রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘আলাদা রাজ্য’ গঠনের যে প্রস্তাব বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে, মায়ানমারের জান্তা সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, এ প্রস্তাব দেশটির সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করেছে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে মায়ানমারের জান্তা সরকার এ কথা জানায়। দেশটির নির্বাসিত ব্যক্তিদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী এ খবর দিয়েছে।
গত ২৭ এপ্রিল ঢাকার গুলশানে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সঙ্গে জামায়াতের এক বৈঠক হয়। বৈঠনের পর দলের প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাজ্য গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
পরদিন এক বিবৃতিতে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, তাঁর বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরা এবং তাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া।
তাহের আরও বলেন, “রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে দেওয়াই একমাত্র সমাধান। সে লক্ষ্যে আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি—আরাকানকেন্দ্রিক রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় একটি ইনডিপেনডেন্ট আরাকান স্টেট গঠনের প্রস্তাব। চীন মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারে।”
এই প্রস্তাবের ছয় দিন পর মায়ানমারের জান্তা সরকার জানায়, জামায়াতের এ বক্তব্য তাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। তারা অভিযোগ করেছে, জামায়াত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
জান্তা সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান বারবার স্পষ্ট করেছে। তারা ‘বাঙালি’ শব্দ ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, শরণার্থী প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কুনমিংয়ে মায়ানমারের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়মিত বৈঠক হয়। ফিরে আসা শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মায়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কয়েক মাসেই সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফে এসে পৌঁছায়। এর আগে থেকেই সেখানে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছিল। ফলে উখিয়ার কুতুপালং শিবির বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে রাজি হয় অং সান সু চির সরকার এবং সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে। তবে পরবর্তী সময়ে রোহিঙ্গাদের অনাস্থার কারণে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসে জান্তা সরকার। এরপরও চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সংঘাতে আরও ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রাখাইনের বিস্তৃত এলাকা আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ায় নেপিদোর সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগেও ভাটা পড়েছে।
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘আলাদা রাজ্য’ গঠনের যে প্রস্তাব বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে, মায়ানমারের জান্তা সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, এ প্রস্তাব দেশটির সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করেছে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে মায়ানমারের জান্তা সরকার এ কথা জানায়। দেশটির নির্বাসিত ব্যক্তিদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী এ খবর দিয়েছে।
গত ২৭ এপ্রিল ঢাকার গুলশানে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সঙ্গে জামায়াতের এক বৈঠক হয়। বৈঠনের পর দলের প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাজ্য গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
পরদিন এক বিবৃতিতে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, তাঁর বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরা এবং তাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া।
তাহের আরও বলেন, “রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে দেওয়াই একমাত্র সমাধান। সে লক্ষ্যে আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি—আরাকানকেন্দ্রিক রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় একটি ইনডিপেনডেন্ট আরাকান স্টেট গঠনের প্রস্তাব। চীন মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারে।”
এই প্রস্তাবের ছয় দিন পর মায়ানমারের জান্তা সরকার জানায়, জামায়াতের এ বক্তব্য তাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। তারা অভিযোগ করেছে, জামায়াত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
জান্তা সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান বারবার স্পষ্ট করেছে। তারা ‘বাঙালি’ শব্দ ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, শরণার্থী প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কুনমিংয়ে মায়ানমারের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়মিত বৈঠক হয়। ফিরে আসা শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মায়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কয়েক মাসেই সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফে এসে পৌঁছায়। এর আগে থেকেই সেখানে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছিল। ফলে উখিয়ার কুতুপালং শিবির বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে রাজি হয় অং সান সু চির সরকার এবং সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে। তবে পরবর্তী সময়ে রোহিঙ্গাদের অনাস্থার কারণে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসে জান্তা সরকার। এরপরও চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সংঘাতে আরও ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রাখাইনের বিস্তৃত এলাকা আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ায় নেপিদোর সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগেও ভাটা পড়েছে।