অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল অতি জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছে। আর কয়েকটি দল সংস্কার শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসের শুরুতে ছয়টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। চিঠিতে দলগুলোকে ১৩ মার্চের মধ্যে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়।
ইতোমধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ২১টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঈদুল ফিতরের আগে ৪টি দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ফের সংলাপ শুরু হতে পারে। আলোচনার পর একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে দলগুলো। সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন। এতে একমত নয় বিএনপি। কিন্তু জামায়াত এ বিষয়ে একমত জানিয়েছে।
এছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার যে সুপারিশ করেছে, সেখান থেকে ‘বহুত্ববাদ’ শব্দটি বাদ দিতে বলেছে জামায়াত। ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র’-এর আগে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ’ কথাগুলো যুক্ত করার মতামত তুলে ধরেছে দলটি। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে নিজেদের অবস্থানও তুলে ধরেছে দলটি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। তবে সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের যে সুপারিশ করেছে, তাতে আপত্তি জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি বহুত্ববাদের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করার ওপর জোর দিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিচার বিভাগ সংস্কারের ২৩ সুপারিশের মধ্যে ২০টিতে বিএনপি একমত। দুদক সংস্কারের ২০ সুপারিশের ১৯টিতে একমত ও একটিতে আংশিক একমত। জনপ্রশাসন সংস্কারের ২৬ প্রস্তাবের অর্ধেকে একমত বাকিগুলোর বিষয়ে মন্তব্য রয়েছে। আর সংসদে দুজন ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে একজন বিরোধী দল থেকে মনোনীত করতে একমত বিএনপি। এই পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে দলটি বলছে, ‘বিএনপির মনোভাব সংস্কার বিষয়ে ইতিবাচক।’
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১৬৬টি প্রশ্নমালার যে স্প্রেডশিট পাঠিয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাবিত সুপারিশের মধ্যে ১১৩টিতে একমত হয়েছে। তারা ঈদের আগে লিখিত মতামত দিয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সেই সময় থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্ন থাকলে তারা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। কমিশন এ বিষয়ে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সুপারিশগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত ৭০টি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারসংক্রান্ত ২৭, বিচার বিভাগসংক্রান্ত ২৩, জনপ্রশাসনসংক্রান্ত ২৬ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে, তাদের সুপারিশগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায়ের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্প আছে। সেগুলো হলো ‘নির্বাচনের আগে
অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এই ছয়টি ঘরের যে কোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর ‘মন্তব্য’ দেয়ারও একটি জায়গা রাখা হয়েছে।’
জানা গেছে, ২১টি দল তাদের লিখিত মতামত দিয়েছে। এর পর গত ২০ মার্চ সংলাপ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ লেবার পার্টি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। ঈদের পর পর্যায়ক্রমে বাকি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ মতামত দেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে সংলাপ হতে পারে। দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশ তৈরি করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়া হবে। এরপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। সেখানে একমত হলেই সংস্কার বাস্তবায়নের পথে হাঁটবে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া অধিকতর যুক্তিযুক্ত বলে মনে করে বিএনপি। সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।’ অনুচ্ছেদ ৯, ১০, ও ১২-এ জাতীয়তাবাদ, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
এই অনুচ্ছেদগুলো পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় নেয়াকে সমীচীন মনে করে বিএনপি। মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করা হয়।
সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল অতি জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছে। আর কয়েকটি দল সংস্কার শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসের শুরুতে ছয়টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। চিঠিতে দলগুলোকে ১৩ মার্চের মধ্যে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়।
ইতোমধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ২১টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঈদুল ফিতরের আগে ৪টি দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ফের সংলাপ শুরু হতে পারে। আলোচনার পর একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে দলগুলো। সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন। এতে একমত নয় বিএনপি। কিন্তু জামায়াত এ বিষয়ে একমত জানিয়েছে।
এছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার যে সুপারিশ করেছে, সেখান থেকে ‘বহুত্ববাদ’ শব্দটি বাদ দিতে বলেছে জামায়াত। ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র’-এর আগে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ’ কথাগুলো যুক্ত করার মতামত তুলে ধরেছে দলটি। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে নিজেদের অবস্থানও তুলে ধরেছে দলটি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। তবে সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের যে সুপারিশ করেছে, তাতে আপত্তি জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি বহুত্ববাদের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করার ওপর জোর দিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিচার বিভাগ সংস্কারের ২৩ সুপারিশের মধ্যে ২০টিতে বিএনপি একমত। দুদক সংস্কারের ২০ সুপারিশের ১৯টিতে একমত ও একটিতে আংশিক একমত। জনপ্রশাসন সংস্কারের ২৬ প্রস্তাবের অর্ধেকে একমত বাকিগুলোর বিষয়ে মন্তব্য রয়েছে। আর সংসদে দুজন ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে একজন বিরোধী দল থেকে মনোনীত করতে একমত বিএনপি। এই পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে দলটি বলছে, ‘বিএনপির মনোভাব সংস্কার বিষয়ে ইতিবাচক।’
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১৬৬টি প্রশ্নমালার যে স্প্রেডশিট পাঠিয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাবিত সুপারিশের মধ্যে ১১৩টিতে একমত হয়েছে। তারা ঈদের আগে লিখিত মতামত দিয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সেই সময় থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্ন থাকলে তারা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। কমিশন এ বিষয়ে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সুপারিশগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত ৭০টি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারসংক্রান্ত ২৭, বিচার বিভাগসংক্রান্ত ২৩, জনপ্রশাসনসংক্রান্ত ২৬ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে, তাদের সুপারিশগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায়ের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্প আছে। সেগুলো হলো ‘নির্বাচনের আগে
অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এই ছয়টি ঘরের যে কোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর ‘মন্তব্য’ দেয়ারও একটি জায়গা রাখা হয়েছে।’
জানা গেছে, ২১টি দল তাদের লিখিত মতামত দিয়েছে। এর পর গত ২০ মার্চ সংলাপ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ লেবার পার্টি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। ঈদের পর পর্যায়ক্রমে বাকি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ মতামত দেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে সংলাপ হতে পারে। দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশ তৈরি করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়া হবে। এরপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। সেখানে একমত হলেই সংস্কার বাস্তবায়নের পথে হাঁটবে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া অধিকতর যুক্তিযুক্ত বলে মনে করে বিএনপি। সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।’ অনুচ্ছেদ ৯, ১০, ও ১২-এ জাতীয়তাবাদ, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
এই অনুচ্ছেদগুলো পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় নেয়াকে সমীচীন মনে করে বিএনপি। মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করা হয়।