‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ পঙ্ক্তিমালার কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। গতকাল শনিবার রাতে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের একটি বয়স্ক নিরাময় কেন্দ্রে তিনি মারা যান।
তার ভাতিজি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাওন্তী হায়দার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘স্থানীয় সময়ে রাত ৯টা ২০ মিনিট বাংলাদেশি সময় শনিবার রাত পৌনে একটায় মারা যান তার চাচা।
বার্লিনে কবির অত্যন্ত স্নেহভাজন, সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পী মাইন চৌধুরী পিটু বলেন, কবি দাউদ হায়দার গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতাজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। সে কারণে বেশ কয়েক মাস জার্মানির বেশ কয়েকটি হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে কবির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মাইন চৌধুরী বলেন, কবির মরদেহ বার্লিনেই দাফন করা হবে।
পরিবার জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন কবি দাউদ হায়দার। গত বছর ডিসেম্বরে বার্লিনের বাসার সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তখন হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় দাউদ হায়দারের শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে এবং জ্ঞান ফিরলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না। পরে তাকে ‘কৃত্রিম কোমা’ থেকে সাধারণ কোমায় রাখা হয় এবং তার শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।
গত জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে কবি দাউদ হায়দারকে বার্লিন থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে গ্রাইফভাল্ডার শহরে নিউরোলজি বা স্নায়বিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। চিকিৎসকেরা তখন জানিয়েছিলেন, সেখানে তাকে অনেকটা সময় থাকতে হবে। কিছুটা সুস্থ হয় উঠলে দাউদ হায়দারকে গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বার্লিনের শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকে স্থানান্তরিত করা হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন দাউদ হায়দার। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, লেখক ও সাংবাদিক। দাউদ হায়দারের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে জন্মই আমার আজন্ম পাপ, সংগস অব ডেস্পেয়ার, এই শাওনে এই পরবাসে, আমি পুড়েছি জ্বালা ও আগুনে, এলোন ইন ডার্কনেস অ্যান্ড আদার পোয়েমস ইত্যাদি।
সত্তরের দশকের শুরুর দিকে দাউদ হায়দার দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্না’ এই শিরোনামে তার একটি কবিতা ‘সংবাদ’ পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল। কবিতাটি লেখার ‘অপরাধে’ ১৯৭৪ সালের ১১ মার্চ গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে আদালতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জন্য মামলা করা হয়। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
ওই বছরেরই ২১ মে দাউদ হায়দারকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রথম তিনি ১৩ বছর কলকাতায় ছিলেন। পরে জার্মানির নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের সহযোগিতায় ১৯৮৬ সালের ২২ জুলাই জার্মানি পৌঁছান। তখন থেকেই তিনি জার্মানির বার্লিন শহরে বসবাস করছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দাউদ হায়দারই প্রথম লেখক, যাকে লেখালেখির কারণে নির্বাসনে যেতে হয়। ৫০ বছর ধরে কবি দাউদ হায়দার নির্বাসনে ছিলেন। এই সময়ে তিনি আর কখনোই দেশে ফিরতে পারেননি। বাংলাদেশের কোনো সরকার এই কবিকে ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগও নেয়নি।
রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ পঙ্ক্তিমালার কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। গতকাল শনিবার রাতে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের একটি বয়স্ক নিরাময় কেন্দ্রে তিনি মারা যান।
তার ভাতিজি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাওন্তী হায়দার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘স্থানীয় সময়ে রাত ৯টা ২০ মিনিট বাংলাদেশি সময় শনিবার রাত পৌনে একটায় মারা যান তার চাচা।
বার্লিনে কবির অত্যন্ত স্নেহভাজন, সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পী মাইন চৌধুরী পিটু বলেন, কবি দাউদ হায়দার গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতাজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। সে কারণে বেশ কয়েক মাস জার্মানির বেশ কয়েকটি হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে কবির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মাইন চৌধুরী বলেন, কবির মরদেহ বার্লিনেই দাফন করা হবে।
পরিবার জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন কবি দাউদ হায়দার। গত বছর ডিসেম্বরে বার্লিনের বাসার সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তখন হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় দাউদ হায়দারের শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে এবং জ্ঞান ফিরলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না। পরে তাকে ‘কৃত্রিম কোমা’ থেকে সাধারণ কোমায় রাখা হয় এবং তার শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।
গত জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে কবি দাউদ হায়দারকে বার্লিন থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে গ্রাইফভাল্ডার শহরে নিউরোলজি বা স্নায়বিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। চিকিৎসকেরা তখন জানিয়েছিলেন, সেখানে তাকে অনেকটা সময় থাকতে হবে। কিছুটা সুস্থ হয় উঠলে দাউদ হায়দারকে গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বার্লিনের শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকে স্থানান্তরিত করা হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন দাউদ হায়দার। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, লেখক ও সাংবাদিক। দাউদ হায়দারের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে জন্মই আমার আজন্ম পাপ, সংগস অব ডেস্পেয়ার, এই শাওনে এই পরবাসে, আমি পুড়েছি জ্বালা ও আগুনে, এলোন ইন ডার্কনেস অ্যান্ড আদার পোয়েমস ইত্যাদি।
সত্তরের দশকের শুরুর দিকে দাউদ হায়দার দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্না’ এই শিরোনামে তার একটি কবিতা ‘সংবাদ’ পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল। কবিতাটি লেখার ‘অপরাধে’ ১৯৭৪ সালের ১১ মার্চ গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে আদালতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জন্য মামলা করা হয়। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
ওই বছরেরই ২১ মে দাউদ হায়দারকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রথম তিনি ১৩ বছর কলকাতায় ছিলেন। পরে জার্মানির নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের সহযোগিতায় ১৯৮৬ সালের ২২ জুলাই জার্মানি পৌঁছান। তখন থেকেই তিনি জার্মানির বার্লিন শহরে বসবাস করছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দাউদ হায়দারই প্রথম লেখক, যাকে লেখালেখির কারণে নির্বাসনে যেতে হয়। ৫০ বছর ধরে কবি দাউদ হায়দার নির্বাসনে ছিলেন। এই সময়ে তিনি আর কখনোই দেশে ফিরতে পারেননি। বাংলাদেশের কোনো সরকার এই কবিকে ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগও নেয়নি।