রাফা ও খান ইউনিসকে বিচ্ছিন্ন করে গাজার ওপর চাপ সৃষ্টি করাই হলো ইসরায়েলের উদ্দেশে। জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই চাপের মাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার কথা জানায় তারা
গাজায় নতুন করে শুরু ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ
গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন প্যালেস্টানি নিহত হয়েছেন। এর ফলে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে নেতানিয়াহু বাহিনীর বর্বর হামলায় গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৬৯৫ জনে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রবিবার এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ১১৩ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে (গত ২৪ ঘণ্টায়)। যার ফলে যুদ্ধে আহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জনে।
এদিকে, হামলার মধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ গাজার ভেতরে নতুন করে একটি ‘নিরাপত্তা করিডর’ তৈরির ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। এরইমধ্যে তারা দক্ষিণের রাফা শহরকে বাকি গাজা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ‘মোরাগ করিডর’ স্থাপন করেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী, করিডরটি গাজার পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বুধবার নতুন এই করিডরের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, এটি রাফা শহরকে গাজার বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে।
মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, মোরাগ ছিল একটি ইহুদি বসতি, যা রাফা ও খান ইউনিসের মাঝামাঝি অবস্থান করত। নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দিয়েছেন, করিডরটি এই দুই শহরের মধ্য দিয়ে যাবে।
অবশ্য নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক ঘোষণার আগে এই অংশকে অ্যাক্সিস বা করিডর হিসেবে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়নি।
মোরাগ নামটির প্রেক্ষাপটও এই বেলা একটি জানিয়ে রাখা ভালো। ১৯৭২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ওই অঞ্চলে একটি ইসরায়েলি বসতি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল। সেই বসতির নাম ছিল মোরাগ।
মাস দুই স্থিতিশীলতার পর গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি স্থল ও বিমান বাহিনী। গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে রাফা শহরে বিগত কয়েকদিনের হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর হতে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করছে।
ইসরায়েলি সেনারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। এমনকি চিকিৎসাকর্মীদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে পালিয়ে গেছেন। সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে রাফা শহরকে ঘিরে ফেলা।
ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ১২ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা থেকে প্যালেস্টানিদের উৎখাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তার অংশ হিসেবেই খান ইউনিস ও রাফাকে বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছে সেনাবাহিনী।
এদিকে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেতজকে এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, মোরাগ অ্যাক্সিস দখলের ঘোষণায় তারা অবাক হয়েছিলেন। কারণ রাফা ও খান ইউনিসকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়নি। ফলে এমন ঘোষণা বরং তাদের সেনাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
মোরাগ অ্যাক্সিসের দখল নেয়ার বিষয়ে নেতানিয়াহু বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য হলো রাফা ও খান ইউনিসকে বিচ্ছিন্ন করে গাজার ওপর চাপ সৃষ্টি করা। ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই চাপের মাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা হবে।
এর আগে, গাজার উত্তরাঞ্চলের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে সেখানে আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রায় একই প্রচেষ্টা নিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেখানেও পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত করিডরের দখল নেয়ার চেষ্টা করা হয়।
রাফা ও খান ইউনিসকে বিচ্ছিন্ন করে গাজার ওপর চাপ সৃষ্টি করাই হলো ইসরায়েলের উদ্দেশে। জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই চাপের মাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার কথা জানায় তারা
গাজায় নতুন করে শুরু ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ
রোববার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫
গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন প্যালেস্টানি নিহত হয়েছেন। এর ফলে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে নেতানিয়াহু বাহিনীর বর্বর হামলায় গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৬৯৫ জনে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রবিবার এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ১১৩ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে (গত ২৪ ঘণ্টায়)। যার ফলে যুদ্ধে আহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জনে।
এদিকে, হামলার মধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ গাজার ভেতরে নতুন করে একটি ‘নিরাপত্তা করিডর’ তৈরির ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। এরইমধ্যে তারা দক্ষিণের রাফা শহরকে বাকি গাজা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ‘মোরাগ করিডর’ স্থাপন করেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী, করিডরটি গাজার পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বুধবার নতুন এই করিডরের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, এটি রাফা শহরকে গাজার বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে।
মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, মোরাগ ছিল একটি ইহুদি বসতি, যা রাফা ও খান ইউনিসের মাঝামাঝি অবস্থান করত। নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দিয়েছেন, করিডরটি এই দুই শহরের মধ্য দিয়ে যাবে।
অবশ্য নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক ঘোষণার আগে এই অংশকে অ্যাক্সিস বা করিডর হিসেবে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়নি।
মোরাগ নামটির প্রেক্ষাপটও এই বেলা একটি জানিয়ে রাখা ভালো। ১৯৭২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ওই অঞ্চলে একটি ইসরায়েলি বসতি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল। সেই বসতির নাম ছিল মোরাগ।
মাস দুই স্থিতিশীলতার পর গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি স্থল ও বিমান বাহিনী। গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে রাফা শহরে বিগত কয়েকদিনের হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর হতে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করছে।
ইসরায়েলি সেনারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। এমনকি চিকিৎসাকর্মীদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে পালিয়ে গেছেন। সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে রাফা শহরকে ঘিরে ফেলা।
ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ১২ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা থেকে প্যালেস্টানিদের উৎখাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তার অংশ হিসেবেই খান ইউনিস ও রাফাকে বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছে সেনাবাহিনী।
এদিকে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেতজকে এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, মোরাগ অ্যাক্সিস দখলের ঘোষণায় তারা অবাক হয়েছিলেন। কারণ রাফা ও খান ইউনিসকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়নি। ফলে এমন ঘোষণা বরং তাদের সেনাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
মোরাগ অ্যাক্সিসের দখল নেয়ার বিষয়ে নেতানিয়াহু বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য হলো রাফা ও খান ইউনিসকে বিচ্ছিন্ন করে গাজার ওপর চাপ সৃষ্টি করা। ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই চাপের মাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা হবে।
এর আগে, গাজার উত্তরাঞ্চলের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে সেখানে আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রায় একই প্রচেষ্টা নিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেখানেও পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত করিডরের দখল নেয়ার চেষ্টা করা হয়।