alt

জাতীয়

খুলনায় ডকইয়ার্ডের সাড়ে তিন একর জমি প্রভাবশালীদের দখলে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা : সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

খুলনায় ডকইয়ার্ডের সামনের চিত্র -সংবাদ

খুলনায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে সরকারি নৌযান মেরামত কারখানার (ডকইয়ার্ড) প্রায় সাড়ে তিন একর জমি। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন তারা। দখল করা জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ডক ইয়ার্ড, ইজিবাইকের গ্যারেজ, কাঠ গোলা, ইট, বালু, সিমেন্ট, কয়লা, পাথর, করাতকলসহ ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এর পাশেই আবাসিক এলাকা। এ ব্যবসার কারণে আবাসিকের একটি বড় অংশ সবসময় ধুলো-বালুতে আচ্ছন্ন থাকে। পাশাপাশি পরিধি বাড়াতে দখলকারীরা বালু ফেলে রূপসা নদী ভরাট করছেন প্রতিনিয়ত। স্থানীয়রা এই ব্যবসা স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খুলনার ১নং কাস্টম ঘাট এলাকা থেকে ২নং স্লুইস গেট পর্যন্ত রাস্তা ঘেঁষে জেলা প্রশাসনের তিন দশমিক তেত্রিশ (৩.৩৩) একর জমি রয়েছে। এছাড়া ওই জমির পাশাপাশি এক কিলোমিটার নদীর অংশজুড়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জমি রয়েছে ১৮০ ফুট করে। তবে এই পুরো জায়গা বেদখল হয়ে আছে বছরের পর বছর।

খুলনা জেলা প্রশাসন বলছে, নৌযান মেরামত কারখানা স্থাপন করতে তাদের তিন দশমিক তেত্রিশ (৩.৩৩) একর জমি ২০১৭ সালে মাত্র এক লাখ এক হাজার টাকা প্রতীকী মূল্যে যানবাহন অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। ওই জমির বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৫৭ কোটি ৩২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা; বর্তমানে তা প্রায় ১০০ কোটি টাকা। তবে যানবাহন অধিদপ্তর ৭ বছর আগে এই জায়গা পেলেও এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। যানবাহন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (নৌ) মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, খুলনায় পণ্য আনা-নেয়া হয় নদীকে কেন্দ্র করে। এ এলাকায় কেন্দ্রীয় নৌযান মেরামত কারখানা না থাকায় সরকারি-বেসরকারি নৌযানগুলো মেরামত ও সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সে লক্ষ্যে ২০১৭ সালে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর খুলনায় কেন্দ্রীয় নৌযান মেরামত কারখানা ও একটি আধুনিক নৌযান প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এ জন্য খুলনা জেলা প্রশাসন রূপসা নদীর পাড়ে খাস জায়গাটি বুঝিয়ে দেয় তাদেরকে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে জমি বুঝে পাওয়া যায়। তবে দখলদারদের উচ্ছেদ করা যায়নি। যখনই প্রকল্পের কাজ নিয়ে মাপজোখ হয়, তখনই আন্দোলনে নামেন দখলদাররা। মিছিল-সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি দেয়ার মতো কর্মসূচি দিয়ে বাধাগ্রস্ত করেন তারা। সম্প্রতি এ বিষয়ে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে খুলনা শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের আওতায় ভৈরব নদ ও রূপসা নদীর তীরে হাঁটাচলার জন্য ‘ওয়াকওয়ে’ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে খুলনা সিটি করপোরেশন। প্রকল্পের আওতায় ভৈরব নদের অংশের কাজ শেষ হলেও অবৈধ দখলদারদের বাধার কারণে রূপসা নদীর ১ ও ২ নম্বর কাস্টম ঘাট অংশের কাজ করা যায়নি। দখলকারীরা প্রভাবশালী রাজনীতিদের সঙ্গে নিয়ে মিছিল-মিটিং, বিক্ষোভ করে কাজ ঠেকিয়ে দেন।

সম্প্রতি এই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ২ নম্বর কাস্টম ঘাট মোড়ে রয়েছে ‘মনোলিথ কনস্ট্রাকশন’। এর মালিক স্থানীয় বিএনপির নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর মাহবুব কায়সার।

জানতে চাইলে মাহবুব কায়সার বলেন, এখানে নৌযান মেরামত কারখানা হবে শুনেছি। তবে এসব ভুয়া প্রকল্প আমরা এখানে করতে দেব না। এই জমির মালিকানা নিয়ে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং বিআইডব্লিউটিএর মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। তাদেরকে ম্যানেজ করেই ব্যবসায়ীদের চলতে হয়।

এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০০ গজ উত্তরে রয়েছে সাবেক খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের ছোট ভাই তালুকদার আবদুল জলিলের ইট, বালু, পাথরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এ দুটি প্রতিষ্ঠানই সরকারি জায়গায়। একই এলাকায় রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু কাগজীর ‘রকি ডক ইয়ার্ড’ নামের একটি নৌযান কারখানা। প্রভাবশালী নেতাদের কার্গো জাহাজগুলো এই কারখানায় মেরামত এবং নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে তিনি বিএনপির এক

প্রভাবশালী নেতার আশ্রয়ে কারখানার জমি দখলে রেখেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু মাহবুব কায়সার, মিন্টু কাগজী ও তালুকদার জলিলই নন; এই এলাকায় সরকারি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দখল করা জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ডক ইয়ার্ড, ইজিবাইকের গ্যারেজ, ইট, বালু, সিমেন্ট, পাথর, করাতকলসহ ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় প্রভাবশালী ২০ নেতা।

এই এলাকায় জায়গা দখলকারীদের মধ্যে আরও রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাত্তার খলিফা, কমল সিদ্দিকী, মুক্তিযোদ্ধা (প্রয়াত) আব্দুল কাইয়ুম, বাবলু কাগজী, হালিম হাওলাদার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আকরাম হোসেন এবং বিএনপির নেতা ময়েজ উদ্দিন চুন্নু ও পান্না, প্রয়াত ইয়াকুব আলী খানের ভাই আইয়ুব হোসেন, আবুল হোসেন ও হাবিবুর রহমান, নান্টু, মনির হোসেন, ইউসুফ আলী, বাহাউদ্দিন হোসেন, শহিদুল ডাক্তার, বেল্লাল তালুকদার, মনির হোসেন, ছোট কাজল ও বড় কাজল।

এসব দখলকারীরা বলেন, এই এলাকা ইট, বালু, কয়লা, পাথর, কাঠ, নৌযান কারখানার ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। তবে বিগত এক যুগেরও বেশি সময় সরকার এ জায়গার বন্দোবস্ত দেয়া বাতিল করেছে। মাঝে মাঝে সরকারি কিছু লোকজন এসে মাপ-জোক করে। এখন অবৈধভাবে ব্যবসা করা ছাড়া তো কোনও উপায় নেই আমাদের।

আওয়ামী লীগ নেতা সাত্তার খলিফা বলেন, আমরা এখানকার পুরোনো ব্যবসায়ী। সরকার জায়গা নেবে শুনেছি তবে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। সরকার এখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এলে তখন পরিস্থিতির আলোকে কাজ করবো।

ছবি

বকেয়া পাওয়ার আশ্বাসে রেলভবন ঘেরাও কর্মসূচি প্রত্যাহার

ছবি

‘২৭ বছর ধরে পৌরসভার বাজার পরিদর্শক, কোটিপতি গিয়াস’

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতা দিবসে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ

ইসির দল নিবন্ধনের গণবিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট

ছবি

মেট্রোরেল কর্মীকে মারধর, প্রতিবাদে কর্মবিরতি

ছবি

বকেয়া, বোনাস পরিশোধের দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ

ছবি

দহগ্রাম সীমান্তে ফের কাঁটাতার নির্মাণচেষ্টা বিএসএফের, বিজিবির বাধায় কাজ বন্ধ

বাংলাদেশে ‘ইসলামি চরমপন্থার উত্থান’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

সালমান এফ রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করা হচ্ছে: তারেক রহমান

শিশু ধর্ষণের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, আইন সংশোধন ‘বৃহস্পতিবারের মধ্যে’

সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ইসির আপত্তি, ঐকমত্য কমিশনে চিঠি

ছবি

ডিসেম্বরে নির্বাচন, সময় বেশি নেই, প্রত্যাশিত সংস্কারগুলো করে ফেলতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর উদ্বেগ

ছবি

আমরা এখন যুদ্ধাবস্থায় আছি, ষড়যন্ত্রকারীরা এই সুযোগে শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা করবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

শিশু ধর্ষণের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, আইন সংশোধন বৃহস্পতিবারের মধ্যে

ছবি

সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশে ভিন্নমত জানিয়ে ইসির চিঠি

ছবি

১৩ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ, মঙ্গলবার থেকে কমতে পারে

প্রতারণা এড়াতে অ্যাপ থেকে টিকেট কেনার পরামর্শ রেল কর্তৃপক্ষের

‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ

সরকারি সাত কলেজ সমন্বয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’

বাংলাদেশে ‘আন্তর্জাতিক মানের’ নির্বাচন চায় ইইউ, দেবে সহায়তা

এসএসসি চলাকালে ‘কোচিং সেন্টার বন্ধ’

ছবি

‘কড়াই বিলে’র ৫ শতাধিক গাছ কর্তন, জানে না বনবিভাগ

ছবি

বদলি ইস্যু : খামারবাড়িতে সড়ক অবরোধ, যানজটে ভোগান্তি

সংবাদ সম্মেলন ধর্ষণকে ‘ধর্ষণ’ই বলতে হবে

ছবি

‘ডিএমপি কমিশনার বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন’

সেদিন যা ঘটেছিল

ছবি

দ্রুত রায় কার্যকর চায় পরিবার

ছবি

বাংলাদেশে ‘বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপন’ প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে গুরুত্ব পাবে

ছবি

আবরার হত্যার রায়: ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান ইউআইএফ’র

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন

ছবি

দণ্ড দ্রুত কার্যকর চান আবরারের বাবা

ছবি

চার দিনের সফর শেষে ঢাকা ছাড়লেন জাতিসংঘ মহাসচিব

ছবি

আবরার হত্যা মামলা: হাই কোর্টে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল

tab

জাতীয়

খুলনায় ডকইয়ার্ডের সাড়ে তিন একর জমি প্রভাবশালীদের দখলে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা

খুলনায় ডকইয়ার্ডের সামনের চিত্র -সংবাদ

সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

খুলনায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে সরকারি নৌযান মেরামত কারখানার (ডকইয়ার্ড) প্রায় সাড়ে তিন একর জমি। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন তারা। দখল করা জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ডক ইয়ার্ড, ইজিবাইকের গ্যারেজ, কাঠ গোলা, ইট, বালু, সিমেন্ট, কয়লা, পাথর, করাতকলসহ ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এর পাশেই আবাসিক এলাকা। এ ব্যবসার কারণে আবাসিকের একটি বড় অংশ সবসময় ধুলো-বালুতে আচ্ছন্ন থাকে। পাশাপাশি পরিধি বাড়াতে দখলকারীরা বালু ফেলে রূপসা নদী ভরাট করছেন প্রতিনিয়ত। স্থানীয়রা এই ব্যবসা স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খুলনার ১নং কাস্টম ঘাট এলাকা থেকে ২নং স্লুইস গেট পর্যন্ত রাস্তা ঘেঁষে জেলা প্রশাসনের তিন দশমিক তেত্রিশ (৩.৩৩) একর জমি রয়েছে। এছাড়া ওই জমির পাশাপাশি এক কিলোমিটার নদীর অংশজুড়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জমি রয়েছে ১৮০ ফুট করে। তবে এই পুরো জায়গা বেদখল হয়ে আছে বছরের পর বছর।

খুলনা জেলা প্রশাসন বলছে, নৌযান মেরামত কারখানা স্থাপন করতে তাদের তিন দশমিক তেত্রিশ (৩.৩৩) একর জমি ২০১৭ সালে মাত্র এক লাখ এক হাজার টাকা প্রতীকী মূল্যে যানবাহন অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। ওই জমির বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৫৭ কোটি ৩২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা; বর্তমানে তা প্রায় ১০০ কোটি টাকা। তবে যানবাহন অধিদপ্তর ৭ বছর আগে এই জায়গা পেলেও এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। যানবাহন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (নৌ) মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, খুলনায় পণ্য আনা-নেয়া হয় নদীকে কেন্দ্র করে। এ এলাকায় কেন্দ্রীয় নৌযান মেরামত কারখানা না থাকায় সরকারি-বেসরকারি নৌযানগুলো মেরামত ও সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সে লক্ষ্যে ২০১৭ সালে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর খুলনায় কেন্দ্রীয় নৌযান মেরামত কারখানা ও একটি আধুনিক নৌযান প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এ জন্য খুলনা জেলা প্রশাসন রূপসা নদীর পাড়ে খাস জায়গাটি বুঝিয়ে দেয় তাদেরকে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে জমি বুঝে পাওয়া যায়। তবে দখলদারদের উচ্ছেদ করা যায়নি। যখনই প্রকল্পের কাজ নিয়ে মাপজোখ হয়, তখনই আন্দোলনে নামেন দখলদাররা। মিছিল-সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি দেয়ার মতো কর্মসূচি দিয়ে বাধাগ্রস্ত করেন তারা। সম্প্রতি এ বিষয়ে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে খুলনা শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের আওতায় ভৈরব নদ ও রূপসা নদীর তীরে হাঁটাচলার জন্য ‘ওয়াকওয়ে’ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে খুলনা সিটি করপোরেশন। প্রকল্পের আওতায় ভৈরব নদের অংশের কাজ শেষ হলেও অবৈধ দখলদারদের বাধার কারণে রূপসা নদীর ১ ও ২ নম্বর কাস্টম ঘাট অংশের কাজ করা যায়নি। দখলকারীরা প্রভাবশালী রাজনীতিদের সঙ্গে নিয়ে মিছিল-মিটিং, বিক্ষোভ করে কাজ ঠেকিয়ে দেন।

সম্প্রতি এই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ২ নম্বর কাস্টম ঘাট মোড়ে রয়েছে ‘মনোলিথ কনস্ট্রাকশন’। এর মালিক স্থানীয় বিএনপির নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর মাহবুব কায়সার।

জানতে চাইলে মাহবুব কায়সার বলেন, এখানে নৌযান মেরামত কারখানা হবে শুনেছি। তবে এসব ভুয়া প্রকল্প আমরা এখানে করতে দেব না। এই জমির মালিকানা নিয়ে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং বিআইডব্লিউটিএর মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। তাদেরকে ম্যানেজ করেই ব্যবসায়ীদের চলতে হয়।

এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০০ গজ উত্তরে রয়েছে সাবেক খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের ছোট ভাই তালুকদার আবদুল জলিলের ইট, বালু, পাথরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এ দুটি প্রতিষ্ঠানই সরকারি জায়গায়। একই এলাকায় রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু কাগজীর ‘রকি ডক ইয়ার্ড’ নামের একটি নৌযান কারখানা। প্রভাবশালী নেতাদের কার্গো জাহাজগুলো এই কারখানায় মেরামত এবং নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে তিনি বিএনপির এক

প্রভাবশালী নেতার আশ্রয়ে কারখানার জমি দখলে রেখেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু মাহবুব কায়সার, মিন্টু কাগজী ও তালুকদার জলিলই নন; এই এলাকায় সরকারি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দখল করা জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ডক ইয়ার্ড, ইজিবাইকের গ্যারেজ, ইট, বালু, সিমেন্ট, পাথর, করাতকলসহ ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় প্রভাবশালী ২০ নেতা।

এই এলাকায় জায়গা দখলকারীদের মধ্যে আরও রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাত্তার খলিফা, কমল সিদ্দিকী, মুক্তিযোদ্ধা (প্রয়াত) আব্দুল কাইয়ুম, বাবলু কাগজী, হালিম হাওলাদার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আকরাম হোসেন এবং বিএনপির নেতা ময়েজ উদ্দিন চুন্নু ও পান্না, প্রয়াত ইয়াকুব আলী খানের ভাই আইয়ুব হোসেন, আবুল হোসেন ও হাবিবুর রহমান, নান্টু, মনির হোসেন, ইউসুফ আলী, বাহাউদ্দিন হোসেন, শহিদুল ডাক্তার, বেল্লাল তালুকদার, মনির হোসেন, ছোট কাজল ও বড় কাজল।

এসব দখলকারীরা বলেন, এই এলাকা ইট, বালু, কয়লা, পাথর, কাঠ, নৌযান কারখানার ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। তবে বিগত এক যুগেরও বেশি সময় সরকার এ জায়গার বন্দোবস্ত দেয়া বাতিল করেছে। মাঝে মাঝে সরকারি কিছু লোকজন এসে মাপ-জোক করে। এখন অবৈধভাবে ব্যবসা করা ছাড়া তো কোনও উপায় নেই আমাদের।

আওয়ামী লীগ নেতা সাত্তার খলিফা বলেন, আমরা এখানকার পুরোনো ব্যবসায়ী। সরকার জায়গা নেবে শুনেছি তবে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। সরকার এখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এলে তখন পরিস্থিতির আলোকে কাজ করবো।

back to top