বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে হত্যাকা-ে জড়িত ২৫ আসামির মধ্যে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক। বাকি ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। দুই বছর তিন মাস আগে গভীর রাতে বুয়েট ছাত্রাবাসে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল মেধাবী এ শিক্ষার্থীকে।
যা ঘটেছিল সেদিন
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর দুইদিন আগে ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাহাদ রাব্বী। এর জেরে পরদিন ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা আবরারের ১০১১ নম্বর কক্ষে গিয়ে রাতে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তার ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইলসহ ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। এরপর ওই কক্ষে আবরারকে নির্যাতন করা হয়। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
যেভাবে হত্যাকাণ্ড
আবরার হলের যে কক্ষে থাকতেন, ওই কক্ষ ও আশপাশে কক্ষগুলোর কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছুটি কাটিয়ে কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে ৬ অক্টোবর বিকেলে নিজের ক্যাম্পাসে ফেরেন আবরার। ওই দিন বিকেলের দিকে শেরেবাংলা হলে নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষে পৌঁছে ফোনে মায়ের সঙ্গে কথাও বলেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, বাড়ি থেকে ফিরে আবরার নিজের কক্ষেই পড়ালেখা করছিলেন। ৬ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আবরারের কক্ষে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ২০১১ নম্বর কক্ষে। এই কক্ষে থাকেন ছাত্রলীগের চার নেতা। সেখানে তার মোবাইল ফোন তল্লাশি করেন নেতারা। ওই কক্ষে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ।
তারা আবরারের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে সেটি যাচাই করেন। এক পর্যায়ে আবরারকে তার ফেইসবুক আইডি খুলতে বলেন। পরে তারা তার ফেইসবুক ও মেসেঞ্জার ঘেঁটে তাকে শিবিরের নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন। এর পরই ওই দুই নেতার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন। আবরারকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। ‘শিবির ধরা হয়েছে’- এমন খবর পেয়ে সেখানে সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী আরও সাত থেকে আটজন নেতা জড়ো হন। তারাও সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে যায় আবরারের দেহ। রাত ২টার পর তাকে ওই কক্ষ থেকে বের করে হলের সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।
একজন শিক্ষার্থী জানান, ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চিৎকার ভেসে আসছিল। তবে ঝামেলা এড়াতে তিনি ওই কক্ষে যাননি। কক্ষটিতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাসহ তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল। তারাও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। সকালে বুঝতে পারেন, সেখানে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে।
অপর দু’জন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, পেটাতে পেটাতে আবরারকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন ছাত্রলীগের নেতারা। তিনি তাতে রাজিও হন। এরপরও তাকে ছাড়া হয়নি, নৃশংস ও নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হলের নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ মোস্তফা সে সময় দাবি করেন, প্রতি রাতেই শিক্ষার্থীরা নানা বিষয়ে কমবেশি হৈ-হুল্লোড় করেন। কিন্তু রোববার রাতে তিনি কোনো চিৎকার শোনেননি। বিষয়টি গভীর রাতে জানতে পারেন তিনি।
আবরারকে হত্যার ঘটনা জানাজানির পর হলজুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিহত ওই ছাত্রের রুমমেট ও সহপাঠীরাও এ বিষয়ে প্রথমে মুখ খুলতে চাননি। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবরারের কয়েকজন সহপাঠী জানান, হত্যার পর দীর্ঘক্ষণ আবরারের লাশটি ২০১১ নম্বর কক্ষেই পড়ে ছিল। রাত ২টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী তার নিথর দেহ নামিয়ে আনেন। এক পর্যায়ে নিচতলা ও দোতলার মাঝখানের সিঁড়িতে তার লাশটি ফেলে রাখা হয়।
শেরেবাংলা হলের একজন আবাসিক ছাত্র সে সময় জানান, তিনি রাত ২টার দিকে পানি আনতে গিয়ে দেখেন নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির মাঝে তোশকের ওপর আবরারের নিথর দেহ পড়ে আছে। তখন সেখানে ছাত্রলীগের অন্তত তিনজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। এতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ঘটনা জানাজানি হয়। তখন সবাই হলের চিকিৎসকদের খবর দেন। চিকিৎসক এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। অ্যাম্বুলেন্স ডাকার এক পর্যায়ে চিকিৎসক জানান, আবরার আর নেই, মারা গেছে। ততক্ষণে ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা পালিয়ে যান। ওই সময়ে হলের প্রভোস্টও ঘটনাস্থলে আসেন। বুয়েটের চিকিৎসক মাশরুক এলাহী সে সময় জানান, খবর পেয়ে তিনি রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বুঝতে পারেন- ছেলেটি বেঁচে নেই। ঘটনার বিষয়ে পরদিন হলের প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খান জানান, এক শিক্ষার্থী হলের সামনে পড়ে আছে খবর পেয়ে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশে খবর দেন।
সিসিটিভি ফুটেজে হামলাকারীদের মুখ
প্রায় দেড় মিনিটের একটি ফুটেজে দেখা যায়, আবরারকে মারধরের পর কক্ষ থেকে বের করা হচ্ছে। প্রথমে একজন বারান্দা দিয়ে কিছুটা দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়ান। এরপর তিনি একই পথে ফিরে যান। কিছুক্ষণ পর আরও তিনজনকে দেখা যায় যারা আবরারকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাচ্ছে। ওই তিনজনের পেছনে আরও একজনকে হাঁটতে দেখা যায়। এরপরই চশমা পরা একজন প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বেরিয়ে আসেন। এর পরপরই আরও পাঁচজনকে ওই বারান্দা দিয়ে পেছনে হাঁটতে দেখা যায়। তাদের একজন আবার মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ফুটেজে দেখতে পাওয়া ছাত্রদের মধ্যে নেতা ছাড়াও কর্মী রয়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ফুটেজটি ছাড়া আর কোনো সিসিটিভিতে ঘটনা ধরা পড়েছে কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে।
সেই কক্ষে তখন যারা উপস্থিত ছিলেন
শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২০১১ নম্বর কক্ষটিতে থাকেন বুয়েটের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহাসহ ছাত্রলীগের চার নেতা। ওই কক্ষটি বুয়েট ছাত্রলীগের নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবেই ব্যবহার হতো। নেতারাও আড্ডা দিতেন সেখানে। আবরারের ওপর নির্যাতন চলার সময় ওই কক্ষে বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ছাড়াও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ সকাল, উপ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু, ক্রীড়া সম্পাদক নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মিফতাউল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অনিক সরকার, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, এহতেশামুল রাব্বী তানিম ও মুজাহিদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই আবরারকে নির্যাতনে অংশ নেন।
রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে হত্যাকা-ে জড়িত ২৫ আসামির মধ্যে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক। বাকি ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। দুই বছর তিন মাস আগে গভীর রাতে বুয়েট ছাত্রাবাসে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল মেধাবী এ শিক্ষার্থীকে।
যা ঘটেছিল সেদিন
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর দুইদিন আগে ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাহাদ রাব্বী। এর জেরে পরদিন ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা আবরারের ১০১১ নম্বর কক্ষে গিয়ে রাতে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তার ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইলসহ ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। এরপর ওই কক্ষে আবরারকে নির্যাতন করা হয়। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
যেভাবে হত্যাকাণ্ড
আবরার হলের যে কক্ষে থাকতেন, ওই কক্ষ ও আশপাশে কক্ষগুলোর কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছুটি কাটিয়ে কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে ৬ অক্টোবর বিকেলে নিজের ক্যাম্পাসে ফেরেন আবরার। ওই দিন বিকেলের দিকে শেরেবাংলা হলে নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষে পৌঁছে ফোনে মায়ের সঙ্গে কথাও বলেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, বাড়ি থেকে ফিরে আবরার নিজের কক্ষেই পড়ালেখা করছিলেন। ৬ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আবরারের কক্ষে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ২০১১ নম্বর কক্ষে। এই কক্ষে থাকেন ছাত্রলীগের চার নেতা। সেখানে তার মোবাইল ফোন তল্লাশি করেন নেতারা। ওই কক্ষে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ।
তারা আবরারের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে সেটি যাচাই করেন। এক পর্যায়ে আবরারকে তার ফেইসবুক আইডি খুলতে বলেন। পরে তারা তার ফেইসবুক ও মেসেঞ্জার ঘেঁটে তাকে শিবিরের নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন। এর পরই ওই দুই নেতার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন। আবরারকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। ‘শিবির ধরা হয়েছে’- এমন খবর পেয়ে সেখানে সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী আরও সাত থেকে আটজন নেতা জড়ো হন। তারাও সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে যায় আবরারের দেহ। রাত ২টার পর তাকে ওই কক্ষ থেকে বের করে হলের সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।
একজন শিক্ষার্থী জানান, ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চিৎকার ভেসে আসছিল। তবে ঝামেলা এড়াতে তিনি ওই কক্ষে যাননি। কক্ষটিতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাসহ তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল। তারাও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। সকালে বুঝতে পারেন, সেখানে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে।
অপর দু’জন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, পেটাতে পেটাতে আবরারকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন ছাত্রলীগের নেতারা। তিনি তাতে রাজিও হন। এরপরও তাকে ছাড়া হয়নি, নৃশংস ও নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হলের নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ মোস্তফা সে সময় দাবি করেন, প্রতি রাতেই শিক্ষার্থীরা নানা বিষয়ে কমবেশি হৈ-হুল্লোড় করেন। কিন্তু রোববার রাতে তিনি কোনো চিৎকার শোনেননি। বিষয়টি গভীর রাতে জানতে পারেন তিনি।
আবরারকে হত্যার ঘটনা জানাজানির পর হলজুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিহত ওই ছাত্রের রুমমেট ও সহপাঠীরাও এ বিষয়ে প্রথমে মুখ খুলতে চাননি। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবরারের কয়েকজন সহপাঠী জানান, হত্যার পর দীর্ঘক্ষণ আবরারের লাশটি ২০১১ নম্বর কক্ষেই পড়ে ছিল। রাত ২টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী তার নিথর দেহ নামিয়ে আনেন। এক পর্যায়ে নিচতলা ও দোতলার মাঝখানের সিঁড়িতে তার লাশটি ফেলে রাখা হয়।
শেরেবাংলা হলের একজন আবাসিক ছাত্র সে সময় জানান, তিনি রাত ২টার দিকে পানি আনতে গিয়ে দেখেন নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির মাঝে তোশকের ওপর আবরারের নিথর দেহ পড়ে আছে। তখন সেখানে ছাত্রলীগের অন্তত তিনজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। এতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ঘটনা জানাজানি হয়। তখন সবাই হলের চিকিৎসকদের খবর দেন। চিকিৎসক এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। অ্যাম্বুলেন্স ডাকার এক পর্যায়ে চিকিৎসক জানান, আবরার আর নেই, মারা গেছে। ততক্ষণে ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা পালিয়ে যান। ওই সময়ে হলের প্রভোস্টও ঘটনাস্থলে আসেন। বুয়েটের চিকিৎসক মাশরুক এলাহী সে সময় জানান, খবর পেয়ে তিনি রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বুঝতে পারেন- ছেলেটি বেঁচে নেই। ঘটনার বিষয়ে পরদিন হলের প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খান জানান, এক শিক্ষার্থী হলের সামনে পড়ে আছে খবর পেয়ে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশে খবর দেন।
সিসিটিভি ফুটেজে হামলাকারীদের মুখ
প্রায় দেড় মিনিটের একটি ফুটেজে দেখা যায়, আবরারকে মারধরের পর কক্ষ থেকে বের করা হচ্ছে। প্রথমে একজন বারান্দা দিয়ে কিছুটা দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়ান। এরপর তিনি একই পথে ফিরে যান। কিছুক্ষণ পর আরও তিনজনকে দেখা যায় যারা আবরারকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাচ্ছে। ওই তিনজনের পেছনে আরও একজনকে হাঁটতে দেখা যায়। এরপরই চশমা পরা একজন প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বেরিয়ে আসেন। এর পরপরই আরও পাঁচজনকে ওই বারান্দা দিয়ে পেছনে হাঁটতে দেখা যায়। তাদের একজন আবার মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ফুটেজে দেখতে পাওয়া ছাত্রদের মধ্যে নেতা ছাড়াও কর্মী রয়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ফুটেজটি ছাড়া আর কোনো সিসিটিভিতে ঘটনা ধরা পড়েছে কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে।
সেই কক্ষে তখন যারা উপস্থিত ছিলেন
শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২০১১ নম্বর কক্ষটিতে থাকেন বুয়েটের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহাসহ ছাত্রলীগের চার নেতা। ওই কক্ষটি বুয়েট ছাত্রলীগের নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবেই ব্যবহার হতো। নেতারাও আড্ডা দিতেন সেখানে। আবরারের ওপর নির্যাতন চলার সময় ওই কক্ষে বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ছাড়াও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ সকাল, উপ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু, ক্রীড়া সম্পাদক নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মিফতাউল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অনিক সরকার, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, এহতেশামুল রাব্বী তানিম ও মুজাহিদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই আবরারকে নির্যাতনে অংশ নেন।