নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার ‘পরিপন্থি’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী) এর প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা।
তিনি বলেছেন, ‘কোনো কমিশনের প্রস্তাব আমরা খারিজ করতে চাই না। আমরা দেখছি বাতিল করার একটা প্রবণতা আছে। নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিকে আমরা মনে করি অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে এটা পরিপন্থি।’
এ কমিশনের দেয়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিক-বেঠিক নিয়ে আলোচনা করব। বাংলাদেশে বহুদিন পরে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ আনতে আমাদের কণ্ঠস্বর আরও জোরালো করা দরকার। আমরা কোনো কিছুকে বাতিল করে দেব না, মত-দ্বিমত সেগুলো রাখব যেকোনো কমিশনের ক্ষেত্রেই।’
শনিবার (৩ মে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন মাসুদ রানা।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এই কমিশন বাতিলের দাবি তুলেছে হেফাজতে ইসলাম। জামায়াতে ইসলামও কমিশনের দেয়া প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে মহাসমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম।
সেখানে সংগঠনটির নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘আমাদের দাবি স্পষ্ট, আমরা মুসলিমদের পক্ষ থেকে দাবি করছি, যে নারী সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’
‘এই কমিশন রেখে কোনো সংস্কার হবে না। আমরা দাবি করছি, এই কমিশন যে প্রস্তাব পেশ করেছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। জাতি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। আর কোনো বিকল্প নেই।’
বেসরকারি সংস্থা ‘নারীপক্ষের’ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হককে প্রধান করে গত ১৮ নভেম্বর নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৯ এপ্রিল এ কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে ৪৩৩টি সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশন মোটা দাগে সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার এ তিন বিষয়ে সুপারিশ করেছে, যেখানে সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি জোরালো করার কথা বলা হয়েছে। নারীর অগ্রগতির জন্য আছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও জাতীয় সংস্থাগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশও এসেছে। অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রধান উপদেষ্টা এ কমিশনের কিছু সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন।
যদিও জামায়াতে ইসলামী নারী কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছে। আর হেফাজতে ইসলাম এ কমিশনকেই বাতিলের দাবি জানাচ্ছে।
শনিবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে হেফাজতের এই দাবির বিরোধিতা করে ’ফ্যাসিবাদী’ ব্যবস্থা যাতে আর না ফেরে সে বিষয়ে জোর দেন বাসদের প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা।
তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, যাতে আর এটি ফিরে আসতে না পারে। একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ আমাদের মূল আকাক্সক্ষায় ব্যক্ত করেছি। এই জায়গা থেকে এ সরকারকে যখন গঠন হয়, আমরা সমর্থন দিয়েছি।’
‘ফ্যাসিবাদ কোনো দল আনে না, ফ্যাসিবাদ আনে একটা ব্যবস্থা। একটা সিস্টেমের মধ্যে যে যে উপাদান থাকলে ফ্যাসিবাদ বহাল থাকে, সেই সিস্টেমের হয়ত চেহারা পাল্টাবে, ব্যবস্থা পাল্টাবে না।’
সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোর দেয়া সুপারিশের মত পার্থক্যের জায়গা নিয়ে আলাপ-আলোচনার কথা তুলে ধরেন মাসুদ রানা।
তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয় আমাদের কাছে যথার্থ মনে হয়নি। আরও ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে হবে।’
‘মত পার্থক্যের যে জায়গাগুলোতে আছে, আমরা যদি ধৈর্য সহকারে আলাপ-আলোচনা করতে পারি, সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে হয়ত আমরা একমত হতে পারব, তাহলে গণঅভ্যুত্থানের মূল যে আকাক্সক্ষা একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, একটা বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা করতে চাই।’
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরিতে কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন। কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বাসদের সঙ্গে সংলাপে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় জুলাই সনদ তৈরির কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় সনদ নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফ্যাসিবাদী শাসনের একটি পর্যায়ের অবসান ঘটেছে।
ফ্যাসিবাদী শাসক পলায়ন করেছে। কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ার সূচনা হচ্ছে মাত্র।’
ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভিন্নমত থাকলেও মৌলিক বিষয়গুলোতে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তার কথায়, ‘ভিন্নমত থাকবে, সব বিষয়ে একমত হব না। কিন্তু কতগুলো মৌলিক বিষয়ে যেমন রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে, বিশেষত গণতান্ত্রিক জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে আমরা যেন এককাতারে থাকতে পারি, পরস্পরের সহযোদ্ধা হতে পারি, সেই চেষ্টা হচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ।’
বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মুহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
রোববার, ০৪ মে ২০২৫
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার ‘পরিপন্থি’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী) এর প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা।
তিনি বলেছেন, ‘কোনো কমিশনের প্রস্তাব আমরা খারিজ করতে চাই না। আমরা দেখছি বাতিল করার একটা প্রবণতা আছে। নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিকে আমরা মনে করি অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে এটা পরিপন্থি।’
এ কমিশনের দেয়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিক-বেঠিক নিয়ে আলোচনা করব। বাংলাদেশে বহুদিন পরে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ আনতে আমাদের কণ্ঠস্বর আরও জোরালো করা দরকার। আমরা কোনো কিছুকে বাতিল করে দেব না, মত-দ্বিমত সেগুলো রাখব যেকোনো কমিশনের ক্ষেত্রেই।’
শনিবার (৩ মে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন মাসুদ রানা।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এই কমিশন বাতিলের দাবি তুলেছে হেফাজতে ইসলাম। জামায়াতে ইসলামও কমিশনের দেয়া প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে মহাসমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম।
সেখানে সংগঠনটির নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘আমাদের দাবি স্পষ্ট, আমরা মুসলিমদের পক্ষ থেকে দাবি করছি, যে নারী সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’
‘এই কমিশন রেখে কোনো সংস্কার হবে না। আমরা দাবি করছি, এই কমিশন যে প্রস্তাব পেশ করেছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। জাতি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। আর কোনো বিকল্প নেই।’
বেসরকারি সংস্থা ‘নারীপক্ষের’ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হককে প্রধান করে গত ১৮ নভেম্বর নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৯ এপ্রিল এ কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে ৪৩৩টি সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশন মোটা দাগে সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার এ তিন বিষয়ে সুপারিশ করেছে, যেখানে সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি জোরালো করার কথা বলা হয়েছে। নারীর অগ্রগতির জন্য আছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও জাতীয় সংস্থাগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশও এসেছে। অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রধান উপদেষ্টা এ কমিশনের কিছু সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন।
যদিও জামায়াতে ইসলামী নারী কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছে। আর হেফাজতে ইসলাম এ কমিশনকেই বাতিলের দাবি জানাচ্ছে।
শনিবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে হেফাজতের এই দাবির বিরোধিতা করে ’ফ্যাসিবাদী’ ব্যবস্থা যাতে আর না ফেরে সে বিষয়ে জোর দেন বাসদের প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা।
তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, যাতে আর এটি ফিরে আসতে না পারে। একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ আমাদের মূল আকাক্সক্ষায় ব্যক্ত করেছি। এই জায়গা থেকে এ সরকারকে যখন গঠন হয়, আমরা সমর্থন দিয়েছি।’
‘ফ্যাসিবাদ কোনো দল আনে না, ফ্যাসিবাদ আনে একটা ব্যবস্থা। একটা সিস্টেমের মধ্যে যে যে উপাদান থাকলে ফ্যাসিবাদ বহাল থাকে, সেই সিস্টেমের হয়ত চেহারা পাল্টাবে, ব্যবস্থা পাল্টাবে না।’
সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোর দেয়া সুপারিশের মত পার্থক্যের জায়গা নিয়ে আলাপ-আলোচনার কথা তুলে ধরেন মাসুদ রানা।
তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয় আমাদের কাছে যথার্থ মনে হয়নি। আরও ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে হবে।’
‘মত পার্থক্যের যে জায়গাগুলোতে আছে, আমরা যদি ধৈর্য সহকারে আলাপ-আলোচনা করতে পারি, সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে হয়ত আমরা একমত হতে পারব, তাহলে গণঅভ্যুত্থানের মূল যে আকাক্সক্ষা একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, একটা বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা করতে চাই।’
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরিতে কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন। কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বাসদের সঙ্গে সংলাপে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় জুলাই সনদ তৈরির কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় সনদ নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফ্যাসিবাদী শাসনের একটি পর্যায়ের অবসান ঘটেছে।
ফ্যাসিবাদী শাসক পলায়ন করেছে। কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ার সূচনা হচ্ছে মাত্র।’
ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভিন্নমত থাকলেও মৌলিক বিষয়গুলোতে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তার কথায়, ‘ভিন্নমত থাকবে, সব বিষয়ে একমত হব না। কিন্তু কতগুলো মৌলিক বিষয়ে যেমন রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে, বিশেষত গণতান্ত্রিক জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে আমরা যেন এককাতারে থাকতে পারি, পরস্পরের সহযোদ্ধা হতে পারি, সেই চেষ্টা হচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ।’
বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মুহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।