alt

জাতীয়

‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম বদলের কারণ জানতে চায় চারুকলার শিক্ষার্থীরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ইউনেস্কোর অপরিমেয় বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া বর্ষবরণের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তনের ‘যথার্থ কারণ’ জানানোর দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের মতামত ছাড়াই কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার সঙ্গে তারা একমত নয়।

রোববার চারুকলা অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন চারুকলা অনুষদের একদল শিক্ষার্থী। বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে, চারুকলা অনুষদের প্রিন্ট মেকিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহারা নাজিফা লিখিত বক্তব্যে বলেন, “এর আগে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে জানানো হয় যে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, তা এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে পালিত হবে। আমরা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি না। যেই সিনেটের মাধ্যমে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সেখানে কোন ছাত্র প্রতিনিধি নেই। এমনটা মোটেই কাম্য ছিল না, বৈশাখ আয়োজনের বড় অংশীজন হিসেবে চারুকলার শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত ছাড়াই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”

জাহারা নাজিফা বলেন, “‘মঙ্গল’ বাদ দেওয়ার একটি ভ্যালিড কারণ দেখান আমাদের।”

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমরা ঐতিহ্যগতভাবে চারুকলার শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মিলে প্রতিবার বৈশাখের আয়োজন করার চেষ্টা করে থাকি এবং বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখে এসেছি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের কারণে বৈশাখ উদযাপন স্বতন্ত্রতা হারিয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরবর্তী সময়ে এসে আমাদের কাম্য ছিল স্বতন্ত্র ও স্বতস্ফূর্ত একটি বৈশাখের আয়োজন। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে এবারও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে ফ্যাসিস্ট রেজিমের মতই বৈশাখ শেকল মুক্ত নয়।

“আমরা যখন এই বিষয়ে বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করেছি আমাদেরকে, আওয়ামী দোসর সহ অনলাইনে অফলাইনে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে, যেটার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও অগ্নিসংযোগকারী অপরাধীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে শাস্তির আহবান করছি।”

আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রা বিগত সরকারের আমলে ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দলীয়করণের শিকার’ হয় বলেও অভিযোগ করা হয় লিখিত বক্তব্যে।

সেখানে বলা হয়, “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে চারুকলার শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ছিল, এরশাদ স্বৈরাচার প্রতিরোধের ঐতিহ্য বহনকারী মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের পুরো প্রক্রিয়ায় পুনরায় চারুকলার শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিকতায় শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে এই শোভাযাত্রা তার গণবান্ধব রূপ ফিরে পাবে। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীত বাস্তবতার মুখোমুখি হলাম আমরা। এইবারের আয়োজনের শুরু থেকে সরকারি হস্তক্ষেপের সামনে নতজানু অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো রকম তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় চারুকলার প্রশাসনিক শিক্ষকরা শোভাযাত্রা আয়োজনকে এগিয়ে নিচ্ছেন। নাম পরিবর্তনের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও শিক্ষার্থীদের সাথে নূন্যতম আলোচনা ব্যতিরেকে গৃহীত হল।”

রীতি অনুযায়ী এ বছর শোভযাত্রার আয়োজক ব্যাচ হওয়ার কথা চারুকলার ২৬তম ব্যাচের। কিন্তু তা নিয়েও একটি ‘প্রহসন’ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমরা এ কথা বলছি অত্যন্ত দুঃখের সাথে এবং বাধ্য হয়ে, কারণ - গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এসে প্রয়োজন ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রার এজেন্সি ‘পুনরুদ্ধার’ করে এটি আয়োজনের বড় অংশীজন চারুকলার শিক্ষার্থীদের হাতে ফেরত দেওয়ার - রাষ্ট্রের নজরদারি দমন করার, কিন্তু এমনটি করা হয়নি। বরং অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের এই নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ করার জন্য আমাদের সবাইকে উল্টো ঢালাওভাবে ভিলিফাই করা হচ্ছে - আওয়ামী দোসর বলা হচ্ছে। এই ট্যাগিং রাজনীতি তারা বন্ধ করতে চায় বলে আমরা বোধ করি না, আওয়ামীর তৈরিকৃত ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভাঙতে চাওয়া শিক্ষার্থীদেরকেই যখন আওয়ামীর দোসর বলা হয় সেটায় আমাদের কাছে হাস্যকর বৈ আর কিছু লাগে না।”

বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপনে চারুকলার আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে মঙ্গল শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা’ নাম দেওয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ। তিনি দাবি করেন, এবার নববর্ষ উদযাপন ‘একপেশে সাংস্কৃতিক চর্চা’ থেকে বেরিয়ে এসে ‘ইনক্লুসিভ সাংস্কৃতিক চর্চা’ হবে।

ওই সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। নামের এ পরিবর্তনকে মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে বর্ণনা করে বিষয়টিকে ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর’ কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘আত্মসমর্পণ’ হিসেবে বর্ণনা করে বাম ধারার ছাত্র সংগঠনগুলো। কর্তৃপক্ষকে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসারও আহ্বান জানায় তারা।

এদিকে শনিবার ভোরে চারুকলায় শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরো একটি প্রতিকৃতি। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে মাস্ক পরা এক যুবককে আগুন দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ২৪ ঘণ্টা অতিক্রম হবার পরেও, অগ্নিসংযোগকারীকে শনাক্ত করা হয়নি, এবং চারুকলার প্রতি অংশে সিসিটিভির আওতাধীন থাকা সত্ত্বেও আমরা যখন এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে প্রশাসনের কাছে গিয়েছি আমাদেরকে বারংবার নানা অযৌক্তিক উত্তর দেয়া হয়েছে যাতে আমরা তীব্র হতাশ। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীকে শনাক্ত না করা হচ্ছে সেটা চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য ভীতির সঞ্চার করে, কারণ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমাদেরকে বিভিন্ন ট্যাগের স্বীকার করছেন যার কিছু দালিলিক প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে যেটা আমরা আপনাদের হাতে প্রমাণস্বরূপ পরবর্তীতে তুলে ধরব।”

ছবি

পাঁচ বছর ক্ষমতায় : ‘আমিতো কিছুই বলি নাই’, বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

মেঘনা আলমের বিষয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গেলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

ছবি

সারাদেশে একযোগে দেড়টায় জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের

ছবি

হয়রানির জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: টিউলিপ

ছবি

বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আর সংস্কৃতির উৎসব

ছবি

বাঙালির মুক্তিসন্ধিক্ষণে ‘রাষ্ট্র-সমাজের দায়’ স্মরণ করাল ছায়ানট

ছবি

গাজীপুরে ট্রেন লাইনচ্যুত: ১৩ ঘণ্টা পর উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

ছবি

মায়ানমার থেকে পাচার হওয়া ২০ কিশোরকে নিয়ে ফিরছে ‘সমুদ্র অভিযান’

ছবি

চারুকলা থেকে বের হলো ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’

ছবি

দুদকের অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’: পরোয়ানা জারির খবরে টিউলিপের আইনজীবী

ছবি

রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ শুরু

ছবি

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

পুলিশের রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স : ৪৮ বছর পর চালু হচ্ছে কিছু সুবিধা

‘ইলিশে হাতই দেয়া যাচ্ছে না’

ছবি

সম্প্রীতির বার্তা দিলেন সেনাপ্রধান: ‘আমরা হানাহানি চাই না, শান্তির দেশ চাই’

ছবি

পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শর্ত পুনর্বহালের নির্দেশ

ছবি

মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি: আসিফ নজরুল

ছবি

শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ল

ছবি

রিজার্ভ চুরি: বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ পর্যালোচনা কমিটির

ছবি

প্লট কেলেঙ্কারি: হাসিনা, রেহানা, ববি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

মডেল মেঘনাকে আটকের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ নয়—জানতে চায় হাই কোর্ট

ছবি

ডিবি প্রধানের পদ থেকে সরানো হলো রেজাউল করিমকে

ছবি

সবাইকে যার যার মতো করে বৈশাখ উদ্‌যাপনের আহ্বান জানালেন মুহাম্মদ ইউনূস

চারুকলায় আগুনের ঘটনায় নিরাপত্তা ঘাটতি ছিল কিনা তদন্ত হচ্ছে: র‍্যাব প্রধান

ছবি

টাস্কফোর্সের সভা আজ: শেখ পরিবারসহ ১১ শিল্পগোষ্ঠীর ‘বিপুল সম্পদের’ খোঁজ

সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হতে হবে এইচএসসি পাস

ছবি

অনির্বাচিত বললো কে?—প্রশ্ন ফরিদা আখতারের

কুড়িগ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযান, চুরি হওয়া ওষুধসহ আটক ২

মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনা ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের প্রকাশ’

আসামি গ্রেপ্তারের আগে অনুমতি লাগবে

ছবি

রিমান্ড শেষে তুরিন আফরোজ কারাগারে

ছবি

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ২৮ বস্তা টাকা

বড়াইগ্রামে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে সংঘর্ষে আহত ১০, আটক ১

আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, লোডশেডিং বাড়তে পারে

বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয়ের কাজ দ্রুতগতিতে চলেছে: প্রধান বিচারপতি

বেনাপোল কাস্টমস: ৯ মাসে রাজস্ব আদায় ৩৬৬ কোটি টাকা

tab

জাতীয়

‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম বদলের কারণ জানতে চায় চারুকলার শিক্ষার্থীরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ইউনেস্কোর অপরিমেয় বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া বর্ষবরণের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তনের ‘যথার্থ কারণ’ জানানোর দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের মতামত ছাড়াই কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার সঙ্গে তারা একমত নয়।

রোববার চারুকলা অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন চারুকলা অনুষদের একদল শিক্ষার্থী। বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে, চারুকলা অনুষদের প্রিন্ট মেকিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহারা নাজিফা লিখিত বক্তব্যে বলেন, “এর আগে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে জানানো হয় যে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, তা এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে পালিত হবে। আমরা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি না। যেই সিনেটের মাধ্যমে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সেখানে কোন ছাত্র প্রতিনিধি নেই। এমনটা মোটেই কাম্য ছিল না, বৈশাখ আয়োজনের বড় অংশীজন হিসেবে চারুকলার শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত ছাড়াই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”

জাহারা নাজিফা বলেন, “‘মঙ্গল’ বাদ দেওয়ার একটি ভ্যালিড কারণ দেখান আমাদের।”

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমরা ঐতিহ্যগতভাবে চারুকলার শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মিলে প্রতিবার বৈশাখের আয়োজন করার চেষ্টা করে থাকি এবং বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখে এসেছি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের কারণে বৈশাখ উদযাপন স্বতন্ত্রতা হারিয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরবর্তী সময়ে এসে আমাদের কাম্য ছিল স্বতন্ত্র ও স্বতস্ফূর্ত একটি বৈশাখের আয়োজন। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে এবারও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে ফ্যাসিস্ট রেজিমের মতই বৈশাখ শেকল মুক্ত নয়।

“আমরা যখন এই বিষয়ে বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করেছি আমাদেরকে, আওয়ামী দোসর সহ অনলাইনে অফলাইনে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে, যেটার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও অগ্নিসংযোগকারী অপরাধীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে শাস্তির আহবান করছি।”

আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রা বিগত সরকারের আমলে ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দলীয়করণের শিকার’ হয় বলেও অভিযোগ করা হয় লিখিত বক্তব্যে।

সেখানে বলা হয়, “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে চারুকলার শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ছিল, এরশাদ স্বৈরাচার প্রতিরোধের ঐতিহ্য বহনকারী মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের পুরো প্রক্রিয়ায় পুনরায় চারুকলার শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিকতায় শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে এই শোভাযাত্রা তার গণবান্ধব রূপ ফিরে পাবে। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীত বাস্তবতার মুখোমুখি হলাম আমরা। এইবারের আয়োজনের শুরু থেকে সরকারি হস্তক্ষেপের সামনে নতজানু অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো রকম তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় চারুকলার প্রশাসনিক শিক্ষকরা শোভাযাত্রা আয়োজনকে এগিয়ে নিচ্ছেন। নাম পরিবর্তনের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও শিক্ষার্থীদের সাথে নূন্যতম আলোচনা ব্যতিরেকে গৃহীত হল।”

রীতি অনুযায়ী এ বছর শোভযাত্রার আয়োজক ব্যাচ হওয়ার কথা চারুকলার ২৬তম ব্যাচের। কিন্তু তা নিয়েও একটি ‘প্রহসন’ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমরা এ কথা বলছি অত্যন্ত দুঃখের সাথে এবং বাধ্য হয়ে, কারণ - গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এসে প্রয়োজন ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রার এজেন্সি ‘পুনরুদ্ধার’ করে এটি আয়োজনের বড় অংশীজন চারুকলার শিক্ষার্থীদের হাতে ফেরত দেওয়ার - রাষ্ট্রের নজরদারি দমন করার, কিন্তু এমনটি করা হয়নি। বরং অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের এই নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ করার জন্য আমাদের সবাইকে উল্টো ঢালাওভাবে ভিলিফাই করা হচ্ছে - আওয়ামী দোসর বলা হচ্ছে। এই ট্যাগিং রাজনীতি তারা বন্ধ করতে চায় বলে আমরা বোধ করি না, আওয়ামীর তৈরিকৃত ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভাঙতে চাওয়া শিক্ষার্থীদেরকেই যখন আওয়ামীর দোসর বলা হয় সেটায় আমাদের কাছে হাস্যকর বৈ আর কিছু লাগে না।”

বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপনে চারুকলার আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে মঙ্গল শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা’ নাম দেওয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ। তিনি দাবি করেন, এবার নববর্ষ উদযাপন ‘একপেশে সাংস্কৃতিক চর্চা’ থেকে বেরিয়ে এসে ‘ইনক্লুসিভ সাংস্কৃতিক চর্চা’ হবে।

ওই সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। নামের এ পরিবর্তনকে মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে বর্ণনা করে বিষয়টিকে ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর’ কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘আত্মসমর্পণ’ হিসেবে বর্ণনা করে বাম ধারার ছাত্র সংগঠনগুলো। কর্তৃপক্ষকে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসারও আহ্বান জানায় তারা।

এদিকে শনিবার ভোরে চারুকলায় শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরো একটি প্রতিকৃতি। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে মাস্ক পরা এক যুবককে আগুন দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ২৪ ঘণ্টা অতিক্রম হবার পরেও, অগ্নিসংযোগকারীকে শনাক্ত করা হয়নি, এবং চারুকলার প্রতি অংশে সিসিটিভির আওতাধীন থাকা সত্ত্বেও আমরা যখন এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে প্রশাসনের কাছে গিয়েছি আমাদেরকে বারংবার নানা অযৌক্তিক উত্তর দেয়া হয়েছে যাতে আমরা তীব্র হতাশ। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীকে শনাক্ত না করা হচ্ছে সেটা চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য ভীতির সঞ্চার করে, কারণ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমাদেরকে বিভিন্ন ট্যাগের স্বীকার করছেন যার কিছু দালিলিক প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে যেটা আমরা আপনাদের হাতে প্রমাণস্বরূপ পরবর্তীতে তুলে ধরব।”

back to top