অনাবৃষ্টিতে ও তাপদাহে পুড়ে যাচ্ছে চা বাগান (বামে), সেচ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা -সংবাদ
চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত ও পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলসহ সিলেট বিভাগে গ্রীষ্মের তাপদাহ তীব্র হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির অভাবে সিলেট বিভাগের ১৫৩টি চা-বাগানে খরা দেখা দিচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে চলা এই তাপদাহে বিভিন্ন চা বাগানে পাতা পুড়ে যাচ্ছে, নতুন কুঁড়ি আসছে না এবং চা গাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে চা শিল্পে ক্ষতির আশঙ্কায় বাগানিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
সিলেট বিভাগে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার যথাক্রমে ৯২টি, ২৪টি ও ১৯টি চা বাগান রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা-বাগানসহ অন্য জেলার ৪৩টি চা বাগানের বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত কয়েক মাসে বৃষ্টিপাত খুবই কম হওয়ায়, চা-বাগানগুলোর অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। চা পাতা উত্তোলনের ভরা মৌসুমে নতুন পাতা আর কুঁড়ি না আসায় শ্রমিকদের দৈনিক নির্ধারিত পরিমাণ চা পাতা সংগ্রহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক হাজিরা পরিমাণ পাতা তুলতে পারছেন না।
তবে অনেক বাগানেই বাড়তি সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চা-বাগানের শ্রমিকরা জানান, তীব্র রোদের কারণে কাজ করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে, এবং বৃষ্টি না হলে উৎপাদন বাড়ানোর কোনো উপায় নেই।
শ্রীমঙ্গল, রাজনগর ও কমলগঞ্জের বিভিন্ন চা-বাগান ঘুরে দেখা গেছে, নতুন চারাগাছের ৩০ শতাংশ এবং পুরাতন গাছের ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে। কিছু জায়গায় কুঁড়িগুলো হলুদ হয়ে গেছে এবং নতুন পাতা আসছে না। চা বাগানগুলোর জন্য সেচ ব্যবস্থা চালু রাখা হলেও, পানির স্তর অনেক কমে গেছে এবং সেচের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।
এরই মধ্যে কয়েকটি বাগানে কিছু চা পাতা উত্তোলন শুরু হয়েছে। চায়ের স্বাভাবিক উৎপাদন ফিরিয়ে আনার জন্য এখনই বৃষ্টির প্রয়োজন। কিন্তু আবহাওয়া বার্তায় এখনও সেরকম কোনো সুখবর পাওয়া যায়নি।
চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান- গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, এবার মৌসুমের প্রথম দিক থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে না। বৃষ্টি না হওয়ায় ছাঁটাই করা গাছগুলোতে নতুন পাতা আসছে না। পানির সংকটে নতুন কুঁড়ি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য পুড়ে যাচ্ছে চা গাছ। এখন বৃষ্টি না এলে বাগানের ক্ষতির শঙ্কা বেশি।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, এই সময়ে চা অঞ্চলে ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। গত বছরের মার্চ মাসে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। অথচ চলতি বছরের মার্চে এসে মাত্র ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত
হয়েছে। শুধু তাই নয়, গেলো পাঁচ মাসে এই অঞ্চলে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। জেলার সবকটি চা বাগান তাপদাহের কবলে পড়েছে।
সিলেট বিভাগের তিনটি জেলার কিছু বাগানে চলতি মৌসুমে চা পাতা উত্তোলন শুরু হলেও টানা দাবদাহে প্রচ- প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন চা বাগানে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া ও তাপামাত্রা বেশি থাকায় চা গাছ খাদ্য তৈরি করতে পারছে না। এ কারণে চায়ের কুঁড়ি বের হচ্ছে না।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চায়ের জন্য উপযুক্ত, তবে বর্তমানে মৌলভীবাজারে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা-নামা করছে, যা চা গাছের জন্য বিপজ্জনক। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় চা বাগান কর্তৃপক্ষ সমন্বিত পদ্ধতি অবলম্বন করছে এবং সেচ পদ্ধতির মাধ্যমে চা গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। তবে সহসায় বৃষ্টি না হলে চা উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন বিটিআরআই) এর পরিচালক।
অনাবৃষ্টিতে ও তাপদাহে পুড়ে যাচ্ছে চা বাগান (বামে), সেচ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা -সংবাদ
সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫
চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত ও পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলসহ সিলেট বিভাগে গ্রীষ্মের তাপদাহ তীব্র হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির অভাবে সিলেট বিভাগের ১৫৩টি চা-বাগানে খরা দেখা দিচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে চলা এই তাপদাহে বিভিন্ন চা বাগানে পাতা পুড়ে যাচ্ছে, নতুন কুঁড়ি আসছে না এবং চা গাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে চা শিল্পে ক্ষতির আশঙ্কায় বাগানিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
সিলেট বিভাগে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার যথাক্রমে ৯২টি, ২৪টি ও ১৯টি চা বাগান রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা-বাগানসহ অন্য জেলার ৪৩টি চা বাগানের বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত কয়েক মাসে বৃষ্টিপাত খুবই কম হওয়ায়, চা-বাগানগুলোর অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। চা পাতা উত্তোলনের ভরা মৌসুমে নতুন পাতা আর কুঁড়ি না আসায় শ্রমিকদের দৈনিক নির্ধারিত পরিমাণ চা পাতা সংগ্রহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক হাজিরা পরিমাণ পাতা তুলতে পারছেন না।
তবে অনেক বাগানেই বাড়তি সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চা-বাগানের শ্রমিকরা জানান, তীব্র রোদের কারণে কাজ করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে, এবং বৃষ্টি না হলে উৎপাদন বাড়ানোর কোনো উপায় নেই।
শ্রীমঙ্গল, রাজনগর ও কমলগঞ্জের বিভিন্ন চা-বাগান ঘুরে দেখা গেছে, নতুন চারাগাছের ৩০ শতাংশ এবং পুরাতন গাছের ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে। কিছু জায়গায় কুঁড়িগুলো হলুদ হয়ে গেছে এবং নতুন পাতা আসছে না। চা বাগানগুলোর জন্য সেচ ব্যবস্থা চালু রাখা হলেও, পানির স্তর অনেক কমে গেছে এবং সেচের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।
এরই মধ্যে কয়েকটি বাগানে কিছু চা পাতা উত্তোলন শুরু হয়েছে। চায়ের স্বাভাবিক উৎপাদন ফিরিয়ে আনার জন্য এখনই বৃষ্টির প্রয়োজন। কিন্তু আবহাওয়া বার্তায় এখনও সেরকম কোনো সুখবর পাওয়া যায়নি।
চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান- গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, এবার মৌসুমের প্রথম দিক থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে না। বৃষ্টি না হওয়ায় ছাঁটাই করা গাছগুলোতে নতুন পাতা আসছে না। পানির সংকটে নতুন কুঁড়ি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য পুড়ে যাচ্ছে চা গাছ। এখন বৃষ্টি না এলে বাগানের ক্ষতির শঙ্কা বেশি।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, এই সময়ে চা অঞ্চলে ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। গত বছরের মার্চ মাসে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। অথচ চলতি বছরের মার্চে এসে মাত্র ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত
হয়েছে। শুধু তাই নয়, গেলো পাঁচ মাসে এই অঞ্চলে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। জেলার সবকটি চা বাগান তাপদাহের কবলে পড়েছে।
সিলেট বিভাগের তিনটি জেলার কিছু বাগানে চলতি মৌসুমে চা পাতা উত্তোলন শুরু হলেও টানা দাবদাহে প্রচ- প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন চা বাগানে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া ও তাপামাত্রা বেশি থাকায় চা গাছ খাদ্য তৈরি করতে পারছে না। এ কারণে চায়ের কুঁড়ি বের হচ্ছে না।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চায়ের জন্য উপযুক্ত, তবে বর্তমানে মৌলভীবাজারে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা-নামা করছে, যা চা গাছের জন্য বিপজ্জনক। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় চা বাগান কর্তৃপক্ষ সমন্বিত পদ্ধতি অবলম্বন করছে এবং সেচ পদ্ধতির মাধ্যমে চা গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। তবে সহসায় বৃষ্টি না হলে চা উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন বিটিআরআই) এর পরিচালক।