বিশ্বের গত ১৭৫ বছরের ইতিহাসে ২০২৪ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম বছর, যেখানে গড় তাপমাত্রা শিল্প-পূর্ব সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বুধবার প্রকাশিত ‘স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট রিপোর্ট’ এ এই উদ্বেগজনক তথ্যটি প্রকাশ করে। সেখানে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ক্ষতি এমন মাত্রায় পৌঁছাছে যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করছে।
আগামীকাল (২১ মার্চ) বিশ্ব হিমবাহ দিবস ও আগামী শনিবার (২২ মার্চ) বিশ্ব পানি দিবস এবং আগামী রোববার (২৩ মার্চ) বিশ্ব আবহাওয়া দিবসকে সামনে রেখে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ডব্লিউএমও। বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাটি বলছে, চরম আবহাওয়াজনিত কারণে ২০২৪ সালটি ছিল বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগে রেকর্ড ক্ষয়ক্ষতির বছর। অতি গরম ছাড়াও ঘুর্ণিঝড়, টাইফুনসহ নানা কারণে গত ১৬ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ উদবাস্তু হয়েছে।
ডব্লিউএমও এর প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ আছে, গত ১০ বছরের মধ্যে প্রতিটি বছরই বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ উষ্ণতম বছরের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে গরম ছাড়াও সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের তলদেশে তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি, বায়ুম-লে কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধির ঘটনা এমন রেকর্ড ছাড়িয়েছে যে এর প্রভাব শত শত বছর এমনকি হাজার বছরও অপরিবর্তনীয় থেকে যাবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, গত ২০২৩ এবং গত ২০২৪ সালের রেকর্ড তাপমাত্রার মূল কারণ ছিল ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, যার সঙ্গে একটি শীতল লা নিনা থেকে একটি উষ্ণ এল নিনো-তে স্থানান্তর যুক্ত হয়েছিল। এছাড়াও, সৌর চক্রের পরিবর্তন, একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, এবং শীতলকারী অ্যারোসোলের পরিমাণ হ্রাসসহ কয়েকটি অন্যান্য কারণ এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২৪ সালে তাপমাত্রার রেকর্ড বৃদ্ধির বাইরেও আরও অনেক কিছু ঘটছে। এর মধ্যে সমুদ্র তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও বাড়ছে, হিমবাহ গলছে এবং অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্র বরফ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে খাদ্য সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ২০২৩-২৪ সালের চরম জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে। আরও ক্ষতি ঠেকানো, জনগণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর জলবায়ু নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজ এর নির্বাহী পরিচালক ও জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান বলেন, ‘জলবায়ুর কম ক্ষতি করেও বাংলাদেশ বেশি ভুক্তভোগী, আবার বৈশ্বিক ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না। ফলে নিজের জনগণকে রক্ষায় নিজস্ব জলবায়ু কৌশল নীতি থাকতে হবে। বিশেষ করে দূষিত জ্বালানির পরিবর্তে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে কীভাবে যাওয়া যায় সে পথ খুঁজতে হবে।’
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে জরুরী বনায়ন, দ্বিতীয়ত, পানির উৎসগুলো সংরক্ষণ এবং তৃতীয়ত, কার্বণ নিঃসরণ কমানো। বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। এর জন্য দরকার সমন্বিত জাতীয় নীতিমালা, যা দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।’
ডব্লিউএমও এর রির্পোর্টটিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমাদের গ্রহ ক্রমাগত বিপদ সংকেত দিচ্ছে। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, আমরা আমাদের জনগণ ও অর্থনীতির জন্য সস্তা, পরিচ্ছন্ন নবায়নযোগ্য শক্তির সুযোগের বিকাশ ঘটাতে পারি।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৮৫০ থেকে গত ১৯০০ সালে, অর্থাৎ শিল্প–পূর্ব যুগে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যা ছিল, তার তুলনায় গত ২০২৪ সালের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। শিল্প–পূর্ব যুগের যে সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় পর্যন্ত মানুষ বড় আকারে কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শুরু করেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দিতে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছিল। বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা।
বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যাওয়ার কারণে যে চুক্তির লক্ষ্য ভন্ডুল হয়ে গেছে, তা নয়। ওই চুক্তির আওতায় দীর্ঘ মেয়াদে গড় তাপমাত্রার হিসেবকে বিবেচনায় নিতে হবে।
ডব্লিউএমও-এর মহাসচিব সেলেস্তে সাউলো বলেন, ‘একক বছর ১ দশমিক৫ ডিগ্রীর বেশি উষ্ণতা পার করলেও, এটি প্যারিস চুক্তির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের পরিপন্থী নয়। তবে এটি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা যে, আমরা আমাদের জীবন, অর্থনীতি এবং পুরো গ্রহের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছি।’
বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
বিশ্বের গত ১৭৫ বছরের ইতিহাসে ২০২৪ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম বছর, যেখানে গড় তাপমাত্রা শিল্প-পূর্ব সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বুধবার প্রকাশিত ‘স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট রিপোর্ট’ এ এই উদ্বেগজনক তথ্যটি প্রকাশ করে। সেখানে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ক্ষতি এমন মাত্রায় পৌঁছাছে যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করছে।
আগামীকাল (২১ মার্চ) বিশ্ব হিমবাহ দিবস ও আগামী শনিবার (২২ মার্চ) বিশ্ব পানি দিবস এবং আগামী রোববার (২৩ মার্চ) বিশ্ব আবহাওয়া দিবসকে সামনে রেখে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ডব্লিউএমও। বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাটি বলছে, চরম আবহাওয়াজনিত কারণে ২০২৪ সালটি ছিল বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগে রেকর্ড ক্ষয়ক্ষতির বছর। অতি গরম ছাড়াও ঘুর্ণিঝড়, টাইফুনসহ নানা কারণে গত ১৬ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ উদবাস্তু হয়েছে।
ডব্লিউএমও এর প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ আছে, গত ১০ বছরের মধ্যে প্রতিটি বছরই বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ উষ্ণতম বছরের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে গরম ছাড়াও সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের তলদেশে তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি, বায়ুম-লে কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধির ঘটনা এমন রেকর্ড ছাড়িয়েছে যে এর প্রভাব শত শত বছর এমনকি হাজার বছরও অপরিবর্তনীয় থেকে যাবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, গত ২০২৩ এবং গত ২০২৪ সালের রেকর্ড তাপমাত্রার মূল কারণ ছিল ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, যার সঙ্গে একটি শীতল লা নিনা থেকে একটি উষ্ণ এল নিনো-তে স্থানান্তর যুক্ত হয়েছিল। এছাড়াও, সৌর চক্রের পরিবর্তন, একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, এবং শীতলকারী অ্যারোসোলের পরিমাণ হ্রাসসহ কয়েকটি অন্যান্য কারণ এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২৪ সালে তাপমাত্রার রেকর্ড বৃদ্ধির বাইরেও আরও অনেক কিছু ঘটছে। এর মধ্যে সমুদ্র তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও বাড়ছে, হিমবাহ গলছে এবং অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্র বরফ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে খাদ্য সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ২০২৩-২৪ সালের চরম জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে। আরও ক্ষতি ঠেকানো, জনগণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর জলবায়ু নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজ এর নির্বাহী পরিচালক ও জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান বলেন, ‘জলবায়ুর কম ক্ষতি করেও বাংলাদেশ বেশি ভুক্তভোগী, আবার বৈশ্বিক ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না। ফলে নিজের জনগণকে রক্ষায় নিজস্ব জলবায়ু কৌশল নীতি থাকতে হবে। বিশেষ করে দূষিত জ্বালানির পরিবর্তে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে কীভাবে যাওয়া যায় সে পথ খুঁজতে হবে।’
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে জরুরী বনায়ন, দ্বিতীয়ত, পানির উৎসগুলো সংরক্ষণ এবং তৃতীয়ত, কার্বণ নিঃসরণ কমানো। বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। এর জন্য দরকার সমন্বিত জাতীয় নীতিমালা, যা দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।’
ডব্লিউএমও এর রির্পোর্টটিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমাদের গ্রহ ক্রমাগত বিপদ সংকেত দিচ্ছে। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, আমরা আমাদের জনগণ ও অর্থনীতির জন্য সস্তা, পরিচ্ছন্ন নবায়নযোগ্য শক্তির সুযোগের বিকাশ ঘটাতে পারি।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৮৫০ থেকে গত ১৯০০ সালে, অর্থাৎ শিল্প–পূর্ব যুগে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যা ছিল, তার তুলনায় গত ২০২৪ সালের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। শিল্প–পূর্ব যুগের যে সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় পর্যন্ত মানুষ বড় আকারে কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শুরু করেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দিতে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছিল। বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা।
বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যাওয়ার কারণে যে চুক্তির লক্ষ্য ভন্ডুল হয়ে গেছে, তা নয়। ওই চুক্তির আওতায় দীর্ঘ মেয়াদে গড় তাপমাত্রার হিসেবকে বিবেচনায় নিতে হবে।
ডব্লিউএমও-এর মহাসচিব সেলেস্তে সাউলো বলেন, ‘একক বছর ১ দশমিক৫ ডিগ্রীর বেশি উষ্ণতা পার করলেও, এটি প্যারিস চুক্তির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের পরিপন্থী নয়। তবে এটি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা যে, আমরা আমাদের জীবন, অর্থনীতি এবং পুরো গ্রহের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছি।’