জামদানি পল্লীর একটি কারখানায় জামদানি বুনতে ব্যস্ত কারিগররা -সংবাদ
ঈদের মৌসুমে প্রায় ক্রেতাশূন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত দেশের একমাত্র জামদানি শিল্পনগরী। ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। ঈদ ও পহেলা বৈশাখের মতো বড় দু’টি উৎসব সামনে রেখেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। তবে তাঁতঘরগুলোতে দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। বছরের অন্য সময়গুলোর মতোই দিনরাত জামদানি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে অবস্থিত জামদানি শিল্পনগরী ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, জামদানি পল্লীর বিক্রয়কেন্দ্রগুলো প্রায় ফাঁকা। দুপুর থেকে বিকেলের যে সময়টিতে বেচাকেনা বেশি হওয়ার কথা সেই সময় নেই ক্রেতা আনাগোনা। ফলে গল্প করে অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। কিছু কিছু ব্রিকয়কেন্দ্র বন্ধও দেখা যায়।
জামদানি পল্লীর ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম রবিন সংবাদকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে জামদানি বিক্রি খুবই মন্দা। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ব্যবসা খুবই কম। অনলাইনেও ক্রেতা নেই। ঈদে অন্তত ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার পোশাক বিক্রি করি। কিন্তু এ বছর তার চার ভাগের এক ভাগও বিক্রি হয়নি।
জামদানি বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ঢাকাই মসলিনের হাত ধরে এ অঞ্চলে জামদানির আগমন। জামদানি শিল্পকে এগিয়ে নিতে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ২০ একর জমির ওপর এ শিল্পনগরের কার্যক্রম শুরু হয়। যদিও উদ্যোগ ছিল নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই। পুরো শিল্পনগরীতে ৪০৭টি প্লট আছে। প্রতি প্লটে অন্তত চারটা করে তাঁত আছে। এখানে প্রায় ১ হাজার ৬০০ তাঁতি নিয়মিত জামদানি শাড়ি তৈরি করেন।
বেলা তিনটার দিকে একটি দোকানে বসে গল্প করতে দেখা যায় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে। তারা জানান, ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন। তারা জানান, সুতার কাউন্ট অনুযায়ী জামদানির মান ও দাম নির্ধারিত হয়। কাউন্ট যত বেশি সুতা তত চিকন এবং সেই সুতার তৈরি শাড়ির দামও তত বেশি। শাড়ির ওপর নকশাও দামের তারতম্য নির্ধারণ করে। এই পল্লীতে ৩০ থেকে ১০০ কাউন্টের জামদানি তৈরি হয়। জামদানি শাড়ি ছাড়াও থ্রি-পিস এবং পুরুষদের পাঞ্জাবিও বিক্রি হয় এখানে।
সাফওয়ান জামদানি উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক মো. শাহীন সংবাদকে বলেন, ‘রমজান মাসের আগেও ভালো বিক্রি হয়েছে। কিন্তু কোনো কারণে এই রমজান মাসে বিক্রি একদমই কম। এ বছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখে অন্তত ২৫ লাখ টাকার ব্যবসার আশা করেছিলাম কিন্তু এ পর্যন্ত অর্ধেকও হয়নি। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে মানুষের হাতে টাকা কম। এই কারণে হয়তো ক্রেতা কম। অবস্থা যা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হয় না আগামী দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে। আবার শেষ সময়ে বাড়তেও পারে।’
তবে জামদানি তৈরিতে ব্যস্ততার কথা জানালেন কারিগররা। পল্লীর ২ নম্বর গলিতে অবস্থিত একটি তাঁতঘরে ১৩টি তাঁতে কাজ
করছিলেন ২৬ জন কারিগর। নিখুঁত হাতে লাল শাড়িতে সোনালী সুতায় পানশী নকশা তুলছিলেন মো. শহীদুল ইসলাম (২৬)। তিনি বলেন, ‘অন্য সময়ের মতো রমজান মাসেও আমাদের কাজের একই রকম চাপ থাকে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আমরা কাজ করি।
শহীদুল গত ১২ দিন যাবৎ ৮০ কাউন্টের সুতায় শাড়ি বুনছেন। যা শেষ করতে তার আরও তিনদিন লাগবে। তৈরি শেষে এ শাড়ির বাজারমূল্য দাড়াবে ৪০থেকে ৫০ হাজার টাকা।
আরেক জামদানি কারিগর নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাজ ভালো চলছে, ওয়ার্কশপে অর্ডারও আছে অনেক। আমাদের কাজের সঙ্গে উৎসবের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের কাজ সব সময়ই এমনভাবে চলতে থাকে। তবে ঈদে বিক্রি ভালো হলে বোনাস ঠিক মতো পাওয়া যায়।’
জামদানি বিক্রি কমের কারণে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জামদানি শাড়ির চাহিদা মূলত উচ্চ মধ্যবিত্ত থেকে বিত্তশালী শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বেশি। তারা শুধু ঈদে বা কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে নয়, সারাবছরই জামদানি কেনে। কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ওই শ্রেণীর মধ্যে জামদানির চাহিদা কম।’
জামদানি পল্লীর একটি কারখানায় জামদানি বুনতে ব্যস্ত কারিগররা -সংবাদ
বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
ঈদের মৌসুমে প্রায় ক্রেতাশূন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত দেশের একমাত্র জামদানি শিল্পনগরী। ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। ঈদ ও পহেলা বৈশাখের মতো বড় দু’টি উৎসব সামনে রেখেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। তবে তাঁতঘরগুলোতে দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। বছরের অন্য সময়গুলোর মতোই দিনরাত জামদানি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে অবস্থিত জামদানি শিল্পনগরী ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, জামদানি পল্লীর বিক্রয়কেন্দ্রগুলো প্রায় ফাঁকা। দুপুর থেকে বিকেলের যে সময়টিতে বেচাকেনা বেশি হওয়ার কথা সেই সময় নেই ক্রেতা আনাগোনা। ফলে গল্প করে অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। কিছু কিছু ব্রিকয়কেন্দ্র বন্ধও দেখা যায়।
জামদানি পল্লীর ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম রবিন সংবাদকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে জামদানি বিক্রি খুবই মন্দা। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ব্যবসা খুবই কম। অনলাইনেও ক্রেতা নেই। ঈদে অন্তত ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার পোশাক বিক্রি করি। কিন্তু এ বছর তার চার ভাগের এক ভাগও বিক্রি হয়নি।
জামদানি বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ঢাকাই মসলিনের হাত ধরে এ অঞ্চলে জামদানির আগমন। জামদানি শিল্পকে এগিয়ে নিতে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ২০ একর জমির ওপর এ শিল্পনগরের কার্যক্রম শুরু হয়। যদিও উদ্যোগ ছিল নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই। পুরো শিল্পনগরীতে ৪০৭টি প্লট আছে। প্রতি প্লটে অন্তত চারটা করে তাঁত আছে। এখানে প্রায় ১ হাজার ৬০০ তাঁতি নিয়মিত জামদানি শাড়ি তৈরি করেন।
বেলা তিনটার দিকে একটি দোকানে বসে গল্প করতে দেখা যায় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে। তারা জানান, ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন। তারা জানান, সুতার কাউন্ট অনুযায়ী জামদানির মান ও দাম নির্ধারিত হয়। কাউন্ট যত বেশি সুতা তত চিকন এবং সেই সুতার তৈরি শাড়ির দামও তত বেশি। শাড়ির ওপর নকশাও দামের তারতম্য নির্ধারণ করে। এই পল্লীতে ৩০ থেকে ১০০ কাউন্টের জামদানি তৈরি হয়। জামদানি শাড়ি ছাড়াও থ্রি-পিস এবং পুরুষদের পাঞ্জাবিও বিক্রি হয় এখানে।
সাফওয়ান জামদানি উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক মো. শাহীন সংবাদকে বলেন, ‘রমজান মাসের আগেও ভালো বিক্রি হয়েছে। কিন্তু কোনো কারণে এই রমজান মাসে বিক্রি একদমই কম। এ বছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখে অন্তত ২৫ লাখ টাকার ব্যবসার আশা করেছিলাম কিন্তু এ পর্যন্ত অর্ধেকও হয়নি। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে মানুষের হাতে টাকা কম। এই কারণে হয়তো ক্রেতা কম। অবস্থা যা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হয় না আগামী দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে। আবার শেষ সময়ে বাড়তেও পারে।’
তবে জামদানি তৈরিতে ব্যস্ততার কথা জানালেন কারিগররা। পল্লীর ২ নম্বর গলিতে অবস্থিত একটি তাঁতঘরে ১৩টি তাঁতে কাজ
করছিলেন ২৬ জন কারিগর। নিখুঁত হাতে লাল শাড়িতে সোনালী সুতায় পানশী নকশা তুলছিলেন মো. শহীদুল ইসলাম (২৬)। তিনি বলেন, ‘অন্য সময়ের মতো রমজান মাসেও আমাদের কাজের একই রকম চাপ থাকে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আমরা কাজ করি।
শহীদুল গত ১২ দিন যাবৎ ৮০ কাউন্টের সুতায় শাড়ি বুনছেন। যা শেষ করতে তার আরও তিনদিন লাগবে। তৈরি শেষে এ শাড়ির বাজারমূল্য দাড়াবে ৪০থেকে ৫০ হাজার টাকা।
আরেক জামদানি কারিগর নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাজ ভালো চলছে, ওয়ার্কশপে অর্ডারও আছে অনেক। আমাদের কাজের সঙ্গে উৎসবের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের কাজ সব সময়ই এমনভাবে চলতে থাকে। তবে ঈদে বিক্রি ভালো হলে বোনাস ঠিক মতো পাওয়া যায়।’
জামদানি বিক্রি কমের কারণে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জামদানি শাড়ির চাহিদা মূলত উচ্চ মধ্যবিত্ত থেকে বিত্তশালী শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বেশি। তারা শুধু ঈদে বা কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে নয়, সারাবছরই জামদানি কেনে। কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ওই শ্রেণীর মধ্যে জামদানির চাহিদা কম।’