চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ঋণের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলছেন, শর্ত বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ঋণ পেতে সমস্যা হবে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টা সহজ হবে না। কারণ তারা রাজস্ব আদায় বাড়াতে জোর তাগিদ দিয়েছে যেটা বাংলাদেশের পক্ষে করা কঠিন। তাই চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েই যাবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঢাকা সফররত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রবিবার বৈঠক ছিল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের। বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন। এসময় তিনি বলেন, ‘তারা রিভিউ করে দুই কিস্তি একসঙ্গে দেবে। ট্যাক্স জিডিপি রেসিও কীভাবে বাড়াব, ট্যাক্স কালেকশান কীভাবে করবো, এসব আমরা জানাব। আইএমএফের গুরুত্বের জায়গাটা হলো রেভিনিউ জেনারেশন। এছাড়া বাজেটের আকার কেমন হবে, বাজেটে ঘাটতি কেমন হবে, এসব নিয়েও কথা হচ্ছে। আমরা ইতিবাচক কিছু আশা করছি।’
সঙ্কটে পড়ে ২০২২ সালে আইএমএফের দ্বারস্ত হয় বাংলাদেশ। অনেক আলোচনা শেষে পরের বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। ঋণের সঙ্গে আর্থিক খাতের সংস্কার ও অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের জন্য বেশি কিছু পরামর্শ মানার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। ওই সব শর্ত প্রতিপালনের বিষয়টি পর্যালোচনা সাপেক্ষে ধাপে ধাপে আসছে ঋণের কিস্তিগুলো। ইতোমধ্যে ঋণের তিনটি কিস্তিতে প্রায় ২২১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
তৃতীয় পর্যালোচনা শেষে গত ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় দেয়ার কথা ছিল সংস্থাটির। তবে সেই সভা না হওয়ায় চতুর্থ কিস্তির ঋণ অনুমোদন বিলম্বিত হচ্ছে। ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে দেয়া শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আবার ঢাকায় এসেছে আইএমএফের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল। আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে আইএমএফ দলের দফায় দফায় বৈঠক হবে।
কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি পেতে শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সামনের কিস্তিগুলো ছাড় করা সহজ হবে না।
রবিবার কথা হয় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আইএমএফ রেভিনিউ এর ব্যাপারে সিরিয়াস। ওরা চাচ্ছে, আগামী বছরে সাতান্ন হাজার কোটি টাকা রেভিনিউ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়া হোক। সাতান্ন হাজার কোটি টাকা এক বছরে বৃদ্ধি করা কি চাট্টিখানি কথা বাংলাদেশে? প্রায় পনেরো পার্সেন্টের মতো প্রবৃদ্ধি লাগবে। আগামী বছরে যেখানে একটা অস্থিতিশীল বছর, নির্বাচন আসতেছে, সামনে কত রকমের আন্দোলন হবে, অর্থনীতি সচল রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সেখানে রাজস্ব বৃদ্ধি তো পরের কথা।’
বিষয়টা কেনো কঠিন হবে সেটা ব্যাখা করে তিনি বলেন, ‘এ বছর বারো হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল আইএমএফের তাগিদে। তারপর ওষুধের ওপরে, ফলের ওপরে, বিস্কিটের ওপরে ভ্যাট বাড়ানো হলো। আমরা সবাই চিল্লাচিল্লি করলাম। তারপর সরকার উঠিয়ে নিলো। তাহলে সরকার আবার যখন ভ্যাট বাড়াতে যাবে তখন আমার জনগণ চিল্লাচিল্লি শুরু করবে। তখন সেটা সরকার সামাল দিবে কিভাবে?’
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি পাওয়ার বিষয়ে সরকার কতটা আশাবাদী? এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী মে-জুনের দিকে ওদের মিটিং হবে। এবারের রিভিউয়ের ওপরেই তাদের সুপারিশ থাকবে। খেলাপি ঋণ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোন রেজুলেশন বা একটি আইন হচ্ছে, সেটা নিয়ে আলাপ হবে। এক্সচেঞ্জ রেট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আলাপ হবে। এনবিআর ট্যাক্স জিডিপি রেসিও কীভাবে বাড়াবে, সেটা নিয়ে আলাপ হবে।’
রাজস্ব খাতে কি করতে হবে, ওরা কি চাই? এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের জিডিপি নেপালের চেয়ে অনেক বড়, ওরা বলে নেপালের থেকে তোমাদের অনেক কম। ওদের (নেপাল) ১২-১৩ শতাংশ। ভারতে প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ। ওরা বলছেন তোমাদের এটা (ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কম) হওয়ার কারণ হলো নেট (আওতা) কম। লাখো লাখো লোক আছে, যারা জিরো ট্যাক্সে রিটার্ন দেয়, তাদের আয় আছে কিন্তু তারা রিটার্ন দেয় না।’
ভ্যাট ‘সিঙ্গেল’ রেটে নামিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করবো, তবে আমরা একবারে সিঙ্গেল রেটে পৌঁছাতে পারবো না।’
রোববার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫
চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ঋণের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলছেন, শর্ত বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ঋণ পেতে সমস্যা হবে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টা সহজ হবে না। কারণ তারা রাজস্ব আদায় বাড়াতে জোর তাগিদ দিয়েছে যেটা বাংলাদেশের পক্ষে করা কঠিন। তাই চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েই যাবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঢাকা সফররত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রবিবার বৈঠক ছিল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের। বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন। এসময় তিনি বলেন, ‘তারা রিভিউ করে দুই কিস্তি একসঙ্গে দেবে। ট্যাক্স জিডিপি রেসিও কীভাবে বাড়াব, ট্যাক্স কালেকশান কীভাবে করবো, এসব আমরা জানাব। আইএমএফের গুরুত্বের জায়গাটা হলো রেভিনিউ জেনারেশন। এছাড়া বাজেটের আকার কেমন হবে, বাজেটে ঘাটতি কেমন হবে, এসব নিয়েও কথা হচ্ছে। আমরা ইতিবাচক কিছু আশা করছি।’
সঙ্কটে পড়ে ২০২২ সালে আইএমএফের দ্বারস্ত হয় বাংলাদেশ। অনেক আলোচনা শেষে পরের বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। ঋণের সঙ্গে আর্থিক খাতের সংস্কার ও অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের জন্য বেশি কিছু পরামর্শ মানার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। ওই সব শর্ত প্রতিপালনের বিষয়টি পর্যালোচনা সাপেক্ষে ধাপে ধাপে আসছে ঋণের কিস্তিগুলো। ইতোমধ্যে ঋণের তিনটি কিস্তিতে প্রায় ২২১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
তৃতীয় পর্যালোচনা শেষে গত ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় দেয়ার কথা ছিল সংস্থাটির। তবে সেই সভা না হওয়ায় চতুর্থ কিস্তির ঋণ অনুমোদন বিলম্বিত হচ্ছে। ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে দেয়া শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আবার ঢাকায় এসেছে আইএমএফের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল। আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে আইএমএফ দলের দফায় দফায় বৈঠক হবে।
কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি পেতে শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সামনের কিস্তিগুলো ছাড় করা সহজ হবে না।
রবিবার কথা হয় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আইএমএফ রেভিনিউ এর ব্যাপারে সিরিয়াস। ওরা চাচ্ছে, আগামী বছরে সাতান্ন হাজার কোটি টাকা রেভিনিউ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়া হোক। সাতান্ন হাজার কোটি টাকা এক বছরে বৃদ্ধি করা কি চাট্টিখানি কথা বাংলাদেশে? প্রায় পনেরো পার্সেন্টের মতো প্রবৃদ্ধি লাগবে। আগামী বছরে যেখানে একটা অস্থিতিশীল বছর, নির্বাচন আসতেছে, সামনে কত রকমের আন্দোলন হবে, অর্থনীতি সচল রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সেখানে রাজস্ব বৃদ্ধি তো পরের কথা।’
বিষয়টা কেনো কঠিন হবে সেটা ব্যাখা করে তিনি বলেন, ‘এ বছর বারো হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল আইএমএফের তাগিদে। তারপর ওষুধের ওপরে, ফলের ওপরে, বিস্কিটের ওপরে ভ্যাট বাড়ানো হলো। আমরা সবাই চিল্লাচিল্লি করলাম। তারপর সরকার উঠিয়ে নিলো। তাহলে সরকার আবার যখন ভ্যাট বাড়াতে যাবে তখন আমার জনগণ চিল্লাচিল্লি শুরু করবে। তখন সেটা সরকার সামাল দিবে কিভাবে?’
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি পাওয়ার বিষয়ে সরকার কতটা আশাবাদী? এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী মে-জুনের দিকে ওদের মিটিং হবে। এবারের রিভিউয়ের ওপরেই তাদের সুপারিশ থাকবে। খেলাপি ঋণ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোন রেজুলেশন বা একটি আইন হচ্ছে, সেটা নিয়ে আলাপ হবে। এক্সচেঞ্জ রেট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আলাপ হবে। এনবিআর ট্যাক্স জিডিপি রেসিও কীভাবে বাড়াবে, সেটা নিয়ে আলাপ হবে।’
রাজস্ব খাতে কি করতে হবে, ওরা কি চাই? এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের জিডিপি নেপালের চেয়ে অনেক বড়, ওরা বলে নেপালের থেকে তোমাদের অনেক কম। ওদের (নেপাল) ১২-১৩ শতাংশ। ভারতে প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ। ওরা বলছেন তোমাদের এটা (ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কম) হওয়ার কারণ হলো নেট (আওতা) কম। লাখো লাখো লোক আছে, যারা জিরো ট্যাক্সে রিটার্ন দেয়, তাদের আয় আছে কিন্তু তারা রিটার্ন দেয় না।’
ভ্যাট ‘সিঙ্গেল’ রেটে নামিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করবো, তবে আমরা একবারে সিঙ্গেল রেটে পৌঁছাতে পারবো না।’