বুধবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধান উপদেষ্টা -পিআইডি
জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানিয়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করেছে সারাদেশের মানুষ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্মমভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা নির্বিচার ও বর্বর হত্যাকাণ্ড চালায়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২৬ মার্চ শুরু হয় স্বাধীনতার লড়াই। এরপর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি নতুন দেশের, নাম তার বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা দিবস ওজাতীয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুলের শ্রদ্ধায় জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। ভোর থেকেই দলে দলে ফুল, ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বেদী। এ সময় অনেককে লাল-সবুজের পোশাক পরে আসতে দেখা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।
এরপর শ্রদ্ধা জানান বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শ্রদ্ধা জানান উপদেষ্টাম-লী ও বিদেশি কূটনীতিকরাও। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঞা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা
রিজওয়ানা হাসান বলেন, জাতীয় স্বার্থে ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা ঐকমত্য পোষণ করবো। কিন্তু একেকজন মানুষের চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। সেসব দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়গুলো কমিয়ে আনতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। একটা সরকারের জন্য গতানুগতিক কিছু চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। তবে এখন একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বিভিন্ন সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য গড়া। সেটা অবশ্যই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এটাকে চ্যালেঞ্জ বলেন আর না বলেন, একটা প্রক্রিয়া তো বটেই। আমাদের জন্য ওটাতে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াকে একটা বড় বিষয় বলে আমি মনে করি। আরেকটা হচ্ছে- নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে করে দেয়া, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা।
এ সময় স্বাধীন ভূখণ্ডে এ দেশের মানুষ আর পরাধীন বোধ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ৭১-এ দেশকে জন্ম দিয়েছেন, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা। কিন্তু বিগত ১৬ বছরে স্বাধীনতার যে কনসেপ্ট সেটাকে নষ্ট করে দিয়ে গেছে। আমরা মনে করি, দেশের প্রত্যেকটা নাগরিক যতক্ষণ না মনে করবে সে স্বাধীন, তার বাক স্বাধীনতা আছে, তার ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ভূখ- স্বাধীন হয়ে কোনো লাভ নেই। আমরা মনে করি, ২৪ সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে। এই স্বাধীনতা সামনের দিনগুলোতেও থাকবে। আর কখনোই একটি স্বাধীন ভূখণ্ডে এ দেশের মানুষ আর পরাধীনতা বোধ করবে না।
সকাল ৮টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপির নেতারা। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফান ইবনে আমান, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে বাংলাদেশে কিছু নেই’ মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, যারা আজকের স্বাধীনতা দিবসকে খাটো করতে চান, একাত্তরের স্বাধীনতায় তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। সুতরাং এই দিনটাকে তারা খাটো করতে চান। আমি বলবো, তারা যেন এখানেই বিরত থাকেন। এই স্বাধীনতা দিবসকে যেন সম্মান জানান এবং সম্মান করেন। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন করে স্বৈরাচারকে তাড়িয়ে স্বাধীনতার নতুন স্বাদ পেয়েছি। অনেকে বলেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা। আসলে আজকের স্বাধীনতা দিবস প্রমাণ করে, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে বাংলাদেশে কিছু নেই।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) নেতারা। এ সময় এনসিপি’র সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, মুখ্য সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন দিলে মেনে নেয়া হবে না মন্তব্য করে এসসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির যে দাবি বিচার ও সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচন। আমরা মনে করি সেই পথে গেলেই জাতির একটি উত্তরণ ঘটবে গণতন্ত্রের পথে। সংস্কার এবং বিচারবিহীন যদি নির্বাচন দেয়া হয় এবং কোনো একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যই নির্বাচন চাপিয়ে দেয়া হয় সংস্কার ছাড়া তাহলে তা অবশ্যই মেনে নেয়া হবে না।
দেশজুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজনে দেশজুড়ে উদযাপিত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।
চট্টগ্রাম : যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বুধবার নগরীর পাহাড়তলীস্থ উত্তর কাট্টলীস্থ ডিসি পার্কের দক্ষিণ পাশে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ ও এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছেন, নগরীর কাট্টলীস্থ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ, রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতুসহ সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সকাল ৯টায় নগরীর এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও কপোত উড়িয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের উদ্বোধন করা হয়। শেষে প্যারেড পরিদর্শন করেন প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন। এ সময় সিএমপি ও জেলা পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, কারারক্ষী, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স, বি.এন.সি.সি, বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যুব রেড ক্রিসেন্ট ও সরকারি শিশু পরিবার কর্তৃক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে স্বাধীনতা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ, রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সাহসিকতার বার্তা দিয়েছে। দেশের ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহুর্ত হিসেবে চিহ্নিত, যা দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দেশের জন্য ত্যাগের প্রেরণা দেয়। এটি দেশের জাতীয় গৌরব ও মুক্তির ইতিহাসকে স্মরণ করার দিন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সব সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা, বীরাঙ্গনা মা-বোন ও ২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদ এবং বিপ্লবে আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করা হাজারও বিপ্লবী বীরদের স্মরণ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, অনেক রক্ত, অশ্রু আর স্বজন হারানোর বেদনায় সিক্ত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দীর্ঘদিনের শোষিত আর শৃঙ্খলিত বাঙ্গালী জাতীর হৃদয়ে অধিকার আদায়ের যে মাটির প্রদীপটি মিটমিট করে জ্বলে উঠেছিল, দীর্ঘ নয় মাসে হাজারো ধারায় স্ফুরিত হয়ে ১৬ ডিসেম্বর তা রূপ নিয়েছিল আলোর মশালে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরাই আগামী দিনের নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের কারিগর। তোমাদের প্রতি অনুরোধ শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা নয় বরং ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে অংশগ্রহণপূর্বক মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে চেষ্টা করবে।
ফরিদপুর : ফরিদপুরে সুর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিনের দিনের শুরু হয়। ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, সকাল ৬টায় শহরের স্বাধীনতা বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিএনপিসহ বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
সকাল ৯টায় স্টেডিয়াম সংলগ্ন গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহরের জসীমউদ্দীন হলে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডায় বিশেষ মোনাজাত, দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
দিনাজপুর : বীরগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দিনাজপুরের বীরগঞ্জে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রথম প্রহরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল গফুর, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ডা. মো. শরিফুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা জিবরিল আহম্মেদ, উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ধলু, পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো. নমিরুল ইসলাম চৌধুরী সেনা, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিকরা।
এরপর শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে পরবর্তী কর্মসূচি শুরু হয়। উপজেলার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ এর সভাপতিত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়।
জামালপুর : সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি জানান, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় সঙ্গীত এর তালে তালে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল। এসময় উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি লিজা রিছিল, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান, সরিষাবাড়ী থানার ওসি চাঁদ মিয়া, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ৯টায় সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজ মাঠে কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে স্বাধীনতা দিবসের সূচনা করা হয়। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের মালা দিয়ে সম্মান জানান।
এসময় বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ভিডিপি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এবং স্কাউট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। সকালে উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। বেলা ১১টায় আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরে দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার রুহুল আমিন বেগ।
বেনাপোল : শার্শায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধিতে গার্ড অব অনার ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শার কাশিপুরে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদের সমাধিতে বিজিবির মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া ও আলোচনা সভা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শওকত মেহেদী সেতু, যশোর-৪৯ বিজিবির সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা, শার্শা থানার ওসি কে এম রবিউল ইসলাম, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেসা, ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মুকুলসহ অনেকে।
গোবিপ্রবিতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
গোবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় গোপালগঞ্জ শহরের শহিদ স্মৃতিস্তম্বে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। পরে সকাল ১০টায় একাডেমিক ভবনের ৫০১ নম্বর কক্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও উদযাপন কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা অনেক কিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারি। ২৪ এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আবারও সেই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুকান্ত বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ সভায় আরও বক্তব্য দেন, মানবিকী অনুষদের ডিন মো. আব্দুর রহমান, প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীব, ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক মো. বদরুল ইসলাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. হাসিবুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আবু সালেহ্ ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান বিশ্বাস।
বুধবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধান উপদেষ্টা -পিআইডি
বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানিয়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করেছে সারাদেশের মানুষ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্মমভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা নির্বিচার ও বর্বর হত্যাকাণ্ড চালায়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২৬ মার্চ শুরু হয় স্বাধীনতার লড়াই। এরপর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি নতুন দেশের, নাম তার বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা দিবস ওজাতীয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুলের শ্রদ্ধায় জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। ভোর থেকেই দলে দলে ফুল, ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বেদী। এ সময় অনেককে লাল-সবুজের পোশাক পরে আসতে দেখা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।
এরপর শ্রদ্ধা জানান বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শ্রদ্ধা জানান উপদেষ্টাম-লী ও বিদেশি কূটনীতিকরাও। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঞা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা
রিজওয়ানা হাসান বলেন, জাতীয় স্বার্থে ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা ঐকমত্য পোষণ করবো। কিন্তু একেকজন মানুষের চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। সেসব দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়গুলো কমিয়ে আনতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। একটা সরকারের জন্য গতানুগতিক কিছু চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। তবে এখন একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বিভিন্ন সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য গড়া। সেটা অবশ্যই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এটাকে চ্যালেঞ্জ বলেন আর না বলেন, একটা প্রক্রিয়া তো বটেই। আমাদের জন্য ওটাতে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াকে একটা বড় বিষয় বলে আমি মনে করি। আরেকটা হচ্ছে- নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে করে দেয়া, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা।
এ সময় স্বাধীন ভূখণ্ডে এ দেশের মানুষ আর পরাধীন বোধ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ৭১-এ দেশকে জন্ম দিয়েছেন, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা। কিন্তু বিগত ১৬ বছরে স্বাধীনতার যে কনসেপ্ট সেটাকে নষ্ট করে দিয়ে গেছে। আমরা মনে করি, দেশের প্রত্যেকটা নাগরিক যতক্ষণ না মনে করবে সে স্বাধীন, তার বাক স্বাধীনতা আছে, তার ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ভূখ- স্বাধীন হয়ে কোনো লাভ নেই। আমরা মনে করি, ২৪ সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে। এই স্বাধীনতা সামনের দিনগুলোতেও থাকবে। আর কখনোই একটি স্বাধীন ভূখণ্ডে এ দেশের মানুষ আর পরাধীনতা বোধ করবে না।
সকাল ৮টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপির নেতারা। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফান ইবনে আমান, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে বাংলাদেশে কিছু নেই’ মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, যারা আজকের স্বাধীনতা দিবসকে খাটো করতে চান, একাত্তরের স্বাধীনতায় তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। সুতরাং এই দিনটাকে তারা খাটো করতে চান। আমি বলবো, তারা যেন এখানেই বিরত থাকেন। এই স্বাধীনতা দিবসকে যেন সম্মান জানান এবং সম্মান করেন। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন করে স্বৈরাচারকে তাড়িয়ে স্বাধীনতার নতুন স্বাদ পেয়েছি। অনেকে বলেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা। আসলে আজকের স্বাধীনতা দিবস প্রমাণ করে, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে বাংলাদেশে কিছু নেই।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) নেতারা। এ সময় এনসিপি’র সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, মুখ্য সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন দিলে মেনে নেয়া হবে না মন্তব্য করে এসসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির যে দাবি বিচার ও সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচন। আমরা মনে করি সেই পথে গেলেই জাতির একটি উত্তরণ ঘটবে গণতন্ত্রের পথে। সংস্কার এবং বিচারবিহীন যদি নির্বাচন দেয়া হয় এবং কোনো একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যই নির্বাচন চাপিয়ে দেয়া হয় সংস্কার ছাড়া তাহলে তা অবশ্যই মেনে নেয়া হবে না।
দেশজুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজনে দেশজুড়ে উদযাপিত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।
চট্টগ্রাম : যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বুধবার নগরীর পাহাড়তলীস্থ উত্তর কাট্টলীস্থ ডিসি পার্কের দক্ষিণ পাশে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ ও এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছেন, নগরীর কাট্টলীস্থ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ, রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতুসহ সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সকাল ৯টায় নগরীর এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও কপোত উড়িয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের উদ্বোধন করা হয়। শেষে প্যারেড পরিদর্শন করেন প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন। এ সময় সিএমপি ও জেলা পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, কারারক্ষী, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স, বি.এন.সি.সি, বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যুব রেড ক্রিসেন্ট ও সরকারি শিশু পরিবার কর্তৃক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে স্বাধীনতা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ, রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সাহসিকতার বার্তা দিয়েছে। দেশের ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহুর্ত হিসেবে চিহ্নিত, যা দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দেশের জন্য ত্যাগের প্রেরণা দেয়। এটি দেশের জাতীয় গৌরব ও মুক্তির ইতিহাসকে স্মরণ করার দিন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সব সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা, বীরাঙ্গনা মা-বোন ও ২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদ এবং বিপ্লবে আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করা হাজারও বিপ্লবী বীরদের স্মরণ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, অনেক রক্ত, অশ্রু আর স্বজন হারানোর বেদনায় সিক্ত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দীর্ঘদিনের শোষিত আর শৃঙ্খলিত বাঙ্গালী জাতীর হৃদয়ে অধিকার আদায়ের যে মাটির প্রদীপটি মিটমিট করে জ্বলে উঠেছিল, দীর্ঘ নয় মাসে হাজারো ধারায় স্ফুরিত হয়ে ১৬ ডিসেম্বর তা রূপ নিয়েছিল আলোর মশালে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরাই আগামী দিনের নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের কারিগর। তোমাদের প্রতি অনুরোধ শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা নয় বরং ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে অংশগ্রহণপূর্বক মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে চেষ্টা করবে।
ফরিদপুর : ফরিদপুরে সুর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিনের দিনের শুরু হয়। ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, সকাল ৬টায় শহরের স্বাধীনতা বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিএনপিসহ বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
সকাল ৯টায় স্টেডিয়াম সংলগ্ন গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহরের জসীমউদ্দীন হলে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডায় বিশেষ মোনাজাত, দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
দিনাজপুর : বীরগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দিনাজপুরের বীরগঞ্জে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রথম প্রহরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল গফুর, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ডা. মো. শরিফুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা জিবরিল আহম্মেদ, উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ধলু, পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো. নমিরুল ইসলাম চৌধুরী সেনা, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিকরা।
এরপর শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে পরবর্তী কর্মসূচি শুরু হয়। উপজেলার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ এর সভাপতিত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়।
জামালপুর : সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি জানান, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় সঙ্গীত এর তালে তালে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল। এসময় উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি লিজা রিছিল, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান, সরিষাবাড়ী থানার ওসি চাঁদ মিয়া, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ৯টায় সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজ মাঠে কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে স্বাধীনতা দিবসের সূচনা করা হয়। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের মালা দিয়ে সম্মান জানান।
এসময় বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ভিডিপি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এবং স্কাউট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। সকালে উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। বেলা ১১টায় আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরে দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার রুহুল আমিন বেগ।
বেনাপোল : শার্শায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধিতে গার্ড অব অনার ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শার কাশিপুরে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদের সমাধিতে বিজিবির মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া ও আলোচনা সভা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শওকত মেহেদী সেতু, যশোর-৪৯ বিজিবির সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা, শার্শা থানার ওসি কে এম রবিউল ইসলাম, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেসা, ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মুকুলসহ অনেকে।
গোবিপ্রবিতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
গোবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় গোপালগঞ্জ শহরের শহিদ স্মৃতিস্তম্বে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। পরে সকাল ১০টায় একাডেমিক ভবনের ৫০১ নম্বর কক্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও উদযাপন কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা অনেক কিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারি। ২৪ এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আবারও সেই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুকান্ত বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ সভায় আরও বক্তব্য দেন, মানবিকী অনুষদের ডিন মো. আব্দুর রহমান, প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীব, ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক মো. বদরুল ইসলাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. হাসিবুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আবু সালেহ্ ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান বিশ্বাস।