alt

জাতীয়

কানাডার কাছ থেকে আসলে কী চাইছেন ট্রাম্প

সংবাদ রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

উত্তর আমেরিকার মানচিত্রে ছোট্ট একটি বিন্দু ম্যাকিয়াস সিল। পাথরের টুকরোর মতো একটি দ্বীপ। কুয়াশায় ঢাকা। কোনো মানুষ থাকে না। তবুও দ্বীপটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে বিবদমান যে গ্রে জোন, তার মধ্যে পড়েছে এটি।

এই দ্বীপ ও তার আশপাশের জলসীমার মালিকানা এবং তাতে মাছ শিকারের অধিকার নিয়ে বিরোধ দুই বৃহৎ প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে।

ম্যাকিয়াস সিল দ্বীপের চারপাশে যে সাগর তা গলদা চিংড়ির জন্য বিখ্যাত। একপাশে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য মেইন, আরেক পাশে কানাডার নিউ ব্রান্সউইক। গলদা চিংড়ি শিকার নিয়ে এই দুই পারের মানুষের মধ্যে বহু সংঘাত হয়েছে।

এখানেই ৩০ বছর ধরে মাছ ধরছেন যুক্তরাষ্ট্রের জন ড্রুইন। তার কাছ থেকে জানা যায়, গলদা চিংড়ির জাল পাতা নিয়ে দুই দেশের জেলেদের বহু সংঘর্ষ হয়েছে। অনেকেই আহত হয়েছেন। অনেকেরেই অঙ্গহানি হয়েছে। যখনই কেউ কারও পাতা জালের সীমার মধ্যে পড়ে যান, তখনই সংঘর্ষ বাধে। এ রকমই এক মারামারির পরে তার এক বন্ধুর বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে ফেলতে হয়েছে।

অষ্টাদশ শতকের শুরু থেকেই ২৭৭ বর্গকিলোমিটার এই গ্রে জোন নিয়ে বিবাদ দুই অংশের মানুষের মধ্যে। ১৯৮৪ সালে এসে একটি আন্তর্জাতিক আদালত সিদ্ধান্ত দেয়, এখানে দুই দেশের মানুষেরই মাছ ধরার অধিকার আছে।

মিত্র হিসেবে পরিচিত দুই দেশের মধ্যে এই দ্বীপটি একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয়ে রয়েছে। তা বাদে এই দুই দেশের সম্পর্ক ভালোই ছিল।

কিন্তু সেই সম্পর্কে পরিবর্তন আসতে শুরু করে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে।

দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর কানাডার ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প বারবার বলে চলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হবে কানাডা। সত্যিই কি যুক্তরাষ্ট্র কানাডাকে অঙ্গীভূত করতে চাইছে? তা যাই হোক না, ট্রাম্পের মনে তো নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে। কী চাইছেন তিনি কানাডার কাছে?

চিংড়ি যুদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্রে যত শহর আছে, তার মধ্যে এই গ্রে জোনের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত কাটলার। এখানে ছড়ানো ছিটানো কিছু বাড়ি। আর আছে একজন চিংড়ির আড়তদারের সরবরাহ কেন্দ্র। অবসরভোগী ও বেড়াতে আসা মানুষজন ছাড়াও আর যে জিনিসটির ওপর শহরটি টিকে আছে সেটি কাঁকড়া। এই কাঁকড়া বা চিংড়ির জেলে যারা আছেন, তারা গ্রে জোন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে ঝামেলা, তার প্রাত্যহিক ভুক্তভোগী।

চিংড়ি ধরার মৌসুমে দুই দেশের জেলেরা প্রতিযোগিতা করে এখানে জাল পাতে। জীবন-জীবিকার জন্য লিপ্ত হয় এক ভীষণ প্রতিযোগিতায়। জাল পাতা নিয়ে প্রায়ই এখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে দুই দেশের

নাগরিকদের মধ্যে।

ড্রুইন বলেন, কাহাতক? আমি মরার আগ পর্যন্ত এই ঝামেলা নিয়ে কথা বলবো।

মেইনেরই আরেক জেলে, নিক লেমি বলেন, এখান থেকে গত কয়েক বছরে তার এবং তার ছেলের প্রায় ২০০ জাল চুরি হয়েছে।

আর এই ঘটনার জন্য কানাডা থেকে আসা জেলেদেরই দায়ী করেন তিনি।

তিনি বলেন, এটা আমাদের এলাকা এবং এটা ছাড়া আমাদের করার আর কিছু নেই।

এখানে যা ঘটে চলেছে, তা আমাদের জন্য ঠিক না। বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের এই জেলেরা মনে করেন, মাছ ধরার ক্ষেত্রে কানাডার জেলেরা তাদের আইনের কারণে বেশ সুবিধা পায়, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের নেই।

এদিকে কানাডার মৎস্য সম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছে, কানাডার আইনগত পদক্ষেপের জবাব যুক্তরাষ্ট্র দিচ্ছে সহিংস উপায়ে। আর সে কারণেই কানাডার অনেক কর্মকর্তাই এই গ্রে জোনে কাজ করতে চান না।

এই ম্যাকিয়াস সিলে সমুদ্র চলাচলের সুবিধার্থে একটি বাতিঘর আছে। তবে কানাডা তাদের জেলেদের জন্য বাড়তি প্রযুক্তিগত সুবিধাদির ব্যবস্থা করে।

আর যুক্তরাষ্ট্রের জেলেরা বলছে, এই দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এর নিয়ন্ত্রণ নেয়।

সীমান্তে একগাদা সমস্যা

তবে এই সমস্যার সহসাই কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না। তবে ট্রাম্পের প্রথম টার্মে গ্রে জোনের বিষয়টা থাকলেও দুই দেশের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়নি।

২০১৭ সালে ট্রাম্পের নিমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেসময় ট্রাম্প কানাডার সঙ্গে তার দেশের বিশেষ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, এই দুই দেশের সম্পর্ক শুধু সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তার চেয়েও অনেক বড়।

তবে এখন আর সেই অবস্থানে নেই ট্রাম্প।

গত কয়েক মাসে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার কথা বলার পাশাপাশি কানাডার সঙ্গে একগাদা সীমান্ত সমস্যা সামনে নিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।

গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কানাডা নিয়ন্ত্রিত ব্রিটিশ কলম্বিয়া সেচে পানি আনা হবে খরাক্রান্ত ক্যালিফোর্নিয়ার জন্য।

এছাড়া পূর্ব দিকে ১৫০০ কিলোমিটার দূরে যে গ্রেট লেক রয়েছে, সেটা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সেখানে দুই দেশের মধ্যে পরিবেশ রক্ষার অভিন্ন আইনের বিষয়ে যে চুক্তিগুলো আছে, সেগুলো থেকে সরে সেগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসবে।

আরও পূর্বে দুই দেশের ভারমন্ট-কুইবেক সীমান্তে হাসকেল ফ্রি লাইব্রেরি এবং এর পাশের একটি অপেরা হাউস ছিল দুই দেশের মানুষের মধ্যে মিলনমেলার কেন্দ্র, মৈত্রীর প্রতীক।

গত মার্চ মাসে কানাডিয়ানদের জন্য বেশ কিছু নিয়মে পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন সেই জায়গায় যেতে গেলে কানাডার নাগরিকদের পাস নিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট বলছে, মাদকের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

প্রাকৃতিক সম্পদের যুদ্ধ

এই উত্তেজনার আরেক উৎস প্রাকৃতিক সম্পদ। কানাডার বেশ কিছু দুর্লভ পদার্থের খনি আছে। ধাতু, স্বর্ণ, তেল, কয়লা ও কাঠ বরাবরই ট্রাম্পের কাছে এগুলোর বিশেষ গুরুত্ব।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে কানাডার ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রুডো বলেন, আমাদের কাছে কী পরিমাণ মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, যুক্তরাষ্ট্র যে শুধু সেই সম্পর্কে জানে তাই নয়, সেগুলো তারা নিতে চায় বলেই তারা অঙ্গরাজ্য করার কথাটা বারবার বলছে।

কানাডার একজন শীর্ষ সাংবাদিক জর্ডান হিথ-রলিংস মনে করেন, আসলে ট্রাম্প কানাডার প্রাকৃতিক সম্পদ নিতে চান। তাই তার কানাডা দখল করার কথা খুব সিরিয়াসলি নেয়া দরকার।

হিথ রলিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জায়গা দখল করার স্বপ্ন দেখে। তিনি সম্ভবত আর্কটিকও চান। সামনের বছরগুলোতে সেটার গুরুত্বও অনেক বাড়বে।

মার্চ মাসে ট্রাম্প এও বলেছিলেন, আপনারা যদি মানচিত্র দেখেন, দেখবেন আমাদের পূর্বসূরিদের কেউ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা রেখা টেনে রেখে গেছে। আমার কাছে বিষয়টা মোটেই বোধগম্য নয়।

বলার অপেক্ষা রাখে না ট্রাম্পের এই মন্তব্য কানাডার নেতাদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

মার্চ মাসেই ট্রুডো বলেছেন, ট্রাম্প কানাডার অর্থনীতি ধ্বংস করতে চান, কেননা তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশে পরিণত করতে চান।

এর আগে ট্রাম্প যখন শুল্ক বাড়িয়েছিলেন, তখনও ট্রুডো একই কথা বলেছিলেন।

এখন এটাই বিশ্বের এক বড় বিস্ময় হয়ে দেখা দিয়েছে, যেই কানাডা সব দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এত বড় মিত্র, তার সঙ্গে সম্পর্ককে এমন জায়গায় তিনি কেন নিয়ে যাচ্ছেন।

ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে ব্যতিক্রমী পররাষ্ট্র নীতি

যুক্তরাষ্ট্র কানাডা, গ্রীনল্যান্ড ও পানামা খাল নিয়ে তার যে নতুন রাজনৈতিক অবস্থান ঘোষণা করেছে, তাতে অনেকেই মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে তার অবস্থান নতুন রূপ দিতে চাচ্ছে।

মার্কো রুবিওর একটি বক্তব্যেও তেমনটিই মনে হয়। জানুয়ারি মাসে তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ব্যতিক্রমী পন্থায়ই তার অবস্থান সৃষ্টি করেছে।

আজকের বিশ্বে শক্তি অনেকগুলো। রাশিয়া, চীন। আবার এদিকে ইরান ও উত্তর কোরিয়া।

এ বিষয়ে অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল উইলিয়াম বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন বুঝতে পারছেন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব টিকছে না বা তারা নিজেরাও চাইছে না। ফলে তারা বিভিন্ন সংঘাত থেকে নিজেদের উঠিয়ে নিচ্ছে।

সে কারণেই নিজের মহাদেশকে কেন্দ্র করে দুর্গ তৈরি করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। আর কানাডার যেহেতু সেই জন্য প্রয়োজনীয় অঢেল সম্পদ আছে, সেগুলোর সুবিধাকে যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেই যুক্তরাষ্ট্র এগোচ্ছে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।

ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ মিলে বিশ্বের ক্ষমতার যে মেরুকরণ ছিল, তা গড়ে উঠেছিল ১৮২০ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর নীতির ভিত্তিতে। যে কারণেই হোক, ট্রাম্প তা আমূল পাল্টে দিয়েছেন।

বিবিসি অবলম্বনে মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক

ছবি

সাম্য হত্যাকাণ্ড: ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের, শাহবাগ থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি

ইশরাককে মেয়র ঘোষণা: আইনী পরামর্শ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠি

ছবি

বিডিআর বিদ্রোহ: কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি ২৭ জনের

পশুর হাটে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর থাকবে: ডিএমপি

প্রতারণার বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ

দেশের গণমাধ্যম অবারিত স্বাধীনতা ভোগ করছে: প্রেস সচিব

ছবি

পলিসি ব্রেকফাস্ট: নির্মল বায়ু আইন তৈরি ও জ্বালানি নীতিমালা হালনাগাদের দাবি

কলেজ থেকে তুলে নিয়ে দল বেঁধে ধর্ষণ, তিন জনের যাবজ্জীবন

ছবি

সাম্য হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে: রিজভী

ছবি

খুমেক : অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা, সংক্রামক রোগের ঝুঁকি

মোকতাদির ও আরিফসহ ৬ জনের দেশত্যাগ নিষেধ

জাপানের কাছে আরও বেশি ঋণ ও বাজেট সহায়তা চায় বাংলাদেশ

উপদেষ্টা মাহফুজকে বোতল ছুড়লো কে? ‘খুঁজছে’ পুলিশ

কিছু প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো খুব কঠিন : বাসদ

দুই উপদেষ্টার সাবেক এপিএস, পিও ও এনসিপি নেতাকে ডেকেছে দুদক

নগদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অস্থিরতা শুরু

শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন, ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে সূচক

ছবি

দাবি আদায়ে জগন্নাথে ‘শাটডাউন’: তিন দফার সঙ্গে ‘পুলিশি হামলার’ বিচারের দাবি আন্দোলনকারীদের

ছবি

ছাত্রদল নেতাদের ‘তুই’ সম্বোধনে ক্ষোভ, উপাচার্যের সমালোচনায় রিজভী

ছবি

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের পরিচয়পত্র পেশ অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে ভারত

ছবি

জবির যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিতে এত গড়িমসি কেন? প্রশ্ন সারজিসের

সাবেক সেনাসদস্যদের প্রতি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ: আইএসপিআর

ছবি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নিরাপদ করতে সাত দফা সিদ্ধান্ত

ছবি

আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেটা, উপদেষ্টার ওপর বোতল নিক্ষেপে উত্তপ্ত কাকরাইল

ছবি

‘চল চল যমুনা যাই’ এই রাজনীতি আর হতে দেব না : মাহফুজ আলম

তারিক সিদ্দিকীর সাড়ে ৬ কোটি টাকা অবরুদ্ধের আদেশ

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাজশাহী নার্সিং কলেজ

‘লও ঠেলা’ গ্যাংয়ের ৯ সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

লরি ঠেলে সন্তানকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা, সারারাত দাঁড়িয়ে ছিল মা হাতি

ছবি

নগদের বিরুদ্ধে ২৩শ’ কোটি টাকার ‘দুর্নীতি’ ও ‘অর্থ পাচার প্রমাণের’ কথা জানালো দুদক

ছবি

নার্সিং শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ, আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট

ছবি

তীব্র গরমে চরম স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন গর্ভবতীরা

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা সেরাদের হাতে দিতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ঢাবি ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা : উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে মিছিল-সমাবেশ

আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারিয়েছেন টিউলিপ : দুদক চেয়ারম্যান

ছবি

সীমান্ত দিয়ে আরও ৬০ জনকে ঠেলে দিলো বিএসএফ

tab

জাতীয়

কানাডার কাছ থেকে আসলে কী চাইছেন ট্রাম্প

সংবাদ রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

উত্তর আমেরিকার মানচিত্রে ছোট্ট একটি বিন্দু ম্যাকিয়াস সিল। পাথরের টুকরোর মতো একটি দ্বীপ। কুয়াশায় ঢাকা। কোনো মানুষ থাকে না। তবুও দ্বীপটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে বিবদমান যে গ্রে জোন, তার মধ্যে পড়েছে এটি।

এই দ্বীপ ও তার আশপাশের জলসীমার মালিকানা এবং তাতে মাছ শিকারের অধিকার নিয়ে বিরোধ দুই বৃহৎ প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে।

ম্যাকিয়াস সিল দ্বীপের চারপাশে যে সাগর তা গলদা চিংড়ির জন্য বিখ্যাত। একপাশে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য মেইন, আরেক পাশে কানাডার নিউ ব্রান্সউইক। গলদা চিংড়ি শিকার নিয়ে এই দুই পারের মানুষের মধ্যে বহু সংঘাত হয়েছে।

এখানেই ৩০ বছর ধরে মাছ ধরছেন যুক্তরাষ্ট্রের জন ড্রুইন। তার কাছ থেকে জানা যায়, গলদা চিংড়ির জাল পাতা নিয়ে দুই দেশের জেলেদের বহু সংঘর্ষ হয়েছে। অনেকেই আহত হয়েছেন। অনেকেরেই অঙ্গহানি হয়েছে। যখনই কেউ কারও পাতা জালের সীমার মধ্যে পড়ে যান, তখনই সংঘর্ষ বাধে। এ রকমই এক মারামারির পরে তার এক বন্ধুর বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে ফেলতে হয়েছে।

অষ্টাদশ শতকের শুরু থেকেই ২৭৭ বর্গকিলোমিটার এই গ্রে জোন নিয়ে বিবাদ দুই অংশের মানুষের মধ্যে। ১৯৮৪ সালে এসে একটি আন্তর্জাতিক আদালত সিদ্ধান্ত দেয়, এখানে দুই দেশের মানুষেরই মাছ ধরার অধিকার আছে।

মিত্র হিসেবে পরিচিত দুই দেশের মধ্যে এই দ্বীপটি একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয়ে রয়েছে। তা বাদে এই দুই দেশের সম্পর্ক ভালোই ছিল।

কিন্তু সেই সম্পর্কে পরিবর্তন আসতে শুরু করে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে।

দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর কানাডার ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প বারবার বলে চলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হবে কানাডা। সত্যিই কি যুক্তরাষ্ট্র কানাডাকে অঙ্গীভূত করতে চাইছে? তা যাই হোক না, ট্রাম্পের মনে তো নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে। কী চাইছেন তিনি কানাডার কাছে?

চিংড়ি যুদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্রে যত শহর আছে, তার মধ্যে এই গ্রে জোনের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত কাটলার। এখানে ছড়ানো ছিটানো কিছু বাড়ি। আর আছে একজন চিংড়ির আড়তদারের সরবরাহ কেন্দ্র। অবসরভোগী ও বেড়াতে আসা মানুষজন ছাড়াও আর যে জিনিসটির ওপর শহরটি টিকে আছে সেটি কাঁকড়া। এই কাঁকড়া বা চিংড়ির জেলে যারা আছেন, তারা গ্রে জোন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে ঝামেলা, তার প্রাত্যহিক ভুক্তভোগী।

চিংড়ি ধরার মৌসুমে দুই দেশের জেলেরা প্রতিযোগিতা করে এখানে জাল পাতে। জীবন-জীবিকার জন্য লিপ্ত হয় এক ভীষণ প্রতিযোগিতায়। জাল পাতা নিয়ে প্রায়ই এখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে দুই দেশের

নাগরিকদের মধ্যে।

ড্রুইন বলেন, কাহাতক? আমি মরার আগ পর্যন্ত এই ঝামেলা নিয়ে কথা বলবো।

মেইনেরই আরেক জেলে, নিক লেমি বলেন, এখান থেকে গত কয়েক বছরে তার এবং তার ছেলের প্রায় ২০০ জাল চুরি হয়েছে।

আর এই ঘটনার জন্য কানাডা থেকে আসা জেলেদেরই দায়ী করেন তিনি।

তিনি বলেন, এটা আমাদের এলাকা এবং এটা ছাড়া আমাদের করার আর কিছু নেই।

এখানে যা ঘটে চলেছে, তা আমাদের জন্য ঠিক না। বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের এই জেলেরা মনে করেন, মাছ ধরার ক্ষেত্রে কানাডার জেলেরা তাদের আইনের কারণে বেশ সুবিধা পায়, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের নেই।

এদিকে কানাডার মৎস্য সম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছে, কানাডার আইনগত পদক্ষেপের জবাব যুক্তরাষ্ট্র দিচ্ছে সহিংস উপায়ে। আর সে কারণেই কানাডার অনেক কর্মকর্তাই এই গ্রে জোনে কাজ করতে চান না।

এই ম্যাকিয়াস সিলে সমুদ্র চলাচলের সুবিধার্থে একটি বাতিঘর আছে। তবে কানাডা তাদের জেলেদের জন্য বাড়তি প্রযুক্তিগত সুবিধাদির ব্যবস্থা করে।

আর যুক্তরাষ্ট্রের জেলেরা বলছে, এই দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এর নিয়ন্ত্রণ নেয়।

সীমান্তে একগাদা সমস্যা

তবে এই সমস্যার সহসাই কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না। তবে ট্রাম্পের প্রথম টার্মে গ্রে জোনের বিষয়টা থাকলেও দুই দেশের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়নি।

২০১৭ সালে ট্রাম্পের নিমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেসময় ট্রাম্প কানাডার সঙ্গে তার দেশের বিশেষ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, এই দুই দেশের সম্পর্ক শুধু সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তার চেয়েও অনেক বড়।

তবে এখন আর সেই অবস্থানে নেই ট্রাম্প।

গত কয়েক মাসে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার কথা বলার পাশাপাশি কানাডার সঙ্গে একগাদা সীমান্ত সমস্যা সামনে নিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।

গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কানাডা নিয়ন্ত্রিত ব্রিটিশ কলম্বিয়া সেচে পানি আনা হবে খরাক্রান্ত ক্যালিফোর্নিয়ার জন্য।

এছাড়া পূর্ব দিকে ১৫০০ কিলোমিটার দূরে যে গ্রেট লেক রয়েছে, সেটা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সেখানে দুই দেশের মধ্যে পরিবেশ রক্ষার অভিন্ন আইনের বিষয়ে যে চুক্তিগুলো আছে, সেগুলো থেকে সরে সেগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসবে।

আরও পূর্বে দুই দেশের ভারমন্ট-কুইবেক সীমান্তে হাসকেল ফ্রি লাইব্রেরি এবং এর পাশের একটি অপেরা হাউস ছিল দুই দেশের মানুষের মধ্যে মিলনমেলার কেন্দ্র, মৈত্রীর প্রতীক।

গত মার্চ মাসে কানাডিয়ানদের জন্য বেশ কিছু নিয়মে পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন সেই জায়গায় যেতে গেলে কানাডার নাগরিকদের পাস নিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট বলছে, মাদকের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

প্রাকৃতিক সম্পদের যুদ্ধ

এই উত্তেজনার আরেক উৎস প্রাকৃতিক সম্পদ। কানাডার বেশ কিছু দুর্লভ পদার্থের খনি আছে। ধাতু, স্বর্ণ, তেল, কয়লা ও কাঠ বরাবরই ট্রাম্পের কাছে এগুলোর বিশেষ গুরুত্ব।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে কানাডার ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রুডো বলেন, আমাদের কাছে কী পরিমাণ মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, যুক্তরাষ্ট্র যে শুধু সেই সম্পর্কে জানে তাই নয়, সেগুলো তারা নিতে চায় বলেই তারা অঙ্গরাজ্য করার কথাটা বারবার বলছে।

কানাডার একজন শীর্ষ সাংবাদিক জর্ডান হিথ-রলিংস মনে করেন, আসলে ট্রাম্প কানাডার প্রাকৃতিক সম্পদ নিতে চান। তাই তার কানাডা দখল করার কথা খুব সিরিয়াসলি নেয়া দরকার।

হিথ রলিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জায়গা দখল করার স্বপ্ন দেখে। তিনি সম্ভবত আর্কটিকও চান। সামনের বছরগুলোতে সেটার গুরুত্বও অনেক বাড়বে।

মার্চ মাসে ট্রাম্প এও বলেছিলেন, আপনারা যদি মানচিত্র দেখেন, দেখবেন আমাদের পূর্বসূরিদের কেউ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা রেখা টেনে রেখে গেছে। আমার কাছে বিষয়টা মোটেই বোধগম্য নয়।

বলার অপেক্ষা রাখে না ট্রাম্পের এই মন্তব্য কানাডার নেতাদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

মার্চ মাসেই ট্রুডো বলেছেন, ট্রাম্প কানাডার অর্থনীতি ধ্বংস করতে চান, কেননা তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশে পরিণত করতে চান।

এর আগে ট্রাম্প যখন শুল্ক বাড়িয়েছিলেন, তখনও ট্রুডো একই কথা বলেছিলেন।

এখন এটাই বিশ্বের এক বড় বিস্ময় হয়ে দেখা দিয়েছে, যেই কানাডা সব দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এত বড় মিত্র, তার সঙ্গে সম্পর্ককে এমন জায়গায় তিনি কেন নিয়ে যাচ্ছেন।

ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে ব্যতিক্রমী পররাষ্ট্র নীতি

যুক্তরাষ্ট্র কানাডা, গ্রীনল্যান্ড ও পানামা খাল নিয়ে তার যে নতুন রাজনৈতিক অবস্থান ঘোষণা করেছে, তাতে অনেকেই মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে তার অবস্থান নতুন রূপ দিতে চাচ্ছে।

মার্কো রুবিওর একটি বক্তব্যেও তেমনটিই মনে হয়। জানুয়ারি মাসে তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ব্যতিক্রমী পন্থায়ই তার অবস্থান সৃষ্টি করেছে।

আজকের বিশ্বে শক্তি অনেকগুলো। রাশিয়া, চীন। আবার এদিকে ইরান ও উত্তর কোরিয়া।

এ বিষয়ে অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল উইলিয়াম বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন বুঝতে পারছেন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব টিকছে না বা তারা নিজেরাও চাইছে না। ফলে তারা বিভিন্ন সংঘাত থেকে নিজেদের উঠিয়ে নিচ্ছে।

সে কারণেই নিজের মহাদেশকে কেন্দ্র করে দুর্গ তৈরি করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। আর কানাডার যেহেতু সেই জন্য প্রয়োজনীয় অঢেল সম্পদ আছে, সেগুলোর সুবিধাকে যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেই যুক্তরাষ্ট্র এগোচ্ছে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।

ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ মিলে বিশ্বের ক্ষমতার যে মেরুকরণ ছিল, তা গড়ে উঠেছিল ১৮২০ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর নীতির ভিত্তিতে। যে কারণেই হোক, ট্রাম্প তা আমূল পাল্টে দিয়েছেন।

বিবিসি অবলম্বনে মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক

back to top