ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রাজু ভাস্কর্যেই দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে নারীর প্রতিকৃতিতে জুতাপেটা করে কিছু লোক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গলায় রশি বেধে শাড়ি পরানো একটি নারী প্রতিকৃতিতে জুতাপেটার ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে নানা আলোচনা ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব কায়সার জানিয়েছেন যে, খবর পেয়ে গতকাল শনিবার তারাই সেটি সরিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে কুশপুত্তলিকা হিসেবে প্রতিকৃতিটি কোনো একটি সংগঠন বা কেউ সেখানে ঝুলিয়েছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন। ওই প্রতিকৃতিতেও শেখ হাসিনার নাম সংযুক্ত ছিল না।
এ বিষয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলছেন, নারী প্রতিকৃতিটিতে জুতাপেটা ও শাড়ী খুলে অশালীন আচরণের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার কারণে এখন সেটিকে সামাল দিতে কিংবা ‘যৌক্তিক’ প্রমাণের চেষ্টা থেকেই শেখ হাসিনার নাম টেনে আনা হচ্ছে। তার মতে, ঘটনাটিতে নারী বিদ্বেষ থেকেই নারীর প্রতি অবমাননাকর আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন।
ভিডিও এবং ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রশি দিয়ে ফাঁসির মতো করে ঝুলানো নারী প্রতিকৃতিটিতে কয়েকজন জুতাপেটা করছেন। এক পর্যায়ে প্রতিকৃতিতে পেঁচানো শাড়ি খুলে যায়। পরে দু’জন এসে শাড়িটি পরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।
এ ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার দিনেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারের নারী সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ চলছিল। আবার ভিডিওতে যারা নারী প্রতিকৃতিটিতে জুতাপেটা করেছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ পাঞ্জাবি টুপি পরিহিত থাকায় সামাজিক মাধ্যমে অনেকে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের এ ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন।
যদিও হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কেউই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। ওই ঘটনার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে একটি বিবৃতিও দিয়েছে ইসলামী এই সংগঠনটি।
ওদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন এমন কয়েকজন সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের এক জন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে পহেলা মে’তেই একটি সংগঠন শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে প্রতীকী ওই প্রতিকৃতি টিএসসির রাজু ভাস্কর্য চত্বরে রেখেছিল। কিন্তু তাদের সেই কর্মসূচি শেষে প্রতিকৃতিটি সেখান থেকে না সরিয়ে তারা সেখানেই রেখে যায়।
গতকাল শনিবার আরেক দল এসে ওই প্রতিকৃতিটিতে জুতাপেটা ও কয়েকজন অশালীন আচরণ করে, যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এর সমালোচনা করে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন।
আব্দুল কাদের নামে একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘নারীর প্রতিকৃতি মানে কোনো একজন নির্দিষ্ট নারী না, সমগ্র নারী জাতিকে বুঝায়। একজন নারী অপরাধী হতে পারে কিন্তু সমগ্র নারী জাতি অপরাধী হতে পারে না। এবং কী অপরাধে নারীকে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে সে অপরাধটাও কেউ জানে না। এক জন নারী প্রতিকৃতিতে জুতাপেটা করে সমস্ত নারী জাতিকে অপমান করা হয়েছে। নারী জাতিকে অপমান করার অপরাধে আমি এ অপরাধীদের বিচার দাবি করছি।’
কুসুম তাহেরা নামে একজন লিখেছেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এক নারীর প্রতিকৃতি বানানো হয়েছে জুতোপেটা করার জন্য। নারীকে কী করে ঘৃণা করতে হবে, কী করে তাদের হেনস্থা করতে হবে, নির্যাতন করতে হবে তা শেখানো হচ্ছে। একজন নারী একজন মা। দেশ মাতৃকাকে তারা উলঙ্গ করছে, জুতাপেটা করছে ফ্যাসিস্ট সরকারের অবয়বে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ
মাহবুব কায়সার সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে কেউ বা কোনো সংগঠন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার কুশপুত্তলিকা বা প্রতিকৃতি ঝুলিয়েছিলো মূলত তার বিচারের দাবিতে প্রতীকী অবস্থানের অংশ হিসেবে। কুশপুত্তলিকা সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ সমস্যাটির সমাধান করতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত বছরের আগস্টে আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ গণভবনে প্রবেশ করেছিল। তখন তাদের কেউ কেউ নারীদের অন্তর্বাস হাতে নিয়ে নিজেরাই ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে দেয়ার পর তা নিয়েও তীব্র সমালোচনা হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রাজু ভাস্কর্যেই দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে নারীর প্রতিকৃতিতে জুতাপেটা করে কিছু লোক
রোববার, ০৪ মে ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গলায় রশি বেধে শাড়ি পরানো একটি নারী প্রতিকৃতিতে জুতাপেটার ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে নানা আলোচনা ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব কায়সার জানিয়েছেন যে, খবর পেয়ে গতকাল শনিবার তারাই সেটি সরিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে কুশপুত্তলিকা হিসেবে প্রতিকৃতিটি কোনো একটি সংগঠন বা কেউ সেখানে ঝুলিয়েছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন। ওই প্রতিকৃতিতেও শেখ হাসিনার নাম সংযুক্ত ছিল না।
এ বিষয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলছেন, নারী প্রতিকৃতিটিতে জুতাপেটা ও শাড়ী খুলে অশালীন আচরণের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার কারণে এখন সেটিকে সামাল দিতে কিংবা ‘যৌক্তিক’ প্রমাণের চেষ্টা থেকেই শেখ হাসিনার নাম টেনে আনা হচ্ছে। তার মতে, ঘটনাটিতে নারী বিদ্বেষ থেকেই নারীর প্রতি অবমাননাকর আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন।
ভিডিও এবং ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রশি দিয়ে ফাঁসির মতো করে ঝুলানো নারী প্রতিকৃতিটিতে কয়েকজন জুতাপেটা করছেন। এক পর্যায়ে প্রতিকৃতিতে পেঁচানো শাড়ি খুলে যায়। পরে দু’জন এসে শাড়িটি পরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।
এ ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার দিনেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারের নারী সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ চলছিল। আবার ভিডিওতে যারা নারী প্রতিকৃতিটিতে জুতাপেটা করেছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ পাঞ্জাবি টুপি পরিহিত থাকায় সামাজিক মাধ্যমে অনেকে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের এ ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন।
যদিও হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কেউই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। ওই ঘটনার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে একটি বিবৃতিও দিয়েছে ইসলামী এই সংগঠনটি।
ওদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন এমন কয়েকজন সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের এক জন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে পহেলা মে’তেই একটি সংগঠন শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে প্রতীকী ওই প্রতিকৃতি টিএসসির রাজু ভাস্কর্য চত্বরে রেখেছিল। কিন্তু তাদের সেই কর্মসূচি শেষে প্রতিকৃতিটি সেখান থেকে না সরিয়ে তারা সেখানেই রেখে যায়।
গতকাল শনিবার আরেক দল এসে ওই প্রতিকৃতিটিতে জুতাপেটা ও কয়েকজন অশালীন আচরণ করে, যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এর সমালোচনা করে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন।
আব্দুল কাদের নামে একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘নারীর প্রতিকৃতি মানে কোনো একজন নির্দিষ্ট নারী না, সমগ্র নারী জাতিকে বুঝায়। একজন নারী অপরাধী হতে পারে কিন্তু সমগ্র নারী জাতি অপরাধী হতে পারে না। এবং কী অপরাধে নারীকে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে সে অপরাধটাও কেউ জানে না। এক জন নারী প্রতিকৃতিতে জুতাপেটা করে সমস্ত নারী জাতিকে অপমান করা হয়েছে। নারী জাতিকে অপমান করার অপরাধে আমি এ অপরাধীদের বিচার দাবি করছি।’
কুসুম তাহেরা নামে একজন লিখেছেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এক নারীর প্রতিকৃতি বানানো হয়েছে জুতোপেটা করার জন্য। নারীকে কী করে ঘৃণা করতে হবে, কী করে তাদের হেনস্থা করতে হবে, নির্যাতন করতে হবে তা শেখানো হচ্ছে। একজন নারী একজন মা। দেশ মাতৃকাকে তারা উলঙ্গ করছে, জুতাপেটা করছে ফ্যাসিস্ট সরকারের অবয়বে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ
মাহবুব কায়সার সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে কেউ বা কোনো সংগঠন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার কুশপুত্তলিকা বা প্রতিকৃতি ঝুলিয়েছিলো মূলত তার বিচারের দাবিতে প্রতীকী অবস্থানের অংশ হিসেবে। কুশপুত্তলিকা সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ সমস্যাটির সমাধান করতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত বছরের আগস্টে আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ গণভবনে প্রবেশ করেছিল। তখন তাদের কেউ কেউ নারীদের অন্তর্বাস হাতে নিয়ে নিজেরাই ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে দেয়ার পর তা নিয়েও তীব্র সমালোচনা হয়েছিল।