চারণকবি বিজয় সরকারের বসতভিটা -সংবাদ
যেমন আছে এই পৃথিবী/তেমনিই ঠিক রবে/সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে...। স্বরচিত এই চিরন্তন বাণীর মতোই ঠিক ৩৯ বছর আগে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে অন্যলোকের বাসিন্দা হয়েছেন একুশে পদকপ্র্রাপ্ত চারণকবি বিজয় সরকার। নড়াইল সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে গুণী শিল্পীর বসতভিটা পড়ে আছে অযত্ন ও অবহেলায়। শিল্পীর মৃত্যুর এতো বছরেও গড়ে ওঠেনি স্মৃতি সংগ্রহশালা।
একাধারে সুরকার, গীতিকার ও গায়ক এই কবিয়ালের অবশিষ্ট স্মৃতি চিহ্ন রক্ষার দাবি করে যাচ্ছেন তার ভক্তরা।
সম্প্র্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে কবিয়াল বিজয় সরকারের বসতভিটা। ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর বিজয় সরকারের মৃত্যুর পর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে বসতভিটা। প্রায় ১৫ বছর আগে ছোট্ট পরিসরে সেখানে ‘বিজয় মঞ্চ’ নির্মিত হলেও, তার স্মৃতিধন্য তেমন কিছুই নেই।
ডুমদি গ্রামের অভি মাহমুদ বলেন, আমাদের এলাকাটি খুব অবহেলিত। বিশেষ করে খাবার পানির সমস্যা রয়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে পানি আনতে হয়। বিজয় সরকারের বাড়িতেও নেই পানির ব্যবস্থা। এখনও গড়ে ওঠেনি সংগ্রহশালা। হাসিব কাজী বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি বিজয় সরকারের বাড়িটি উন্নয়ন করা হোক।
নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক উজির আলী বলেন, শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন বিজয় সরকার। মুক্তিযুদ্ধের গানসহ আঠারশো’র বেশি গান লিখেছেন। তার গানগুলো নড়াইলসহ দেশ-বিদেশে তুমুল জনপ্রিয়। ক্ষেত-খামারে কাজের ফাঁকে কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের মুখে বিজয় সরকারের গান উচ্চারিত হয়। তবে গানগুলো যথাযথ সংরক্ষণ হয়নি।
আমাদের দাবি, কবিকণ্ঠের (বিজয় সরকার) গানগুলো সংরক্ষণে আন্তরিক হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিজয় সরকারের শিষ্য টাবরা গ্রামের মনোজ রায় মঙ্গল বলেন, ছেলেবেলায় বিজয় সরকারের কাছ থেকে গানের তালিম পেয়েছি। তার আধ্যত্মিক চেতনা, ধ্যান-জ্ঞান অতুলনীয়। গুরুজি বিজয় সরকারের অসংখ্য গান রয়েছে। যেমন- পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/ওরে একদিন ভাবি নাই মনে/সে আমারে ভুলবে কেমনে...। প্রিয়জনের উদ্দেশে লিখেছেন- ‘তুমি জানো নারে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা...।’ ‘নবী নামের নৌকা গড়/ আল্লাহ নামের পাল খাটাও/বিসমিল্লাহ বলিয়া মোমিন/কূলের তরী খুলে দাও...।’ কিংবা ‘আল্লাহ রসূল বলো মোমিন/আল্লাহ রসূল বলো/এবার দূরে ফেলে মায়ার বোঝা/সোজা পথে চল...।’
আমরা তার গানগুলো যথাযথ সংরক্ষণ চাই। অনেক কর্মকর্তা গুরুর বাড়িতে আসেন, দেখেন, অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু আজও তেমন কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।
জাহাঙ্গীর আলম রবি বলেন, বিজয় সরকারের গান সবমহলে জনপ্রিয়। কিন্তু তার সৃষ্টিকর্ম ও বাড়িঘর অবহেলিত। একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার, সুরকার ও গায়ক কবিয়াল বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
এলাকাবাসী জানান, নড়াইল শহর থেকে বিজয় সরকারের বাড়িতে যাতায়াতের পাকা সড়কটি বেশ সরু। তারপর আবার সড়কের গা ঘেঁষে মাছের ঘের করায় সড়কটি ভেঙে যাচ্ছে। যার ইচ্ছেমতো মাছের ঘের কাটছেন।
বিজয় সরকারের স্মৃতি সংরক্ষণে বিভিন্ন কাজের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান। তিনি বলেন, বিজয়ের সরকারের স্মৃতিফলকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য মন্ত্রণালয়ে বড় ধরনের প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানোর উদ্যোগে নেয়া হয়েছে।
চারণকবি বিজয় সরকারের বসতভিটা -সংবাদ
রোববার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫
যেমন আছে এই পৃথিবী/তেমনিই ঠিক রবে/সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে...। স্বরচিত এই চিরন্তন বাণীর মতোই ঠিক ৩৯ বছর আগে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে অন্যলোকের বাসিন্দা হয়েছেন একুশে পদকপ্র্রাপ্ত চারণকবি বিজয় সরকার। নড়াইল সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে গুণী শিল্পীর বসতভিটা পড়ে আছে অযত্ন ও অবহেলায়। শিল্পীর মৃত্যুর এতো বছরেও গড়ে ওঠেনি স্মৃতি সংগ্রহশালা।
একাধারে সুরকার, গীতিকার ও গায়ক এই কবিয়ালের অবশিষ্ট স্মৃতি চিহ্ন রক্ষার দাবি করে যাচ্ছেন তার ভক্তরা।
সম্প্র্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে কবিয়াল বিজয় সরকারের বসতভিটা। ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর বিজয় সরকারের মৃত্যুর পর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে বসতভিটা। প্রায় ১৫ বছর আগে ছোট্ট পরিসরে সেখানে ‘বিজয় মঞ্চ’ নির্মিত হলেও, তার স্মৃতিধন্য তেমন কিছুই নেই।
ডুমদি গ্রামের অভি মাহমুদ বলেন, আমাদের এলাকাটি খুব অবহেলিত। বিশেষ করে খাবার পানির সমস্যা রয়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে পানি আনতে হয়। বিজয় সরকারের বাড়িতেও নেই পানির ব্যবস্থা। এখনও গড়ে ওঠেনি সংগ্রহশালা। হাসিব কাজী বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি বিজয় সরকারের বাড়িটি উন্নয়ন করা হোক।
নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক উজির আলী বলেন, শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন বিজয় সরকার। মুক্তিযুদ্ধের গানসহ আঠারশো’র বেশি গান লিখেছেন। তার গানগুলো নড়াইলসহ দেশ-বিদেশে তুমুল জনপ্রিয়। ক্ষেত-খামারে কাজের ফাঁকে কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের মুখে বিজয় সরকারের গান উচ্চারিত হয়। তবে গানগুলো যথাযথ সংরক্ষণ হয়নি।
আমাদের দাবি, কবিকণ্ঠের (বিজয় সরকার) গানগুলো সংরক্ষণে আন্তরিক হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিজয় সরকারের শিষ্য টাবরা গ্রামের মনোজ রায় মঙ্গল বলেন, ছেলেবেলায় বিজয় সরকারের কাছ থেকে গানের তালিম পেয়েছি। তার আধ্যত্মিক চেতনা, ধ্যান-জ্ঞান অতুলনীয়। গুরুজি বিজয় সরকারের অসংখ্য গান রয়েছে। যেমন- পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/ওরে একদিন ভাবি নাই মনে/সে আমারে ভুলবে কেমনে...। প্রিয়জনের উদ্দেশে লিখেছেন- ‘তুমি জানো নারে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা...।’ ‘নবী নামের নৌকা গড়/ আল্লাহ নামের পাল খাটাও/বিসমিল্লাহ বলিয়া মোমিন/কূলের তরী খুলে দাও...।’ কিংবা ‘আল্লাহ রসূল বলো মোমিন/আল্লাহ রসূল বলো/এবার দূরে ফেলে মায়ার বোঝা/সোজা পথে চল...।’
আমরা তার গানগুলো যথাযথ সংরক্ষণ চাই। অনেক কর্মকর্তা গুরুর বাড়িতে আসেন, দেখেন, অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু আজও তেমন কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।
জাহাঙ্গীর আলম রবি বলেন, বিজয় সরকারের গান সবমহলে জনপ্রিয়। কিন্তু তার সৃষ্টিকর্ম ও বাড়িঘর অবহেলিত। একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার, সুরকার ও গায়ক কবিয়াল বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
এলাকাবাসী জানান, নড়াইল শহর থেকে বিজয় সরকারের বাড়িতে যাতায়াতের পাকা সড়কটি বেশ সরু। তারপর আবার সড়কের গা ঘেঁষে মাছের ঘের করায় সড়কটি ভেঙে যাচ্ছে। যার ইচ্ছেমতো মাছের ঘের কাটছেন।
বিজয় সরকারের স্মৃতি সংরক্ষণে বিভিন্ন কাজের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান। তিনি বলেন, বিজয়ের সরকারের স্মৃতিফলকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য মন্ত্রণালয়ে বড় ধরনের প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানোর উদ্যোগে নেয়া হয়েছে।