উৎসবে খাসিয়া মেয়েরা -সংবাদ
খাসিয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একটি জাতিগত সম্প্রদায়। ভারতের আসাম রাজ্যের এবং বাংলাদেশে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এদের বসবাস রয়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের খাসি পাহাড়ে জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ খাসি জনগণ, আর এই খাসি পাহাড়ের নামে বা পাহাড় উপত্যকায় বসবাসকারীদের খাসি বা খাসিয়া নামে সম্বোধন করা হয়। জীবন ও জীবিকার তাড়নায় এরা একসময় পার্শ্ববর্তী আসাম ও ত্রিপুরায়ও ছড়িয়ে পড়ে। খাসি পাহাড়ি অঞ্চলের জনসংখ্যার ৭৮.৩% এবং মেঘালয় রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৮% হচ্ছে এই সম্প্রদায়ের লোক।
এরা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত। এদের গাত্রবর্ণ হরিদ্রাভ, নাক-মুখ চেপ্টা, চোয়াল উঁচু, চোখ কালো ও ছোট টানা এবং খর্বকায়। খাসিয়ারা প্রায় পাঁচ শতাধিক বছর আগে আসাম থেকে বাংলাদেশে আসে। আসামে এরা এসেছিল সম্ভবত তিববত থেকে।
বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভিতরেও এদের আগমন মূলত জীবিকারই সন্ধানে। নৃ-জাতিগোষ্ঠী হিসাবে খাসিয়ারা বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা, সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল এমনকি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় এদের বসবাস রয়েছে বলে জানা যায়।
পাহাড়ি এলাকার পাশাপাশি সমতল ভূমিকে এরা এদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত স্থান মনে করে। পৃথিবীর বিরল কয়েকটি মাতৃতান্ত্রিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই খাসিয়ারা হচ্ছে একটি। এক সময় খাসিয়ারা সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী থাকলেও বর্তমানে এই সম্প্রদায়ের বৃহৎ অংশ খ্রিষ্টধর্ম পালন করে।
এদের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে পান চাষ। খাসিয়া পান নামে পরিচিত এই অতি জনপ্রিয় পানের প্রায় পুরোটাই এই সম্প্রদায়ের লোকেরাই উৎপাদন করে থাকে।
খাসিয়ারা যেসব গ্রামে বসবাস করে সেগুলোকে খাসিয়া পুঞ্জি বলে। একেকটি পুঞ্জিতে গড়ে ৫০টির মতো খাসিয়া পরিবার বসবাস করে থাকে। প্রত্যেক খাসিয়াপুঞ্জি এক একজন নির্বাহী প্রধান কর্তৃক পরিচালিত হয়। খাসিয়া পুঞ্জির এই প্রধানকে মন্ত্রী বলে সম্বোধন করা হয়।
কমলগঞ্জ থেকে শ্রীমঙ্গল যাবার রাস্তার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত এই পুঞ্জিটি। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার পশ্চিমে। ঢাকা সিলেট রেল লাইনটিও এই পুঞ্জির পাশ দিয়ে চলে গেছে। এখানে প্রায় ৪০টির মতো খাসিয়া পরিবার বসবাস করে।
১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ডে অগ্নোৎপাত ঘটলে এখানে বসবাসরত খাসিয়ারা অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাদের জীবন, কর্ম ও পরিচিতি তৎকালীন সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও স্থানলাভ করে।
কমলগঞ্জ উপজেলার সর্বদক্ষিণে ইসলামপুর ইউনিয়নাধীন রাজকান্দি মৌজা ভুক্ত কুরমা খাসিয়া পুঞ্জিতে ২০ থেকে ২৫টির মতো খাসিয়া পরিবার বসবাস করে। এই পুঞ্জিতে বেশির ভাগ খাসিয়া খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাসী হলেও ৩/৪টি পরিবার হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে জানা যায়।
ডবলছড়া খাসিয়া পূঞ্জিটি শমসেরনগর চা বাগান পেরিয়ে ডবলছড়া চা বাগানের পাশে পাহাড়ি ঢালু এলাকায় অবস্থিত। শমসেরনগর ইউনিয়নাধীন ডবলছড়া খাসিয়াপুঞ্জিতে ৫০টির অধিক পরিবার রয়েছে বলে জানা যায়। এদের সকলেই খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাসী। ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে উৎপাদিত পান শমসেরনগর বাজারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নাধীন কালেঞ্জি পুঞ্জিতে প্রায় ৮০টিরও অধিক খাসিয়া পরিবার বসবাস করে। এটি উপজেলার সর্ববৃহৎ খাসিয়া পুঞ্জি। এদের উৎপাদিত পান ভানুগাছ বাজারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।
পাত্রখোলা খাসিয়াপুঞ্জি কমলগঞ্জ উপজেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত পাত্রখোলা চা বাগানে পাশে এই পুঞ্জিটির অবস্থান। এখানে খাসিয়া পরিবার রয়েছে প্রায় পঞ্চাশটি।
কমলগঞ্জ উপজেলায় উপরোক্ত খাসিয়াপুঞ্জি ছাড়াও কাঁটাবিল খাসিয়াপুঞ্জি ও খাসিপুর পুঞ্জি নামে ছোট দুটি পুঞ্জির অস্তিত্ব রয়েছে। মাঝে মধ্যে খাসিয়ারা পান চাষের সুবিধার্থে উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় অস্থায়ী পুঞ্জি গড়ে তোলে বলেও জানা যায়।
উৎসবে খাসিয়া মেয়েরা -সংবাদ
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
খাসিয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একটি জাতিগত সম্প্রদায়। ভারতের আসাম রাজ্যের এবং বাংলাদেশে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এদের বসবাস রয়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের খাসি পাহাড়ে জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ খাসি জনগণ, আর এই খাসি পাহাড়ের নামে বা পাহাড় উপত্যকায় বসবাসকারীদের খাসি বা খাসিয়া নামে সম্বোধন করা হয়। জীবন ও জীবিকার তাড়নায় এরা একসময় পার্শ্ববর্তী আসাম ও ত্রিপুরায়ও ছড়িয়ে পড়ে। খাসি পাহাড়ি অঞ্চলের জনসংখ্যার ৭৮.৩% এবং মেঘালয় রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৮% হচ্ছে এই সম্প্রদায়ের লোক।
এরা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত। এদের গাত্রবর্ণ হরিদ্রাভ, নাক-মুখ চেপ্টা, চোয়াল উঁচু, চোখ কালো ও ছোট টানা এবং খর্বকায়। খাসিয়ারা প্রায় পাঁচ শতাধিক বছর আগে আসাম থেকে বাংলাদেশে আসে। আসামে এরা এসেছিল সম্ভবত তিববত থেকে।
বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভিতরেও এদের আগমন মূলত জীবিকারই সন্ধানে। নৃ-জাতিগোষ্ঠী হিসাবে খাসিয়ারা বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা, সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল এমনকি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় এদের বসবাস রয়েছে বলে জানা যায়।
পাহাড়ি এলাকার পাশাপাশি সমতল ভূমিকে এরা এদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত স্থান মনে করে। পৃথিবীর বিরল কয়েকটি মাতৃতান্ত্রিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই খাসিয়ারা হচ্ছে একটি। এক সময় খাসিয়ারা সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী থাকলেও বর্তমানে এই সম্প্রদায়ের বৃহৎ অংশ খ্রিষ্টধর্ম পালন করে।
এদের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে পান চাষ। খাসিয়া পান নামে পরিচিত এই অতি জনপ্রিয় পানের প্রায় পুরোটাই এই সম্প্রদায়ের লোকেরাই উৎপাদন করে থাকে।
খাসিয়ারা যেসব গ্রামে বসবাস করে সেগুলোকে খাসিয়া পুঞ্জি বলে। একেকটি পুঞ্জিতে গড়ে ৫০টির মতো খাসিয়া পরিবার বসবাস করে থাকে। প্রত্যেক খাসিয়াপুঞ্জি এক একজন নির্বাহী প্রধান কর্তৃক পরিচালিত হয়। খাসিয়া পুঞ্জির এই প্রধানকে মন্ত্রী বলে সম্বোধন করা হয়।
কমলগঞ্জ থেকে শ্রীমঙ্গল যাবার রাস্তার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত এই পুঞ্জিটি। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার পশ্চিমে। ঢাকা সিলেট রেল লাইনটিও এই পুঞ্জির পাশ দিয়ে চলে গেছে। এখানে প্রায় ৪০টির মতো খাসিয়া পরিবার বসবাস করে।
১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ডে অগ্নোৎপাত ঘটলে এখানে বসবাসরত খাসিয়ারা অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাদের জীবন, কর্ম ও পরিচিতি তৎকালীন সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও স্থানলাভ করে।
কমলগঞ্জ উপজেলার সর্বদক্ষিণে ইসলামপুর ইউনিয়নাধীন রাজকান্দি মৌজা ভুক্ত কুরমা খাসিয়া পুঞ্জিতে ২০ থেকে ২৫টির মতো খাসিয়া পরিবার বসবাস করে। এই পুঞ্জিতে বেশির ভাগ খাসিয়া খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাসী হলেও ৩/৪টি পরিবার হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে জানা যায়।
ডবলছড়া খাসিয়া পূঞ্জিটি শমসেরনগর চা বাগান পেরিয়ে ডবলছড়া চা বাগানের পাশে পাহাড়ি ঢালু এলাকায় অবস্থিত। শমসেরনগর ইউনিয়নাধীন ডবলছড়া খাসিয়াপুঞ্জিতে ৫০টির অধিক পরিবার রয়েছে বলে জানা যায়। এদের সকলেই খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাসী। ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে উৎপাদিত পান শমসেরনগর বাজারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নাধীন কালেঞ্জি পুঞ্জিতে প্রায় ৮০টিরও অধিক খাসিয়া পরিবার বসবাস করে। এটি উপজেলার সর্ববৃহৎ খাসিয়া পুঞ্জি। এদের উৎপাদিত পান ভানুগাছ বাজারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।
পাত্রখোলা খাসিয়াপুঞ্জি কমলগঞ্জ উপজেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত পাত্রখোলা চা বাগানে পাশে এই পুঞ্জিটির অবস্থান। এখানে খাসিয়া পরিবার রয়েছে প্রায় পঞ্চাশটি।
কমলগঞ্জ উপজেলায় উপরোক্ত খাসিয়াপুঞ্জি ছাড়াও কাঁটাবিল খাসিয়াপুঞ্জি ও খাসিপুর পুঞ্জি নামে ছোট দুটি পুঞ্জির অস্তিত্ব রয়েছে। মাঝে মধ্যে খাসিয়ারা পান চাষের সুবিধার্থে উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় অস্থায়ী পুঞ্জি গড়ে তোলে বলেও জানা যায়।