স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে আলোকসজ্জা -সোহরাব আলম
চার দিনের সফরে আজ চীন যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ উইনূস। ২৮ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হবে তার। ওই সফরের মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায়।
মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্রসচিব মো,জসীম উদ্দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রায় আট মাসের মাথায় প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনে যাচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে তার চীন যাওয়ার মধ্য দিয়ে একটা বার্তা দিচ্ছে বাংলাদেশ। এই সফরে সাত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্রসচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টার এই সফরের সময়ে বেশ কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ে সহায়তা, গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে সহায়তা। এর মধ্যে কতগুলো ঘোষণা আসতে পারে, তার মধ্যে থাকতে পারে ঋণ ঘোষণা, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসংক্রান্ত ঘোষণা, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়। এই ঘোষণাগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
জসীম উদ্দিন বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছরের পূর্তি এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা একটা তালিকা তৈরি করেছি, যাতে করে যথাযথভাবে উদ্?যাপন করতে পারি। শীর্ষ পর্যায়ে যখন দুই নেতা বসবেন, তারা আলোচনা করবেন। কোনো বড় ঘোষণা এলে আপনারা এই সফরের পরে জানতে পারবেন।’
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে প্রত্যাশা এবং বার্তার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা বহুমাত্রিক। চীন আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। আমাদের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী। চীনের সঙ্গে জনগণের পরিসরে যে সহযোগিতা, তা বাড়ছে। আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে চলেছি। সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রের মধ্যে স্বাস্থ্য অন্যতম।’
গত বছরের জুলাইতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন গিয়েছিলেন। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে দুই সফরের তুলনা করার বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু চীন। সেই বন্ধুত্বকে বাংলাদেশ ধারণ করে। চীনের দিক থেকে একই ধরনের সেন্টিমেন্ট (ভাবাবেগ) আছে। প্রধান উপদেষ্টা তার প্রথম সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিকে একটা বার্তা দেয়া হচ্ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক এজেন্ডাভিত্তিক নয়। শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করবেন। তবে আমাদের ও চীনের
দিক থেকে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনার বিষয়ে আগ্রহ আছে। সেই পানি ব্যবস্থাপনার আওতায় তিস্তার প্রকল্প নিয়ে কথা বলারও একটা সুযোগ আছে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতির বিষয়ে চীনের একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের অবস্থানটা তাদের জানাতে পারি। দুই পক্ষের অবস্থানের ভিত্তিতে আমরা কীভাবে এগিয়ে যেতে পারি, প্রত্যাবাসনের জন্য তা নিয়ে আলোচনা হবে।’
মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আহ তার চীন সফরে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
‘চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আমার বৈঠক হবে। চীনের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সিইওদের সঙ্গেও বৈঠক করবো। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ চায়নিজ সোলার প্যানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লংজি বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের আগ্রহ জানিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করছি। এ ছাড়া প্রযুক্তিগত সহায়তা, মেডিকেল সহায়তা, স্বল্প মূল্যে চিকিৎসাসহ অন্য বিষয়ে আলোচনা হবে। তারা আমাদের দেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করতে চায়। এটা খুব দ্রুতই শুরু হবে। এই সফরের মধ্য দিয়ে আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হবে।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, চীন সফরের মূল ফোকাস হচ্ছে চীনা বিনিয়োগকারী, উৎপাদনকারী কোম্পানি, এনার্জি কোম্পানিসহ দেশটির বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা হবে।
প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার অর্থনৈতিক কূটনীতির মূল কাজ হচ্ছে বাংলাদেশকে পুরো বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন, যাতে বাংলাদেশ যেন এ অঞ্চলের একটি বড় ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হয়। সে জন্য যত ধরনের পলিসি, সংস্কার নেয়া দরকার তা নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সংস্কার সরকার করছে। একইসঙ্গে বেসরকারি খাতে যাতে বিদেশি বিনিয়োগে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য ‘ওয়ান স্টপ সাপোর্ট’ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে আলোকসজ্জা -সোহরাব আলম
মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
চার দিনের সফরে আজ চীন যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ উইনূস। ২৮ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হবে তার। ওই সফরের মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায়।
মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্রসচিব মো,জসীম উদ্দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রায় আট মাসের মাথায় প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনে যাচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে তার চীন যাওয়ার মধ্য দিয়ে একটা বার্তা দিচ্ছে বাংলাদেশ। এই সফরে সাত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্রসচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টার এই সফরের সময়ে বেশ কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ে সহায়তা, গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে সহায়তা। এর মধ্যে কতগুলো ঘোষণা আসতে পারে, তার মধ্যে থাকতে পারে ঋণ ঘোষণা, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসংক্রান্ত ঘোষণা, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়। এই ঘোষণাগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
জসীম উদ্দিন বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছরের পূর্তি এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা একটা তালিকা তৈরি করেছি, যাতে করে যথাযথভাবে উদ্?যাপন করতে পারি। শীর্ষ পর্যায়ে যখন দুই নেতা বসবেন, তারা আলোচনা করবেন। কোনো বড় ঘোষণা এলে আপনারা এই সফরের পরে জানতে পারবেন।’
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে প্রত্যাশা এবং বার্তার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা বহুমাত্রিক। চীন আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। আমাদের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী। চীনের সঙ্গে জনগণের পরিসরে যে সহযোগিতা, তা বাড়ছে। আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে চলেছি। সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রের মধ্যে স্বাস্থ্য অন্যতম।’
গত বছরের জুলাইতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন গিয়েছিলেন। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে দুই সফরের তুলনা করার বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু চীন। সেই বন্ধুত্বকে বাংলাদেশ ধারণ করে। চীনের দিক থেকে একই ধরনের সেন্টিমেন্ট (ভাবাবেগ) আছে। প্রধান উপদেষ্টা তার প্রথম সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিকে একটা বার্তা দেয়া হচ্ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক এজেন্ডাভিত্তিক নয়। শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করবেন। তবে আমাদের ও চীনের
দিক থেকে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনার বিষয়ে আগ্রহ আছে। সেই পানি ব্যবস্থাপনার আওতায় তিস্তার প্রকল্প নিয়ে কথা বলারও একটা সুযোগ আছে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতির বিষয়ে চীনের একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের অবস্থানটা তাদের জানাতে পারি। দুই পক্ষের অবস্থানের ভিত্তিতে আমরা কীভাবে এগিয়ে যেতে পারি, প্রত্যাবাসনের জন্য তা নিয়ে আলোচনা হবে।’
মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আহ তার চীন সফরে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
‘চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আমার বৈঠক হবে। চীনের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সিইওদের সঙ্গেও বৈঠক করবো। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ চায়নিজ সোলার প্যানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লংজি বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের আগ্রহ জানিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করছি। এ ছাড়া প্রযুক্তিগত সহায়তা, মেডিকেল সহায়তা, স্বল্প মূল্যে চিকিৎসাসহ অন্য বিষয়ে আলোচনা হবে। তারা আমাদের দেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করতে চায়। এটা খুব দ্রুতই শুরু হবে। এই সফরের মধ্য দিয়ে আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হবে।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, চীন সফরের মূল ফোকাস হচ্ছে চীনা বিনিয়োগকারী, উৎপাদনকারী কোম্পানি, এনার্জি কোম্পানিসহ দেশটির বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা হবে।
প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার অর্থনৈতিক কূটনীতির মূল কাজ হচ্ছে বাংলাদেশকে পুরো বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন, যাতে বাংলাদেশ যেন এ অঞ্চলের একটি বড় ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হয়। সে জন্য যত ধরনের পলিসি, সংস্কার নেয়া দরকার তা নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সংস্কার সরকার করছে। একইসঙ্গে বেসরকারি খাতে যাতে বিদেশি বিনিয়োগে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য ‘ওয়ান স্টপ সাপোর্ট’ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’