ঈদে ঘরমুখো মানুষ -সোহরাব আলম
দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। রেলস্টেশন, বাস ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে।
শুরু হয়েছে টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি। তার আগেই শুক্রবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং বাস টার্মিনালগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সব স্থানেই যাত্রীর চাপ থাকলেও ভোগান্তি নেই। নির্ধারিত সময়েই ট্রেন ছেড়ে গন্তব্যে যাচ্ছে ফলে ঈদে ট্রেনে ভ্রমণে কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না। ট্রেনের সূচি ঠিক থাকায় সবাই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন।
রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আনিসুল হক। পেশায় সরকারি চাকরিজীবী। হাফবেলা অফিস করে দুপুর ১টায় এসেছেন রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে তার ট্রেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে অপেক্ষা করছেন স্টেশনের লাউঞ্জে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ‘ঈদযাত্রায় (শুক্রবার) যাত্রীদের ভিড় বেশি ছিল। স্টেশনের শুরু থেকে ট্রেনের গন্তব্য পর্যন্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। টিকেট যাচাইয়ের জন্য ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে।’
কমলাপুর স্টেশনে তিন স্তরের নিরাপত্তা দিচ্ছে রেলওয়ে পুলিশ। স্টেশনের প্রবেশপথে দেখা গেছে পোশাকধারী পুলিশ, ডিবি, এপিবিএনের সদস্যদের। রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ‘সার্বক্ষণিক সিসিটিভি মনিটরিং করা হচ্ছে। একই সেবা ঢাকা বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর রেলস্টেশনেও দেওয়া হচ্ছে।’
সকালে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন জানান, ‘যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ উপহার দিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে বদ্ধপরিকর। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সবচেয়ে বেশি ঘরমুখো মানুষ ট্রেনযোগে ঈদযাত্রা করেন। এ কারণেই বাড়তি নজর রয়েছে কমলাপুরে।’ এছাড়া তিন স্তরের টিকেট চেকার বসানো এবং বিনা টিকেটে কাউকে স্টেশনে প্রবেশের অনুমতি রেল কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে না বলেও তিনি জানান।
ঈদযাত্রায় আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার মিলে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফিরতি টিকেট বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন ঢাকামুখী ৩০ হাজার ৪৯১টি টিকেট বিক্রি করছে। সকাল থেকে সব ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। তবে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিলম্বে কমলাপুর আসায় ১ ঘণ্টা ১৫মিনিট দেরিতে ছেড়েছে।’ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘ঈদযাত্রা
নির্বিঘ্ন করতে ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি ৫ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া লোকাল, কমিউটার ও মেইল ট্রেন স্বাভাবিকভাবে চলছে। পাশাপাশি ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকাগামী ৯টি ট্রেনের বিমানবন্দর স্টেশনের যাত্রাবিরতি বাতিল করা হয়েছে। ঢাকামুখী ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ঢাকামুখী এবং ঢাকা স্টেশন থেকে জয়দেবপুরমুখী ট্রেনে টিকেট ইস্যু বন্ধ রাখা হয়েছে।’
ফাহমিদা তাসনিম কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছেন নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য। তিনি বলেন, ‘এবারে স্টেশনের ব্যবস্থাপনা খুব ভালো। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছেড়ে যাবে।’
রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শুক্রবার সকালে দেখা যায় বাস কাউন্টারগুলোতে অপেক্ষা করছেন শত শত যাত্রী। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মহাসড়কে যানজট না থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়েছে সব বাস।
উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয় পরিবহন আলহামরার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) দেলোয়ার হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘গত ২৩ বছেরের চাকরির জীবনে এমন স্বাচ্ছন্দ্যের যাতায়াত কখনো দেখিনি। রাস্তায় এখনও কোনো চাপ লক্ষ্য করা যায়নি। কোনো যানজট নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের ঈদে ছুটি বেশি। এজন্য যাত্রীরা ধাপে ধাপে বাড়ি ফিরছেন। ফলে টার্মিনালে চাপ পড়েনি।’
রংপুরগামী বাসের লোকনাথ বলেন, ‘অনলাইনে টিকেট কেটে রাখায় যাত্রীরা এবার কম ঝামেলা পোহাচ্ছেন। আমি আগেই অনলাইনে টিকেট কেটেছি, পছন্দমতো সিটও পেয়েছি। বাসের জন্যও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।’
এদিকে পদ্মা সেতু হবার পর জৌলুস হারিয়েছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। তবে শুক্রবার দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় যাতায়াতে নৌপথে যাত্রী বেড়েছে।
ঈদযাত্রায় ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের লঞ্চের আগাম টিকেট বিক্রি ও কেবিন বুকিং শুরু হয়েছে। ২৫ মার্চ থেকে এসব রুটে লঞ্চের বিশেষ ট্রিপ চলছে।
ঈদে ঘরমুখো মানুষ -সোহরাব আলম
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। রেলস্টেশন, বাস ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে।
শুরু হয়েছে টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি। তার আগেই শুক্রবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং বাস টার্মিনালগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সব স্থানেই যাত্রীর চাপ থাকলেও ভোগান্তি নেই। নির্ধারিত সময়েই ট্রেন ছেড়ে গন্তব্যে যাচ্ছে ফলে ঈদে ট্রেনে ভ্রমণে কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না। ট্রেনের সূচি ঠিক থাকায় সবাই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন।
রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আনিসুল হক। পেশায় সরকারি চাকরিজীবী। হাফবেলা অফিস করে দুপুর ১টায় এসেছেন রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে তার ট্রেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে অপেক্ষা করছেন স্টেশনের লাউঞ্জে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ‘ঈদযাত্রায় (শুক্রবার) যাত্রীদের ভিড় বেশি ছিল। স্টেশনের শুরু থেকে ট্রেনের গন্তব্য পর্যন্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। টিকেট যাচাইয়ের জন্য ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে।’
কমলাপুর স্টেশনে তিন স্তরের নিরাপত্তা দিচ্ছে রেলওয়ে পুলিশ। স্টেশনের প্রবেশপথে দেখা গেছে পোশাকধারী পুলিশ, ডিবি, এপিবিএনের সদস্যদের। রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ‘সার্বক্ষণিক সিসিটিভি মনিটরিং করা হচ্ছে। একই সেবা ঢাকা বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর রেলস্টেশনেও দেওয়া হচ্ছে।’
সকালে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন জানান, ‘যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ উপহার দিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে বদ্ধপরিকর। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সবচেয়ে বেশি ঘরমুখো মানুষ ট্রেনযোগে ঈদযাত্রা করেন। এ কারণেই বাড়তি নজর রয়েছে কমলাপুরে।’ এছাড়া তিন স্তরের টিকেট চেকার বসানো এবং বিনা টিকেটে কাউকে স্টেশনে প্রবেশের অনুমতি রেল কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে না বলেও তিনি জানান।
ঈদযাত্রায় আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার মিলে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফিরতি টিকেট বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন ঢাকামুখী ৩০ হাজার ৪৯১টি টিকেট বিক্রি করছে। সকাল থেকে সব ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। তবে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিলম্বে কমলাপুর আসায় ১ ঘণ্টা ১৫মিনিট দেরিতে ছেড়েছে।’ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘ঈদযাত্রা
নির্বিঘ্ন করতে ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি ৫ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া লোকাল, কমিউটার ও মেইল ট্রেন স্বাভাবিকভাবে চলছে। পাশাপাশি ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকাগামী ৯টি ট্রেনের বিমানবন্দর স্টেশনের যাত্রাবিরতি বাতিল করা হয়েছে। ঢাকামুখী ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ঢাকামুখী এবং ঢাকা স্টেশন থেকে জয়দেবপুরমুখী ট্রেনে টিকেট ইস্যু বন্ধ রাখা হয়েছে।’
ফাহমিদা তাসনিম কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছেন নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য। তিনি বলেন, ‘এবারে স্টেশনের ব্যবস্থাপনা খুব ভালো। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছেড়ে যাবে।’
রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শুক্রবার সকালে দেখা যায় বাস কাউন্টারগুলোতে অপেক্ষা করছেন শত শত যাত্রী। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মহাসড়কে যানজট না থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়েছে সব বাস।
উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয় পরিবহন আলহামরার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) দেলোয়ার হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘গত ২৩ বছেরের চাকরির জীবনে এমন স্বাচ্ছন্দ্যের যাতায়াত কখনো দেখিনি। রাস্তায় এখনও কোনো চাপ লক্ষ্য করা যায়নি। কোনো যানজট নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের ঈদে ছুটি বেশি। এজন্য যাত্রীরা ধাপে ধাপে বাড়ি ফিরছেন। ফলে টার্মিনালে চাপ পড়েনি।’
রংপুরগামী বাসের লোকনাথ বলেন, ‘অনলাইনে টিকেট কেটে রাখায় যাত্রীরা এবার কম ঝামেলা পোহাচ্ছেন। আমি আগেই অনলাইনে টিকেট কেটেছি, পছন্দমতো সিটও পেয়েছি। বাসের জন্যও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।’
এদিকে পদ্মা সেতু হবার পর জৌলুস হারিয়েছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। তবে শুক্রবার দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় যাতায়াতে নৌপথে যাত্রী বেড়েছে।
ঈদযাত্রায় ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের লঞ্চের আগাম টিকেট বিক্রি ও কেবিন বুকিং শুরু হয়েছে। ২৫ মার্চ থেকে এসব রুটে লঞ্চের বিশেষ ট্রিপ চলছে।