুই তৃতীয়াংশের বেশি গাছ মারা গেছে।
অভিযোগ আছে, পরবর্তীতে যারা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তারা কেউই গাছগুলোর যত্ন নেননি। পাশাপাশি সরকারি কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচি না থাকার কারণে ৬০ হাজারের বেশি গাছ মরে যায়।
ওই ইউনিয়নের ভগবান পুর গ্রামের আশিতিপার বৃদ্ধ আব্বাস আলী মন্ডল প্রতিবেদককে বলেন, ‘কত সুন্দর ঘাটার (রাস্তা) ধারের (পাশে) নারকেল গাচগুলো হামার (আমার) চোখের আগে (সামনে) নষ্ট হয়ে গেল। তরতাজা নারকেল গাছগুলো কেউ দেখাশুনা করলিনা।’
‘শুনচিনো (শুনেছি) তার বিদেশ থাকা বেটি (মেয়ে) আবার গাছ নাগাবি (লাগাবে), সেটাও তো ঘাটাত (রাস্তায়) দেকোনা (দেখিনা)। সরকার এতো জাগাত (জায়গায়) এতো ট্যাকা ঢালে (দেয়) এই ঘাটার নারকেল গাছের দিকে দেকপ্যা (নজর) পারে না’ বলেও আক্ষেপ তার।
আব্দুল জলিলের ফ্রান্স প্রবাসী কন্যা জুঁই তাজুল্লী ফেরদৌসী পিতার স্মৃতি রক্ষায় নারিকেল গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিলেও তাতে সফল হতে পারেনি।
এলাকাবাসীর দাবি, সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তাহলে এলাকাটি পর্যটন ইউনিয়ন হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি পাবে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পীরগঞ্জের এই ইউনিয়নের রাস্তার বিষয়ে কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান সংবাদকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতার সুযোগ থাকলে আমরা করবো।’
বাংলাদেশে সম্ভবনা:
কৃষি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিবেচনায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উষ্ণমন্ডলীয় দেশের অর্ন্তভুক্ত হওয়ায় নারিকেল উৎপাদনের জন্য আদর্শ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় এলাকা পুরোপুরি উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত। উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলো যেমন: বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম জেলায় নারিকেল চাষের মাধ্যমে সুফল প্রাপ্তির সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।
জানাগেছে, সারা পৃথিবীর প্রায় ৯৩টি দেশে নারকেলের চাষ হয়। তবে, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস ও ভারতে নারিকেল উৎপাদনে বেশি হয়। বিশ্বে উৎপাদিত মোট নারিকেলের ৭০ ভাগ উৎপাদিত হয় এ তিনটি দেশে। বর্তমানে ভারতে প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর জমিতে নারিকেল চাষ হয়। ভারতের অন্ধো প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও অন্য অংশের উপকূলীয় অঞ্চলে চাষ সবচেয়ে বেশি। দেশটির সরকার এজন্য বিশাল ওই এলাকাকেগুলোতে নারিকেল চাষ সম্প্রসারণ ও উৎপাদন সম্ভাবনা এলাকায় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে বিশাল এলাকা নারিকেল চাষের আওতায় এনেছে।
নারিকেল আমদানি:
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর(ডিএই) বলছে, দেশে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ছোবড়া ছাড়া নারিকেল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক টন, এসময়ের মধ্যে ফাইটোসেন্যানেটরি সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে ১১৬ মেট্রিক টন।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নারকেল আমদানি ১১ হাজার ৪১ মেট্রিক টন, এসময়ের মধ্যে ফাইটোসেন্যানেটরি সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে ৯৬ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন।
২০২২-২৩ অর্থ বছরে নারকেল আমদানি নেই। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নারকেল আমদানি ১১ হাজার ৪১ মেট্রিক টন হলেও সে অর্থ বছরে আমদানি কম হয়েছে। তিন বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রতিবছরই নারকেল আমদানি বাড়ছে।
নারিকেলের আবাদ:
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর(ডিএই) এর হর্টিকালচার উইং সূত্রে জানাগেছে, সারাদেশে নারিকেলের উৎপাদন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ১২ হাজার ৯২৬ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯১ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫১ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৬৬৮ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৩২ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫২০ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪২ হাজার ২৩২ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ১৯ হাজার ৪৫৮ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৮ হাজার ২২১ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ১০ হাজার ৩৬০ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৮৯৯ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫২ টন। পরিসংখ্যান বিশ্লেষন করে দেখাগেছে আগের চেয়ে নারিকেলের উৎপাদন কমে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন :
কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী মাসুদ সংবাদকে বলেন, ‘পৃথিবীর যে সমস্ত দেশে নারকেলের চায় হয় সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কিন্ত পার্শ্ববর্তী ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামে যে পরিমাণ নারিকেল উৎপাদন হয় সে পরিমাণ নারিকেল বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। যেমন; ভারতে বছরে গড়ে প্রতি গাছে নারিকেলের উৎপাদন ২৫০টি সেখানে বাংলাদেশে হয় ৫০টি।’
বাংলাদেশে নারিকেল কম হওয়ার কারণ হিসেবে দেখাগেছে পরিচর্যার অভাব দায়ী করেন এ কৃষি বিজ্ঞানী। দেশেও পরিচর্যা করলে প্রতি গাছে বছরে আড়াইশ নারিকেল হওয়া সম্ভব বলে দাবি তার।
তিনি আরও বলেন, ‘পরিচর্যা ভারত, ভিয়েতনাম যেভাবে করে সেভাবে দেশের চাষিরা জানে না। উদহরণস্বরূপ দেখা যায়; কোন টিউবয়েলের পাশে যদি নারিকেল গাছে থাকে তাহলে ওই গাছে ফলন বেশি হয়। তাই যে বড় নারিকেল গাছগুলো আছে ফল হয় না সেসব গাছে শুধু পরিচর্যা করলে বছরে প্রতি গাছে কমপক্ষে ১০০ টি নারিকেল বেশি হওয়া সম্ভব।’
তিনি নতুন গাছ না লাগিয়েও উৎপাদন বাড়াতে পারে বলে মত দেন।
ড. মাসুদ বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে যে সমস্ত নারিকেল গাছ আছে যেগুলো সিডর ও আইলার কারণে কচি পাতা নষ্ট হয়ে যায়, ফলে তিন চার বছর আর ফল হয়না। এ জন্য আমাদের উচিত নারিকেল গাছ পূর্ণস্থাপন করা বা নতুন গাছ রোপন করা। কিন্ত দূভার্গ্য যে আমাদের দেশে সরকারি বা বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নাই। তবে, শিল্পজাত পণ্য হিসেবে নারিকেল গাছের ওপর আলাদা মেগা প্রকল্প নিলে ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়া বা থাইল্যান্ডেরমত বাংলাদেশেও নারিকেলের থেকে বহু বৈদেশিক মুদ্রা আয় বা সাশ্রয় করা সম্ভব।’
সরাকারের পরিকল্পনা:
পাম জাতীয় ফল নিয়ে সরকারের নতুন পরিকল্পনার কথা জানালেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। তিনি বলেন, ‘সুগার বলতে শুধু আখ হিসেব করলে হবেনা। আমরা চিনির সাবসিউড বানাইতে চাই। সেক্ষেত্রে আমরা খেজুর গাছ, নারকেল গাছ ও তালগাছ এই তিনটাকে নিয়ে প্লান করছি। অলরেডি একটা মিটিং হয়েছে।’
তিনি আরও ‘আমরা প্রথমত সীমান্ত এলাকার রাস্তা, রেল লাইন ও বিজেএমসির জুট মিলগুলোকে টার্গেট করেছি। সেখানে আমরা পাম জাতীয় ফলের গাছ লাগাতে চাই।’
কৃষি বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, ভারতের ন্যায় বাংলাদেশে প্রকল্প গ্রহণ করে নারিকেলসহ পামজাতীয় ফলের চাষ বৃদ্ধি করলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হবে।
বাড়ছে নারিকেল আমদানি, কমছে আবাদ ভারতে বছরে গড়ে প্রতি গাছে নারিকেলের উৎপাদন ২৫০টি, সেখানে বাংলাদেশে হয় ৫০টি
রংপুরের পীরগঞ্জের একটি রাস্তায় অযত্ন- অবহেলায় মরে যাওয়া গাছের মাঝে কয়েকটি নারিকেল গাছ -সংবাদ
বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
রংপুর জেলার পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়ন। আশির দশকে ইউনিয়নটিতে ৮০ হাজার নারিকেলের চারা লাগিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন আব্দুল জলিল। তিনি ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল; ইউনিয়নের সব রাস্তার দু’ধারে পরিকল্পিতভাবে নারিকেল গাছ লাগিয়ে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। সেইসঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা। বৃক্ষপ্রেমিক চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর অযতœ অবহেলায় মৃত্যু হয় তার স্বপ্নের। প্রায় দুই তৃতীয়াংশের বেশি গাছ মারা গেছে।
অভিযোগ আছে, পরবর্তীতে যারা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তারা কেউই গাছগুলোর যত্ন নেননি। পাশাপাশি সরকারি কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচি না থাকার কারণে ৬০ হাজারের বেশি গাছ মরে যায়।
ওই ইউনিয়নের ভগবান পুর গ্রামের আশিতিপার বৃদ্ধ আব্বাস আলী মন্ডল প্রতিবেদককে বলেন, ‘কত সুন্দর ঘাটার (রাস্তা) ধারের (পাশে) নারকেল গাচগুলো হামার (আমার) চোখের আগে (সামনে) নষ্ট হয়ে গেল। তরতাজা নারকেল গাছগুলো কেউ দেখাশুনা করলিনা।’
‘শুনচিনো (শুনেছি) তার বিদেশ থাকা বেটি (মেয়ে) আবার গাছ নাগাবি (লাগাবে), সেটাও তো ঘাটাত (রাস্তায়) দেকোনা (দেখিনা)। সরকার এতো জাগাত (জায়গায়) এতো ট্যাকা ঢালে (দেয়) এই ঘাটার নারকেল গাছের দিকে দেকপ্যা (নজর) পারে না’ বলেও আক্ষেপ তার।
আব্দুল জলিলের ফ্রান্স প্রবাসী কন্যা জুঁই তাজুল্লী ফেরদৌসী পিতার স্মৃতি রক্ষায় নারিকেল গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিলেও তাতে সফল হতে পারেনি।
এলাকাবাসীর দাবি, সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তাহলে এলাকাটি পর্যটন ইউনিয়ন হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি পাবে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পীরগঞ্জের এই ইউনিয়নের রাস্তার বিষয়ে কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান সংবাদকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতার সুযোগ থাকলে আমরা করবো।’
বাংলাদেশে সম্ভবনা:
কৃষি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিবেচনায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উষ্ণমন্ডলীয় দেশের অর্ন্তভুক্ত হওয়ায় নারিকেল উৎপাদনের জন্য আদর্শ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় এলাকা পুরোপুরি উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত। উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলো যেমন: বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম জেলায় নারিকেল চাষের মাধ্যমে সুফল প্রাপ্তির সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।
জানাগেছে, সারা পৃথিবীর প্রায় ৯৩টি দেশে নারকেলের চাষ হয়। তবে, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস ও ভারতে নারিকেল উৎপাদনে বেশি হয়। বিশ্বে উৎপাদিত মোট নারিকেলের ৭০ ভাগ উৎপাদিত হয় এ তিনটি দেশে। বর্তমানে ভারতে প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর জমিতে নারিকেল চাষ হয়। ভারতের অন্ধো প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও অন্য অংশের উপকূলীয় অঞ্চলে চাষ সবচেয়ে বেশি। দেশটির সরকার এজন্য বিশাল ওই এলাকাকেগুলোতে নারিকেল চাষ সম্প্রসারণ ও উৎপাদন সম্ভাবনা এলাকায় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে বিশাল এলাকা নারিকেল চাষের আওতায় এনেছে।
নারিকেল আমদানি:
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর(ডিএই) বলছে, দেশে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ছোবড়া ছাড়া নারিকেল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক টন, এসময়ের মধ্যে ফাইটোসেন্যানেটরি সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে ১১৬ মেট্রিক টন।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নারকেল আমদানি ১১ হাজার ৪১ মেট্রিক টন, এসময়ের মধ্যে ফাইটোসেন্যানেটরি সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে ৯৬ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন।
২০২২-২৩ অর্থ বছরে নারকেল আমদানি নেই। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নারকেল আমদানি ১১ হাজার ৪১ মেট্রিক টন হলেও সে অর্থ বছরে আমদানি কম হয়েছে। তিন বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রতিবছরই নারকেল আমদানি বাড়ছে।
নারিকেলের আবাদ:
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর(ডিএই) এর হর্টিকালচার উইং সূত্রে জানাগেছে, সারাদেশে নারিকেলের উৎপাদন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ১২ হাজার ৯২৬ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯১ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫১ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৬৬৮ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৩২ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫২০ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪২ হাজার ২৩২ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ১৯ হাজার ৪৫৮ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৮ হাজার ২২১ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ১০ হাজার ৩৬০ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৮৯৯ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫২ টন। পরিসংখ্যান বিশ্লেষন করে দেখাগেছে আগের চেয়ে নারিকেলের উৎপাদন কমে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন :
কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী মাসুদ সংবাদকে বলেন, ‘পৃথিবীর যে সমস্ত দেশে নারকেলের চায় হয় সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কিন্ত পার্শ্ববর্তী ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামে যে পরিমাণ নারিকেল উৎপাদন হয় সে পরিমাণ নারিকেল বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। যেমন; ভারতে বছরে গড়ে প্রতি গাছে নারিকেলের উৎপাদন ২৫০টি সেখানে বাংলাদেশে হয় ৫০টি।’
বাংলাদেশে নারিকেল কম হওয়ার কারণ হিসেবে দেখাগেছে পরিচর্যার অভাব দায়ী করেন এ কৃষি বিজ্ঞানী। দেশেও পরিচর্যা করলে প্রতি গাছে বছরে আড়াইশ নারিকেল হওয়া সম্ভব বলে দাবি তার।
তিনি আরও বলেন, ‘পরিচর্যা ভারত, ভিয়েতনাম যেভাবে করে সেভাবে দেশের চাষিরা জানে না। উদহরণস্বরূপ দেখা যায়; কোন টিউবয়েলের পাশে যদি নারিকেল গাছে থাকে তাহলে ওই গাছে ফলন বেশি হয়। তাই যে বড় নারিকেল গাছগুলো আছে ফল হয় না সেসব গাছে শুধু পরিচর্যা করলে বছরে প্রতি গাছে কমপক্ষে ১০০ টি নারিকেল বেশি হওয়া সম্ভব।’
তিনি নতুন গাছ না লাগিয়েও উৎপাদন বাড়াতে পারে বলে মত দেন।
ড. মাসুদ বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে যে সমস্ত নারিকেল গাছ আছে যেগুলো সিডর ও আইলার কারণে কচি পাতা নষ্ট হয়ে যায়, ফলে তিন চার বছর আর ফল হয়না। এ জন্য আমাদের উচিত নারিকেল গাছ পূর্ণস্থাপন করা বা নতুন গাছ রোপন করা। কিন্ত দূভার্গ্য যে আমাদের দেশে সরকারি বা বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নাই। তবে, শিল্পজাত পণ্য হিসেবে নারিকেল গাছের ওপর আলাদা মেগা প্রকল্প নিলে ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়া বা থাইল্যান্ডেরমত বাংলাদেশেও নারিকেলের থেকে বহু বৈদেশিক মুদ্রা আয় বা সাশ্রয় করা সম্ভব।’
সরাকারের পরিকল্পনা:
পাম জাতীয় ফল নিয়ে সরকারের নতুন পরিকল্পনার কথা জানালেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। তিনি বলেন, ‘সুগার বলতে শুধু আখ হিসেব করলে হবেনা। আমরা চিনির সাবসিউড বানাইতে চাই। সেক্ষেত্রে আমরা খেজুর গাছ, নারকেল গাছ ও তালগাছ এই তিনটাকে নিয়ে প্লান করছি। অলরেডি একটা মিটিং হয়েছে।’
তিনি আরও ‘আমরা প্রথমত সীমান্ত এলাকার রাস্তা, রেল লাইন ও বিজেএমসির জুট মিলগুলোকে টার্গেট করেছি। সেখানে আমরা পাম জাতীয় ফলের গাছ লাগাতে চাই।’
কৃষি বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, ভারতের ন্যায় বাংলাদেশে প্রকল্প গ্রহণ করে নারিকেলসহ পামজাতীয় ফলের চাষ বৃদ্ধি করলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হবে।