সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে এএসআই রিনিউঅ্যাবল অ্যানার্জি ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে দেয় -সংবাদ
কাশিমপুর ইউনিয়নের জোত কনেজপুর গ্রামে স্থাপিত এএসআই রিনিউঅ্যাবল অ্যানার্জি ইন্ডাস্ট্রিটি মানুষ ও ফসলের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর এটি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ফের সেটি চালু হয়েছে। এ কারণে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে।
এলাকাবাসী জানে না এই ফ্যাক্টরিতে কী তৈরি হয়। তবে এটা জানে, কারখানার ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে প্রাণ বাঁচানো দায়। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কারখানাটি বন্ধও করে দিয়েছিল। কিন্তু আবারও রাতের বেলায় কারখানাটি চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কারখানার ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে তাদের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি যেমন হচ্ছে, তেমনি ক্ষতি হচ্ছে ফসলেরও।
যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের জোত কনেজপুর গ্রামে স্থাপিত এএসআই রিনিউঅ্যাবল অ্যানার্জি ইন্ডাস্ট্রি’তে গিয়ে দেখা যায়, গেইটে তালা বদ্ধ। দীর্ঘসময় কলিংবেল চেপে, গেটে শব্দ করে, ডাকাডাকি করেও কারও দেখা মেলেনি। গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল কনেজপুর গ্রামের তরুণ স্কুলছাত্র রায়হান ও ভ্যানচালক রফিকুল। তারা জানায়, ‘এই কারখানায় কী বানানো হয়, তা তারা কোনোদিন দেখেনি। তবে শুনেছে, এখানে টায়ার পুড়িয়ে তেল বানানো হয়। কিন্তু এই কারখানা যখন চলে, তখন প্রচুর ধোঁয়া এবং দুর্গন্ধ হয়। এলাকায় তখন টেকা দায় হয়ে যায়।’
তারা আরও জানায়, ‘কিছুদিন আগে পরিবেশের লোকজন এসে কারখানা বন্ধ করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পরে কারখানার লোকজন তা খুলে ফেলেছে। এখন রাতে রাতে এই কারখানা চালানো হয়। অন্য এলাকার লোকজন নিয়ে এসে কারখানা চালায়। ফজরের ওয়াক্তে কারখানা বন্ধ করে লোকজন নিয়ে চলে যায়। কারখানার সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। ভিতরে লোকও আছে। কিন্তু দিনের বেলায় গেইট খোলে না।’
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের জোত কনেজপুর গ্রামে আবাদী জমির মাঝখানে কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে। এই কারখানায় টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল তৈরি করা হয়। সড়কের পিচ পোড়ানোর জন্য এই তেল ব্যবহার করা হয়। কারখানা যখন চলে তখন প্রচুর বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয় এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়। ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করাই দায় হয়ে পড়েছে। এ কারণে এলাকাবাসী অভিযোগ দিলে গত ১৬ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। পরিবেশ অধিদপ্তর বন্ধ ঘোষণার একটি লাল সাইনবোর্ডও কারখানার গেইটে লাগিয়ে দেয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছুদিন কারখানাটি বন্ধ থাকলেও পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঘোষণার সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর রাতের বেলায় অল্প অল্প করে কারখানাটি চালু করা হয়। অন্য এলাকা থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে রাতের বেলায় এই কাজ চালানো হচ্ছে। ফজরের ওয়াক্তে কাজ বন্ধ করে শ্রমিকদের নিয়ে চলে যাচ্ছেন কারখানার লোকজন।
স্থানীয়রা আরও জানান, আবাদী জমি ও লোকালয়ের মাঝে স্থাপিত এই কারখানার জন্য সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া, কাছারিপাড়া ও কনেজপুর পূর্বপাড়ার প্রায় ৫শ’ পরিবার দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট। অ্যালার্জি, চুলকানিসহ নানা উপসর্গও দেখা দিচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে খেতের সবজি, ধান, পাট, গম ও মসুরি।
কারখানার পাশেরই কাছারিপাড়া এলাকার আতিকুর রহমান (৩০) জানান, কারখানার ধোঁয়ায় তাদের শ্বাসকষ্ট বাড়ছে।
একই এলাকার আয়নাল হোসেনের (৪৫) আকুতি, ‘এই আপদের হাত্তে আমাগের বাঁচানদি বাবা!’
বৃদ্ধ শাহজাহান কবিরের বক্তব্য, ‘এই যন্ত্রণা আর সইয্য করতি পাচ্চি নে। দেশে কি আইন-কানুন বইলে কিচ্চু নেই!’
কৃষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এই কারখানা আমার সব ফসল খেইয়ে ফেইলেচে। বেগুন খেত ধইরে নষ্ট হইয়ে গেচে। মাঠের অন্য ফসলও শেষ!’
কারখানাটি নিয়ে কথা হয় পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের রিসার্চ অফিসার সৌমেন মৈত্রের সঙ্গে। তিনি জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। কারখানাটির বিরুদ্ধে ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ ছড়ানোর অভিযোগ ছিল এলাকাবাসীর। এছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র হালনাগাদ ছিল না।
পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক মো. এমদাদুল হক জানান, ওই কারখানাটিতে টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল তৈরি করা হতো। পরিবেশের ক্ষতি করায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
তিনি উল্লেখ করেন, তাদের জানামতে কারখানাটি বন্ধ আছে। রাতের বেলায় কারখানাটি চালানো হচ্ছেÑ এমন কোনো অভিযোগ তারা পাননি। এলাকাবাসী অভিযোগ করলে আবারও তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করা হবে।
সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে এএসআই রিনিউঅ্যাবল অ্যানার্জি ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে দেয় -সংবাদ
রোববার, ০৪ মে ২০২৫
কাশিমপুর ইউনিয়নের জোত কনেজপুর গ্রামে স্থাপিত এএসআই রিনিউঅ্যাবল অ্যানার্জি ইন্ডাস্ট্রিটি মানুষ ও ফসলের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর এটি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ফের সেটি চালু হয়েছে। এ কারণে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে।
এলাকাবাসী জানে না এই ফ্যাক্টরিতে কী তৈরি হয়। তবে এটা জানে, কারখানার ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে প্রাণ বাঁচানো দায়। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কারখানাটি বন্ধও করে দিয়েছিল। কিন্তু আবারও রাতের বেলায় কারখানাটি চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কারখানার ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে তাদের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি যেমন হচ্ছে, তেমনি ক্ষতি হচ্ছে ফসলেরও।
যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের জোত কনেজপুর গ্রামে স্থাপিত এএসআই রিনিউঅ্যাবল অ্যানার্জি ইন্ডাস্ট্রি’তে গিয়ে দেখা যায়, গেইটে তালা বদ্ধ। দীর্ঘসময় কলিংবেল চেপে, গেটে শব্দ করে, ডাকাডাকি করেও কারও দেখা মেলেনি। গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল কনেজপুর গ্রামের তরুণ স্কুলছাত্র রায়হান ও ভ্যানচালক রফিকুল। তারা জানায়, ‘এই কারখানায় কী বানানো হয়, তা তারা কোনোদিন দেখেনি। তবে শুনেছে, এখানে টায়ার পুড়িয়ে তেল বানানো হয়। কিন্তু এই কারখানা যখন চলে, তখন প্রচুর ধোঁয়া এবং দুর্গন্ধ হয়। এলাকায় তখন টেকা দায় হয়ে যায়।’
তারা আরও জানায়, ‘কিছুদিন আগে পরিবেশের লোকজন এসে কারখানা বন্ধ করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পরে কারখানার লোকজন তা খুলে ফেলেছে। এখন রাতে রাতে এই কারখানা চালানো হয়। অন্য এলাকার লোকজন নিয়ে এসে কারখানা চালায়। ফজরের ওয়াক্তে কারখানা বন্ধ করে লোকজন নিয়ে চলে যায়। কারখানার সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। ভিতরে লোকও আছে। কিন্তু দিনের বেলায় গেইট খোলে না।’
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের জোত কনেজপুর গ্রামে আবাদী জমির মাঝখানে কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে। এই কারখানায় টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল তৈরি করা হয়। সড়কের পিচ পোড়ানোর জন্য এই তেল ব্যবহার করা হয়। কারখানা যখন চলে তখন প্রচুর বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয় এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়। ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করাই দায় হয়ে পড়েছে। এ কারণে এলাকাবাসী অভিযোগ দিলে গত ১৬ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। পরিবেশ অধিদপ্তর বন্ধ ঘোষণার একটি লাল সাইনবোর্ডও কারখানার গেইটে লাগিয়ে দেয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছুদিন কারখানাটি বন্ধ থাকলেও পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঘোষণার সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর রাতের বেলায় অল্প অল্প করে কারখানাটি চালু করা হয়। অন্য এলাকা থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে রাতের বেলায় এই কাজ চালানো হচ্ছে। ফজরের ওয়াক্তে কাজ বন্ধ করে শ্রমিকদের নিয়ে চলে যাচ্ছেন কারখানার লোকজন।
স্থানীয়রা আরও জানান, আবাদী জমি ও লোকালয়ের মাঝে স্থাপিত এই কারখানার জন্য সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া, কাছারিপাড়া ও কনেজপুর পূর্বপাড়ার প্রায় ৫শ’ পরিবার দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট। অ্যালার্জি, চুলকানিসহ নানা উপসর্গও দেখা দিচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে খেতের সবজি, ধান, পাট, গম ও মসুরি।
কারখানার পাশেরই কাছারিপাড়া এলাকার আতিকুর রহমান (৩০) জানান, কারখানার ধোঁয়ায় তাদের শ্বাসকষ্ট বাড়ছে।
একই এলাকার আয়নাল হোসেনের (৪৫) আকুতি, ‘এই আপদের হাত্তে আমাগের বাঁচানদি বাবা!’
বৃদ্ধ শাহজাহান কবিরের বক্তব্য, ‘এই যন্ত্রণা আর সইয্য করতি পাচ্চি নে। দেশে কি আইন-কানুন বইলে কিচ্চু নেই!’
কৃষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এই কারখানা আমার সব ফসল খেইয়ে ফেইলেচে। বেগুন খেত ধইরে নষ্ট হইয়ে গেচে। মাঠের অন্য ফসলও শেষ!’
কারখানাটি নিয়ে কথা হয় পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের রিসার্চ অফিসার সৌমেন মৈত্রের সঙ্গে। তিনি জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। কারখানাটির বিরুদ্ধে ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ ছড়ানোর অভিযোগ ছিল এলাকাবাসীর। এছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র হালনাগাদ ছিল না।
পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক মো. এমদাদুল হক জানান, ওই কারখানাটিতে টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল তৈরি করা হতো। পরিবেশের ক্ষতি করায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
তিনি উল্লেখ করেন, তাদের জানামতে কারখানাটি বন্ধ আছে। রাতের বেলায় কারখানাটি চালানো হচ্ছেÑ এমন কোনো অভিযোগ তারা পাননি। এলাকাবাসী অভিযোগ করলে আবারও তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করা হবে।