alt

জাতীয়

হিমালয়ে বরফ গলা বাড়ছে: ‘ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশ

শাফিউল আল ইমরান : শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

আশঙ্কাজনকহারে হিমালয়ের বরফ গলে যাচ্ছে বলে নতুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, যদি কার্বন নিঃসরণ কমানো না যায় তাহলে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো বরফ গলার কারণে সামনের দিনে মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার হতে যাচ্ছে।

একারণে, বর্ষায় রেকর্ড বন্যার পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গা, ব্রক্ষ্মপুত্র ও তিস্তার মতো নদ-নদীগুলো ব্যাপক পানি সংকটে পড়বে। যা জীববৈচিত্র্য ও খাদ্য উৎপাদনে বড় প্রভাব ফেলবে।

শুক্রবার বিশ্ব হিমবাহ দিবস উপলক্ষে ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত ‘জাতিসংঘের বিশ্ব পানি প্রতিবেদন-২০২৫’ এসব কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক হিমবাহ সংরক্ষণ বর্ষের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো ২১ মার্চ বিশ্ব হিমবাহ দিবস পালন করা হচ্ছে।

২০০০-২০২৩ সালের মধ্যে হাই মাউন্টেন এশিয়ার হিমবাহগুলো মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ৫ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। যার মধ্যে হিমালয় অঞ্চলে সবচেয়ে বড় ক্ষয় লক্ষ্য করা গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, হিমালয়ের বরফ গলতে থাকায় এ অঞ্চলের অনেক নদীর প্রবাহ ব্যাহত হবে, বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে। খরার সময় ব্রহ্মপুত্রের ৬৫ শতাংশ এবং গঙ্গার ৭০ শতাংশ প্রবাহই হিমালয়ের বরফ গলা পানির ওপর নির্ভর করে। এছাড়া পাকিস্তানের সিন্ধুর উজানে বার্ষিক প্রবাহের ৪১ শতাংশ আসে হিমবাহ গলিত পানি থেকে।

বন্যার ঝুঁকি ও পানি সংকট বাড়ার আশঙ্কাও করেছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, গত কয়েক দশকে হিমবাহ গলার ফলে বন্যার ঘটনা বেড়েছে, বিশেষ করে গঙ্গা ও সিন্ধু অববাহিকায়। উচ্চ কার্বন নির্গমনের ফলে ভবিষ্যতে বন্যার প্রকোপ আরও বাড়বে। তীব্র বৃষ্টিপাত ও বরফ গলার সংমিশ্রণে আগামী ৫০ বছরে চরম বন্যার প্রবাহ সিন্ধু অববাহিকায় ৫১ শতাংশ, ব্রহ্মপুত্রে ৮০ শতাংশ এবং গঙ্গায় ১০৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

হিমালয় থেকে বরফ গলা পানির প্রবাহ আগামী কয়েক দশকে সর্বোচ্চ হবে, তারপর এটি কমে যেতে পারে। যা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল এবং বৃহত্তম সেচ ব্যবস্থাকে বন্যা ও খরার ঝুঁকিতে ফেলবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। উত্তর ভারতে মধ্য শতাব্দীর পর নদীর প্রবাহ কমে যাবে, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে, যা জ্বালানি, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে বিপন্ন করবে। ভারতের ৫২ শতাংশ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল।

হাই মাউন্টেন এশিয়া মূলত মেরু অঞ্চলগুলোর বাইরে বিশ্বের বৃহত্তম বরফ অঞ্চল, যা একে ‘তৃতীয় মেরু’ হিসেবে পরিচিত করেছে। হাই মাউন্টেন এশিয়ায় প্রায় ১ লাখ হিমবাহ রয়েছে যা আনুমানিক ৭ হাজার ঘন কিলোমিটার বরফ মজুদ আছে। এর প্রায় অর্ধেক হিমালয় ও কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত।

এশিয়ার দশটি বৃহত্তম নদীর উৎস হিন্দুকুশ হিমালয়ে, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গা। এসব নদী সম্মিলিতভাবে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মানুষের জন্য পানি সরবরাহ করে। শুধুমাত্র মৌসুমি হিমবাহ গলিত জল হাই মাউন্টেন এশিয়া থেকে প্রায় ২২ কোটি মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট, যা পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং কিরগিজস্তানের বার্ষিক পৌরসভা ও শিল্পক্ষেত্রের পানির চাহিদার সমান।

জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, হিমালয় অঞ্চল হিমবাহ-সম্পর্কিত দুর্যোগের জন্য বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। বিশ্বব্যাপী ১ দশমিক ৫ কোটি মানুষ হিমবাহ হ্রদ বিস্ফোরণের বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে, যার মধ্যে ৩০ লাখেরও বেশি ভারতেই বসবাস করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহ গলতে থাকায় হিমবাহ হ্রদের সংখ্যা ও আয়তন বাড়ছে, যা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো না হলে আরও খারাপ হবে। আগামী ২১০০ সালের মধ্যে হাই মাউন্টেন এশিয়ায় হিমবাহ হ্রদের বিস্ফোরণজনিত বিপর্যয়ের ঝুঁকি তিনগুণ হতে পারে।

জাতিসংঘ বিশ্ব জল উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২৫ অনুসারে, পর্বত অঞ্চল বিশ্বব্যাপী বার্ষিক মিঠাপানির ৬০ শতাংশ সরবরাহ করে। এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ পর্বত অঞ্চলে বসবাস করে এবং দুই বিলিয়নেরও বেশি মানুষ পানীয় জল, স্যানিটেশন এবং জীবিকার জন্য পর্বতের পানির ওপর নির্ভরশীল।

পর্বত অঞ্চলগুলো পশুপালন, বনজ সম্পদ, পর্যটন এবং জ্বালানি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী হিমবাহগুলো নজিরবিহীন হারে গলছে, এবং পর্বত জলপ্রবাহ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাবগুলোর প্রথম শিকার হচ্ছে।

ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলে বলেছেন, ‘আমরা যেখানে থাকি না কেন, কোনো না কোনোভাবে পর্বত ও হিমবাহের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো এখন চরম সংকটে পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে এবং সবচেয়ে কার্যকর সমাধান পেতে বহুপাক্ষিক উদ্যোগ প্রয়োজন।’

আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (আইএডিএফ)-এর সভাপতি ও ইউএন ওয়াটার এর চেয়ারম্যান আলভারো লারিও পর্বতবাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিনিয়োগের

প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘পানি পাহাড় থেকে নিচে নামে, কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ওপরের দিকে বাড়ে। পৃথিবীর পর্বতগুলো আমাদের ৬০ শতাংশ মিঠাপানি সরবরাহ করে, তবে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সংরক্ষণকারী সম্প্রদায়গুলোর অনেকেই খাদ্য সংকটে ভুগছে।

‘সংকট সমাধানে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে’, বলেন তিনি।

রাজধানীতে হিযবুত তাহরীরের মিছিল থেকে গ্রেপ্তার ৮

রায়পুরায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুইজন নিহত

ছবি

মরিচের বাম্পার ফলনেও হতাশ ফুলবাড়ীর কৃষকরা

ছবি

বেইজিং ঘোষণা বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান

ছবি

আবেগ দিয়ে জনগণের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়: ফখরুল

ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবকের মৃত্যু

ছবি

আরেক দফা বেড়েছে চালের দাম, মুরগিও বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা

জনগণ সুযোগ দিলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিএনপির কিছু বলার নেই: রিজভী

গুলশানে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল

ম্যাগনেটিক কয়েন : অভিনব প্রতারণা কৌশল

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ ও আ’লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ

‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগ ‘পুনর্বাসন প্রস্তাব’ নিয়ে ফেইসবুকে হাসনাত, আসিফ, নাসীরুদ্দীনের পোস্ট

ছবি

ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা, ৩৬ বাংলাদেশি আটক

ছবি

হুমকির মুখে সুন্দরবনের বনজসম্পদ

দেশে ফিরতে তারেক রহমানের বাধা নেই

৩ মাসের মধ্যে ধর্ষণের বিচার শেষ করার দাবি নাহিদের

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্নমাধ্যমিক শ্রেণীর কার্যক্রম বন্ধ

সুখী দেশের তালিকায় আরও ৫ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

যুগ্ম সচিব পদে ১৯৪ জনের পদোন্নতি

সংস্কার না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরও ফিরতে পারে ‘ফ্যাসিবাদ’: আলী রীয়াজ

‘আত্মসাৎ-প্রতারণা’: পুতুলের বিরুদ্ধে দুদকের আরও দুই মামলা

ছবি

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ‘খুবই ভালো’, চীনের সঙ্গেও ‘অনেক গভীর’ হবে: প্রেস সচিব

ধর্ষণের অভিযোগ, ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি ৪ কিশোরী, গ্রেপ্তার ৩

সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা: এক যুবকের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

তনু হত্যা মামলা: ৯ বছরেও অগ্রগতি নেই

বসুন্ধরার সাব্বির হত্যা: ঘুষের মামলায় তারেক, বাবরসহ সবাই খালাস

ছবি

কেউ কেউ ‘নৈতিক খবরদারির’ দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের মোকাবিলা করতে হবে: দেবপ্রিয়

ঈদে টানা ৯ দিনের ছুটি সরকারি চাকরিজীবীদের

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে জোর জামায়াতের, মতামত ঐকমত্য কমিশনে

সংস্কারের ৪২ প্রস্তাবে আপত্তি এলডিপির, কোনগুলো তা জানাবেন না অলি

ছবি

বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে প্রতারণা করলে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড

ছবি

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নিন্দা, নিরাপত্তা পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারে বাধা আসছে ভেতর-বাইরে থেকে: আলী রীয়াজ

ছবি

বৈসাবি উপলক্ষে ১৩ এপ্রিল তিন পার্বত্য জেলায় ছুটি ঘোষণা

ছবি

সুখী দেশের তালিকায় আরও পিছিয়ে বাংলাদেশ

tab

জাতীয়

হিমালয়ে বরফ গলা বাড়ছে: ‘ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশ

শাফিউল আল ইমরান

শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

আশঙ্কাজনকহারে হিমালয়ের বরফ গলে যাচ্ছে বলে নতুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, যদি কার্বন নিঃসরণ কমানো না যায় তাহলে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো বরফ গলার কারণে সামনের দিনে মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার হতে যাচ্ছে।

একারণে, বর্ষায় রেকর্ড বন্যার পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গা, ব্রক্ষ্মপুত্র ও তিস্তার মতো নদ-নদীগুলো ব্যাপক পানি সংকটে পড়বে। যা জীববৈচিত্র্য ও খাদ্য উৎপাদনে বড় প্রভাব ফেলবে।

শুক্রবার বিশ্ব হিমবাহ দিবস উপলক্ষে ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত ‘জাতিসংঘের বিশ্ব পানি প্রতিবেদন-২০২৫’ এসব কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক হিমবাহ সংরক্ষণ বর্ষের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো ২১ মার্চ বিশ্ব হিমবাহ দিবস পালন করা হচ্ছে।

২০০০-২০২৩ সালের মধ্যে হাই মাউন্টেন এশিয়ার হিমবাহগুলো মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ৫ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। যার মধ্যে হিমালয় অঞ্চলে সবচেয়ে বড় ক্ষয় লক্ষ্য করা গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, হিমালয়ের বরফ গলতে থাকায় এ অঞ্চলের অনেক নদীর প্রবাহ ব্যাহত হবে, বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে। খরার সময় ব্রহ্মপুত্রের ৬৫ শতাংশ এবং গঙ্গার ৭০ শতাংশ প্রবাহই হিমালয়ের বরফ গলা পানির ওপর নির্ভর করে। এছাড়া পাকিস্তানের সিন্ধুর উজানে বার্ষিক প্রবাহের ৪১ শতাংশ আসে হিমবাহ গলিত পানি থেকে।

বন্যার ঝুঁকি ও পানি সংকট বাড়ার আশঙ্কাও করেছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, গত কয়েক দশকে হিমবাহ গলার ফলে বন্যার ঘটনা বেড়েছে, বিশেষ করে গঙ্গা ও সিন্ধু অববাহিকায়। উচ্চ কার্বন নির্গমনের ফলে ভবিষ্যতে বন্যার প্রকোপ আরও বাড়বে। তীব্র বৃষ্টিপাত ও বরফ গলার সংমিশ্রণে আগামী ৫০ বছরে চরম বন্যার প্রবাহ সিন্ধু অববাহিকায় ৫১ শতাংশ, ব্রহ্মপুত্রে ৮০ শতাংশ এবং গঙ্গায় ১০৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

হিমালয় থেকে বরফ গলা পানির প্রবাহ আগামী কয়েক দশকে সর্বোচ্চ হবে, তারপর এটি কমে যেতে পারে। যা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল এবং বৃহত্তম সেচ ব্যবস্থাকে বন্যা ও খরার ঝুঁকিতে ফেলবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। উত্তর ভারতে মধ্য শতাব্দীর পর নদীর প্রবাহ কমে যাবে, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে, যা জ্বালানি, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে বিপন্ন করবে। ভারতের ৫২ শতাংশ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল।

হাই মাউন্টেন এশিয়া মূলত মেরু অঞ্চলগুলোর বাইরে বিশ্বের বৃহত্তম বরফ অঞ্চল, যা একে ‘তৃতীয় মেরু’ হিসেবে পরিচিত করেছে। হাই মাউন্টেন এশিয়ায় প্রায় ১ লাখ হিমবাহ রয়েছে যা আনুমানিক ৭ হাজার ঘন কিলোমিটার বরফ মজুদ আছে। এর প্রায় অর্ধেক হিমালয় ও কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত।

এশিয়ার দশটি বৃহত্তম নদীর উৎস হিন্দুকুশ হিমালয়ে, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গা। এসব নদী সম্মিলিতভাবে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মানুষের জন্য পানি সরবরাহ করে। শুধুমাত্র মৌসুমি হিমবাহ গলিত জল হাই মাউন্টেন এশিয়া থেকে প্রায় ২২ কোটি মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট, যা পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং কিরগিজস্তানের বার্ষিক পৌরসভা ও শিল্পক্ষেত্রের পানির চাহিদার সমান।

জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, হিমালয় অঞ্চল হিমবাহ-সম্পর্কিত দুর্যোগের জন্য বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। বিশ্বব্যাপী ১ দশমিক ৫ কোটি মানুষ হিমবাহ হ্রদ বিস্ফোরণের বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে, যার মধ্যে ৩০ লাখেরও বেশি ভারতেই বসবাস করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহ গলতে থাকায় হিমবাহ হ্রদের সংখ্যা ও আয়তন বাড়ছে, যা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো না হলে আরও খারাপ হবে। আগামী ২১০০ সালের মধ্যে হাই মাউন্টেন এশিয়ায় হিমবাহ হ্রদের বিস্ফোরণজনিত বিপর্যয়ের ঝুঁকি তিনগুণ হতে পারে।

জাতিসংঘ বিশ্ব জল উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২৫ অনুসারে, পর্বত অঞ্চল বিশ্বব্যাপী বার্ষিক মিঠাপানির ৬০ শতাংশ সরবরাহ করে। এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ পর্বত অঞ্চলে বসবাস করে এবং দুই বিলিয়নেরও বেশি মানুষ পানীয় জল, স্যানিটেশন এবং জীবিকার জন্য পর্বতের পানির ওপর নির্ভরশীল।

পর্বত অঞ্চলগুলো পশুপালন, বনজ সম্পদ, পর্যটন এবং জ্বালানি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী হিমবাহগুলো নজিরবিহীন হারে গলছে, এবং পর্বত জলপ্রবাহ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাবগুলোর প্রথম শিকার হচ্ছে।

ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলে বলেছেন, ‘আমরা যেখানে থাকি না কেন, কোনো না কোনোভাবে পর্বত ও হিমবাহের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো এখন চরম সংকটে পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে এবং সবচেয়ে কার্যকর সমাধান পেতে বহুপাক্ষিক উদ্যোগ প্রয়োজন।’

আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (আইএডিএফ)-এর সভাপতি ও ইউএন ওয়াটার এর চেয়ারম্যান আলভারো লারিও পর্বতবাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিনিয়োগের

প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘পানি পাহাড় থেকে নিচে নামে, কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ওপরের দিকে বাড়ে। পৃথিবীর পর্বতগুলো আমাদের ৬০ শতাংশ মিঠাপানি সরবরাহ করে, তবে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সংরক্ষণকারী সম্প্রদায়গুলোর অনেকেই খাদ্য সংকটে ভুগছে।

‘সংকট সমাধানে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে’, বলেন তিনি।

back to top