alt

জাতীয়

আইএমএফের ঋণে অনিশ্চয়তা, ‘আর্থিক’ সংকট না হলেও ‘ইমেজ’ সংকটের আশঙ্কা

রেজাউল করিম : রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

শর্ত পূরণ না হওয়ায় আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই অর্থ পেতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন যৌথসভায় দুই দফা বৈঠক হয়েছে। তবে বিষয়টি সুরাহা হয়নি। বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ‘ঋণ না পেলে যে খুব সমস্যা হবে, বিষয়টি তা নয়। আমরা খুব একটা ভঙ্গুর অবস্থায় নেই।’

শর্তের বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি

গভর্নর বলছেন, ‘ঋণ না পেলেও সমস্যা হবে না।’

ইমেজ সংকটের আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, আইএমএফ শক্তিশালী বৈশ্বিক দাতা সংস্থা। চলমান ঋণের কিস্তি বন্ধ হয়ে গেলে এতে বিশ্বে ‘নেতিবাচক বার্তা’ যাবে। এটা বাংলাদেশের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট করবে’।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের সঙ্গে রাজস্ব বাড়ানোর বিষয়ে সমঝোতা হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু ডলারকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে এখনও সুরাহা হয়নি।

আর্থিক সংকটে ২০২২ সালে আইএমএফের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ। অনেক আলোচনা শেষে পরের বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। ঋণের সঙ্গে আর্থিক খাতের সংস্কার ও অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের জন্য বেশি কিছু পরামর্শ মানার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। ওই সব শর্ত প্রতিপালনের বিষয়টি পর্যালোচনা সাপেক্ষে ধাপে ধাপে আসছে ঋণের কিস্তিগুলো। ইতোমধ্যে ঋণের তিনটি কিস্তিতে ২২১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

তৃতীয় পর্যালোচনা শেষে গত ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় দেয়ার কথা ছিল সংস্থাটির। তবে সেই সভা না হওয়ায় কিস্তির ঋণ অনুমোদন বিলম্বিত হচ্ছে। ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে দেয়া শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আবার ঢাকায় এসেছিল আইএমএফের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল। সম্প্রতি তারা পর্যবেক্ষণ শেষে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সভার বৈঠক গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে। বসন্তকালীন বৈঠকের এক ফাঁকে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত বুধবার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আলাদা বৈঠক হয়। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ

মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপরও বিষয়টি সুরাহা হয়নি।

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘বাংলাদেশ-আইএমএফ প্রতিনিধিদের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হয়েছে। বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি। তবে আইএমএফ টাকা দেবে ধরে নিয়েই কিন্তু বৈঠক হয়েছে। যে শর্তের বিষয়ে আলোচনা চলছে তা নিয়ে একমত হতে পারেনি কোনো পক্ষ।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘তাদের সঙ্গে ঐকমত্য না হলেই যে খুব একটা সমস্যা হবে বিষয়টি তাও নয়। আমরা কিন্তু খুব একটা ভঙ্গুর অবস্থায় নেই। যা হয় তা-ই হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে চলছে সেভাবে চলবে।’

চতুর্থ কিস্তিতে অর্থ পেতে শর্ত ছিল চারটি। সেগুলো হলো- অর্থনীতির বহিঃচাপ সামাল দিতে রাজস্ব আদায় জোরদার করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে নীতিমালার বাস্তবায়ন। এর মধ্যে বিনিময় হার ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আইএমএফ সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

রোববার,(২৭ এপ্রিল ২০২৫) কথা হয় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন ঋণ না পেলেও কোন সমস্যা হবে না। সেটাই হয়তো ঠিক। কোনো আর্থিক সমস্যা নাও হতে পারে। তবে এতে বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট হবে। কারণ একটা অনুমোদিত ঋণ শর্ত পূরণ না করতে পেরে বাংলাদেশ পেল না এটা ভালো দেখাবে না।’

বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা একটা বিনিয়োগ সম্মেলন করলাম। সরকার সেটাকে সফল হয়েছে বলে দাবি করলো। এখন যদি আইএমএফের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা হয় তাহলে বিনিয়োগকারীরা হয়তো মনে করতে পারে, ‘যে দেশ বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ভালো লেনদেন করতে না পারে তাহলে আমাদের সঙ্গে কীভাবে করবে? অর্থাৎ বড় সংকট হবে ‘ইমেজ সংকট’।’

তবে আইএমএফ শর্ত দিয়েছে সে জন্য নয়, বাংলাদেশের কর-জিডিপি রেশিও অনেক দুর্বল অর্থনীতির দেশের চেয়েও কম। এর আগে আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সফরের সময় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘আইএমএফ রাজস্ব সংগ্রহের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে (কনসার্ন) দেখভাল করেছে। তারা জনায়, লাখ লাখ মানুষ জিরো রিটার্ন দেয়। বাংলাদেশের কর জিডিপি রেশিও সাড়ে ৭ শতাংশ। অন্যদিকে নেপালের ১২-১৩ শতাংশ। ভারতে ১৭-১৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়েও আমাদের কর-জিডিপি রেশিও কম। আমরা তাদের এসব বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ ও অগ্রগতি তাদের অবহিত করেছি।’

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আইএমএফ বলেছে তাই সংস্কারগুলো করতে হবে বিষয়টা তেমন নয়। এনবিআরে সংস্কার, ডলারকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়া, রাজস্ব বাড়ানো আমাদের দেশের ভালোর জন্যেই করতে হবে। যে কোনো সংস্কার করতে কষ্টই হয়। সরকার এই চ্যালেঞ্জটা নিতে পারে।’

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সভার সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ রাজস্ব বাড়ানোর বিষয়ে হয়তো সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু ডলারকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে এখনও সুরাহা হয়নি। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা এখনও পরিস্কার কিছু বুঝতে পারছি না যে কোনো বিষয়ে সুরাহা হয়েছে, আর কোন কোন বিষয় এখনও সুরাহা হয়নি। সরকার একবার বলছে, ঋণ পেতে সমস্যা হবে না। আরেকবার বলছে, ঋণ না নিলেও সমস্যা হবে না। বিষয়টি অস্পষ্ট।’

ছবি

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত, অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার

ছবি

টঙ্গীতে কারখানা বন্ধ ঘোষণায় শ্রমিক বিক্ষোভ

রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি ১৮ মে

ছবি

শিক্ষার্থীদের নিয়ে থানার কার্যক্রম পরিদর্শন

ঐকমত্যের বাইরে সংস্কারের প্রয়োজন নেই: আমীর খসরু

ছবি

আড়াই মাসেও অপহৃত লিখনের সন্ধান মেলেনি

নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার অনন্তলোকে

ছবি

২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, বাদ শেখ হাসিনা ও পরিবারের সদস্যদের নাম

ছবি

ওষুধ কেনার অর্থ নেই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের

ছবি

বিমান বাহিনীর বার্ষিক মহড়া চলছে

ছবি

শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার শুরু

ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে নিহতের কন্যার আত্মহত্যা

১৭ হাজার ৭৭৭ জন মালয়েশিয়া যেতে না পারার ‘সব দায়’ রিক্রুটিং এজেন্সির

ছবি

আরেক হত্যা মামলা : হাসিনার সঙ্গে অভিনেতা, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ আসামি ৪০৭

আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ

পাঠ্যবই মুদ্রণ: কাগজ আমদানি নিয়ে ‘ত্রিমুখী’ অবস্থান

ছবি

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

বাংলাদেশ চায় ভারত-পাকিস্তান সমস্যার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হোক : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

গুজরাটে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি

ছবি

দক্ষিণাঞ্চলের গ্রিড বিপর্যয়ে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

জনগণের কাছে গিয়ে দ্বিমতের সমাধান খুঁজতে হবে: জোনায়েদ সাকি

ছবি

জয়কে অপহরণ-হত্যাচেষ্টা মামলা: শফিক রেহমানের খালাসে রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি নেই

ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা: রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি ৪ মে

ছবি

পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে রোম ছেড়েছেন অধ্যাপক ইউনূস

ছবি

পটুয়াখালীতে ধর্ষণের শিকার শহীদকন্যার ঢাকায় আত্মহত্যা

ছবি

‘ভিত্তিমূল্য’ নির্ধারণ করে পুনর্মূল্যায়ন হবে বিদ্যুতের দাম: উপদেষ্টা

ছবি

আন্দোলনের মধ্যে ইউআইইউতে ভিসিসহ ১২ জনের পদত্যাগ

রাজধানীতে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার বাসার নিরাপত্তাকর্মী

শাহজালালে পোশাকে লেপ্টে ৫ কোটি টাকার স্বর্ণ পাচারে যুবক গ্রেপ্তার

ছবি

কেমন আছেন সিলেট অঞ্চলে খাসিয়ারা

ঝটিকা মিছিল: ৭ দিনে ছাত্রলীগ ও আ’লীগের ৫৬ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

ছবি

সিনহা হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্নের দাবি সাবেকদের

এবতেদায়ী মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির ‘ঘোষণা’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি

ছবি

চাহিদার চেয়ে চালের উৎপাদন বেশি, তবুও দাম আকাশছোঁয়া, কারণ কী?

ছবি

রাঙামাটিতে পিকআপ ও অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ৬

‘উন্নত চিকিৎসার নামে নাপা ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে’

tab

জাতীয়

আইএমএফের ঋণে অনিশ্চয়তা, ‘আর্থিক’ সংকট না হলেও ‘ইমেজ’ সংকটের আশঙ্কা

রেজাউল করিম

রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

শর্ত পূরণ না হওয়ায় আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই অর্থ পেতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন যৌথসভায় দুই দফা বৈঠক হয়েছে। তবে বিষয়টি সুরাহা হয়নি। বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ‘ঋণ না পেলে যে খুব সমস্যা হবে, বিষয়টি তা নয়। আমরা খুব একটা ভঙ্গুর অবস্থায় নেই।’

শর্তের বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি

গভর্নর বলছেন, ‘ঋণ না পেলেও সমস্যা হবে না।’

ইমেজ সংকটের আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, আইএমএফ শক্তিশালী বৈশ্বিক দাতা সংস্থা। চলমান ঋণের কিস্তি বন্ধ হয়ে গেলে এতে বিশ্বে ‘নেতিবাচক বার্তা’ যাবে। এটা বাংলাদেশের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট করবে’।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের সঙ্গে রাজস্ব বাড়ানোর বিষয়ে সমঝোতা হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু ডলারকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে এখনও সুরাহা হয়নি।

আর্থিক সংকটে ২০২২ সালে আইএমএফের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ। অনেক আলোচনা শেষে পরের বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। ঋণের সঙ্গে আর্থিক খাতের সংস্কার ও অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের জন্য বেশি কিছু পরামর্শ মানার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। ওই সব শর্ত প্রতিপালনের বিষয়টি পর্যালোচনা সাপেক্ষে ধাপে ধাপে আসছে ঋণের কিস্তিগুলো। ইতোমধ্যে ঋণের তিনটি কিস্তিতে ২২১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

তৃতীয় পর্যালোচনা শেষে গত ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় দেয়ার কথা ছিল সংস্থাটির। তবে সেই সভা না হওয়ায় কিস্তির ঋণ অনুমোদন বিলম্বিত হচ্ছে। ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে দেয়া শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আবার ঢাকায় এসেছিল আইএমএফের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল। সম্প্রতি তারা পর্যবেক্ষণ শেষে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সভার বৈঠক গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে। বসন্তকালীন বৈঠকের এক ফাঁকে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত বুধবার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আলাদা বৈঠক হয়। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ

মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপরও বিষয়টি সুরাহা হয়নি।

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘বাংলাদেশ-আইএমএফ প্রতিনিধিদের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হয়েছে। বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি। তবে আইএমএফ টাকা দেবে ধরে নিয়েই কিন্তু বৈঠক হয়েছে। যে শর্তের বিষয়ে আলোচনা চলছে তা নিয়ে একমত হতে পারেনি কোনো পক্ষ।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘তাদের সঙ্গে ঐকমত্য না হলেই যে খুব একটা সমস্যা হবে বিষয়টি তাও নয়। আমরা কিন্তু খুব একটা ভঙ্গুর অবস্থায় নেই। যা হয় তা-ই হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে চলছে সেভাবে চলবে।’

চতুর্থ কিস্তিতে অর্থ পেতে শর্ত ছিল চারটি। সেগুলো হলো- অর্থনীতির বহিঃচাপ সামাল দিতে রাজস্ব আদায় জোরদার করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে নীতিমালার বাস্তবায়ন। এর মধ্যে বিনিময় হার ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আইএমএফ সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

রোববার,(২৭ এপ্রিল ২০২৫) কথা হয় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন ঋণ না পেলেও কোন সমস্যা হবে না। সেটাই হয়তো ঠিক। কোনো আর্থিক সমস্যা নাও হতে পারে। তবে এতে বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট হবে। কারণ একটা অনুমোদিত ঋণ শর্ত পূরণ না করতে পেরে বাংলাদেশ পেল না এটা ভালো দেখাবে না।’

বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা একটা বিনিয়োগ সম্মেলন করলাম। সরকার সেটাকে সফল হয়েছে বলে দাবি করলো। এখন যদি আইএমএফের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা হয় তাহলে বিনিয়োগকারীরা হয়তো মনে করতে পারে, ‘যে দেশ বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ভালো লেনদেন করতে না পারে তাহলে আমাদের সঙ্গে কীভাবে করবে? অর্থাৎ বড় সংকট হবে ‘ইমেজ সংকট’।’

তবে আইএমএফ শর্ত দিয়েছে সে জন্য নয়, বাংলাদেশের কর-জিডিপি রেশিও অনেক দুর্বল অর্থনীতির দেশের চেয়েও কম। এর আগে আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সফরের সময় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘আইএমএফ রাজস্ব সংগ্রহের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে (কনসার্ন) দেখভাল করেছে। তারা জনায়, লাখ লাখ মানুষ জিরো রিটার্ন দেয়। বাংলাদেশের কর জিডিপি রেশিও সাড়ে ৭ শতাংশ। অন্যদিকে নেপালের ১২-১৩ শতাংশ। ভারতে ১৭-১৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়েও আমাদের কর-জিডিপি রেশিও কম। আমরা তাদের এসব বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ ও অগ্রগতি তাদের অবহিত করেছি।’

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আইএমএফ বলেছে তাই সংস্কারগুলো করতে হবে বিষয়টা তেমন নয়। এনবিআরে সংস্কার, ডলারকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়া, রাজস্ব বাড়ানো আমাদের দেশের ভালোর জন্যেই করতে হবে। যে কোনো সংস্কার করতে কষ্টই হয়। সরকার এই চ্যালেঞ্জটা নিতে পারে।’

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সভার সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ রাজস্ব বাড়ানোর বিষয়ে হয়তো সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু ডলারকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে এখনও সুরাহা হয়নি। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা এখনও পরিস্কার কিছু বুঝতে পারছি না যে কোনো বিষয়ে সুরাহা হয়েছে, আর কোন কোন বিষয় এখনও সুরাহা হয়নি। সরকার একবার বলছে, ঋণ পেতে সমস্যা হবে না। আরেকবার বলছে, ঋণ না নিলেও সমস্যা হবে না। বিষয়টি অস্পষ্ট।’

back to top