রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদ বদল ‘চায় না’ দলটি
এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শনিবার (২৬/ ০৪/ ২০২৫) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, অর্থাৎ ১০ বছরের বেশি নয়। এ প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে কিছু সংশোধনের প্রস্তাবের সঙ্গেও আমরা একমত হয়েছি। প্রস্তাব হলো, সংবিধান পরিবর্তন, বাজেট অনুমোদন এবং আস্থা ভোট ছাড়া অন্য বিষয়ে সংসদ সদস্যরা যে কোনো দল ও মতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন।
দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গঠনমূলক, ইতিবাচক, বাস্তবসম্মত সংস্কারে জামায়াতে ইসলামী পূর্ণ সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, ‘দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর বিষয়ে আমরা দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে চাই না। দেশ ও জাতির জন্য যেটা কল্যাণকর সেই কাজে, সেই পরিবর্তন ও সংস্কারে জামায়াত পরিপূর্ণভাবে ঐকমত্য পোষণ করে। আলোচনার ভিত্তিতে আরও কিছু প্রয়োজন হলে আমরা করব।’
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, আমরা ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল এখানে এসেছি। দীর্ঘ সময় আলোচনার পরও আমাদের আলোচনা অসমাপ্ত রয়েছে। বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ তাই আমরা তাড়াহুড়ো করছি না। আজকের আলোচনায় আমরা কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি, কিছু বিষয়ে নিজেদের প্রস্তাব দিয়েছি এবং কিছু বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে। সেজন্য সেগুলো আমরা পরের আলোচনার জন্য রেখেছি।
জাতীয় সংবিধান কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব নিয়েও নীতিগত একমত হয়েছে জামায়াত। ডা. তাহের জানান, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে এনসিসির সদস্য করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে জামায়াত। তাদের মতে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করায় এই দুজনকে কমিশনে না রাখাই উত্তম হবে।
ডা. তাহের বলেন, নির্বাচনে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালুর প্রস্তাবও আমরা দিয়েছি। এতে সারাদেশে একসঙ্গে নির্বাচন হবে মার্কা বা দলের ভিত্তিতে।যে দল যে পরিমাণ ভোট পাবে, সেই পরিমাণে সংসদে আসন নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশে নির্বাচনে যে দুর্নীতি, জবরদখল হচ্ছে এবং ভোটবিহীন নির্বাচনের যে ফলাফল হচ্ছে এটি তখন বন্ধ হয়ে যাবে। টাকার খেলাও বন্ধ হয়ে যাবে। এটা পৃথিবীর ৬০টির বেশি দেশে চর্চা হচ্ছে। দু-একটি প্রশ্ন ছাড়া এটা মোটামুটিভাবে কার্যকর বলে প্রমাণিত। গত তিন মেয়াদের নির্বাচন নিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য উত্তম হবে এবং অনেক ঝামেলা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো।
তিনি জানান, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবেও জামায়াত নীতিগতভাবে একমত হয়েছে, যাতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।
বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ বলেন, ‘আমরা দ্রুততার সঙ্গে একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে চাই, কিন্তু একইসঙ্গে এটাও স্মরণ করা দরকার যে, এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমরা আছি। যে বীর শহীদরা এই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে তাদের কাছে আমাদের একটি ঋণ আছে। আমাদের দিক থেকে যেমন সময়ের চাপ আছে তেমনি আমাদের একটি দায়িত্বও আছে।’
‘সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, এটা আসলে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার ফল। সংস্কারের তাগিদ রাজনৈতিক দল ও জনসমাজের কাছ থেকে এসেছে। সংস্কার কমিশনে দেয়া প্রস্তাব, সারাংশ ও মূল দিকগুলো নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব’, আলোচনা শুরুর আগে তিনি বলেন।
আলী রীয়াজ বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। এটা বাংলাদেশের গণমানুষের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার ফলাফল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনার উদ্দেশ্য থাকবে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা।
বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।
জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ এবং বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদ বদল ‘চায় না’ দলটি
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শনিবার (২৬/ ০৪/ ২০২৫) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, অর্থাৎ ১০ বছরের বেশি নয়। এ প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে কিছু সংশোধনের প্রস্তাবের সঙ্গেও আমরা একমত হয়েছি। প্রস্তাব হলো, সংবিধান পরিবর্তন, বাজেট অনুমোদন এবং আস্থা ভোট ছাড়া অন্য বিষয়ে সংসদ সদস্যরা যে কোনো দল ও মতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন।
দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গঠনমূলক, ইতিবাচক, বাস্তবসম্মত সংস্কারে জামায়াতে ইসলামী পূর্ণ সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, ‘দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর বিষয়ে আমরা দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে চাই না। দেশ ও জাতির জন্য যেটা কল্যাণকর সেই কাজে, সেই পরিবর্তন ও সংস্কারে জামায়াত পরিপূর্ণভাবে ঐকমত্য পোষণ করে। আলোচনার ভিত্তিতে আরও কিছু প্রয়োজন হলে আমরা করব।’
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, আমরা ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল এখানে এসেছি। দীর্ঘ সময় আলোচনার পরও আমাদের আলোচনা অসমাপ্ত রয়েছে। বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ তাই আমরা তাড়াহুড়ো করছি না। আজকের আলোচনায় আমরা কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি, কিছু বিষয়ে নিজেদের প্রস্তাব দিয়েছি এবং কিছু বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে। সেজন্য সেগুলো আমরা পরের আলোচনার জন্য রেখেছি।
জাতীয় সংবিধান কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব নিয়েও নীতিগত একমত হয়েছে জামায়াত। ডা. তাহের জানান, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে এনসিসির সদস্য করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে জামায়াত। তাদের মতে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করায় এই দুজনকে কমিশনে না রাখাই উত্তম হবে।
ডা. তাহের বলেন, নির্বাচনে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালুর প্রস্তাবও আমরা দিয়েছি। এতে সারাদেশে একসঙ্গে নির্বাচন হবে মার্কা বা দলের ভিত্তিতে।যে দল যে পরিমাণ ভোট পাবে, সেই পরিমাণে সংসদে আসন নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশে নির্বাচনে যে দুর্নীতি, জবরদখল হচ্ছে এবং ভোটবিহীন নির্বাচনের যে ফলাফল হচ্ছে এটি তখন বন্ধ হয়ে যাবে। টাকার খেলাও বন্ধ হয়ে যাবে। এটা পৃথিবীর ৬০টির বেশি দেশে চর্চা হচ্ছে। দু-একটি প্রশ্ন ছাড়া এটা মোটামুটিভাবে কার্যকর বলে প্রমাণিত। গত তিন মেয়াদের নির্বাচন নিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য উত্তম হবে এবং অনেক ঝামেলা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো।
তিনি জানান, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবেও জামায়াত নীতিগতভাবে একমত হয়েছে, যাতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।
বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ বলেন, ‘আমরা দ্রুততার সঙ্গে একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে চাই, কিন্তু একইসঙ্গে এটাও স্মরণ করা দরকার যে, এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমরা আছি। যে বীর শহীদরা এই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে তাদের কাছে আমাদের একটি ঋণ আছে। আমাদের দিক থেকে যেমন সময়ের চাপ আছে তেমনি আমাদের একটি দায়িত্বও আছে।’
‘সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, এটা আসলে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার ফল। সংস্কারের তাগিদ রাজনৈতিক দল ও জনসমাজের কাছ থেকে এসেছে। সংস্কার কমিশনে দেয়া প্রস্তাব, সারাংশ ও মূল দিকগুলো নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব’, আলোচনা শুরুর আগে তিনি বলেন।
আলী রীয়াজ বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। এটা বাংলাদেশের গণমানুষের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার ফলাফল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনার উদ্দেশ্য থাকবে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা।
বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।
জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ এবং বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।