সম্প্রতি বাংলাদেশের পণ্যে নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই শুল্কের প্রভাবে দেশের রপ্তানি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে জরুরি বৈঠকে বসছে সরকার। আগামীকাল (রোববার) অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র সংবাদকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে যে শুল্কারোপ করেছে সরকার তা পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ঈদের ছুটি থাকায় গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। ঈদের ছুটি শেষে আগামীকাল থেকে অফিস শুরু হবে। অফিস শুরুর দিনেই এই শুল্ক নিয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্রটি জানিয়েছে, অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে যে শুল্ক আরোপ করেছে তা উদ্বেগের বিষয়। এ কারণে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। ঈদের ছুটি শেষে রোববার অফিস খুলবে, এ দিনই এই জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। নতুন শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশ কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে পারে বৈঠকে পর্যালোচনা করা হতে পারে।

এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে। আমদানির তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বেশি। অবশ্য রপ্তানি তৈরি পোশাকের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, যার মধ্যে বেশির ভাগ মৌলিক আইটেম। অন্যদিকে, বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি লোহা, ইস্পাত, খনিজ জ্বালানি, তুলা, তেলবীজ ও নিউক্লিয়ার রেক্টরসহ পাঁচটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ১০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার এবং দেশ থেকে আমদানি ছিল ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬০১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের লোহার ইস্পাত আমদানি করেছে, তারপরে খনিজ জ্বালানি ৫৯৫ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, তুলা ৩৬১ মিলিয়ন ডলার, তেলবীজ ৩৪১ মিলিয়ন ডলার ও নিউক্লিয়ার রেক্টর আমদানি করেছে ১১১ মিলিয়ন ডলারের।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেশির ভাগ আসে তৈরি পোশাক থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের ৭ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। বাকিটা এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিভিন্ন কৃষিপণ্য থেকে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ছিল ৯৭০১ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, আমদানি ২৩৪৪ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি ১০৪১৭ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২৮২৫ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ৬৯৭৪ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২২৬৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৮৩২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২১২৬ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৬৮৭৬ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭৭৩ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৯৮৩ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭০৪ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।