পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পাস্পরিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে একমত পোষণ করেছে দুই দেশই। বৃহস্পতিবার,১৭ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এমন অভিমত ব্যক্ত করে দুই দেশ। বৈঠকে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলেছে। এছাড়াও পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা পরিশোধ করতে বলেছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে দুই পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন এসব তথ্য জানান। ব্রিফিংয়ের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইকবাল হুসেইন খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান ও রফিকুল আলম।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব জানান, দুদেশের সম্পর্ক মজবুত করতে পাকিস্তানকে অমীমাংসিত ঐতিহাসিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে বলেছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে একাত্তরে গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা এবং প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণও চেয়েছে সরকার।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলো উত্থাপন করেছি। যেমন- আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বিদেশি সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।
পররাষ্ট্র সচিব কলেন, ‘আমরা বলেছি, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়সমূহের দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির মাধ্যমে একটি মজবুত, কল্যাণমুখী ও ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করি এবং এই লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি।’
এক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া কী ছিল, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ‘সদিচ্ছা তারা ব্যক্ত করেছেন। বিষয়টা নিয়ে তারা এনগেইজড থাকবেন, এই বিষয়গুলো
নিয়ে আলোচনায় থাকবেন তারা, সামনের বৈঠকগুলোতে।’
দীর্ঘদিন পর এই বৈঠক হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,
‘একটা জিনিস আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে, পাকিস্তানের সঙ্গে আজকে যে বৈঠকটা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটি নিয়মিত বৈঠকই হওয়ার কথা। কিন্তু এই বৈঠক সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১০ সালে। ২০১০ সালের দেড় দশক পরে প্রথম যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই বৈঠকে আমরা আশা করি না যে, সমস্যাটা সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের দিক থেকে এ বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা করার একটা সদিচ্ছা তারা ব্যক্ত করেছেন।’
ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণের বিষয়ে এক প্রশ্নে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছে যে হিসাবটা আছে, সেখানে দেখানো আছে যে, বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যানের একটা হিসাব অনুযায়ী, (এটা) ৪ বিলিয়ন ডলার। আরেকটা হিসাবে বলা আছে, ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন। আমরা আজকের আলোচনায় এই ফিগারটাই বলেছি। এটা একটা। আরেকটা হচ্ছে, ১৯৭০ সালের নভেম্বরে যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়, সেখানে বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র এবং সংস্থা ২০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমপরিমাণ অর্থ দান করেছিল, সেটাও আমরা এই বৈঠকে হিস্যা চেয়েছি।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ আটকে পড়া পাকিস্তানি পাকিস্তানে ফিরে গেছেন। এখনও বাংলাদেশে ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ জন আটকে পড়া পাকিস্তানি বাংলাদেশে রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির মাধ্যমে একটি মজবুত, কল্যাণমুখী ও সামনের দিকে অগ্রসর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করি এবং এ লক্ষে আমরা একযোগে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করি।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা সার্ক’য়ের আওতায় সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে এর পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানিয়েছি, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়া যায়। আমরা ওআইসি ওআইসি সনদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি । মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় দুই দেশই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে। আমি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের লক্ষে পাকিস্তানের সমর্থন কামনা করি।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছি। পাকিস্তানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে বাজারে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং শুল্ক বাধা দূরীকরণ ও বাংলাদেশে পাকিস্তানের বিনিয়োগ বৃদ্ধিকরণের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপর আমি গুরুত্বারোপ করি। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্যও আলোচনা হয়েছে, যাতে প্রযুক্তি, উন্নত প্রজাতি এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বন্যা প্রতিরোধে দুই দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর জোর দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন যে, সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি শিপিং রুট চালু হয়েছে এবং সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু সম্ভব হবে।
বৈঠকের বিষয়ে সচিব বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন সুযোগ সন্ধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি এবং এসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক শিক্ষা বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। পাশাপাশি, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও আলোচনায় এসেছে। দুই দেশের শিল্পী, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, লেখক ও শিক্ষাবিদদের সফরের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উভয় পক্ষ থেকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে যোগ দিতে বুধবার ঢাকায় আসেন আমনা বালুচ। ২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে সর্বশেষ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। এরপর ১৫ বছর এ বৈঠক আর হয়নি। দীর্ঘ ১৫ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক হলো।
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পাস্পরিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে একমত পোষণ করেছে দুই দেশই। বৃহস্পতিবার,১৭ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এমন অভিমত ব্যক্ত করে দুই দেশ। বৈঠকে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলেছে। এছাড়াও পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা পরিশোধ করতে বলেছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে দুই পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন এসব তথ্য জানান। ব্রিফিংয়ের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইকবাল হুসেইন খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান ও রফিকুল আলম।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব জানান, দুদেশের সম্পর্ক মজবুত করতে পাকিস্তানকে অমীমাংসিত ঐতিহাসিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে বলেছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে একাত্তরে গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা এবং প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণও চেয়েছে সরকার।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলো উত্থাপন করেছি। যেমন- আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বিদেশি সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।
পররাষ্ট্র সচিব কলেন, ‘আমরা বলেছি, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়সমূহের দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির মাধ্যমে একটি মজবুত, কল্যাণমুখী ও ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করি এবং এই লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি।’
এক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া কী ছিল, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ‘সদিচ্ছা তারা ব্যক্ত করেছেন। বিষয়টা নিয়ে তারা এনগেইজড থাকবেন, এই বিষয়গুলো
নিয়ে আলোচনায় থাকবেন তারা, সামনের বৈঠকগুলোতে।’
দীর্ঘদিন পর এই বৈঠক হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,
‘একটা জিনিস আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে, পাকিস্তানের সঙ্গে আজকে যে বৈঠকটা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটি নিয়মিত বৈঠকই হওয়ার কথা। কিন্তু এই বৈঠক সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১০ সালে। ২০১০ সালের দেড় দশক পরে প্রথম যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই বৈঠকে আমরা আশা করি না যে, সমস্যাটা সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের দিক থেকে এ বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা করার একটা সদিচ্ছা তারা ব্যক্ত করেছেন।’
ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণের বিষয়ে এক প্রশ্নে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছে যে হিসাবটা আছে, সেখানে দেখানো আছে যে, বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যানের একটা হিসাব অনুযায়ী, (এটা) ৪ বিলিয়ন ডলার। আরেকটা হিসাবে বলা আছে, ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন। আমরা আজকের আলোচনায় এই ফিগারটাই বলেছি। এটা একটা। আরেকটা হচ্ছে, ১৯৭০ সালের নভেম্বরে যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়, সেখানে বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র এবং সংস্থা ২০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমপরিমাণ অর্থ দান করেছিল, সেটাও আমরা এই বৈঠকে হিস্যা চেয়েছি।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ আটকে পড়া পাকিস্তানি পাকিস্তানে ফিরে গেছেন। এখনও বাংলাদেশে ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ জন আটকে পড়া পাকিস্তানি বাংলাদেশে রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির মাধ্যমে একটি মজবুত, কল্যাণমুখী ও সামনের দিকে অগ্রসর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করি এবং এ লক্ষে আমরা একযোগে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করি।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা সার্ক’য়ের আওতায় সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে এর পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানিয়েছি, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়া যায়। আমরা ওআইসি ওআইসি সনদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি । মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় দুই দেশই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে। আমি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের লক্ষে পাকিস্তানের সমর্থন কামনা করি।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছি। পাকিস্তানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে বাজারে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং শুল্ক বাধা দূরীকরণ ও বাংলাদেশে পাকিস্তানের বিনিয়োগ বৃদ্ধিকরণের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপর আমি গুরুত্বারোপ করি। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্যও আলোচনা হয়েছে, যাতে প্রযুক্তি, উন্নত প্রজাতি এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বন্যা প্রতিরোধে দুই দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর জোর দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন যে, সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি শিপিং রুট চালু হয়েছে এবং সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু সম্ভব হবে।
বৈঠকের বিষয়ে সচিব বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন সুযোগ সন্ধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি এবং এসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক শিক্ষা বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। পাশাপাশি, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও আলোচনায় এসেছে। দুই দেশের শিল্পী, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, লেখক ও শিক্ষাবিদদের সফরের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উভয় পক্ষ থেকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে যোগ দিতে বুধবার ঢাকায় আসেন আমনা বালুচ। ২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে সর্বশেষ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। এরপর ১৫ বছর এ বৈঠক আর হয়নি। দীর্ঘ ১৫ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক হলো।