রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রতীকী প্রতিবাদরত মানুষ (ইনসেটে) সংবাদ
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্যালেস্টাইনের জনগণের প্রতি সংহতি জানালো ঢাকার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হওয়া লাখো মানুষ। শনিবার (১২ এপ্রিল)বিকেল ৩টার পরপরই এ সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকেই রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসে-ট্রাকে-কার্ভাডসহ বিভিন্ন বাহনে, হেঁটে, খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী সমাবেশস্থলের উদ্দেশে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
কর্মসূচি ঘিরে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন; জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ’; ট্রাম্পের কালো হাত ভেঙে দাও-ভেঙে দাও, ‘ইসরায়েলের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত বিভিন্ন শ্রেণীপেশার বিভিন্ন বয়সী প্রতিবাদী মানুষজন।
এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পোস্টারে জুতা নিক্ষেপ করতে দেখা যায় অনেককে। সেই সঙ্গে প্যালেস্টাইনে জনতা ও নিরীহ শিশু হত্যার প্রতিবাদে প্রতীকী লাশ ও কফিন
নিয়েও মিছিল করতে দেখা গেছে অনেককে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল মালেক। সংহতি জানিয়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিঞা গোলাম পরওয়ার, খেলাফত মজলিশের একাংশের মহাসচিব মামুনুল হক, ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, শায়েখ আহমাদুল্লাহ প্রমুখ।
কর্মসূচির আয়োজক প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বলেছে, ‘এই প্রথম দেশের সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সর্বস্তরের মানুষ এক কাতারে এসে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়াতে উপস্থিত হয়ে প্যালেস্টাইন জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করবে।’
ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ রাজপথে নেমে এসে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের উদ্যোগে গাজায় চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় এই কর্মসূচি হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। কর্মসূচি সকাল থেকেই বাংলামোটর, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর ও মৎস্য ভবন এলাকাজুড়ে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
প্যালেস্টাইনের জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানমুখী ঢাকার সড়কে মিছিলের স্রোত শুরু হয় শুক্রবার থেকে, যা চলছিল বিকেল ৪টার পরও। সরকারি ছুটির দিন হলেও এর প্রভাব রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে গিয়ে পড়েছে। ফলে সে সড়কে যানজট লেগে যায়।
বিকেল ৪টার দিকে গণজমায়েতে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতা এবং জনগণের পক্ষ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মাহমুদুর রহমান।
লিখিত ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘আজ আমরা বাংলাদেশের জনতা-যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি, সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ।’
পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে চারটি স্তরে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি যেসব দাবি জানানো হয়, সেগুলো হচ্ছে- জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করা, যুদ্ধবিরতি নয়; গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করা, পূর্ব জেরুজালেমকে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া, প্যালেস্টাইনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করা।
গণজমায়েতে মুসলিম উম্মাহর নেতাদের প্রতিও কিছু দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হচ্ছে ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করা, জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানো, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করা, জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াক্ফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নেয়া।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যেসব দাবি জানানো হয়েছে- বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘ঊীপবঢ়ঃ ওংৎধবষ’ শর্ত পুনর্বহাল করা এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করা, সরকারের ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করা, রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া, সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দেয়া, জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানো, পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, প্যালেস্টাইন ও মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করা।
নিজেদের জনগণের প্রতি বেশকিছু দাবি উত্থাপন করে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে সেগুলো হল স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেসব পণ্য বয়কট করা যেসব পণ্য, কোম্পানি ও শক্তি ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে, নিজেদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করা, যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সব প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, নিজেদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তোলা যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে, নিজেদের মধ্যে বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকা।
পরে প্যালেস্টাইনের জনগণের জন্য দোয়া করে মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মোহাম্মদ আব্দুল মালেক। বিকেল ৪টার দিকে জমায়েতের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি।
রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রতীকী প্রতিবাদরত মানুষ (ইনসেটে) সংবাদ
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্যালেস্টাইনের জনগণের প্রতি সংহতি জানালো ঢাকার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হওয়া লাখো মানুষ। শনিবার (১২ এপ্রিল)বিকেল ৩টার পরপরই এ সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকেই রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসে-ট্রাকে-কার্ভাডসহ বিভিন্ন বাহনে, হেঁটে, খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী সমাবেশস্থলের উদ্দেশে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
কর্মসূচি ঘিরে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন; জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ’; ট্রাম্পের কালো হাত ভেঙে দাও-ভেঙে দাও, ‘ইসরায়েলের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত বিভিন্ন শ্রেণীপেশার বিভিন্ন বয়সী প্রতিবাদী মানুষজন।
এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পোস্টারে জুতা নিক্ষেপ করতে দেখা যায় অনেককে। সেই সঙ্গে প্যালেস্টাইনে জনতা ও নিরীহ শিশু হত্যার প্রতিবাদে প্রতীকী লাশ ও কফিন
নিয়েও মিছিল করতে দেখা গেছে অনেককে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল মালেক। সংহতি জানিয়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিঞা গোলাম পরওয়ার, খেলাফত মজলিশের একাংশের মহাসচিব মামুনুল হক, ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, শায়েখ আহমাদুল্লাহ প্রমুখ।
কর্মসূচির আয়োজক প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বলেছে, ‘এই প্রথম দেশের সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সর্বস্তরের মানুষ এক কাতারে এসে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়াতে উপস্থিত হয়ে প্যালেস্টাইন জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করবে।’
ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ রাজপথে নেমে এসে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের উদ্যোগে গাজায় চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় এই কর্মসূচি হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। কর্মসূচি সকাল থেকেই বাংলামোটর, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর ও মৎস্য ভবন এলাকাজুড়ে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
প্যালেস্টাইনের জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানমুখী ঢাকার সড়কে মিছিলের স্রোত শুরু হয় শুক্রবার থেকে, যা চলছিল বিকেল ৪টার পরও। সরকারি ছুটির দিন হলেও এর প্রভাব রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে গিয়ে পড়েছে। ফলে সে সড়কে যানজট লেগে যায়।
বিকেল ৪টার দিকে গণজমায়েতে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতা এবং জনগণের পক্ষ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মাহমুদুর রহমান।
লিখিত ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘আজ আমরা বাংলাদেশের জনতা-যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি, সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ।’
পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে চারটি স্তরে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি যেসব দাবি জানানো হয়, সেগুলো হচ্ছে- জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করা, যুদ্ধবিরতি নয়; গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করা, পূর্ব জেরুজালেমকে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া, প্যালেস্টাইনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করা।
গণজমায়েতে মুসলিম উম্মাহর নেতাদের প্রতিও কিছু দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হচ্ছে ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করা, জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানো, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করা, জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াক্ফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নেয়া।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যেসব দাবি জানানো হয়েছে- বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘ঊীপবঢ়ঃ ওংৎধবষ’ শর্ত পুনর্বহাল করা এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করা, সরকারের ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করা, রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া, সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দেয়া, জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানো, পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, প্যালেস্টাইন ও মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করা।
নিজেদের জনগণের প্রতি বেশকিছু দাবি উত্থাপন করে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে সেগুলো হল স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেসব পণ্য বয়কট করা যেসব পণ্য, কোম্পানি ও শক্তি ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে, নিজেদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করা, যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সব প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, নিজেদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তোলা যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে, নিজেদের মধ্যে বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকা।
পরে প্যালেস্টাইনের জনগণের জন্য দোয়া করে মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মোহাম্মদ আব্দুল মালেক। বিকেল ৪টার দিকে জমায়েতের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি।