কুষ্টিয়ার একটি চালের মোকাম -সংবাদ
সরু চালের জন্য সর্ববৃহৎ ও প্রসিদ্ধ মোকাম কুষ্টিয়া খাজানগরে চালের মোকামে মিনিকেট চালের দাম ১৪ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৭ টাকা। গত কয়েক দিন ধরে মিলগেটে মিনিকেট চাল বিক্রি করছে কেজিপ্রতি ৮৪ টাকা দরে। যা গত ১ মার্চ ছিল ৭৭ টাকা।
বাজারে ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আর বাজারে ধানও নাই। এ জন্য চালের দাম বাড়ছে।’ মিলমালিকরা বলছেন ‘চালের দাম তুলনামূলকভাবে কমই বাড়ানো হয়েছে। দাম কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ১৭ টাকা বাড়ানো উচিত। তারপরও কম বাড়ানো হয়েছে। বাজারে ধান নাই। যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম গড়ে মণপ্রতি বাড়তি ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।’ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আল্ ওয়াজিউর রহমান এ কথা স্বীকার করে বলেন, চালের দাম বেড়েছে।
খাজানগর এলাকায় মিলমালিক ও খাদ্যসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বর্তমানে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে ধান ও চালের মজুদ অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। বিশেষ করে সরু ধান ও চালের মজুদ তলানিতে। কিছু মিলে মোটা ও মাঝারি মানের ধান ও চালের মজুদ আছে। সেটাও অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন মিলমালিকরা।
এদিকে গত কয়েকদিনের তুলনায় সরু ধানের দাম নতুন করে প্রতি মণে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। এতে চালের দাম গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৭ টাকা বাড়িয়েছে। মিলগেটে বর্তমানে সরু চাল ৮৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসে ১ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত ৫ দফায় দাম বেড়েছে।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খাজানগরে অটো রাইসমিলের সংখ্যা ৬৪টি। তবে এর মধ্যে অর্ধেক মিল প্রায় বন্ধ। এসব মিলে কী পরিমাণ ধান মজুদ তার প্রতিদিনের একটি হিসাব মিলমালিকরা অফিসে প্রেরণ করেন। সেই হিসাব ঠিক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে খাদ্য পরিদর্শকরা নিয়মিত মিল পরিদর্শন করেন। বর্তমান কী চিত্র আছে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল খালেক বলেন, এখন আমন মৌসুম শেষের দিকে। বোরো ধান বাজারে আসতে আর মাসখানেক সময় লাগবে। এ সময়ে ধান ও চালের মজুদ সাধারণত কম থাকে। বাজারে ধান নেই। এজন্য অর্ধেকেরও বেশি মিল বন্ধ রয়েছে।
মিলমালিক ও খাদ্য অফিসের তথ্যমতে, ৩ ডায়ারের একটি অটো রাইসমিলে ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩ হাজার ৬০০ মণ ধানের প্রয়োজন পড়ে। ১টি ডায়ার চালাতে ২৪ ঘণ্টায় ৬০০ মণ ধানের প্রয়োজন পড়ে। ৩ হাজার ৬০০ মণ ধান থেকে চাল উৎপাদন হয় ২ হাজার ৩৪০ মণ। অর্থাৎ ৩৬ টন চালে ২৩ টন চাল উৎপাদন হয়। স্বাভাবিক সময়ে একটি মিলে ৩ হাজার টন থেকে ৪ হাজার ৫০০ টন পর্যন্ত চাল মজুদ থাকে। এখন সেখানে মজুদ আছে ৩৬০ টন থেকে ৪০০ টন পর্যন্ত।
এ মিলমালিক বলেন, তার মিলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ ট্রাক ধান লাগে। সেখানে সোমবার ধান পেয়েছি মাত্র এক ট্রাক। মিল বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই।’ খাজানগরের অন্যতম চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দাদা রাইস মিল। এই মিলের ৬টি ডায়ার আছে। স্বাভাবিক সময়ে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে প্রতিদিন ৪৬ টন চাল উৎপাদন করতো। এখন ধানের অভাবে বেশিরভাগ সময় ৪ থেকে ৫টি ডায়ার বন্ধ থাকছে।
মিলমালিকরা আরও বলেন, দেশে ধান ও চালের মজুদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আর বাইরে থেকে যে এলসির চাল আসছে সেটা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। এবার অভ্যন্তরীণ সংকট প্রকট হওয়ার পেছনে ধানের সংকট ও দাম বৃদ্ধি অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ অটোর মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, খাজানগর মোকামে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ধান ও চালের মজুদ একেবারেই কম। মিলে ধান ও চালের মজুদ থাকলে বাজার স্বাভাবিক থাকে। এখন অর্ডার নিয়েও চাল দিতে পারছেন না বেশিরভাগ মিল মালিক।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, খাজানগরে প্রশাসনের পক্ষে তদারকি করা হচ্ছে, মিনিকেট চালের দাম কমানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
রংপুরে চালের দাম ৬ থেকে ৮ টাকা কেজিতে বেড়েছে
রংপুর থেকে নিজস্ব বার্তা পরিবেশক জানিয়েছেন, রংপুরে চালের দাম আবারও বেড়েছে। প্রকার ভেদে কেজিপ্রতি চালের দাম ৬ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। আড়তগুলোতে চালের মজুত ভালো বলেই সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে তারপরও চালের দাম বাড়ছে।
চালের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজিবীসহ মধ্যবিত্ত পরিবার চরম বিপাকে পড়েছে। সাধারণত শ্রমজীবীরা বা স্বল্প আয়ের অনেকেই এই এলাকায় তিন বেলা ভাত খান। তবে এখন তারা দু’বেলা খেতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিভাগীয় নগরী রংপুরের দেশের অন্যতম বড় চালের মোকাম রংপুর সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামে গিয়ে দেখা গেছে ৪২ টাকা কেজির মোটা চাল ৬ থেকে ৮ টাকা বেড়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহ আগেও নাজির শাইল চাল ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। তবে তা এখন বেড়ে ৮২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই ভাবে কাটারী ভোগ ৭২ টাকা থেকে বেড়ে ৮২ টাকা কেজি, মিনিকেট চাল ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮ টাকা, জিরা শাইল চাল ৬৪ টাকা থেকে বেড়ে ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর বিআর-২৮ চাল ৫৬ টাকার স্থলে ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচেছ। আর দেশি স্বর্না চাল কিছুদিন আগেও ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। এখন কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আড়তদারদের অভিযোগ বড় বড় মিলাররা চাল ‘গুদামজাত’ করে ‘কৃত্রিম সংকট’ সৃষ্টি করায় চালের দাম বেড়েছে। তবে সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামে ব্যবসায়ীদের গুদামে যথেষ্ট পরিমাণ চাল মজুত আছে।
সরেজমিন মঙ্গলবার রংপুর নগরীর সিটি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত চাল থাকলেও রাতারাতি চালের বাজার অস্থির হওয়াকে অস্বাভিক বলছেন ব্যাবসায়ীরা।
বড় আড়তদার রহমান মিয়ার আড়তের ম্যানেজার মমতাজ উদ্দিন জানালেন, এক মাস ধরে তাদের গোডাউনে দুহাজারেরও বেশি বস্তা চাল মজুত ছিল, এর মধ্যে হাজার খানেক বস্তা চাল বিক্রি হয়েছে। আবার হাজারেরও বেশি বস্তা চাল তারা কিনেছেন।
আগের কেনা চাল কেমন করে দু দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা দাম বাড়লো - তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।
আরেক বড় আড়তের ম্যানেজার সোহরাব জানালেন তাদের গোডাউনে দেড় থেকে দু’হাজার বস্তা চাল সব সময় মজুত থাকে। তারা চাল নিয়ে আসে দিনাজপুর, নওগাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। তাদের আগের দামে কেনা চাল থাকার পরেও কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা চালের দাম বাড়লো কিভাবে? তার উত্তরে তিনি বলেন, আগের দামে চাল কেনা থাকলেও এখন বড় বড় মোকামে চালের দাম বৃদ্ধি পাবার কারণে তাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
মাহিগঞ্জ এলাকায় শতাধিক চালের আড়তদার-ব্যবসায়ী রয়েছেন। সেখানেও ভালো পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কৃষি কর্মকর্তা যা বললেন
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছেন, রংপুর জেলা সব সময় ধান চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা। প্রতি বছর শুধু মাত্র রংপুর জেলা থেকে উৎপাদিত সাড়ে চাল লাখ মেট্রিক টন চাল দেশের অন্যান্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
তিনি জানান আমন মৌসুমে রংপুর জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭শ ২৩ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল । সেখানে লক্ষ্য মাত্রা ছাপিয়ে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন চাল। সেই লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে।
রংপুরে চালের দাম দফায় দফায় বাড়ার কোনো কারণ তিনি দেখছেন না। তার ধারণা এটা ‘সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি’।
কুষ্টিয়ার একটি চালের মোকাম -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
সরু চালের জন্য সর্ববৃহৎ ও প্রসিদ্ধ মোকাম কুষ্টিয়া খাজানগরে চালের মোকামে মিনিকেট চালের দাম ১৪ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৭ টাকা। গত কয়েক দিন ধরে মিলগেটে মিনিকেট চাল বিক্রি করছে কেজিপ্রতি ৮৪ টাকা দরে। যা গত ১ মার্চ ছিল ৭৭ টাকা।
বাজারে ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আর বাজারে ধানও নাই। এ জন্য চালের দাম বাড়ছে।’ মিলমালিকরা বলছেন ‘চালের দাম তুলনামূলকভাবে কমই বাড়ানো হয়েছে। দাম কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ১৭ টাকা বাড়ানো উচিত। তারপরও কম বাড়ানো হয়েছে। বাজারে ধান নাই। যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম গড়ে মণপ্রতি বাড়তি ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।’ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আল্ ওয়াজিউর রহমান এ কথা স্বীকার করে বলেন, চালের দাম বেড়েছে।
খাজানগর এলাকায় মিলমালিক ও খাদ্যসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বর্তমানে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে ধান ও চালের মজুদ অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। বিশেষ করে সরু ধান ও চালের মজুদ তলানিতে। কিছু মিলে মোটা ও মাঝারি মানের ধান ও চালের মজুদ আছে। সেটাও অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন মিলমালিকরা।
এদিকে গত কয়েকদিনের তুলনায় সরু ধানের দাম নতুন করে প্রতি মণে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। এতে চালের দাম গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৭ টাকা বাড়িয়েছে। মিলগেটে বর্তমানে সরু চাল ৮৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসে ১ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত ৫ দফায় দাম বেড়েছে।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খাজানগরে অটো রাইসমিলের সংখ্যা ৬৪টি। তবে এর মধ্যে অর্ধেক মিল প্রায় বন্ধ। এসব মিলে কী পরিমাণ ধান মজুদ তার প্রতিদিনের একটি হিসাব মিলমালিকরা অফিসে প্রেরণ করেন। সেই হিসাব ঠিক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে খাদ্য পরিদর্শকরা নিয়মিত মিল পরিদর্শন করেন। বর্তমান কী চিত্র আছে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল খালেক বলেন, এখন আমন মৌসুম শেষের দিকে। বোরো ধান বাজারে আসতে আর মাসখানেক সময় লাগবে। এ সময়ে ধান ও চালের মজুদ সাধারণত কম থাকে। বাজারে ধান নেই। এজন্য অর্ধেকেরও বেশি মিল বন্ধ রয়েছে।
মিলমালিক ও খাদ্য অফিসের তথ্যমতে, ৩ ডায়ারের একটি অটো রাইসমিলে ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩ হাজার ৬০০ মণ ধানের প্রয়োজন পড়ে। ১টি ডায়ার চালাতে ২৪ ঘণ্টায় ৬০০ মণ ধানের প্রয়োজন পড়ে। ৩ হাজার ৬০০ মণ ধান থেকে চাল উৎপাদন হয় ২ হাজার ৩৪০ মণ। অর্থাৎ ৩৬ টন চালে ২৩ টন চাল উৎপাদন হয়। স্বাভাবিক সময়ে একটি মিলে ৩ হাজার টন থেকে ৪ হাজার ৫০০ টন পর্যন্ত চাল মজুদ থাকে। এখন সেখানে মজুদ আছে ৩৬০ টন থেকে ৪০০ টন পর্যন্ত।
এ মিলমালিক বলেন, তার মিলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ ট্রাক ধান লাগে। সেখানে সোমবার ধান পেয়েছি মাত্র এক ট্রাক। মিল বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই।’ খাজানগরের অন্যতম চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দাদা রাইস মিল। এই মিলের ৬টি ডায়ার আছে। স্বাভাবিক সময়ে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে প্রতিদিন ৪৬ টন চাল উৎপাদন করতো। এখন ধানের অভাবে বেশিরভাগ সময় ৪ থেকে ৫টি ডায়ার বন্ধ থাকছে।
মিলমালিকরা আরও বলেন, দেশে ধান ও চালের মজুদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আর বাইরে থেকে যে এলসির চাল আসছে সেটা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। এবার অভ্যন্তরীণ সংকট প্রকট হওয়ার পেছনে ধানের সংকট ও দাম বৃদ্ধি অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ অটোর মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, খাজানগর মোকামে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ধান ও চালের মজুদ একেবারেই কম। মিলে ধান ও চালের মজুদ থাকলে বাজার স্বাভাবিক থাকে। এখন অর্ডার নিয়েও চাল দিতে পারছেন না বেশিরভাগ মিল মালিক।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, খাজানগরে প্রশাসনের পক্ষে তদারকি করা হচ্ছে, মিনিকেট চালের দাম কমানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
রংপুরে চালের দাম ৬ থেকে ৮ টাকা কেজিতে বেড়েছে
রংপুর থেকে নিজস্ব বার্তা পরিবেশক জানিয়েছেন, রংপুরে চালের দাম আবারও বেড়েছে। প্রকার ভেদে কেজিপ্রতি চালের দাম ৬ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। আড়তগুলোতে চালের মজুত ভালো বলেই সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে তারপরও চালের দাম বাড়ছে।
চালের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজিবীসহ মধ্যবিত্ত পরিবার চরম বিপাকে পড়েছে। সাধারণত শ্রমজীবীরা বা স্বল্প আয়ের অনেকেই এই এলাকায় তিন বেলা ভাত খান। তবে এখন তারা দু’বেলা খেতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিভাগীয় নগরী রংপুরের দেশের অন্যতম বড় চালের মোকাম রংপুর সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামে গিয়ে দেখা গেছে ৪২ টাকা কেজির মোটা চাল ৬ থেকে ৮ টাকা বেড়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহ আগেও নাজির শাইল চাল ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। তবে তা এখন বেড়ে ৮২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই ভাবে কাটারী ভোগ ৭২ টাকা থেকে বেড়ে ৮২ টাকা কেজি, মিনিকেট চাল ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮ টাকা, জিরা শাইল চাল ৬৪ টাকা থেকে বেড়ে ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর বিআর-২৮ চাল ৫৬ টাকার স্থলে ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচেছ। আর দেশি স্বর্না চাল কিছুদিন আগেও ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। এখন কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আড়তদারদের অভিযোগ বড় বড় মিলাররা চাল ‘গুদামজাত’ করে ‘কৃত্রিম সংকট’ সৃষ্টি করায় চালের দাম বেড়েছে। তবে সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামে ব্যবসায়ীদের গুদামে যথেষ্ট পরিমাণ চাল মজুত আছে।
সরেজমিন মঙ্গলবার রংপুর নগরীর সিটি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত চাল থাকলেও রাতারাতি চালের বাজার অস্থির হওয়াকে অস্বাভিক বলছেন ব্যাবসায়ীরা।
বড় আড়তদার রহমান মিয়ার আড়তের ম্যানেজার মমতাজ উদ্দিন জানালেন, এক মাস ধরে তাদের গোডাউনে দুহাজারেরও বেশি বস্তা চাল মজুত ছিল, এর মধ্যে হাজার খানেক বস্তা চাল বিক্রি হয়েছে। আবার হাজারেরও বেশি বস্তা চাল তারা কিনেছেন।
আগের কেনা চাল কেমন করে দু দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা দাম বাড়লো - তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।
আরেক বড় আড়তের ম্যানেজার সোহরাব জানালেন তাদের গোডাউনে দেড় থেকে দু’হাজার বস্তা চাল সব সময় মজুত থাকে। তারা চাল নিয়ে আসে দিনাজপুর, নওগাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। তাদের আগের দামে কেনা চাল থাকার পরেও কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা চালের দাম বাড়লো কিভাবে? তার উত্তরে তিনি বলেন, আগের দামে চাল কেনা থাকলেও এখন বড় বড় মোকামে চালের দাম বৃদ্ধি পাবার কারণে তাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
মাহিগঞ্জ এলাকায় শতাধিক চালের আড়তদার-ব্যবসায়ী রয়েছেন। সেখানেও ভালো পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কৃষি কর্মকর্তা যা বললেন
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছেন, রংপুর জেলা সব সময় ধান চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা। প্রতি বছর শুধু মাত্র রংপুর জেলা থেকে উৎপাদিত সাড়ে চাল লাখ মেট্রিক টন চাল দেশের অন্যান্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
তিনি জানান আমন মৌসুমে রংপুর জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭শ ২৩ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল । সেখানে লক্ষ্য মাত্রা ছাপিয়ে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন চাল। সেই লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে।
রংপুরে চালের দাম দফায় দফায় বাড়ার কোনো কারণ তিনি দেখছেন না। তার ধারণা এটা ‘সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি’।