alt

১৭৫ বছরের মধ্যে বিশ্বে উষ্ণতম বছর ২০২৪, দীর্ঘ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

শাফিউল আল ইমরান : বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

বিশ্বের গত ১৭৫ বছরের ইতিহাসে ২০২৪ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম বছর, যেখানে গড় তাপমাত্রা শিল্প-পূর্ব সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বুধবার প্রকাশিত ‘স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট রিপোর্ট’ এ এই উদ্বেগজনক তথ্যটি প্রকাশ করে। সেখানে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ক্ষতি এমন মাত্রায় পৌঁছাছে যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করছে।

আগামীকাল (২১ মার্চ) বিশ্ব হিমবাহ দিবস ও আগামী শনিবার (২২ মার্চ) বিশ্ব পানি দিবস এবং আগামী রোববার (২৩ মার্চ) বিশ্ব আবহাওয়া দিবসকে সামনে রেখে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ডব্লিউএমও। বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাটি বলছে, চরম আবহাওয়াজনিত কারণে ২০২৪ সালটি ছিল বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগে রেকর্ড ক্ষয়ক্ষতির বছর। অতি গরম ছাড়াও ঘুর্ণিঝড়, টাইফুনসহ নানা কারণে গত ১৬ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ উদবাস্তু হয়েছে।

ডব্লিউএমও এর প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ আছে, গত ১০ বছরের মধ্যে প্রতিটি বছরই বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ উষ্ণতম বছরের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে গরম ছাড়াও সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের তলদেশে তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি, বায়ুম-লে কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধির ঘটনা এমন রেকর্ড ছাড়িয়েছে যে এর প্রভাব শত শত বছর এমনকি হাজার বছরও অপরিবর্তনীয় থেকে যাবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, গত ২০২৩ এবং গত ২০২৪ সালের রেকর্ড তাপমাত্রার মূল কারণ ছিল ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, যার সঙ্গে একটি শীতল লা নিনা থেকে একটি উষ্ণ এল নিনো-তে স্থানান্তর যুক্ত হয়েছিল। এছাড়াও, সৌর চক্রের পরিবর্তন, একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, এবং শীতলকারী অ্যারোসোলের পরিমাণ হ্রাসসহ কয়েকটি অন্যান্য কারণ এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২৪ সালে তাপমাত্রার রেকর্ড বৃদ্ধির বাইরেও আরও অনেক কিছু ঘটছে। এর মধ্যে সমুদ্র তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও বাড়ছে, হিমবাহ গলছে এবং অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্র বরফ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে খাদ্য সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ২০২৩-২৪ সালের চরম জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে। আরও ক্ষতি ঠেকানো, জনগণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর জলবায়ু নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে হবে।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজ এর নির্বাহী পরিচালক ও জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান বলেন, ‘জলবায়ুর কম ক্ষতি করেও বাংলাদেশ বেশি ভুক্তভোগী, আবার বৈশ্বিক ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না। ফলে নিজের জনগণকে রক্ষায় নিজস্ব জলবায়ু কৌশল নীতি থাকতে হবে। বিশেষ করে দূষিত জ্বালানির পরিবর্তে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে কীভাবে যাওয়া যায় সে পথ খুঁজতে হবে।’

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে জরুরী বনায়ন, দ্বিতীয়ত, পানির উৎসগুলো সংরক্ষণ এবং তৃতীয়ত, কার্বণ নিঃসরণ কমানো। বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। এর জন্য দরকার সমন্বিত জাতীয় নীতিমালা, যা দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।’

ডব্লিউএমও এর রির্পোর্টটিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমাদের গ্রহ ক্রমাগত বিপদ সংকেত দিচ্ছে। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, আমরা আমাদের জনগণ ও অর্থনীতির জন্য সস্তা, পরিচ্ছন্ন নবায়নযোগ্য শক্তির সুযোগের বিকাশ ঘটাতে পারি।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৮৫০ থেকে গত ১৯০০ সালে, অর্থাৎ শিল্প–পূর্ব যুগে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যা ছিল, তার তুলনায় গত ২০২৪ সালের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। শিল্প–পূর্ব যুগের যে সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় পর্যন্ত মানুষ বড় আকারে কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শুরু করেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দিতে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছিল। বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা।

বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যাওয়ার কারণে যে চুক্তির লক্ষ্য ভন্ডুল হয়ে গেছে, তা নয়। ওই চুক্তির আওতায় দীর্ঘ মেয়াদে গড় তাপমাত্রার হিসেবকে বিবেচনায় নিতে হবে।

ডব্লিউএমও-এর মহাসচিব সেলেস্তে সাউলো বলেন, ‘একক বছর ১ দশমিক৫ ডিগ্রীর বেশি উষ্ণতা পার করলেও, এটি প্যারিস চুক্তির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের পরিপন্থী নয়। তবে এটি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা যে, আমরা আমাদের জীবন, অর্থনীতি এবং পুরো গ্রহের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছি।’

সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, অনিবন্ধিত মুঠোফোনের ব্যবহার বন্ধে ১৬ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে এনইআইআর

দুর্ঘটনার সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর সিলেট ছাড়লো লন্ডনগামী বিমান

‘তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার’ মুখে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ: কর্মশালায় বিশ্লেষণ

ছবি

দুদক সংস্কার কমিশনের ‘কৌশলগত সুপারিশ বাদ দিয়ে’ খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদন, টিআইবির উদ্বেগ

ছবি

ভিন্ন কোনো দেশের কারণে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না: চীনের রাষ্ট্রদূত

ছবি

ভোট কবে, জানা যাবে ‘ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে’

টিভি সূচি

ছবি

পরিবেশ ধ্বংসের বিনিময়ে উন্নয়ন ‘টেকসই হতে পারে না’: সৈয়দা রিজওয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু

ছবি

হালদা নদী রক্ষায় গেজেট পরিবর্তন করা হবে : প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

ছবি

‘সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিতে থাকা’ নিয়ে মন্তব্যের ব্যাখ্যা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের

ছবি

নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তা বাড়াতে ডিএমপিকে ইসির চিঠি

ছবি

সংবিধান সংস্কার ‘জুলাই সনদ অনুসারে’: ২৭০ পঞ্জিকা দিবসে না হলে ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিল পাস’

আইনি প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বেসরকারি স্কুল ও কলেজে এমপিও নীতিমালায় বড় পরিবর্তন: জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ বিলুপ্ত, অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ যোগ্যতায় পরিবর্তন

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের অতীত থেকে মুক্তির পথ দেখাবে: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কারে সরকারের জন্য দুটি বিকল্প পথ প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের

ছবি

নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বডি-ওর্ন-ক্যামেরা কেনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

শীতের কম্বল ফেব্রুয়ারিতে দিয়ে লাভ নেই বিভাগীয় কমিশনার

ছবি

দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষকরা সম্মুখসারির যোদ্ধা খাদ্য উপদেষ্টা

ছবি

নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের সুপারিশ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-চীন উভয়ের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক গভীর: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোনথা’, ভারতের অন্ধ্র উপকূলে আঘাতের শঙ্কা

ছবি

ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’

ছবি

আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বৃহস্পতিবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৬ জনের মৃত্যু: হাসপাতালে ভর্তি ৯৮৩ জন

ছবি

জেইসির মাধ্যমে বাংলাদেশ-পাকিস্তান দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত, আজ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর

চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন

ছবি

এক লাখ কর্মী নিয়োগ, প্রধান উপদেষ্টাকে অগ্রগতি জানালো জাপানি প্রতিনিধিদল

ছবি

মঙ্গলবার সরকারের হাতে যাবে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা

ছবি

নভেম্বরের পরও চলবে উপদেষ্টা পরিষদের কার্যক্রম: অন্তর্বর্তী সরকারের স্পষ্টীকরণ

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬১

ছবি

অর্থ পাচারের মামলায় সম্রাট ও আরমানের জামিন বাতিল, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হওয়া ও নৈতিক নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হওয়ার আহ্বান শিক্ষা উপদেষ্টার

tab

১৭৫ বছরের মধ্যে বিশ্বে উষ্ণতম বছর ২০২৪, দীর্ঘ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

শাফিউল আল ইমরান

বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

বিশ্বের গত ১৭৫ বছরের ইতিহাসে ২০২৪ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম বছর, যেখানে গড় তাপমাত্রা শিল্প-পূর্ব সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বুধবার প্রকাশিত ‘স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট রিপোর্ট’ এ এই উদ্বেগজনক তথ্যটি প্রকাশ করে। সেখানে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ক্ষতি এমন মাত্রায় পৌঁছাছে যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করছে।

আগামীকাল (২১ মার্চ) বিশ্ব হিমবাহ দিবস ও আগামী শনিবার (২২ মার্চ) বিশ্ব পানি দিবস এবং আগামী রোববার (২৩ মার্চ) বিশ্ব আবহাওয়া দিবসকে সামনে রেখে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ডব্লিউএমও। বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাটি বলছে, চরম আবহাওয়াজনিত কারণে ২০২৪ সালটি ছিল বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগে রেকর্ড ক্ষয়ক্ষতির বছর। অতি গরম ছাড়াও ঘুর্ণিঝড়, টাইফুনসহ নানা কারণে গত ১৬ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ উদবাস্তু হয়েছে।

ডব্লিউএমও এর প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ আছে, গত ১০ বছরের মধ্যে প্রতিটি বছরই বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ উষ্ণতম বছরের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে গরম ছাড়াও সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের তলদেশে তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি, বায়ুম-লে কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধির ঘটনা এমন রেকর্ড ছাড়িয়েছে যে এর প্রভাব শত শত বছর এমনকি হাজার বছরও অপরিবর্তনীয় থেকে যাবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, গত ২০২৩ এবং গত ২০২৪ সালের রেকর্ড তাপমাত্রার মূল কারণ ছিল ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, যার সঙ্গে একটি শীতল লা নিনা থেকে একটি উষ্ণ এল নিনো-তে স্থানান্তর যুক্ত হয়েছিল। এছাড়াও, সৌর চক্রের পরিবর্তন, একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, এবং শীতলকারী অ্যারোসোলের পরিমাণ হ্রাসসহ কয়েকটি অন্যান্য কারণ এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২৪ সালে তাপমাত্রার রেকর্ড বৃদ্ধির বাইরেও আরও অনেক কিছু ঘটছে। এর মধ্যে সমুদ্র তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও বাড়ছে, হিমবাহ গলছে এবং অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্র বরফ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে খাদ্য সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ২০২৩-২৪ সালের চরম জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে। আরও ক্ষতি ঠেকানো, জনগণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর জলবায়ু নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে হবে।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজ এর নির্বাহী পরিচালক ও জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান বলেন, ‘জলবায়ুর কম ক্ষতি করেও বাংলাদেশ বেশি ভুক্তভোগী, আবার বৈশ্বিক ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না। ফলে নিজের জনগণকে রক্ষায় নিজস্ব জলবায়ু কৌশল নীতি থাকতে হবে। বিশেষ করে দূষিত জ্বালানির পরিবর্তে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে কীভাবে যাওয়া যায় সে পথ খুঁজতে হবে।’

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে জরুরী বনায়ন, দ্বিতীয়ত, পানির উৎসগুলো সংরক্ষণ এবং তৃতীয়ত, কার্বণ নিঃসরণ কমানো। বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। এর জন্য দরকার সমন্বিত জাতীয় নীতিমালা, যা দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।’

ডব্লিউএমও এর রির্পোর্টটিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমাদের গ্রহ ক্রমাগত বিপদ সংকেত দিচ্ছে। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, আমরা আমাদের জনগণ ও অর্থনীতির জন্য সস্তা, পরিচ্ছন্ন নবায়নযোগ্য শক্তির সুযোগের বিকাশ ঘটাতে পারি।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৮৫০ থেকে গত ১৯০০ সালে, অর্থাৎ শিল্প–পূর্ব যুগে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যা ছিল, তার তুলনায় গত ২০২৪ সালের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। শিল্প–পূর্ব যুগের যে সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় পর্যন্ত মানুষ বড় আকারে কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শুরু করেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দিতে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছিল। বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা।

বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যাওয়ার কারণে যে চুক্তির লক্ষ্য ভন্ডুল হয়ে গেছে, তা নয়। ওই চুক্তির আওতায় দীর্ঘ মেয়াদে গড় তাপমাত্রার হিসেবকে বিবেচনায় নিতে হবে।

ডব্লিউএমও-এর মহাসচিব সেলেস্তে সাউলো বলেন, ‘একক বছর ১ দশমিক৫ ডিগ্রীর বেশি উষ্ণতা পার করলেও, এটি প্যারিস চুক্তির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের পরিপন্থী নয়। তবে এটি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা যে, আমরা আমাদের জীবন, অর্থনীতি এবং পুরো গ্রহের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছি।’

back to top