সংবাদমাধ্যমের জবাবদিহির পাশাপাশি সাংবাদিকদেরকেও প্রশ্ন করার সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের প্রশ্ন করা যাবে, বিচার বিভাগকে প্রশ্ন করা যাবে, নিরাপত্তা সংস্থাকে প্রশ্ন করা যাবে কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্ন করা যাবে না। আমি চাই না জিনিসটা থাকুক।’
উপদেষ্টা বলেন, সংবাদমাধ্যমের যারা নীতিনির্ধারক, সেখান থেকে তাদের নিউজ বা মতামত তৈরি হয়, সেখানে অবশ্যই প্রশ্ন করার সুযোগ থাকা উচিত।
বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রোববার,(৪ মে ২০২৫) টিআইবি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তিনি ‘ব্রেভ নিউ বাংলাদেশ: রিফর্ম রোড ম্যাপ ফর প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও হত্যা মামলায় বিব্রত সরকার:
সাংবাদিকদের নামে ঢালাও হত্যা মামলা করার বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘মূল যে অভিযোগ সেটা দিয়ে মামলা হয় না। করা হয় হত্যা মামলা। বিষয়টি নিয়ে সরকারও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কয়েকজন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এ বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও বলার চেষ্টা করছি, আইন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথা বলছি, বিষয়গুলোকে একটা জায়গায় নিয়ে আসার জন্য। মামলা হওয়া আর লিগ্যাল প্রসিডিং শুরু হওয়া আলাদা। মামলা যে কেউ করতে পারে, প্রশ্ন হচ্ছে সরকার কাউকে আটকে রাখছে কিনা। রাখলে সেটা আইনানুযায়ী হচ্ছে কিনা, না
বিজ্ঞাপনের নামে ‘লুটপাট’:
গত ১৫ বছরে বিজ্ঞাপনের নামে সরকারের টাকা ‘লুটপাট’ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কীভাবে রাজনীতিকরণ হয়েছে তা জানতে কমিটি করা হবে বলে জানান তথ্য উপদেষ্টা।
গত কয়েক বছর সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা দেখিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপনের টাকা ‘লুটপাট’ করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মন্ত্রীকে বা মন্ত্রীর উপরের লোককে দিয়ে ‘কল করিয়ে’ সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা লিখিয়ে নেয়া হয়েছে। সে সময় লুটপাটের একটা ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি’ গড়ে উঠেছিল।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের হার নিয়ে অনেক কথা আছে মন্তব্য করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে সার্কুলেশন দেড় লাখের বেশি হলে বিজ্ঞাপনের হার ৯৫০ টাকা ধরা হয়। মূল্যস্ফীতির তুলনায় এটা এখন অন্যায্য। পাশাপাশি যারা নিজেদের পত্রিকার প্রচার সংখ্যা দুই হাজারও না সেটাকে দেড় লাখ, দুই লাখ বানিয়ে রাষ্ট্রের টাকা লুটপাট করেছে সেগুলো তদন্ত করা হবে।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রের টাকায় বিজ্ঞাপনের নামে বিভিন্ন নেতা, মন্ত্রী, এমপিদের পত্রিকা চালু করেছে। আমরা মনে করি গত ১৫ বছরের সংবাদমাধ্যমের অবস্থা নিয়ে খুব শিগগিরই একটা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস করা দরকার। আমাদের উদ্যোগ আছে, এটা মন্ত্রণালয় থেকেও হতে পারে, আরেকটা আলোচনা চলছে, এটা জাতিসংঘ থেকে হতে পারে।’
বিগত সময়ে গণমাধ্যম কীভাবে রাজনীতিকরণ হয়েছে সেটাও জানা দরকার মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সাংবাদিকরা কতটা প্রেশারে ছিল, কোন হাউজ কী নীতিমালা করেছে, এর কারণে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কীভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে সেটা আমাদের জানা দরকার আছে, মানুষ যেটা জানতে চায়।’
আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম:
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, ন্যায্য পারিশ্রমিক ও নীতিগত সহায়তা সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে জরুরি।
সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম উভয়ে আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যা তাদের আপস করতে বাধ্য করছে।
স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বিদ্যমান বৈরী পরিবেশের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া যাবে না মন্তব্য করে কামাল আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর মৌখিক ও শারীরিক হামলা এখনও হচ্ছে। অনেকে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ কারাবন্দী হয়েছেন, তবে তা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য। তারা একই সঙ্গে সাংবাদিক, আবার রাজনৈতিক কর্মী।’
গণমাধ্যমে বিনিয়োগের উৎস বৈধ কিনা:
গণমাধ্যমের বিনিয়োগ বৈধ উৎস থেকে এসেছে কিনা তা জানানোর কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না মন্তব্য করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘ফলে অনেক ক্ষেত্রে কালোটাকা ব্যবহার করা হয়েছে। পরিণতিতে সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠেছে একেকটি গোষ্ঠীর হাতিয়ার, যার মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যকে প্রশ্নের বাইরে রাখতে বা সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে।’
তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের দপ্তর থেকে পাওয়া আর্থিক বিবরণীতে দেখা গেছে, দেশে দেড় ডজনের বেশি সংবাদমাধ্যম লাভজনক। এটা প্রমাণ করে, গণমাধ্যমকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা মোটেও অযৌক্তিক নয় এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
ঢাকার ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সভায় সঞ্চালনা করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবির) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুশান ভাইজ, সুইডিশ রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, টাইমস মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান একে আজাদ, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপির ব্যুরো প্রধান শেখ সাবিহা আলম বক্তব্য দেন।
রোববার, ০৪ মে ২০২৫
সংবাদমাধ্যমের জবাবদিহির পাশাপাশি সাংবাদিকদেরকেও প্রশ্ন করার সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের প্রশ্ন করা যাবে, বিচার বিভাগকে প্রশ্ন করা যাবে, নিরাপত্তা সংস্থাকে প্রশ্ন করা যাবে কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্ন করা যাবে না। আমি চাই না জিনিসটা থাকুক।’
উপদেষ্টা বলেন, সংবাদমাধ্যমের যারা নীতিনির্ধারক, সেখান থেকে তাদের নিউজ বা মতামত তৈরি হয়, সেখানে অবশ্যই প্রশ্ন করার সুযোগ থাকা উচিত।
বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রোববার,(৪ মে ২০২৫) টিআইবি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তিনি ‘ব্রেভ নিউ বাংলাদেশ: রিফর্ম রোড ম্যাপ ফর প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও হত্যা মামলায় বিব্রত সরকার:
সাংবাদিকদের নামে ঢালাও হত্যা মামলা করার বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘মূল যে অভিযোগ সেটা দিয়ে মামলা হয় না। করা হয় হত্যা মামলা। বিষয়টি নিয়ে সরকারও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কয়েকজন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এ বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও বলার চেষ্টা করছি, আইন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথা বলছি, বিষয়গুলোকে একটা জায়গায় নিয়ে আসার জন্য। মামলা হওয়া আর লিগ্যাল প্রসিডিং শুরু হওয়া আলাদা। মামলা যে কেউ করতে পারে, প্রশ্ন হচ্ছে সরকার কাউকে আটকে রাখছে কিনা। রাখলে সেটা আইনানুযায়ী হচ্ছে কিনা, না
বিজ্ঞাপনের নামে ‘লুটপাট’:
গত ১৫ বছরে বিজ্ঞাপনের নামে সরকারের টাকা ‘লুটপাট’ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কীভাবে রাজনীতিকরণ হয়েছে তা জানতে কমিটি করা হবে বলে জানান তথ্য উপদেষ্টা।
গত কয়েক বছর সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা দেখিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপনের টাকা ‘লুটপাট’ করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মন্ত্রীকে বা মন্ত্রীর উপরের লোককে দিয়ে ‘কল করিয়ে’ সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা লিখিয়ে নেয়া হয়েছে। সে সময় লুটপাটের একটা ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি’ গড়ে উঠেছিল।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের হার নিয়ে অনেক কথা আছে মন্তব্য করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে সার্কুলেশন দেড় লাখের বেশি হলে বিজ্ঞাপনের হার ৯৫০ টাকা ধরা হয়। মূল্যস্ফীতির তুলনায় এটা এখন অন্যায্য। পাশাপাশি যারা নিজেদের পত্রিকার প্রচার সংখ্যা দুই হাজারও না সেটাকে দেড় লাখ, দুই লাখ বানিয়ে রাষ্ট্রের টাকা লুটপাট করেছে সেগুলো তদন্ত করা হবে।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রের টাকায় বিজ্ঞাপনের নামে বিভিন্ন নেতা, মন্ত্রী, এমপিদের পত্রিকা চালু করেছে। আমরা মনে করি গত ১৫ বছরের সংবাদমাধ্যমের অবস্থা নিয়ে খুব শিগগিরই একটা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস করা দরকার। আমাদের উদ্যোগ আছে, এটা মন্ত্রণালয় থেকেও হতে পারে, আরেকটা আলোচনা চলছে, এটা জাতিসংঘ থেকে হতে পারে।’
বিগত সময়ে গণমাধ্যম কীভাবে রাজনীতিকরণ হয়েছে সেটাও জানা দরকার মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সাংবাদিকরা কতটা প্রেশারে ছিল, কোন হাউজ কী নীতিমালা করেছে, এর কারণে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কীভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে সেটা আমাদের জানা দরকার আছে, মানুষ যেটা জানতে চায়।’
আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম:
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, ন্যায্য পারিশ্রমিক ও নীতিগত সহায়তা সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে জরুরি।
সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম উভয়ে আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যা তাদের আপস করতে বাধ্য করছে।
স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বিদ্যমান বৈরী পরিবেশের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া যাবে না মন্তব্য করে কামাল আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর মৌখিক ও শারীরিক হামলা এখনও হচ্ছে। অনেকে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ কারাবন্দী হয়েছেন, তবে তা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য। তারা একই সঙ্গে সাংবাদিক, আবার রাজনৈতিক কর্মী।’
গণমাধ্যমে বিনিয়োগের উৎস বৈধ কিনা:
গণমাধ্যমের বিনিয়োগ বৈধ উৎস থেকে এসেছে কিনা তা জানানোর কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না মন্তব্য করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘ফলে অনেক ক্ষেত্রে কালোটাকা ব্যবহার করা হয়েছে। পরিণতিতে সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠেছে একেকটি গোষ্ঠীর হাতিয়ার, যার মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যকে প্রশ্নের বাইরে রাখতে বা সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে।’
তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের দপ্তর থেকে পাওয়া আর্থিক বিবরণীতে দেখা গেছে, দেশে দেড় ডজনের বেশি সংবাদমাধ্যম লাভজনক। এটা প্রমাণ করে, গণমাধ্যমকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা মোটেও অযৌক্তিক নয় এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
ঢাকার ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সভায় সঞ্চালনা করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবির) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুশান ভাইজ, সুইডিশ রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, টাইমস মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান একে আজাদ, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপির ব্যুরো প্রধান শেখ সাবিহা আলম বক্তব্য দেন।