বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত -পিআইডি
হয়রানিমূলক মামলায় জরিমানা বৃদ্ধি, নির্দিষ্ট সময়ে বিচার সম্পন্ন করা এবং সমন জারিতে ডিজিটাল যোগাযোগ (টেলিফোন ও খুদে বার্তা) মাধ্যম ব্যবহার করার সুযোগ রেখে সিভিল প্রসিডিউর কোড বা দেওয়ানি কার্যবিধি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
টেলিফোনেও সমন জারি হবে
ভুয়া মামলায় জরিমানা বৃদ্ধি
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে দুটি অধ্যাদেশ প্রস্তুত হচ্ছে
অভিন্ন নদীর হিস্যা ভাগাভাগি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে সইয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত
বৃহস্পতিবার,(১৭ এপ্রিল) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ কথা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই প্রথম দুটি অধ্যাদেশ প্রস্তুত করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সিভিল প্রসিডিউর কোড (সিপিসি) কিছু কিছু পরিবর্তন আনার জন্য সুপারিশ করেছিল। সে অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার প্রণীত সিপিসি কিছু কিছু সংশোধন নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছে।
এই সংশোধনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো যেন দ্রূত শেষ করা যায় সেজন্য সিপিসির কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে, যাতে বিচারপ্রার্থীদের সময় ও অর্থ কম খরচ হয়। নানান অজুহাতে মামলার প্রক্রিয়া যাতে বিলম্বিত না হয়।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি কথা আছে, কারও সঙ্গে শত্রুতা করলে ভূমির মামলা দিয়ে দাও। তাহলে তিন প্রজন্মেও সেই মামলা আর শেষ হবে না। তাই সেই তিন প্রজন্ম যেন না লাগে, এক প্রজন্মেই যেন শেষ করা যায় সে জন্য সিপিসির কিছু সংশোধনী আনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যাতে করে বিচারের সময় কম লাগে, টাকা কম লাগে।’
যেসব পরিবর্তন আসছে :
* আগে একটা মামলার রায় হয়ে যাওয়ার পর জারি মামলা (মোকদ্দমা) করতে হতো সেই রায় কার্যকরের জন্য। এখন থেকে রায়ের মধ্যেই বাস্তবায়নের বিষয়টি যুক্ত করে দেয়া হবে।
* বিভিন্ন সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। সংশোধিত দেওয়ানি কার্যবিধিতে বলে দেয়া হয়েছে, সর্বোচ্চ কতবার সময় নেয়া যাবে।
* তালিকায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য কয়টা মামলা নেয়া যাবে এবং আংশিক শুনানির জন্য কয়টা মামলা নেয়া যাবে সেটাও ঠিক করে দেয়া হবে।
* বিচারপ্রক্রিয়া অনেকাংশেই পুরনো পদ্ধতিতে রয়ে গেছে। আগের মতো আর সমন জারি হবে না। টেলিফোন, এসএমএস বা অন্যান্য আধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতি অবলম্বন করে সমন জারি করা হবে।
* কাউকে ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্য ভুয়া মামলা করার সুযোগ কমে যাবে। আগে ভুয়া মামলার শাস্তি ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন সেটা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
অভিন্ন নদীর হিস্যা ভাগাভাগি :
উপদেষ্টা পরিষদ অভিন্ন নদীর হিস্যা ভাগাভাগি সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক আইনে স্বাক্ষরের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।
অভিন্ন জলরাশির পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুটি আইন রয়েছে। একটি হচ্ছে ১৯৯৭ কনভেনশন, যা ২০১৪ সালে কার্যকর হয়। উজানের দেশগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ৩৬টি দেশের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়েছিল। সেটা পেতে ১৭ বছর সময় লেগে যায়।
১৯৯২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে লক্ষ্য ধরে একটি আইন করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে এই আইন সব দেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে ১১টি দেশ এই আইনে স্বাক্ষর করেছে, যাদের বেশিরভাগ হচ্ছে আফ্রিকার দেশ।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘অভিন্ন নদীর হিস্যা ভাগাভাগি নিয়ে আন্তর্জাতিক একটি আইনে স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই ১৯৯২ সালের কনভেনশনটা অনুস্বাক্ষর করবো। এ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলাপ আলোচনা করাসহ যাবতীয় কাজ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কনভেনশন অন দ্য প্রটেকশন অ্যান্ড ইউজ অফ ট্রান্সবাউন্ডারি ওয়াটার কোর্সেস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লেকস-১৯৯২ এ বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করবে। বাংলাদেশকে দিয়েই এশিয়ার দেশগুলোর স্বাক্ষর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত -পিআইডি
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
হয়রানিমূলক মামলায় জরিমানা বৃদ্ধি, নির্দিষ্ট সময়ে বিচার সম্পন্ন করা এবং সমন জারিতে ডিজিটাল যোগাযোগ (টেলিফোন ও খুদে বার্তা) মাধ্যম ব্যবহার করার সুযোগ রেখে সিভিল প্রসিডিউর কোড বা দেওয়ানি কার্যবিধি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
টেলিফোনেও সমন জারি হবে
ভুয়া মামলায় জরিমানা বৃদ্ধি
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে দুটি অধ্যাদেশ প্রস্তুত হচ্ছে
অভিন্ন নদীর হিস্যা ভাগাভাগি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে সইয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত
বৃহস্পতিবার,(১৭ এপ্রিল) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ কথা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই প্রথম দুটি অধ্যাদেশ প্রস্তুত করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সিভিল প্রসিডিউর কোড (সিপিসি) কিছু কিছু পরিবর্তন আনার জন্য সুপারিশ করেছিল। সে অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার প্রণীত সিপিসি কিছু কিছু সংশোধন নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছে।
এই সংশোধনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো যেন দ্রূত শেষ করা যায় সেজন্য সিপিসির কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে, যাতে বিচারপ্রার্থীদের সময় ও অর্থ কম খরচ হয়। নানান অজুহাতে মামলার প্রক্রিয়া যাতে বিলম্বিত না হয়।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি কথা আছে, কারও সঙ্গে শত্রুতা করলে ভূমির মামলা দিয়ে দাও। তাহলে তিন প্রজন্মেও সেই মামলা আর শেষ হবে না। তাই সেই তিন প্রজন্ম যেন না লাগে, এক প্রজন্মেই যেন শেষ করা যায় সে জন্য সিপিসির কিছু সংশোধনী আনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যাতে করে বিচারের সময় কম লাগে, টাকা কম লাগে।’
যেসব পরিবর্তন আসছে :
* আগে একটা মামলার রায় হয়ে যাওয়ার পর জারি মামলা (মোকদ্দমা) করতে হতো সেই রায় কার্যকরের জন্য। এখন থেকে রায়ের মধ্যেই বাস্তবায়নের বিষয়টি যুক্ত করে দেয়া হবে।
* বিভিন্ন সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। সংশোধিত দেওয়ানি কার্যবিধিতে বলে দেয়া হয়েছে, সর্বোচ্চ কতবার সময় নেয়া যাবে।
* তালিকায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য কয়টা মামলা নেয়া যাবে এবং আংশিক শুনানির জন্য কয়টা মামলা নেয়া যাবে সেটাও ঠিক করে দেয়া হবে।
* বিচারপ্রক্রিয়া অনেকাংশেই পুরনো পদ্ধতিতে রয়ে গেছে। আগের মতো আর সমন জারি হবে না। টেলিফোন, এসএমএস বা অন্যান্য আধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতি অবলম্বন করে সমন জারি করা হবে।
* কাউকে ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্য ভুয়া মামলা করার সুযোগ কমে যাবে। আগে ভুয়া মামলার শাস্তি ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন সেটা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
অভিন্ন নদীর হিস্যা ভাগাভাগি :
উপদেষ্টা পরিষদ অভিন্ন নদীর হিস্যা ভাগাভাগি সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক আইনে স্বাক্ষরের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।
অভিন্ন জলরাশির পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুটি আইন রয়েছে। একটি হচ্ছে ১৯৯৭ কনভেনশন, যা ২০১৪ সালে কার্যকর হয়। উজানের দেশগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ৩৬টি দেশের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়েছিল। সেটা পেতে ১৭ বছর সময় লেগে যায়।
১৯৯২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে লক্ষ্য ধরে একটি আইন করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে এই আইন সব দেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে ১১টি দেশ এই আইনে স্বাক্ষর করেছে, যাদের বেশিরভাগ হচ্ছে আফ্রিকার দেশ।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘অভিন্ন নদীর হিস্যা ভাগাভাগি নিয়ে আন্তর্জাতিক একটি আইনে স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই ১৯৯২ সালের কনভেনশনটা অনুস্বাক্ষর করবো। এ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলাপ আলোচনা করাসহ যাবতীয় কাজ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কনভেনশন অন দ্য প্রটেকশন অ্যান্ড ইউজ অফ ট্রান্সবাউন্ডারি ওয়াটার কোর্সেস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লেকস-১৯৯২ এ বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করবে। বাংলাদেশকে দিয়েই এশিয়ার দেশগুলোর স্বাক্ষর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।’