সুইফট চ্যানেল ব্যবহার করে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন জড়িত আছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে।
রোববার রিজার্ভ চুরির ঘটনা বিশ্লেষণে গঠিত পর্যালোচনা কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, “এটা তদন্ত করতে গিয়ে আগের সরকারের সময় সীমাহীন গাফিলতি দেখা গেছে। তদন্তের আগেই সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা ইনভলভ আছে তাদের নাম যেন অভিযোগপত্রে না দেওয়া হয়। ফরাসউদ্দিন সাহেবের মাধ্যমে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সেটা দেখেছি। সিআইডি রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে যাদের নাম এসেছে, তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে কমিটি তা জানতে চেয়েছে। কী ব্যবস্থা নিতে হবে সেটাও আমরা বলে এসেছি।”
আসিফ নজরুল কমিটির সভাপতি এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন: জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বেসরকারি সদস্য ব্যাংকার আলী আশফাক ও নজরুল হুদা। বৈঠকে সবাই উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতির মাধ্যমে সুইফট কোড ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এসব টাকা ফিলিপিন্সে তিনটি ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়েছিল। ফিলিপিন্স সরকার এক ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশকে ফেরত দিলেও বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার আর পাওয়া যায়নি।
আসিফ নজরুল বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে ২ বিলিয়ন ডলার চুরি বা লুট করার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন এখনও উদ্ধার করা যায়নি। পুরো বাংলাদেশকে লুট করার পরিকল্পনা ছিল। ২ বিলিয়ন ডলার চলে গেলে আজকে প্রায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তাম।”
রিজার্ভ চুরির তিন বছর পর, ২০১৯ সালে অর্থ উদ্ধারের আশায় নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরসিবিসি মামলাটি খারিজের আবেদন জানায় এবং ২০২২ সালের এপ্রিলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়, কারণ আদালতের যথেষ্ট এখতিয়ার নেই বলে উল্লেখ করা হয়। পরে নতুনভাবে এখতিয়ারপ্রাপ্ত আদালতে মামলা করা হয়।
তখন ধারণা করা হয়েছিল, দেশের অভ্যন্তরের একটি চক্রের সহায়তায় এই অর্থ পাচার হয়েছিল। সিআইডির তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ মোট ১৩ জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই বছরের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা। তবে মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।
মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি, কিন্তু দীর্ঘ সময়েও তারা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। বারবার সময় চাওয়ায় শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাও পরিবর্তন হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে গত ৩১ ডিসেম্বর দুদক সিআইডিকে চিঠি দিয়ে তদন্তের দায়িত্ব চায়। তবে এখনও সিআইডি এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। আসিফ নজরুল জানান, সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দায়ীদের নাম এখনই প্রকাশ করা হবে না। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ উদ্ধারে বিদেশে যে লিগ্যাল ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সেখানে অনিয়ম থাকতে পারে। তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ একজন আইনজীবী ওই ফার্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই ফার্মকে লাখ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে এবং ইমেইল আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও টাকা দিতে হয়েছে। এত টাকা দিয়ে ওই ফার্ম বাছাইয়ের পেছনে ওই আইনজীবীর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনার জন্য ১২ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে সভাপতি করে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
সুইফট চ্যানেল ব্যবহার করে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন জড়িত আছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে।
রোববার রিজার্ভ চুরির ঘটনা বিশ্লেষণে গঠিত পর্যালোচনা কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, “এটা তদন্ত করতে গিয়ে আগের সরকারের সময় সীমাহীন গাফিলতি দেখা গেছে। তদন্তের আগেই সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা ইনভলভ আছে তাদের নাম যেন অভিযোগপত্রে না দেওয়া হয়। ফরাসউদ্দিন সাহেবের মাধ্যমে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সেটা দেখেছি। সিআইডি রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে যাদের নাম এসেছে, তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে কমিটি তা জানতে চেয়েছে। কী ব্যবস্থা নিতে হবে সেটাও আমরা বলে এসেছি।”
আসিফ নজরুল কমিটির সভাপতি এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন: জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বেসরকারি সদস্য ব্যাংকার আলী আশফাক ও নজরুল হুদা। বৈঠকে সবাই উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতির মাধ্যমে সুইফট কোড ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এসব টাকা ফিলিপিন্সে তিনটি ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়েছিল। ফিলিপিন্স সরকার এক ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশকে ফেরত দিলেও বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার আর পাওয়া যায়নি।
আসিফ নজরুল বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে ২ বিলিয়ন ডলার চুরি বা লুট করার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন এখনও উদ্ধার করা যায়নি। পুরো বাংলাদেশকে লুট করার পরিকল্পনা ছিল। ২ বিলিয়ন ডলার চলে গেলে আজকে প্রায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তাম।”
রিজার্ভ চুরির তিন বছর পর, ২০১৯ সালে অর্থ উদ্ধারের আশায় নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরসিবিসি মামলাটি খারিজের আবেদন জানায় এবং ২০২২ সালের এপ্রিলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়, কারণ আদালতের যথেষ্ট এখতিয়ার নেই বলে উল্লেখ করা হয়। পরে নতুনভাবে এখতিয়ারপ্রাপ্ত আদালতে মামলা করা হয়।
তখন ধারণা করা হয়েছিল, দেশের অভ্যন্তরের একটি চক্রের সহায়তায় এই অর্থ পাচার হয়েছিল। সিআইডির তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ মোট ১৩ জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই বছরের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা। তবে মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।
মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি, কিন্তু দীর্ঘ সময়েও তারা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। বারবার সময় চাওয়ায় শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাও পরিবর্তন হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে গত ৩১ ডিসেম্বর দুদক সিআইডিকে চিঠি দিয়ে তদন্তের দায়িত্ব চায়। তবে এখনও সিআইডি এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। আসিফ নজরুল জানান, সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দায়ীদের নাম এখনই প্রকাশ করা হবে না। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ উদ্ধারে বিদেশে যে লিগ্যাল ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সেখানে অনিয়ম থাকতে পারে। তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ একজন আইনজীবী ওই ফার্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই ফার্মকে লাখ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে এবং ইমেইল আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও টাকা দিতে হয়েছে। এত টাকা দিয়ে ওই ফার্ম বাছাইয়ের পেছনে ওই আইনজীবীর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনার জন্য ১২ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে সভাপতি করে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।