সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ‘দুর্নীতি ও প্রতারণার’ মাধ্যমে সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য ৩৩ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের অভিযোগে এ দুটি মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ কমিশনের উপ-পরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক মামলা দুটি করেছেন বলে জানিয়েছেন সংস্থার উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম। তার আগে ‘তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে পুতুলের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ১২ জানুয়ারি করা এই মামলায় পুতুল, শেখ হাসিনাসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। ক্ষমতায় পালাবদলের পর ওই মামলায় পুতুলকে প্রথম আসামি করা হয়।
দুদক কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন, দুই মামলার মধ্যে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে’ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এর সদস্যভুক্ত ব্যাংকগুলোর সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) তহবিল থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা গ্রহণের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৪ সালে গড়ে ওঠা সূচনা ফাউন্ডেশন মানসিক ও স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে। এ মামলায় সূচনা ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারপারসন পুতুলের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি এর সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকেও আসামি করা হয়েছে বলে দুদক কর্মকর্তা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আরেক মামলায় পুতুলের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জালিয়াতির’ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের অভিযোগ আনা হয়েছে। পুতুল ও নজরুল মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তারা পরস্পর ‘যোগসাজশে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে’ ব্যাংকগুলোর সিএসআর ফান্ড থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকা দিতে চাপ দেন। এর ফলে ২০১৭ সালের মে মাসে ২০টি ব্যাংক ‘বাধ্য হয়ে’ তাদের সিএসআর খাত থেকে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা সূচনা ফাউন্ডেশনে দেয়।
এই অর্থ কীভাবে এবং কোন খাতে খরচ করা হয়েছে তা জানার জন্য অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সূচনা ফাউন্ডেশনে দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হলেও কোনো রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। দুদকের অভিযানেও প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে এজাহারে বলা হয়েছে।
ভুয়া রেকর্ডপত্রের মাধ্যমে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়ার দাবি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দ-বিধির ১০৯ ধারায় সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেরে এই তহবিল (সিএসআর ফান্ড) অপব্যয় ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরেক মামলায় পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ করে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, তিনি এ পদে নিয়োগ লাভের উদ্দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ২০২৩ সালে জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) পাঠান।
এজাহারে বলা হয়েছে, সিভিতে তিনি তখনকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ’র শিক্ষকতা বা শিক্ষা ম্যানুয়েল রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, অটিজম এবং মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার কথা তুলে ধরেন। দায়িত্ব পালনের এই যোগ্যতা অন্তর্ভুক্ত করায় তার সিভি সমৃদ্ধ হয়, যার ফলে আঞ্চলিক পরিচালক পদে ‘নিয়োগের পথ সুগম’ হয়।
কিন্তু অনুসন্ধানে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে’ পুতুল সিভিতে ‘মিথ্যা ও ভুয়া যোগ্যতা’ অন্তর্ভুক্ত করেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছে দুদক। এ মামলায় পুতুলের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪২০/৪৬৮/৪৭১ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তার আগে অনুসন্ধানের বরাতে দুদক বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মনোনয়নকালে পুতুল কানাডার পাসপোর্টধারী তথা কানাডার নাগরিক ছিলেন। ভারতে সংস্থার আঞ্চলিক দপ্তরে কর্মরত থাকা পুতুলকে সরানোর পদক্ষেপ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল দুদক।
‘অবৈধ সম্পদ’ : আমু, মেয়ে ও ‘শ্যালিকার’ বিরুদ্ধে মামলা
করছে দুদক
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তার মেয়ে ও কথিত এক শ্যালিকার বিরুদ্ধে ‘অবৈধভাবে’ সম্পদ অর্জনের আলাদা মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩৮ কোটি টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এসব মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার মামলা অনুমোদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে দুদক মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আক্তার হোসেন বলেন, মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান আছে। দুদক কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে ২৬ কোটি, তার মেয়ে সুমাইয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ও কথিত শ্যালিকা সৈয়দা হক মেরির বিরুদ্ধে প্রায় ৮ কোটি টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হচ্ছে।
সুমাইয়া ও মেরির বিরুদ্ধে যে দুটি মামলা হচ্ছে সেগুলোতে আমুকেও আসামি করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ৬ নভেম্বর ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার আগে ১৪ আগস্ট আমুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এরপর ২ মার্চ আমু, তার স্ত্রী ও মেয়ের ব্যাংক হিসাবসহ তাদের ৪৪টি হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত।
এসব ব্যাংক হিসাবে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ ৯২ হাজার ৫৭৪ টাকা থাকার তথ্য দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঝালকাঠিতে আমুর বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। পরে তার ওই বাসভবন থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধারের তথ্য দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দুদক কর্মকর্তার তথ্যমতে, আমুর বিরুদ্ধে ২৬ কোটি ২৭ লাখ ৮১ হাজার ৪৬১ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জন ও ১৪টি ব্যাংক হিসাবে ৩১ কোটি ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ৭০৮ টাকা ‘সন্দেহজনক লেনদেনের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। আমু ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে ‘অবৈধভাবে’ এই সম্পদ অর্জন করেছেন তুলে ধরা হয়েছে এজাহারে।
সুমাইয়া হোসেনের বিরুদ্ধে অনুমোদন করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি তার বাবা আমির হোসেন আমুর ‘সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে ৪ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৮১ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া সুমাইয়া হোসেন ১৮টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪২ টাকা ‘সন্দেহজনক লেনদেন করে ওই টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন’।
সৈয়দা হক মেরীর বিরুদ্ধে অনুমোদন করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তার কোনো বৈধ আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও আমির হোসেন আমুর সহায়তায় তিনি সম্পদশালী হয়েছেন। মেরীর বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৭০ টাকা মূল্যের ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জন ও ১৩টি ব্যাংক হিসাবে ৬২ কোটি ৬৮ লাখ ৪১৭ টাকা ‘সন্দেহজনক লেনদেন’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ‘দুর্নীতি ও প্রতারণার’ মাধ্যমে সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য ৩৩ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের অভিযোগে এ দুটি মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ কমিশনের উপ-পরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক মামলা দুটি করেছেন বলে জানিয়েছেন সংস্থার উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম। তার আগে ‘তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে পুতুলের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ১২ জানুয়ারি করা এই মামলায় পুতুল, শেখ হাসিনাসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। ক্ষমতায় পালাবদলের পর ওই মামলায় পুতুলকে প্রথম আসামি করা হয়।
দুদক কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন, দুই মামলার মধ্যে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে’ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এর সদস্যভুক্ত ব্যাংকগুলোর সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) তহবিল থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা গ্রহণের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৪ সালে গড়ে ওঠা সূচনা ফাউন্ডেশন মানসিক ও স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে। এ মামলায় সূচনা ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারপারসন পুতুলের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি এর সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকেও আসামি করা হয়েছে বলে দুদক কর্মকর্তা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আরেক মামলায় পুতুলের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জালিয়াতির’ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের অভিযোগ আনা হয়েছে। পুতুল ও নজরুল মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তারা পরস্পর ‘যোগসাজশে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে’ ব্যাংকগুলোর সিএসআর ফান্ড থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকা দিতে চাপ দেন। এর ফলে ২০১৭ সালের মে মাসে ২০টি ব্যাংক ‘বাধ্য হয়ে’ তাদের সিএসআর খাত থেকে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা সূচনা ফাউন্ডেশনে দেয়।
এই অর্থ কীভাবে এবং কোন খাতে খরচ করা হয়েছে তা জানার জন্য অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সূচনা ফাউন্ডেশনে দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হলেও কোনো রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। দুদকের অভিযানেও প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে এজাহারে বলা হয়েছে।
ভুয়া রেকর্ডপত্রের মাধ্যমে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়ার দাবি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দ-বিধির ১০৯ ধারায় সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেরে এই তহবিল (সিএসআর ফান্ড) অপব্যয় ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরেক মামলায় পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ করে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, তিনি এ পদে নিয়োগ লাভের উদ্দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ২০২৩ সালে জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) পাঠান।
এজাহারে বলা হয়েছে, সিভিতে তিনি তখনকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ’র শিক্ষকতা বা শিক্ষা ম্যানুয়েল রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, অটিজম এবং মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার কথা তুলে ধরেন। দায়িত্ব পালনের এই যোগ্যতা অন্তর্ভুক্ত করায় তার সিভি সমৃদ্ধ হয়, যার ফলে আঞ্চলিক পরিচালক পদে ‘নিয়োগের পথ সুগম’ হয়।
কিন্তু অনুসন্ধানে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে’ পুতুল সিভিতে ‘মিথ্যা ও ভুয়া যোগ্যতা’ অন্তর্ভুক্ত করেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছে দুদক। এ মামলায় পুতুলের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪২০/৪৬৮/৪৭১ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তার আগে অনুসন্ধানের বরাতে দুদক বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মনোনয়নকালে পুতুল কানাডার পাসপোর্টধারী তথা কানাডার নাগরিক ছিলেন। ভারতে সংস্থার আঞ্চলিক দপ্তরে কর্মরত থাকা পুতুলকে সরানোর পদক্ষেপ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল দুদক।
‘অবৈধ সম্পদ’ : আমু, মেয়ে ও ‘শ্যালিকার’ বিরুদ্ধে মামলা
করছে দুদক
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তার মেয়ে ও কথিত এক শ্যালিকার বিরুদ্ধে ‘অবৈধভাবে’ সম্পদ অর্জনের আলাদা মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩৮ কোটি টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এসব মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার মামলা অনুমোদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে দুদক মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আক্তার হোসেন বলেন, মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান আছে। দুদক কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে ২৬ কোটি, তার মেয়ে সুমাইয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ও কথিত শ্যালিকা সৈয়দা হক মেরির বিরুদ্ধে প্রায় ৮ কোটি টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হচ্ছে।
সুমাইয়া ও মেরির বিরুদ্ধে যে দুটি মামলা হচ্ছে সেগুলোতে আমুকেও আসামি করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ৬ নভেম্বর ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার আগে ১৪ আগস্ট আমুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এরপর ২ মার্চ আমু, তার স্ত্রী ও মেয়ের ব্যাংক হিসাবসহ তাদের ৪৪টি হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত।
এসব ব্যাংক হিসাবে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ ৯২ হাজার ৫৭৪ টাকা থাকার তথ্য দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঝালকাঠিতে আমুর বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। পরে তার ওই বাসভবন থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধারের তথ্য দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দুদক কর্মকর্তার তথ্যমতে, আমুর বিরুদ্ধে ২৬ কোটি ২৭ লাখ ৮১ হাজার ৪৬১ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জন ও ১৪টি ব্যাংক হিসাবে ৩১ কোটি ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ৭০৮ টাকা ‘সন্দেহজনক লেনদেনের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। আমু ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে ‘অবৈধভাবে’ এই সম্পদ অর্জন করেছেন তুলে ধরা হয়েছে এজাহারে।
সুমাইয়া হোসেনের বিরুদ্ধে অনুমোদন করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি তার বাবা আমির হোসেন আমুর ‘সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে ৪ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৮১ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া সুমাইয়া হোসেন ১৮টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪২ টাকা ‘সন্দেহজনক লেনদেন করে ওই টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন’।
সৈয়দা হক মেরীর বিরুদ্ধে অনুমোদন করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তার কোনো বৈধ আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও আমির হোসেন আমুর সহায়তায় তিনি সম্পদশালী হয়েছেন। মেরীর বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৭০ টাকা মূল্যের ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জন ও ১৩টি ব্যাংক হিসাবে ৬২ কোটি ৬৮ লাখ ৪১৭ টাকা ‘সন্দেহজনক লেনদেন’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।