সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়ে পাঠানো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালার কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি; অভিযোগও করেছে কিছু বিষয়ে। দলটি বলছে, সুপারিশমালা পর্যালোচনায় করে দেখা গেছে, এতে রাজনীতিবিদদের ‘অপাঙ্ক্তেয় করা হয়েছে’। পক্ষান্তরে, অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে ‘দেশ পরিচালনার সুযোগ তৈরি করা হিতকর’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সুপারিমালার কিছু প্রস্তাবে- ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের ‘অযৌক্তিক’ প্রচেষ্টা রয়েছে অভিযোগ করে এই প্রচেষ্টাকে ‘অনভিপ্রেত’ বলছে বিএনপি।
দলটির মতে, এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ হচ্ছে ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার’ শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। বিএনপি মনে করে, নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিয়ে জনগণের কাক্সিক্ষত সংস্কারসমূহ সম্পন্ন করবে এবং নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য সংস্কার সম্পাদন সম্ভব।
শনিবার ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের এই অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জনমনে প্রশ্ন
কোন দলের নাম উল্লেখ না করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেড শিটের অবস্থা ও কমিশনের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায়, যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে যে, সব বিষয় যেন একটি পূর্ব পরিকল্পনার অংশ, যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কিনা, বলা মুশকিল।’
সুপারিশমালার কী কী বিষয়ে আপনাদের প্রশ্ন রয়েছে এবং কোন কোন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য-বিবৃতির সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক হিসেবে অনেক জিনিস বুঝতে পারছেন। তাদের প্রস্তাবগুলো যেটা কমিশনের, তার অনেক মিডিয়াতে চলেই এসেছে। সেখানে দেখবেন যে, ওই রাজনৈতিক দলগুলোর বা ব্যক্তির প্রস্তাব অনেকটাই একই রকম আসছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্পেসিফিক এখন আমি বলতে চাচ্ছি না। আগামীকাল রোববার (আজ) আমাদের যে টিম যাবে (ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা দিতে), সেই টিম কথাবার্তা বলার পরে আপনাদের সঙ্গে তারা কথা বলবেন।’
‘জনগণের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, কৃষ্টি, এবং সংস্কৃতি ও ধর্মবোধ এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েই বিভিন্ন সংস্কার ও সাংবিধানিক সংশোধনী প্রণীত হওয়া বাঞ্ছনীয়’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সুপারিশমালা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে, যা অনভিপ্রেত।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, জনগণের মালিকানার প্রতিফলন হয় নির্বাচিত সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, রাজনীতিবিদরা অপাঙ্ক্তেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করাই শ্রেয়।
অনির্বাচিতদের ক্ষমতায়ন
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সুপারিশমালায় সাংবিধানিক কমিশনসহ (ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল) নতুন নতুন বিভিন্ন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সমস্ত কমিশনের এখতিয়ার, কর্মকা-ের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে যতটা সম্ভব আন্ডারমাইনিং করা এবং ক্ষমতাহীন করাই উদ্দেশ্য। যার ফলে একটি দুর্বল ও প্রায় অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল (এনসিসি) নামে একটা ফ্রেমের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটার গঠন প্রক্রিয়া ও কার্যপরিধি বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে সমস্ত স্তরে স্তরে দেখা যায় অনির্বাচিত বিভিন্ন ব্যক্তি এই সমস্ত কর্মকা- পরিচালনা করবেন এবং সাংবিধানিকভাবে তাদের ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে দেখা যাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আর কোনো গুরুত্ব নেই। প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি রাষ্ট্রের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সম্পন্ন হবে যদি এগুলো গৃহীত হয়।’
*স্প্রেডশিট নিয়ে প্রশ্ন*
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রেরিত স্প্রেডশিটে যে অপশন, পছন্দগুলোর ঘরে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে, তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে, যে বিষয়গুলো প্রস্তবাকারে আসতে পারত, তা প্রস্তাব না রেখে লিডিং কোয়েশ্চন আকারে- হ্যাঁ, না, উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যেমন, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কিনা, হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কিনা। একইভাবে ‘গণভোট’, ‘গণপরিষদ এবং আইন সভা’ হিসাবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কিনা ইত্যাদি।”
তিনি বলেন, “সংবিধানের ‘প্রস্তাবনার’ মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও তা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মতো প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ সংখ্যা প্রায় ১২৩টির মতো। একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মতো সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংস্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘তাই আমরা মনে করছি স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশমালার ওপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।’
*উপদেষ্টাদের কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন*
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ও প্রমাণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়।”
*সংস্কার, নির্বাচিত সরকার*
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংস্কার আগে না নির্বাচন পরে, কিংবা নির্বাচন আগে না সংস্কার পরে এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চার্টার অব রিফর্ম (সংস্কার সনদ) তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে যা বাস্তবায়ন করবে।”
তিনি বলেন, ‘এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূলত করণীয় হচ্ছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করা। নির্বাচিত সরকার জনগণের কাক্সিক্ষত ঐকমত্যের সংস্কারসমূহ সম্পন্ন করবে। কেননা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ এবং ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য সংস্কার সম্পাদন সম্ভব।’
শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়ে পাঠানো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালার কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি; অভিযোগও করেছে কিছু বিষয়ে। দলটি বলছে, সুপারিশমালা পর্যালোচনায় করে দেখা গেছে, এতে রাজনীতিবিদদের ‘অপাঙ্ক্তেয় করা হয়েছে’। পক্ষান্তরে, অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে ‘দেশ পরিচালনার সুযোগ তৈরি করা হিতকর’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সুপারিমালার কিছু প্রস্তাবে- ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের ‘অযৌক্তিক’ প্রচেষ্টা রয়েছে অভিযোগ করে এই প্রচেষ্টাকে ‘অনভিপ্রেত’ বলছে বিএনপি।
দলটির মতে, এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ হচ্ছে ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার’ শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। বিএনপি মনে করে, নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিয়ে জনগণের কাক্সিক্ষত সংস্কারসমূহ সম্পন্ন করবে এবং নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য সংস্কার সম্পাদন সম্ভব।
শনিবার ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের এই অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জনমনে প্রশ্ন
কোন দলের নাম উল্লেখ না করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেড শিটের অবস্থা ও কমিশনের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায়, যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে যে, সব বিষয় যেন একটি পূর্ব পরিকল্পনার অংশ, যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কিনা, বলা মুশকিল।’
সুপারিশমালার কী কী বিষয়ে আপনাদের প্রশ্ন রয়েছে এবং কোন কোন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য-বিবৃতির সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক হিসেবে অনেক জিনিস বুঝতে পারছেন। তাদের প্রস্তাবগুলো যেটা কমিশনের, তার অনেক মিডিয়াতে চলেই এসেছে। সেখানে দেখবেন যে, ওই রাজনৈতিক দলগুলোর বা ব্যক্তির প্রস্তাব অনেকটাই একই রকম আসছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্পেসিফিক এখন আমি বলতে চাচ্ছি না। আগামীকাল রোববার (আজ) আমাদের যে টিম যাবে (ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা দিতে), সেই টিম কথাবার্তা বলার পরে আপনাদের সঙ্গে তারা কথা বলবেন।’
‘জনগণের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, কৃষ্টি, এবং সংস্কৃতি ও ধর্মবোধ এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েই বিভিন্ন সংস্কার ও সাংবিধানিক সংশোধনী প্রণীত হওয়া বাঞ্ছনীয়’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সুপারিশমালা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে, যা অনভিপ্রেত।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, জনগণের মালিকানার প্রতিফলন হয় নির্বাচিত সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, রাজনীতিবিদরা অপাঙ্ক্তেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করাই শ্রেয়।
অনির্বাচিতদের ক্ষমতায়ন
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সুপারিশমালায় সাংবিধানিক কমিশনসহ (ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল) নতুন নতুন বিভিন্ন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সমস্ত কমিশনের এখতিয়ার, কর্মকা-ের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে যতটা সম্ভব আন্ডারমাইনিং করা এবং ক্ষমতাহীন করাই উদ্দেশ্য। যার ফলে একটি দুর্বল ও প্রায় অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল (এনসিসি) নামে একটা ফ্রেমের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটার গঠন প্রক্রিয়া ও কার্যপরিধি বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে সমস্ত স্তরে স্তরে দেখা যায় অনির্বাচিত বিভিন্ন ব্যক্তি এই সমস্ত কর্মকা- পরিচালনা করবেন এবং সাংবিধানিকভাবে তাদের ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে দেখা যাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আর কোনো গুরুত্ব নেই। প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি রাষ্ট্রের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সম্পন্ন হবে যদি এগুলো গৃহীত হয়।’
*স্প্রেডশিট নিয়ে প্রশ্ন*
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রেরিত স্প্রেডশিটে যে অপশন, পছন্দগুলোর ঘরে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে, তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে, যে বিষয়গুলো প্রস্তবাকারে আসতে পারত, তা প্রস্তাব না রেখে লিডিং কোয়েশ্চন আকারে- হ্যাঁ, না, উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যেমন, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কিনা, হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কিনা। একইভাবে ‘গণভোট’, ‘গণপরিষদ এবং আইন সভা’ হিসাবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কিনা ইত্যাদি।”
তিনি বলেন, “সংবিধানের ‘প্রস্তাবনার’ মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও তা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মতো প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ সংখ্যা প্রায় ১২৩টির মতো। একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মতো সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংস্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘তাই আমরা মনে করছি স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশমালার ওপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।’
*উপদেষ্টাদের কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন*
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ও প্রমাণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়।”
*সংস্কার, নির্বাচিত সরকার*
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংস্কার আগে না নির্বাচন পরে, কিংবা নির্বাচন আগে না সংস্কার পরে এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চার্টার অব রিফর্ম (সংস্কার সনদ) তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে যা বাস্তবায়ন করবে।”
তিনি বলেন, ‘এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূলত করণীয় হচ্ছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করা। নির্বাচিত সরকার জনগণের কাক্সিক্ষত ঐকমত্যের সংস্কারসমূহ সম্পন্ন করবে। কেননা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ এবং ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য সংস্কার সম্পাদন সম্ভব।’