রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের বিষয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৩টি রাজনৈতিক দল এখনও মতামত জানায়নি। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনে উল্লিখিত সুপারিশের ওপর মতামত দিতে ১৩ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এই কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সবার মতামত পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছে একটি ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা সোমবার নিজ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগে প্রত্যাশিত সংস্কারগুলো করে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, কারও জন্য অপেক্ষা করে লাভ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকেই এই কাজ করতে হবে এবং তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
‘জাতীয় সনদ’ যেটি ‘জুলাই সনদ’ হিসেবেও বহুল আলোচিত; ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই কার্যকর করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের গঠন করা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গত ৭ মার্চ দলের বাংলামোটর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে এ আল্টিমেটাম দেন।
জুলাই সনদ
‘জুলাই সনদ’ প্রসঙ্গে এনসিপি বলছে, সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা সনদ তৈরি হবে। যেখানে বাংলাদেশের রূপরেখা কেমন হবে, কী কী সংস্কার এই সময়ে করা হবে, কী কী সংস্কার ভবিষ্যতে করা হবে, কী কী সংস্কারের ধারাবাহিকতা থাকবে রাজনৈতিক দলগুলোকে সেই কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) জনগণের কাছে দিতে হবে।
এর পর ১০ মার্চ জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ব্রিফিংয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার পরের ধাপ নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর (মতামত প্রদানের) ওপর। আমরা চাই, দ্রুত আলোচনা করতে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন থেকে মোট ১৬৬টি সুপারিশ চিহ্নিত করে স্প্রেডশিট আকারে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত সুপারিশ ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগসংক্রান্ত সুপারিশ ২৩টি, জনপ্রশাসনসংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ রয়েছে।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আশা করছি যে, আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলো তাদের মতামত আমাদের জানাবেন।’
ঈদের আগে
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকটি দল ঈদের আগেই তাদের মতামত ঐকমত্য কমিশনে জমা দেবে। বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা এ লক্ষ্যে একাধিক বৈঠক করেছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আমলে রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপি যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছিল, সে আলোকেই ঐকমত্য কমিশনের কাছে তাদের দলীয় অবস্থান তুলে ধরবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিশনের রিপোর্টগুলো নিয়ে আমরা অনুশীলন-বিশ্লেষণ করছি। কাজ শেষে আমরা মতামত দিব।’ স্প্রেডশিট আকারে ঐকমত্য কমিশনের মতামত চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্প্রেডশিটে সব বিষযে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। আমরা সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্টের ওপর বিস্তারিত মতামত তুলে ধরব। সঙ্গে স্প্রেডশিটটাও
থাকবে।’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত পাঠানোর বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা একাধিক বৈঠক করার পাশাপাশি দলের বিভিন্ন ফোরামেও আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে। দলটি কমিশনকে জানিয়েছে, তাদের আরও কিছু সময় প্রয়োজন। তবে শিগগিরই তারা মতামত কমিশনে পাঠাবে।
মতামত দিয়েছে যেসব দল
মঙ্গলবার জাতীয় গণফ্রন্ট ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জএসডি) মতামত জমা দিয়েছে বলে ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে।
আগের দিন সোমবার আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং নাগরিক ঐক্য তাদের মতামত জমা দেয়। এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে মতামত জমা দিয়েছে- লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপি; খেলাফত মজলিস; জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ; জাকের পার্টি; ভাসানী অনুসারী পরিষদ; জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম); আমজনতার দল; রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন; বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ; বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
এছাড়া, ১৪টি রাজনৈতিক দল তাদের পূর্ণাঙ্গ মতামত আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জমা দেবে বলে ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। বাকি দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে সোমবারের সংবাদ বিজ্ঞপিতে জানানো হয়।
* জাতীয় ঐকমত্য কমিশন*
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।
এরমধ্যে গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্য গঠিত ছয় কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন গত ৮ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়।
এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টাকে সভাপতি করে গঠন করা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলে হয়, আগামী (ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং এই মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজকে এই কমিশনের সহসভাপতি করা হয়। সদস্য হিসেবে রয়েছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
ছয় মাস মেয়াদি এ কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এই কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে।
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের বিষয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৩টি রাজনৈতিক দল এখনও মতামত জানায়নি। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনে উল্লিখিত সুপারিশের ওপর মতামত দিতে ১৩ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এই কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সবার মতামত পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছে একটি ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা সোমবার নিজ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগে প্রত্যাশিত সংস্কারগুলো করে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, কারও জন্য অপেক্ষা করে লাভ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকেই এই কাজ করতে হবে এবং তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
‘জাতীয় সনদ’ যেটি ‘জুলাই সনদ’ হিসেবেও বহুল আলোচিত; ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই কার্যকর করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের গঠন করা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গত ৭ মার্চ দলের বাংলামোটর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে এ আল্টিমেটাম দেন।
জুলাই সনদ
‘জুলাই সনদ’ প্রসঙ্গে এনসিপি বলছে, সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা সনদ তৈরি হবে। যেখানে বাংলাদেশের রূপরেখা কেমন হবে, কী কী সংস্কার এই সময়ে করা হবে, কী কী সংস্কার ভবিষ্যতে করা হবে, কী কী সংস্কারের ধারাবাহিকতা থাকবে রাজনৈতিক দলগুলোকে সেই কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) জনগণের কাছে দিতে হবে।
এর পর ১০ মার্চ জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ব্রিফিংয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার পরের ধাপ নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর (মতামত প্রদানের) ওপর। আমরা চাই, দ্রুত আলোচনা করতে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন থেকে মোট ১৬৬টি সুপারিশ চিহ্নিত করে স্প্রেডশিট আকারে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত সুপারিশ ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগসংক্রান্ত সুপারিশ ২৩টি, জনপ্রশাসনসংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ রয়েছে।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আশা করছি যে, আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলো তাদের মতামত আমাদের জানাবেন।’
ঈদের আগে
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকটি দল ঈদের আগেই তাদের মতামত ঐকমত্য কমিশনে জমা দেবে। বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা এ লক্ষ্যে একাধিক বৈঠক করেছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আমলে রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপি যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছিল, সে আলোকেই ঐকমত্য কমিশনের কাছে তাদের দলীয় অবস্থান তুলে ধরবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিশনের রিপোর্টগুলো নিয়ে আমরা অনুশীলন-বিশ্লেষণ করছি। কাজ শেষে আমরা মতামত দিব।’ স্প্রেডশিট আকারে ঐকমত্য কমিশনের মতামত চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্প্রেডশিটে সব বিষযে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। আমরা সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্টের ওপর বিস্তারিত মতামত তুলে ধরব। সঙ্গে স্প্রেডশিটটাও
থাকবে।’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত পাঠানোর বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা একাধিক বৈঠক করার পাশাপাশি দলের বিভিন্ন ফোরামেও আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে। দলটি কমিশনকে জানিয়েছে, তাদের আরও কিছু সময় প্রয়োজন। তবে শিগগিরই তারা মতামত কমিশনে পাঠাবে।
মতামত দিয়েছে যেসব দল
মঙ্গলবার জাতীয় গণফ্রন্ট ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জএসডি) মতামত জমা দিয়েছে বলে ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে।
আগের দিন সোমবার আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং নাগরিক ঐক্য তাদের মতামত জমা দেয়। এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে মতামত জমা দিয়েছে- লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপি; খেলাফত মজলিস; জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ; জাকের পার্টি; ভাসানী অনুসারী পরিষদ; জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম); আমজনতার দল; রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন; বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ; বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
এছাড়া, ১৪টি রাজনৈতিক দল তাদের পূর্ণাঙ্গ মতামত আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জমা দেবে বলে ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। বাকি দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে সোমবারের সংবাদ বিজ্ঞপিতে জানানো হয়।
* জাতীয় ঐকমত্য কমিশন*
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।
এরমধ্যে গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্য গঠিত ছয় কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন গত ৮ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়।
এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টাকে সভাপতি করে গঠন করা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলে হয়, আগামী (ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং এই মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজকে এই কমিশনের সহসভাপতি করা হয়। সদস্য হিসেবে রয়েছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
ছয় মাস মেয়াদি এ কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এই কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে।